বৃহস্পতিবার, ৮ মে, ২০২৫

প্রকাশিত হল... অঙ্কুরীশা-র পাতায় কবি প্রণাম কবিতা সংখ্যা।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 





✍🏾সম্পাদকীয় ✍🏾
'মরণ রে, তুঁহু মম শ্যামসমান’। লিখেছিলেন তরুণ রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath Tagore)। ভানুসিংহের ছদ্মনামে ‘মরণ’ কবিতায় মৃত্যুর অনুষঙ্গে ‘শ্যাম’ তথা প্রেমকে খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর কর্কশতাকে অনুভব করতে হয়েছিল তাঁকে। মৃত্যুর মাঝে অনন্তের প্রবাহকে খুঁজে ফিরলেও আপনজনদের হারানোর শোক যে তাঁকেও আকুল করেছিল, তা বোঝা যায় তাঁর  'জীবন স্মৃতি ' নামক গ্রন্থে। বাঙালিরা রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন বলতে ২৫ বৈশাখই বোঝেন। দেখতে গেলে '২৫ বৈশাখ' বঙ্গসংস্কৃতির অন্যতম এক 'আইকনিক ডে'তে পরিণত। কিন্তু বহির্বঙ্গ তথা বহির্ভারতের কাছে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ২৫ বৈশাখ নয়, ৭ মে। কেননা, ১৮৬১ সালের এই দিনেই জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই মহাপ্রতিভাধর সন্তানটি।তবুও আমরা বাঙালি হিসেবে জানি ২৫শে বৈশাখ মানেই   রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন।।  আজ সেই দিন।  সেই বিশ্বকবির আজ এই জন্মবার্ষিকীতে অঙ্কুরীশা-র কবিতাজ্ঞলি। তাই আমরা অঙ্কুরীশা-য় কবিতার মধ্য দিয়ে  কবিকে জানাই কবি প্রণাম।।






🙏🏻কবি প্রণাম 🙏🏻






        ।।পঁচিশে বৈশাখ  কবিতা সংখ্যা।। 





পঁচিশে বৈশাখ 

তপন বন্দ্যোপাধ্যায় 


আরও একবার ভোরের ঘুম ভাঙায় পঁচিশে বৈশাখে বেজে ওঠা রবীন্দ্রগানের কলি, 'হে নূতন, দেখা দিক আর-বার...:। বহুবার শোনা গান, তবু মন্দ্রকণ্ঠে গাওয়া এই গানের সুরের অন্য মহিমা। চোখ মেলতেই দেখি সামনে রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ ছবি। তাঁর মন-ভালো-করা দুটি চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, 'আজ আকাশে বাতাসে শুধু রবীন্দ্রনাথ আর রবীন্দ্রনাথ।'

দেওয়ান থেকে  ছবিটা নামিয়ে রাখছি ধবধবে সাদা চাদর বিছোন টেবিলের উপর, প্রণাম করে গলায় পরিয়ে দিচ্ছি রজনীগন্ধার মালা, বলছি, 'তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকি। বুঝতে নারি কখন তুমি দাও যে ফাঁকি।'

কিন্তু সত্যিই কি কখনও ফাঁকি দিয়েছে! তোমাকে নিয়েই তো কেটে যায় আমার কত দিন কত রাত। তুমি ছিলে বলেই তো আমি আজ আমি। তুমি আছো শয়নে, তুমি আছো স্বপ্নে, তুমি আছো জাগরণে, সত্তার গভীরে।




পঁচিশে বৈশাখ 

অমিত কাশ‍্যপ


চমৎকার হল সেদিন, যেদিন 

স্নান সেরে এক গোছা রজনীগন্ধা

বিয়ের ছবির সামনে রাখলে, হতবাক

আজ কী পঁচিশে বৈশাখ, বিবাহবার্ষিকী


বন্ধুরা হেসেছিল, বিয়ের দিন পেলি না 

তখন তো সুগন্ধি সারা ঘর ঘুরে

কত আত্মীয়, শুভানুধ‍্যায়ী, হইহই

গোধূলি মেখে কালবৈশাখী এল


হাতের ভেতর হাত, বৃষ্টির ভেতর বৃষ্টি 

তুমুল শঙ্খধ্বনি মধ্যে তুমি গাইলে

'প্রভু, আমার, প্রিয় আমার পরম ধন হে'

একটা যতনের পঁচিশে বৈশাখ 


ঠাকুর আমাদের মনে করাচ্ছেন 

'তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে'





দেশে দেশে মোর ঘর আছে...."
বিকাশ চন্দ

"ধর্মের বেশে মোহ যারে এসে ধরে
অন্ধ সে জন মারে আর শুধু মরে"....
                                        ----রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। 

জানি সে এক অমৃত পুত্র মর্ত্যের ঠাকুর 
বিশ্বজুড়ে মানুষের ধর্ম ছড়িয়ে 
সৃষ্টি সুখের ক্যানভাসে রঙ ভরো
নদী পথে সভ্যতার নুড়ি পাথরে নতুনের পথে
প্রতিদিন ঘুম ভাঙে আনন্দ সঙ্গীতে
অমোঘ সময় ভেঙে আজও কথায় গানে
প্রতিদিনই স্বদেশের শান্তি শপথ 
প্রতিদিনই রবি করে ভাস্বর বিশ্ব দুয়ার

দুঃসময় জানে  'রক্তকরবী' 'রথযাত্রা' জীবন প্রবাহ
বিশ্বজুড়ে তাঁরই কথায় জাগে শান্তিনিকেতন 
মিলন বন্ধনের কথা জানে বিভাজন যন্ত্রণা আজও 
সামান্য হলুদে রাঙানো সুতোর বন্ধন আবেগ 
প্রতিদিনই অনুভবে জাগে যুগান্তরের প্রত্যুষে 

প্রাত্যহিকী স্বরলিপির অদৃশ্য টানে রাগে অনুরাগে
এখনো জন্মতিথি হে ঠাকুর জাগে আত্মার ডাকে
সকল মুক্ত পথে হৃদয়ে হৃদয় মেলে
আজকে রবির কিরণে ভাস্বর বিশ্বের মানব মিলন 





রবীন্দ্রনাথ 

অভিজিৎ দত্ত 


রবীন্দ্রনাথ, তুমি সত্যিই ছিলে 

এক বিষ্ময়কর প্রতিভা 

গান,নাটক, লেখা,ছবি ও কবিতা

সবেতেই ছিল তোমার 

বিষ্ময়কর প্রতিভার ছোঁয়া।


তুমি ছিলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, দার্শনিক 

তুমি ভীষণ ভালোবাসতে প্রকৃতিকে 

চেয়েছিলে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করে

 আমাদের গড়ে তুলতে। 


তুমি বুঝেছিলে নগর সভ‍্যতার 

ভয়াবহ পরিণামের  কথা 

তাই তো বলেছিলে,দাও ফিরে সে  অরণ্য 

লহ এ নগর।


তুমি ছিলে ভারত তথা এশিয়ার 

প্রথম নোবেল বিজেতা 

বিশ্বভারতী,শান্তিনিকেতন সহ

অনেক কিছুরই প্রতিষ্ঠাতা। 


তুমি আমাদের আশা ও ভরসা 

তোমার গান  ও লেখা থেকেই পাই

জীবনে এগিয়ে চলার প্রেরণা।

তাই পঁচিশে বৈশাখ তোমার জন্মদিনে

তোমাকে অন্তর থেকে জানাই

 আমার প্রণাম, ভক্তি ও শ্রদ্ধা।



চেতনার দর্শন

পুষ্প সাঁতরা

আশ্রয়ের কথা বলো যদি
তুমিই তো বটগাছ
প্রশ্রয় দাও অনুভূতি দিয়ে
অনন্তমূল শাঁস।
মনের দোতারায় প্রেম গেঁথে
শব্দের অনুকথন
মুমূর্ষ পায় নতুন ঠিকানা
চেতনার দর্শন।
বদলেছে জীবন সময় কতো
সাহসের গান গাই
'একলা চলো 'নীতি টুকু বুকে
পথের দিশা যে পাই।
বাতিঘরে জ্বলে প্রেরণাকুসুম
ব্যথার ভবনে উপসম
গানের সুরে বোধের জগৎ
সাধনার সরগম।
আলোকসামান্য দীপ্তি তোমার
মৃত্যুঞ্জয়ী অভিসার
পূর্ণ তুমি চির শাশ্বত ঠাকুর
শান্তির সূতিকাগার।




 শিকড় খোঁজার গান 

দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় 


বিদীর্ণ বুকের মাঝে বাউলের সুরের ডেসিবেল বাড়তে থাকে।খোয়াই যেন নিরবধি তোমাকেই খুঁজে যায়।

উদ্বেলিত কান্নার তার বুকে যেন প্রস্তরযুগের আর্তনাদ।

পায় না তোমায়।

আমিও কি পাই?

আমরাও কি পাই?


আজকাল তুমি বাহুল্যের আয়োজনে শুধু!

হাঁপিয়ে ওঠা সোনাঝুড়িও যেন পায়ে চলা ধুলোয় মেঘে

তোমার মুখ খোঁজে।

রৌদ্রের গল্প আজ শুধু হাটের কেনাকাটায়!

তোমাকে ঘিরে বুকের তৃষ্ণা কোক পেপসিতে মেটে।

অক্ষম রাডারে ধরা পড়ে না শুধু যন্ত্রণার কান্না।

ভুবনডাঙার হারুদার চায়ের দোকানে সাদা ধোঁয়ার আড়ালে তোমার মুখ ভাসে।

উল্টোদিকের বটের ঝুড়িতে তোমার অনন্তকাল অপেক্ষা।

দেখতে দেখতে চেতনার নদীতে দাঁড় টানতে টানতে 

উপাসনা গৃহের সামনে।

বসে পড়ি ---

ছাতিম তলায় তাকাতেই আবার তোমার উপস্থিতি!

প্রতিশ্রুতির বোধপিছল পথে চোখ জ্বালা করে।

তুমি কি শুধু তোমার ঐ সবুজ কুঞ্জেই আটকে আজ?




ঠাকুর আমার ঠাকুর 

বিকাশরঞ্জন হালদার 

আমার প্রাণ ভেসে যায়- 'দূরে কোথায় দূরে দূরে'...
তোমার সুরে 
নয়নের দৃষ্টিতে কত সূচনা প্রশ্রয়, দুরারোগ্য দহন, আর মধুর-মধুর ধরণী'র ধুলো

ঠাকুর আমার ঠাকুর 

তোমার দু'চোখে আমার স্নিগ্ধতা,
সাগর
বনানী
অফুরন্ত দিগন্ত আমার 

২৫ বৈশাখ আসে যায়
জুঁই ফুলের সুগন্ধ মেশে দিনের বাতাসে...

সময়ের মূল্য চেনাও তুমি, প্রতি মুহূর্তে,
শুভ্র-ভোর পূজার আয়োজন 

ঠাকুর আমার ঠাকুর!




মানুষ পারে না

হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় 


মানুষ পারে না ,কিন্তু তুমি পারো ।কপালে হাত রাখো ইতিউতি ,হেডটেলের সংসার

আজকে জানলাম আসলে একটা সাঁকো

পেরোচ্ছি তো পেরোচ্ছি ই দোষ কেটে যায়

সাদা খাতা নীল খাম

একদিন ভাবতাম সহজে ছেঁড়া যায় ।


দর্শনমাত্র আনন্দে কেঁপে ওঠা

আশিরনখর পাঁজরে তরোয়াল ,মাথা উঁচু করে

তবুও মেঘেরা কেমন যেন ঘরোয়া ,ঘরোয়া

সারারাত ভাসছে পথ হারাবার মরসুমে সঙ্গে

দু এক কলি রবীন্দ্রনাথ প্রতিশ্রুতির হাত...


না,এত সাধারণ এত মামুলি অবিকল তার

মতো চোখ ,বাড়ি ভুল করে সেই সমস্ত ব‍্যর্থ

অক্ষরে জুড়ে যায় শোক

আরে না এত সাদা পৃষ্ঠা জ্বলজ্বল করে তাকায়

যেন মুখোমুখি দুই অন্ধ

না জানি কি লেখা আছে দুহাত পেতেছে

মহার্ঘ কবন্ধ...



ধন্য হলাম 

বদ্রীনাথ পাল 

আকাশ ও মাটি বন্দনা গায় আজকে তোমার রবি-
ছন্দে ও সুরে কাব্য কথায় কেবলই তোমার ছবি।
গঙ্গা জলেই গঙ্গার পূজা চলেছে যে চারিদিকে,
ভোলা কি সহজ আজকের দিনে এমন রত্নটিকে ?

পাখি গান গায় বায়ু বয় ধীরে হাসে ফুলেদের কলি-
তোমাতে মগ্ন আজকে সবাই রাজপথ হতে গলি।
অট্টালিকায় হোকনা কিংবা হোক সে মাটির ঘরে-
বাণী যে তোমার অকৃপণ হয়ে পড়ে যায় ঝরে ঝরে !

ধুয়ে মুছে যায় সবই একদিন কালের অতল তলে-
তোমার জ্বালানো প্রদীপ হে রবি আজো যে তেমনি জ্বলে !
দুই হাতে তাই ভক্তিরসের মালা চন্দন নিয়ে-
ধন্য হলাম চরণে তোমার অঞ্জলিটুকু দিয়ে।




প্রাণের ঠাকুর
দীনেশ সরকার

যে ঠাকুরকে নিত্যপূজি
আপন হৃদয় মাঝে
তারই বাণী অহরহ
চিত্ত মাঝে বাজে।

বৈশাখ এলেই তবুও মনে
কে যেন গো ডাকে
বিশ্বকবির জন্মতিথি
পঁচিশে বৈশাখে।

মালা পরাই, স্মরণ করি
তারই নৃত্য-গীতে
হৃদয়ভরা শ্রদ্ধা জানাই
সংগীতে সংগীতে।

প্রাণের ঠাকুর মানি তাঁকে
জানাই তাঁকে প্রণাম
নোবেলজয়ী কবি তিনি,
তার জগৎজোড়া নাম।

"সঞ্চয়িতা", "গীতবিতান"
হৃদয় মাঝে রাখি
নোবেল চুরির বেদনা আর
লজ্জা-গ্লানি ঢাকি।



অমরে ২৫
সায়নী জানা

নব পল্লবে নব কালবৈশাখে
 তব স্মৃতি স্মরণ করি
সহস্র হারানো সুখ খুঁজে পাই
তব চরণের মাঝে আমি।
 আমারে করি বিস্মরণ,অনন্তকালের সুখ দুঃখ করেছো তুমি হরণ।
এসো হে বৈশাখ,হে ২৫ সে বৈশাখ,
তোমায় জানাই প্রণাম,
তোমারে জানাই প্রণাম।।
তোমার রঙ্গে রাঙাও আমারে, 
তোলো বৈশাখী হিল্লোল,
নব পল্লবে ভরেযাক শুষ্ক তরু সকল।
প্রভাতের রবি কানে কানে বলে দিলো আজ,
হোক না তবে জাগরণ সুপ্ত রবির আজ।

 আচ্ছা!!তুমি কি কেবল ই ছবি 
শুধু এক স্মৃতি বিশেষ?
নেই তোমার ঠিকানা?
নেই কোনো চিন্হ অবশেষ?
চোখের বালি ,শেষের কবিতায় বারংবার ফিরে যেতে মন চায় তোমার গানে  বিনা দ্বিধায়।
বছর বছর ফিরে আসুক তোমারেই দিন
চিরো অমর হয়ে থাক তোমার এই জন্মদিন।।




২৫ শে বৈশাখ"
অশোক দাস

আজ সকালটাই অন্যরকম-
গাছগাছালি, পাখপাখালি 
সবাই যেন 
একটু বেশি করেই
ছন্দে ভরা | 
কি সেই খুশি হাসি হাসি 
সবাই মাতোয়ারা ||

আজ আবার করে জন্ম নেবেন
মোদের প্রাণের ঠাকুর,
বিশ্বকবি রবি ঠাকুর 
সব বাঙালির ঘরে,
দিন কাটবে তাঁকে নিয়েই
তাঁর ভাবনা আপন করে ||

তাঁর কবিতায় তাঁকেই পূজি,
তাঁর গানেতেই তাঁকেই খুঁজি,
তাঁর নাটকেই বুঝি আবার-
তিনিই দীপ্যমান |
বিশ্বাকাশে বাংলাভাষে 
তিনি একাই রবি,
চিরভাস্বর, বাড়ান দেশের মান ||



চিঠি 
জয়শ্রী সরকার 

শ্রীচরণকমলেষু রবিঠাকুর,
'আজি হতে শতবর্ষ পরে'ও 'তুমি ডাক দিয়েছ কোন্ সকালে!'
তোমার জন্মদিনে কোনো নান্দনিক আত্মপ্রসাদে নয়,
ক্ষতবিক্ষত কলমে লিখছি তোমায়।
অশান্ত সময়। আকাশে অশ্রু, বাতাসে বারুদ।
বিশ্বটা বেদনায় নীল, শুধুই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা।
তবু, তোমার 'আগুনের পরশমণি'ই যেন আজ রক্ষাকবচ !

তোমার যেন কোনো প্রস্থান নেই। বিশ্বকে চেতনার রঙে রাঙিয়েছ, 
তবু, নিঃস্ব আমরা মননে। তাই তো ভূস্বর্গ কাশ্মীরের 
সবুজে ঘেরা উপত্যকা আজও রক্তস্নাত। 
বার বার পড়ি তোমার 'আফ্রিকা'। বোধির বীক্ষণে ধাক্কা খাই ক্রমশই। 
অসাম্যের অর্কিডে ঘেরা একফালি সোনালী রোদের মতোই 
সভ্যতার রোমে রোমে শান্তির পায়রা উড়িয়েছ তুমি।
শত দুঃখেও বিশল্যকরণী তুমি।
জীবনের সালোকসংশ্লেষ আর বেঁচে থাকার 
উষ্ণ পরোয়ানা তোমাতেই, অধরা ঈশ্বর তুমি !
প্রোজ্জ্বল প্রতিটি প্রত্যুষ তোমার ছোঁয়ায়, 
যেন ভোরের ভৈরবী থেকে সন্ধ্যার পূরবী, পূর্ণ জীবনের পরিপূর্ণ কোরক !
তোমারই লাবণ্যমাধুর্যস্নাতা ---- দ্রষ্টা।




ঠাকুর বাড়ির রবি
  তাপস  মাইতি

মহা পুরুষ, মহা কবি, তিনি রবি ঠাকুর
২৫ শে যে বৈশাখ, তাঁর জন্মে লাগে সুর।
রবি ঠাকুর কাব্যে ভরা , তেমনি ভরা গানে
গাইলে পরে দুঃখ হানে, পড়বে সুখের টানে।
রবি ঠাকুর--- গল্পগুচ্ছ--ঝর্ণা অবিকল
রবি ঠাকুর---উপন্যাস-- ঠিক যেন বটফল।
চিত্রকলা, চিঠিপত্র  পাহাড়ের মতো উঁচু
তাঁর একেকটি ছড়া যেন গাছের পাকা লিচু।
তেমনি নাটক, পড়ে পাঠক, মঞ্চে গীত হয়
' গীতাঞ্জলি ' লিখে তিনি করেন বিশ্ব জয়।



রবি-ভাইরাস
মুক্তি দাশ 

বাঙালি ভুগছে রবি-ভাইরাসে
বাঙালিরা শুধু গ্রন্থ-কীট,
দেড়শো বছর পরেও তুমি 
ইক্যুয়্যালি সুপারহিট !
ভরদুপুরে ট্রাফিক জ্যামে 
রোদ্দুরেতে কাঠ ফাটে,
লাউড-স্পিকারে তোমারই গান -
"... পায়ের চিহ্ন এই বাটে।"




একাকীত্ব ও রবীন্দ্রনাথ
শান্তনু ঘোষ

জীবনের ছন্দ ভেঙে বেঁচে থাকা 
শিখে গেছি ;
একাকী হয়েছি তো কী
একা থাকাটাই একটি শিল্প।

অভাব অভিযোগ দুঃখ কষ্ট
এসব জীবনে তো থাকবেই
খুব ভালো আছি এজন্য যে
একা থাকা শিখে গেছি;
তবু মন খারাপ হলে একাকীত্বের 
মাদুর পাতি;
একাকীত্ব হয়ে ওঠে বৈশাখ মাস
আর রবীন্দ্রনাথ এক এক করে জুড়ে দেন জীবনের ভাঙা ছন্দ



ঠাকুর প্রণাম
মহ:মহসিন হাবিব 



ডালে ডালে কৃষ্ণচূড়া মেতেছে বরণে
পঁচিশ বোশেখ উদ্ভাসিত রবির কিরণে।

 সুতোয় বাঁধা রজনীগন্ধারা সুর তোলে
লবানকাঠি সুগন্ধি ধোঁয়া ছাড়ে পদতলে।

প্রভাত রবি পুব আকাশে উঁকি মারে 
কাঁচ ঘরের কনসার্ট বেজে ওঠে।

আশ্রমিকরা রঙিন পোশাকে জপে গুরুমন্ত্র
হর্ষ বিষাদে মেতে ওঠে সমগ্র দেহতন্ত্র।

লাল চেলির শাড়ী পড়ে ওরা ব্যস্ত ঠাকুর প্রণামে।



রবী'র পথে 
পরমেশ্বর গাইন 

গান গল্প ছন্দ লয়ে রবী 'র ছোঁয়া 
লেগে আছে একবিংশ-সাহিত্য প্রভায়।

শিক্ষা সমাজ ধর্ম রাজনীতির দিব্য দর্শন
শিশু পাঠ্যে ও সহজ পাচ্যের মতোন।

জীবন দেখায় "গোরা 'র" ব্যথায়
একশো বছর পরেও নির্দ্ধিধায়।

পল্লবিত শাখা প্রশাখায় গুনগুনিয়ে যায়
পুরানো সেই সুর ছন্দ লয়...

জন্ম সেই কবে ! গুনতে গেলেও সময় লাগে অনেক 
তবু এ প্রজন্মে তাঁরই  অভিষেক



রবীন্দ্রনাথকে
 মঞ্জীর বাগ

চোখের পাতায় নেমে আসে ঘুম 
ঘুমের পাতা উল্টে মা শুনিয়ে যাচ্ছেন বীরপুরুষ 
ঘোড়ায় চড়ে টগিয়ে তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে 
বেঙ্গমা বেঙ্গমির গল্পে ভেসে সে শৈশবের ঘ্রাণ 
শৈশবের স্মৃতির সাথে দুধের সাথে মিশে আছে শিশুর কবিতা শিশু ভোলানাথ। 
তোমাকে জানার পৃথিবীকে জেনেছি 
গীতবিতান এর পাতার সুরে খুঁজে পেয়েছি 
আপন অনুভূতি। আকাশ ভরা সূর্য তারা যে গান গায় সেই গানের অনুরণন বুঝেছি আমার মনে। 

তুমি কোথায় নেই রবি ঠাকুর। 
ঠাকুর বলে দূরে সরিয়ে রাখি এমন সা ধ্যি নেই
ঠাকুর বললে তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকতে হয়। তুমি তো প্রাণের মানুষ। আলোর মানুষ আলো দিয়ে দেখাও পথ। 

মনে পড়ে মা একান্তে বসে গাইছেন গান তোমার অসীমে। 
এই অসীমে কোথাও দুঃখ নেই কোথাও বিচ্ছেদ নেই। তোমার গানে জেনেছি জীবন এক আনন্দের নাম আলোর নাম ‌। প্রাণের আকাশে তুমি জীবনের ধ্রুবতারা





আমার ঈশ্বর 
সোমা চক্রবর্তী

দক্ষিণের বারান্দায়, ইজি-চেয়ারে শায়িত তুমি, আমি দেখতে পাই নিজেকে তোমার'ই চরণ তলে। সেই ছোট্ট মেয়েটি হয়ে আজও তোমার কাছেই জড়িয়ে নিই আমাকে। 
তোমার ওই আলখাল্লা বসন, শুভ্র কেশরাশি রঞ্জিত মুখে দুটি উদ্ভাসিত চোখ, তোমাকে করেছে আমার পূজনীয় ঈশ্বর। 
তুমি ঋষি, তুমি জ্ঞানী, তুমি তোমার লেখনীতে কাছে টেনেনিয়ে, পরম স্নেহে মাথায় রেখেছো তোমার পরশ।
আমার জীবনের পড়ন্ত বেলায়, আমি সেই ছোটো বালিকা হয়েই তোমার সৃষ্টির আঙিনায় করে যাই খেলা।
কোলে থাকে জীবনের প্রথম ভালোবাসা তোমার'ই সহজ পাঠ।
তুমি ছিলে, আছো সমগ্র বাঙালীর  হৃদয় জুড়ে।
আমি যে তোমায় ঈশ্বর'ই ভেবে গেছি সেই ছোটো থেকে।
তোমার'ই সুরে নিজেকে ডুবিয়ে আজও গেয়ে উঠি, বাঁধন হারা নৃত্যের ছন্দে - 'মেঘের কোলে রোদ উঠেছে বাদল গেছে টুটি'.





রবীন্দ্রনাথ
শ্রুতি সামন্ত

এই জনতার ভিড়ে তোমার চরণ রেখা
খুঁজি রবীন্দ্রনাথ, এ কালান্তর যাপনে
কত পঁচিশেবৈশাখ ঘুরে আসে,
অনন্ত দহন জ্বালায় শান্তির প্রলেপেউ৩
অপেক্ষমান আমি পথিক তাই,
পুঞ্জিভূত ক্ষোভ আর আশ্চর্য রকম ভাবে
বেঁচে থাকার  নিরলস আবর্তে,
ফিরে এসো তোমার "গীতাঞ্জলি 'নিয়ে
তোমার "রক্তকরবীর " নন্দিনী রাজাতে
প্রাণ এনেছিলো তোমার "ডাকঘর"এর অমলকে
ভালোবাসার ফুলে জাগার কথা দিয়েছিলো সুধা,
অভিজিৎ "মুক্তধারা"য় প্রাণ দিলো তৃষ্ণার জল অবরোধে, তাই একবার ফিরে এসো এই
ক্ষণভঙ্গুর আদিম বাসনার কুহরে।





রবীন্দ্রনাথ
সুশান্ত সেন

তোমার কাছ থেকে পালিয়ে
বাগানে বসেছিলাম 
বেল ফুল মাথায় ঝরে পড়ল
বাইরে থেকে ঘরে ফিরে এলাম।
দেবব্রত আর কণিকা শুনতে শুনতে
প্রতিভাসের প্রকাশিত চিত্রাবলি দেখছিলাম।
এত মাতামাতি ভালো নয় বলে
প্রজন্ম যখন তাদের বক্তব্য রাখছিল
তখন জানলাম
এক আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে
" সভ্যতার সংকট " - পাঠ্য সুচির অন্তর্গত।
তোমার চাওয়া " অজ্ঞাত কবি " কে
খুঁজতে থাকলাম।





পঁচিশে বৈশাখ
 সৌগত কান্ডার

পঁচিশে বৈশাখ এলে কিছু না কিছু লিখতেই হয়
রবি ঠাকুরকে নিয়ে। কিন্তু কি যে লিখি!
আপনি বলবেন, কে তোমাকে মাথার দিব্যি দিয়েছে?
তুমি কি গবেষক নাকি পন্ডিত নাকি কবি, 
যে রবি ঠাকুরকে নিয়ে লিখতেই হবে?

স্বীকার করতেই হয় যে,
কথাটা অতি তীব্র তাপপ্রবাহর মতই সত্য।
তবু অনিবার্য পঁচিশে বৈশাখ এলেই,
রবি ঠাকুর যেন ঠিক কৃষ্ণের অমোঘ বাঁশির 
মতই ঘনিয়ে আসেন -
মেঘ রৌদ্রের লুকোচুরিতে।
আর অঞ্জনা নদীর শীতল জলে।
আর কালবৈশাখীর ধূলো খেলায়।
আর কালো মেয়ের চোখের তারায়।

বলুন তো এর পরেও কি না লিখে থাকা যায়? 
পুড়ে যাবে না হৃদয়ের বর্ণমালা?
আসলে পঁচিশে বৈশাখই যে লেখক, 
পঁচিশে বৈশাখই লেখমঞ্জরী।





পঁচিশে বৈশাখ ও  গানের সমীক্ষা 
বিমল মণ্ডল 

কি যে অদ্ভুত চিন্তা এই সময় সকলে আসে
মিথ্যা ও সত্য উপাদানে পরিপূর্ণ বহিরঙ্গে 
প্রয়োজনীয় করে তোলে দিন-রাত ছোটাছুটি করে
 পঁচিশে বৈশাখে আজ এই গানের যত অনুষঙ্গ।


মালা,ধূপ,প্রতিমূর্তি :যা যা যুক্ত অবিকল সব
সকাল থেকে রাত হবে গান,কবিতুল্য কলোল্লাসে
কবিকে ছাড়িয়ে চলে, যে যার মুখে মুখে
নান্দনিক প্রাজ্ঞ গানে মূঢ় স্বার্থ মুখর বাতাসে।

প্রতিমূর্তি  পড়ে থাকে, হয় সব গড্ডালিকা প্রবাহ
এখন শোষিত পৃষ্ঠা উল্টে সত্য গোপনীয়তা
কাব্য,উপন্যাস,গল্প,চিত্রকলা গান যাঁর মাস্টার স্ট্রোক 
আজ এই দিনে কত গুণীজন খোঁজে এই সত্যতা। 


 





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন