।। প্রতিদিন বিভাগ।।
।। জুন সংখ্যা।।
বিষয় - গল্প ( ৪০০ শব্দের মধ্যে) —৬
ইলিশ
অজিত বাইরী
পুটি প্রাণ ভরে ইলিশ ভাজার ঘ্রাণ নিচ্ছে। পাশের বাড়িতে ভাজা হচ্ছে । তার জিভে জল এল। তাদের বাড়িতে একদিনও ইলিশ মাছ ওঠেনি। ইলিশ মাছ ভাজা আর মাছের তেল মেখে ভাত খাবার তার বড় শখ।
সক্কালবেলাই মাছওয়ালা হেঁকে যাচ্ছিল--পদ্মার ইলিশ, বাংলাদেশের ইলিশ। পাশের বাড়ির সামনে ঝাঁকা নামিয়েছিল। রুপোর মতো মাছগুলো! কী সুন্দর দেখতে! তার মধ্যে থেকে বেছে ওরা একটা কিনলো। এক কেজির মতো। পাঁচ-সাত'শ ওজনেরও ছিল।
মাছওয়ালা বলছিল, এক কেজি ওজনের মাছ হাজার-বারো'শ।আর পাঁচ'শ ওজনের মাছ সাত-আট'শ টাকা। ওরা কিনলো। হাজারের নিচে কিছুতেই দিলো না। ও-বাড়ির গিন্নি খুশি-খুশি মনে মাছটা নিয়ে ভেতরে গেল। পুটি অনেকক্ষণ রাস্তার ধারে চুপ করে দাঁড়িয়েছিল। মা ডাকতে সে বিরস মনে ঘরে ঢুকলো। মনে মনে ভাবলো, বাবার কাছে যখন সে দুপুরবেলা খেতে বসবে, বাবাকে ইলিশ কেনার কথা বলবে।
পুটির বাবা কাজ থেকে ফিরলো দুপুরবেলা। তার দিন-মজুরির কাজ। রোজ দু'শ টাকা। সব দিন কাজ মোটেও না। দুপুরে একসঙ্গে খেতে বসলো বাবা মেয়ে। দু'এক গ্রাস মুখে তুলেছে, এমন সময় পুটি কথাটা পাড়লো, বাবা, আমাদের একদিন ইলিশ মাছ কিনবে?
মুখের কাছে হাত তুলে থমকে গেল তার বাবা। মেয়ে এমন আব্দার কখনও করেনি। আজই করলো। কিন্তু মেয়ের মুখের উপর না বলতে পারলো না। আশ্বস্ত করে বললো, ঠিক আছে, একদিন কিনবো'খন।
না কিনলেও পুটির বাবা জানে, মাছের দাম। খুব ছোট হলেও পাঁচ-সাত'শ-র নিচে নয়। তার আড়াই তিন রোজের মজুরি। ইলিশ মাছ কেনার সাধ্য কোথায়?
দিনের-পর-দিন যায়, মেয়ে মাছের কথা আর না তুললেও পুটির বাবা মন থেকে মুছে ফেলতে পারলো না। তার কেবলই মনে হতো, মেয়ের এই সাধটুকু সে পূরণ করতে পারবে না? এ মাসে পারলো না। পরের মাসে নিশ্চয় কিনবে। পরের মাসটাও চলে গেল। বাজারে ইলিশ কমতে কমতে ইলিশের মরশুম শেষ হয়ে এল। আর দামও চড়ে গেল দ্বিগুণ।
পুটির বাবা খেতে বসে রোজই দীর্ঘশ্বাস ফেলে আর মেয়ের পাতের দিকে হতাশ চোখে তাকিয়ে থাকে। মেয়ে ইলিশের কথা ভুলে গেছে। বাবা কিন্তু ভুলতে পারেনি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন