রবিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২৪

অঙ্কুরীশা-য় প্রকাশিত হলো রাখিবন্ধন উৎসব কবিতা সংখ্যা --।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।






          

            অঙ্কুরীশা-য়  প্রকাশিত হলো 


রাখিবন্ধন  উৎসব  কবিতা  সংখ্যা 

------------------------------------------------ 



কলমে—

অজিত বাইরী 

আরণ্যক বসু 

তৈমুর খান 

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় 
সজল বন্দ্যোপাধ্যায় 
দুর্গাদাস মিদ্যা 
অমিত কাশ্যপ 
বিকাশ চন্দ
অর্ণব আশিক 
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় 
সমাজ বসু 
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় 
বিশ্বজিৎ রায়
গোবিন্দ মোদক 
বিকাশ পণ্ডিত 
নিমাই জানা
জয়দেব মাইতি
ড.রমলা মুখার্জী
বিকাশরঞ্জন হালদার 
অভিজিৎ দত্ত
সুব্রত চৌধুরী 
নন্দিনী মান্না 
সান্ত্বনা ব্যানার্জী 
ভবানী প্রসাদ দাশগুপ্ত 
বিমল মণ্ডল 






























রাখি-পূর্ণিমা  
অজিত বাইরী


আজ আকাশে এসেছে পূর্ণিমার চাঁদ;
প্রতি শুক্লপক্ষেই আসে; কিন্তু আজ
অন্যরকম মায়া-ভরা জ্যোৎস্না ঢেলে দিচ্ছে
পৃথিবীর বুকে, গাছগাছালি, গুল্ম, অর্কিড 
মানুষের ঘরবাড়ি ভিজছে নান্দনিক জ্যোৎস্নায়।

বাগানে ফুটেছে দোলনচাঁপা, তার গন্ধে
ম-ম করছে বাতাস, গায়ে লেগে আছে
জ্যোৎস্নার কোমল স্নিগ্ধ প্রলেপ।
আজ অন্যরকম জ্যোৎস্না এসেছে
এ পৃথিবীতে; কোথাও কোন মালিন্যের
চিহ্ন নেই; কারও চোখে নেই ক্লান্তির রেশ।

সৌহার্দের আকাশ ছড়িয়ে আছে
দিগন্ত থেকে দিগন্তে; মানুষ এগিয়ে এসে
আলিঙ্গন করছে একে অপরকে
পরিয়ে দিচ্ছে রাখি--প্রীতির বন্ধন।
কোনখানে নেই আজ হানাহানি, রক্তপাত;
বর্ণ বা ধর্ম বিভাজন নেই, সকলেই
বাড়িয়ে দিয়েছে হাত, হাতে হাত বেঁধে
ভুলতে চাইছে অতীত হিংসা,দ্বেষ।

এমনই দিনে বিশ্বকবি সৌহার্দের স্বপ্ন
দেখেছিলেন মানুষে মানুষে, এমনই দিনে
জম্বুবনে ঘনিয়ে এসেছিল মেঘ, কেয়াবনে
ঝরেছিল শ্রাবণ-শেষের বৃষ্টি।





কক্সবাজারের সাগর আসবে!
আরণ্যক বসু 

আঙ্কুর-বাঙ্কুর আমার
আমপাতা জামপাতা,
এবার তবে আসি--বললো
শ্রাবণের কালো ছাতা।

তোর দুহাতে দিয়ে গেলাম
মেঘভাঙা রোদ্দুর, 
চলকে ওঠা ঢেউয়ের মাথায়
দিঘার সমুদ্দুর!

দিলদরিয়া আকাশ এবার
রোজ সকালে ডাকবে,
স্কুল খোলবার ইচ্ছেটা তো
 সবার বুকে থাকবেই! 

আড়ি আর ভাব,ভাব ভাব আড়ি,
মেঘের মাঝে নীলে,
দুই কুড়ি দশ পানকৌড়ি
নামবে ভোরের ঝিলে? 

রাত আসলেই চাঁদের ঝিলিক,
রাত পাখির কী তাতে?
ঝুলনের দোলনাতে,ওরে,
রাখি পূর্ণিমাতে...

শেষের নিম্নচাপ যখন
চিঠির পুনশ্চতে,
মা-দুগ্গার আগমনী তো
নদী তিরতির স্রোতে! 

এমনি করেই  আশ্বিন মাস
চূর্ণি নদীর ধারে,
মিষ্টি মিষ্টি  দুপুর তখন
লীলা মজুমদারে ? 

শুকনো আঁটি বদলে গিয়ে
দামাল আমের চারা,
দূর নীলিমায় ডুবছে জাগছে
অবাক রাতের তারা!

দিনগুলোকে রাতগুলোকে
বড্ড ভালোবাসি,
হঠাৎ মায়ের খিচুড়িতে, 
ভাজা ইলিশের হাসি! 

আগলা পাগলা লিখতে লিখতে,
ফুরিয়ে যাচ্ছে খাতা;
আঙ্কুর-বাঙ্কুর ভাবনা
আমপাতা জামপাতায়!

কাছেই এবার বেড়াতে যাওয়া?
বাড়ির সবার মতে ?
কক্সবাজারের সাগর আসবে,
বকখালি সৈকতে !





রাখি

তৈমুর খান

  


 কারা সবাই বাইরে আছো?

 ঘরে এসো, আরও কাছে

 আজকে আদর পাওনা আছে

 ডাকছে পাখি বুকের মাঝে।


 সব দূরত্ব যাক ঘুচে যাক

 শত্রুরাও বন্ধু হোক

 অন্ধকারে আলো জ্বেলে

 অন্ধরাও চক্ষু পা'ক।


 হাতের কাছে আসুক হাত

 মনের কাছে আসুক মন

 দুঃখগুলি মুছে ফেলে

 বেজে উঠুক ঐক্যতান।


 তবেই তো হবে ভোর

 তবে গান গাইবে পাখি

 তবেই আমরা পরস্পর

 বাঁধবো সবাই প্রেমের রাখি।




সর্বক্ষণের সঙ্গী

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়



মানুষ না দেখলে আমি হাঁপিয়ে উঠি -----

এসব তুমি যতই বলো না কেন 

আসলে মানুষ একা থাকতে ভয় পায় 

স্বভাব নির্ভর মানুষ 

নিজেকে কারও হাতে তুলে না দিলে তার শান্তি নেই 


অথচ দ্যাখো কানাই ফাঁকা মাঠের একটা পোড়োবাড়িতে 

একা একাই বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছে 

ব্যতিক্রম নয় 

আসলে সে একার খোঁজ পেয়েছে


বুকের কাছে হাতদুটো কোনোদিন যদি আনতে পারো

কানাইয়ের সর্বক্ষণের সঙ্গী একাকে দেখতে পাবে।






কবে থেকে
সজল বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্প্রীতি আর ভালোবাসার
বাঁধবো সুতো হাতে
কিন্তু কবে মানুষরা সব
বাঁচবে দুধে-ভাতে !

কবে থেকে নিরুদ্বেগে 
কাটবে দিন-রাত
হায়নারা সব ভদ্র হবে
পাতবে না আর ফাঁদ !

কবে থেকে ধর্ম ছেড়ে
বর্ম ভালোবাসা
দেখবো কি আর সে দিনগুলো
মিছেই মরে চাষা !

কবে থেকে রাজার নীতি
শুধুই প্রজার জন্য
উপকৃত হবেই হবে
করবে সবাই ধন্য !

আশায় আছি আশায় বাঁচি
আশায় বাঁধি রাখি
জানিনা তো আশাচ্ছলে 
পড়তে পারি ফাঁকি !



রক্ষা বন্ধন
দুর্গাদাস   মিদ্যা


এই বিপদ সঙ্কুল পৃথিবীতে
 নিজের প্রিয়জন বাঁচাতে
 মঙ্গল কামনায় মঙ্গল সূত্র
বেঁধে দেওয়া হয় হাতে
বিপদের হাত থেকে  বাঁচাতে। 
একথা জানা যায় গুরুদেব
রাখি উৎসব করেছিলেন
উনিশ শ পাঁচের  অশুভ
 বঙ্গভঙ্গ রুখতে ধর্ম  বর্ণ
 নির্বিশেষে। সেকথা স্মরণে
রেখে আজও চলে সেই উৎসব। 



রাখিবন্ধন
অমিত কাশ‍্যপ

শ্রাবণ শেষের আকাশ দাঁড়িয়ে আছে একা
বাসস্টপও এখন একা, সকাল গড়িয়ে নীরব দুপুর
স্লেট রঙা মেঘ, শুধু ইতিউতি
ছন্নছাড়া, যেন যাবার কোথায় কথা ছিল 

এসে দাঁড়াই, বাসস্টপ এখন দুজন হল
ঘড়ি দেখি, আবার ঘড়ি দেখি
রাস্তাও আজ একা, শুয়ে আছে নীরবে সেও
স্লেট রঙা মেঘ, সেও নীরবে নেমে আসে

আর একজন আসে নীরবে, যাবেন কোথায় 
মিষ্টি হেসে, গড়িয়াহাট
সেই শুরু, তারপর হাঁটা আর হাঁটা
রাখিবন্ধন হল আবার রাখিবন্ধন হল

রাখিবন্ধন ছিন্ন হল কখন জানা গেল না 
আকাশ হল, মেঘ হল, তারা হল, বাসস্টপ আবার একা।



শূন্য বাঁধনে
বিকাশ চন্দ

নিঃসঙ্গ সেতু পেরোলে হাতে হাত হলুদ বাঁধন
অচেনা বহু পথে একাকী ভীতু সময়ের সাথী, 
শিউলি বোঁটা রঙ মেখেছে কব্জি ভালোবাসা
সকল মানুষের সকাল দেখে হাসি মাখা রোদ্দুর, 
কোথাও কি দাঁড়িয়ে রক্ত মাংসের উপরে মানুষ 
হয়তো অবনত বীভৎসতা নয়তো অনুতপ্ত ক্ষমা। 

আত্মার বাঁধনে জড়িয়ে সব সবুজ রঙের মানুষ
গাছেদের ফিসফিস কথা শোনে বংশ পরম্পরা, 
সকল বাঁধনে আনচান কোথাও সম্পর্কের ঋণ
গোলাপি খামে আসে না আলো হৃদয়ের বলয়,
আজও আকাশে শান্ত রাতের চাঁদ ডাকে একা
মৃত মানুষের বিষাদ বড় ছেঁড়া পালকেরা কাঁদে। 

নিষিদ্ধ সময় নয় আজ তবুও নিস্তব্ধ ফোনের রিংটোন 
সারাটা বছর বর্ণহীন বয়ে চলা মৃত সময়ের দায়,
চেনা মানুষের জন্য জমেছে অযুত কৃতজ্ঞতা 
বাম হাতে কব্জিতে বাঁধা সবুজ পাতায় রক্তকরবী হাসে,
আমিও বোকা বোকা নিরীহ পূর্ব পুরুষের ছায়া শরীর 
বড় শক্ত দায় জানে পৃথিবী গোলক ঘোরে শূন্য বাঁধনে। 


আমার রাখীবন্ধন, হাহাকার ডাক
অর্ণব আশিক 

কাঠবাদামের শাসে খুঁটে খুঁটে জড়ো করি
রাখীবন্ধনের ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ 
দিদি তুই এখন খড়কুটোর কোরাস
মায়ের অশ্রু, বাবার দীর্ঘশ্বাস 
কাসার বাসনে সাজানো ফলান্ব, চৌদিকে পড়ে আছে
শুধু রান্নাঘরের ঘনিষ্ঠ হাড়িঁ তোকে খোঁজে
আজ রাখীবন্ধন। 

হাতের কব্জিতে সুরের রৌশনি, কপালে চন্দনের ফোঁটা 
ভোরের বাতাসে দেবব্রতের কন্ঠে রবীন্দ্রনাথ 
শুধু তুই নেই
আমার রাখীবন্ধন, হাহাকার ডাক।



 প্রাণ দাও ভরিয়ে
  দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়


তোমার বাড়ানো হাতে
জীবন থাকে অমলিন
ছেলেবেলা গুটি গুটি পায়ে এসে দাঁড়ায়
তোমার শাড়ির আঁচলে
টলোমলো জীবনে তুমি এক আকাশ ভরসা
উত্তাল বেহিসাবি জীবনের এক কঠোর শাসক
ভেঙ্গে পড়ার সময় তুমিই জ্বালিয়েছো এক বুক আগুন
সঠিক ঠিকানার সন্ধানে ছিল তোমারই বাঁধন
ছুটে চলার সময় তুমিই ছিলে সতর্ক প্রহরা


আজ যেখানে উন্নত আমার শির
সেখানেই তুমি জেনো জেগে আছো দীপশিখা স্থির

তুমি থাকো এভাবেই
আমার মনের গহীনে কান্ডারী হুশিয়ার
ধূসর জীবনে দিদি-স্নেহের এক মরুদ্যান
তোমাকে দিদি নয়,মা হিসেবেই বেশি পাওয়া
তপ্ত গ্রীষ্মের এক শীতল নিবিড় ছাওয়া



                 
সম্পর্ক—এক দুই তিন...
সমাজ বসু

নির্দিষ্ট কোন মাস কিংবা তিথি ছাড়াই এক অটুট আড়ম্বরহীন বাঁধন ছিল---
ইজিচেয়ার,কুয়োর বালতি আর লন্ঠনের মৃদু আলোয়।

এখন বর্ষার সাময়িক রোদের মত উঁকি দেয় সম্পর্ক---
ক্যালেন্ডারের তারিখ জানে---
এত রং,এত আয়োজনে এই বিজ্ঞাপিত লৌকিক ভালবাসা,
উৎসবের রাত শেষ হলেই---
ঘড়িহাত ছিঁড়ে শিথিল পড়ে থাকে টেবিলের কোণে,
কিংবা কুড়িয়ে নেয় খেলাচ্ছলে কোন দুঃস্থ শিশু।

সম্পর্ক--এক দুই তিন...





উৎসব
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়

নিরানন্দ থেকে পাওয়ার উৎসবে ।
বেশ লাভ হয় আর চাওয়ায় থাকে
না । নাচ দুই হাত তুলে মুক্ত করে
বন্ধন আর সে আত্মারাম 

মদালসা দোলা দিতে দিতে গাইছে
ত্বমসি নিরঞ্জন । নষ্টবুদ্ধি থেকে 
চলেছি নিষ্পাপ আত্মায় । মায়ের
সন্তান মা ই হাত ধরে চেনাচ্ছে আয়না

নারদের বীণা বাজছে ব্রহ্মলোক থেকে মর্তলোকে । কেটে যাচ্ছে
গেরো । নকল আচার বিচার পেরিয়ে
অনুরাগ সংগীতে গোপীরা খেলছে
ঝুলন প্রাণবল্লভের সাথে

থেমে থাকছে না এ রাগের দোলা রূপ থেকে অরূপের পথে






আমার "রাখিবন্ধন "
 বিশ্বজিৎ রায়

'সাবিনা' নামে যে মেয়েটা প্রতিদিন কাকভোরে উঠে 
 চার বাড়ির ঠিকে কাজ করতে যায়,
যে 'পুটুর মা' তিন বাড়ির রান্না সেরে সূর্য মাথায় রোজ বাড়ি  ফেরে,
যে নার্স  শ্যামলীদি, ঘর-সংসার-জীবনের মায়া ছেড়ে 
দিনের পর দিন কোভিড হাসপাতালে 'ডিউটি' করে যায়----
আজ তাদের হাত থেকে আমি রাখি পরবো, নির্দ্বিধায় ....

কমলদা মারা যাওয়ার পর যে কণিকা বৌদি 
উদয়াস্ত সেলাই মেসিন চালিয়ে সংসার চালায়,
যে গ্র‍্যাজুয়েট চন্দনা, বাড়ি বাড়ি " হোম ডেলিভারি " দিয়ে চার ভাইবোনের সংসারে জোয়াল টানে, 
শুভ্রা, অন্বেষা,  যারা 'রেড ভলেন্টিয়ার'-এর কাজ করে পাড়ায় পাড়ায়, 
রবীনদা পঙ্গু হয়ে যাওয়ার পর যে শেফালী বৌদি ছেলেমেয়েদের মুখে অন্ন জোটাতে  'কাজে' বেরিয়ে যায় প্রতি সন্ধ্যায়  ----
আজ ওদের সবার সঙ্গে আমি ফুল-মিষ্টি-উপহারে "রাখিবন্ধন  উৎসব " পালন করবো, বিনম্র শ্রদ্ধায় ....




অথঃ রাখি-বন্ধন কথা 
গোবিন্দ মোদক 

পুরাকালে দেবতারা একদা পড়লেন বিপাকে, 
গত্যন্তর না দেখে স্মরণ করলেন মা'কে। 
অসুরদের ক্ষমতার কাছে দেবতারা হীনবল, 
যুদ্ধ করলে হিতে বিপরীত হতে পারে ফল।
পার্বতী তখন সুতো বাঁধলেন সব দেবতার হাতে, 
বিপদ থেকে দেবতারা রক্ষা পায় যাতে। 
রক্ষা-বন্ধন নামে তা সদা-স্বীকৃতি পেলো, 
দেবতাদের থেকে তা মনুষ্যসমাজেও এলো। 
কালক্রমে 'রক্ষা-বন্ধন' -- 'রাখি-বন্ধন' হলো,
রঙে-রূপে-বৈচিত্রে তা আধুনিক রূপ পেলো। 
পরবর্তীতে রবীন্দ্রনাথ রাখি-বন্ধনের হোতা, 
হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতিতে রাখীর পবিত্রতা। 
ভাই ভাইয়ের হাতে বাঁধবে শুভকামনার রাখী, 
মানবিকতার আকাশে উড়বে ভ্রাতৃত্বের পাখি। 
এসো আজ জাতি-ধর্ম বিভেদ ভুলে যাই, 
আদর করে একে অন্যকে রাখী-টা পরাই। 
সার্থক হোক রাখি-বন্ধন, সবাই হোক সাথী, 
ঘুঁচে যাক জাতের নামে যতো সব বজ্জাতি।।




পাখির রাখি
বিকাশ পণ্ডিত

বাঁধবো রাখি ,বোন বললে -কী দিবি রে দাদা;
মনাই এবার জামা পেলো দুধের মতো সাদা। 
তার উপরে চুমকি আছে, হলুদ হলুদ ফুল ;
ভেরি নাইস, ফ্যান্টাস্টিক, একটুও নয় ভুল। 

জানি আমি কিপ্টা  আছিস, যা দিবি তুই দে না ;
দেখবে বলে দাঁড়িয়ে আছে টুকাই - টুকি  হেনা। 
বাইরে গিয়ে আয় দেখে আয় ওরা কেমন  খুশি ;
ল্যাপটপও গিফট পেয়েছে  ,আমারই সই  টুসি। 

ও দাদাভাই  , মুখটা রাখিস   নইলে হাসবে আঁখি;
পাঁচটা তো নয়  , দশটাও নয় --একটাই বোন পাখি। 
মুচকি হেসে বললে দাদা, ভাবিস না রে বোন --
তোর জন্যে এনেছি আজ নতুন সেলোফোন। 
আরও আছে, মোড়ক ঢাকা --গেস করত পাখি--
'গীতবিতান' গানের সুরে দে বেঁধে তুই রাখি। 




ঈশ্বর প্রাচীর ভাঙ্গেন ফুল দিয়ে
নিমাই জানা

জাতপাতের আগুন লিঙ্গহীন মিশ্র ভগ্নাংশ জানালা দিয়ে উড়ে যায় সাদা পায়রা
সীমান্তের পারে শুকনো অভুক্ত মুখ দু-চারটি আখরোট ফুল, বারুদের গন্ধ ভুলে গীতা পাঠ করছেন সাবানা ইয়াসমিন ও সীতাদেবী
অন্তর ধুয়ে যাক হলুদ মানুষের চৈতন্য ফুল আমাদের শরীরে লাল মাকড়সার অনিষিক্ত ডিম ছিল না , মানুষেরা মোক্ষবাহু নিয়ে হেঁটে যায় শিবালিক মহাজন পদের দিকে
আমিই একটি গির্জা , একটি মসজিদ , একটি কবরখানা , ডিভাইন রিলেশনশিপ
প্রার্থনার সমবেত ধ্বনি উচ্চারণ উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের মতো , আমার ফাইব্রয়েড চোখে ধ্রুবতারা আঁকতে আঁকতে বসে পড়ি গঙ্গার পবিত্র জলের ধারে ,মায়াকাঞ্চন

আমরা কেউ সাম্প্রদায়িক ধূপকাঠি নয় , ধান দূর্বার মঙ্গল ঘট রাখি দরগায় , রামকৃষ্ণে 



অটুট আলপনা 
জয়দেব মাইতি 


ভালোবাসার আগল খুলে, হাতে হাত দুটো  হৃদয়ের।

জম্ম জন্মান্তরে শুধু নয়-
রক্তের সম্পর্ক কিংবা বংশ পরিচয়ের সূত্রে  পাওয়া নয়-
শুধু প্রগাড় হৃদয়ের টানে,
জাত- পাত -ধর্মের বেড়া ডিঙিয়ে গেঁথে ওঠে মালা।

অনাদি অনন্ত কাল ধরে, সেই  রাখি
রৈখিক বন্ধনে বেঁধে চলছে আমাদের। 

সে যতই রঙিন কিংবা  মিহি হোক, 
ছিঁড়ে ফেলা ভীষণ কঠিন-----




এসো সবে রাখি উৎসবে
 ড. রমলা মুখার্জী

ঘুচুক কালো, জ্বলুক আলো
               মনে মাখি চন্দন -
সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির আলোয়
             শুভ হোক রাখিবন্ধন।
এসো সবাই হাত মেলাই
            গাই মহামিলনের গান-
হিন্দু, মুসলমান, জৈন, পারসিক,
            বৌদ্ধ, খ্রিস্টান।
এই শুভ ক্ষণে, খুশির প্লাবনে
          মুছুক সব ক্রন্দন।
      শুভ হোক রাখিবন্ধন।
ভারতবাসীর একটি যে জননী
          মহিয়সী ভারতমাতা-
দেশপ্রেমে দুলে হৃদয়-দুয়ার খুলে 
    বাঁধি রাখি ভগিনী-ভ্রাতা।
সত্যের শিক্ষায় ত্যাগের দীক্ষায়
          জাগুক ন্যায়ের স্পন্দন।
           শুভ হোক রাখিবন্ধন।





রাখিবন্ধন 
বিকাশরঞ্জন  হালদার 

এই বন্ধনে মুক্তির আবাহন। হৃদ্-ছায়া রঙে কথা বলে ওঠে হাত। হাতের তালুতে হৃদয়-বিপুল হাওয়া। সমীপে সাগর দিগন্ত  অনুগত। মুছে যায় যত মিছিমিছি মুছে যাওয়া .......








রাখি
অভিজিৎ দত্ত

বোন যখন দাদাকে ভালোবেসে
দেয় রাখি পরিয়ে
দাদাও তেমনি বোনকে
আশীর্বাদে দেয় ভরিয়ে।

দাদা মন থেকে কামনা করে
বোনের যত বাধা-বিপত্তি 
যায় যেন দূরে সরে 
বোন যেন বাচঁতে পারে 
মাথা উঁচু করে।

রাখির ইতিহাস স্মরণ করায়
বোন-দাদার ভালোবাসায় 
রাখি এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ।
যে বন্ধন থাকে
একে,অপরের মঙ্গল কামনায়, 
বেঁচে থাকুক রাখী 
সকলের শুভ কামনায়।


রাখিবন্ধন 
সুব্রত চৌধুরী 


রাখির দিনে খুশির বীণে
রাখি পরায় হাতে,
ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে
প্রীতি প্রেমে মাতে।
খুশির পালে লাগে হাওয়া
খুশে মাতে বোনে,
খুশির সিকি ঝিকিমিকি
ভায়ের হৃদের  কোণে।

রঙিন সুতোয় বাঁধে বোনে
কব্জিখানা ভায়ের,
 ঘরে ঘরে আলোর রোশনাই
হাসি মুখে  মায়ের 
রাখি বন্ধন বিভেদ ভুলে
 ধর্মে ধর্মে প্রীতি ,
বিশ্ব জুড়ে সুরে সুরে
বাজে প্রেমের   গীতি।





রক্ষা ডোর 
নন্দিনী মান্না

স্নেহ পরশের বরণীয় রীতি
রক্ষা- নিরাপত্তার অক্ষয় প্রীতি
পবিত্র সুতোর ডোরে কত মধুর
শুচি মন মঙ্গল কামনায় ভরপুর
আজীবনের এক অচ্ছেদ্য গ্ৰন্থন
বিশ্বাসী প্রতিজ্ঞায় ভরা সুবন্ধন
চিরাচরিত প্রথার অতীত স্মৃতি
পারিবারিক মিলন- আনন্দ গীতি
মায়া- মমতার বিশেষ অঙ্গীকার
ভাই-বোন- বন্ধু-স্বজন একাকার
জাতি-ধর্ম-বর্ণ, সব একতার তিথি
 চিরকালীন ভেদাভেদ ভোলার বীথি।




রাখিবন্ধন 
সান্ত্বনা ব্যানার্জী 

 মিষ্টি মুখের ভাইটি আমার লাজুক চোখে হেসে,   পরিয়ে দিতো হলুদ রাখি,আমায় ভালোবেসে।
কাছে এসে গা 'টি ঘেঁষে বসতো দিদির কোলে,
চাইতো দিদির মুখের পানে,আদর খাবে বলে।
চুমু দিতাম কপালে তার খুশির ভেলায় ভেসে,
মিষ্টি টুকু খাইয়ে দিতাম কতই ভালোবেসে।
পূর্ণিমারই চাঁদের আলো খেলতো যে তার মুখে,
হাসি খেলায় কাটত বেলা,আনন্দে আর সুখে!
হারিয়ে গেল আকাশ গাঙে,রামধনুতে চড়ে,
খুঁজি আমি সেই আলোমুখ হাজার ভাইয়ের ভিড়ে।







সম্প্রীতির মেলবন্ধন
 ভবানী প্রসাদ দাশগুপ্ত 


শ্রাবণ  মাস পূর্নিমা তিথি
চাঁদের আলোয় সারারাতি,
রাধা কৃষ্ণের  ঝুলন  সাথী
রাখী বন্ধন প্রেমের  রীতি।

কবিগুরুর শুভ উদ্যোগ 
রাখী বন্ধন করে প্রয়োগ,
সম্প্রীতির অপূর্ব সুযোগ
উৎসবের আনন্দ যোগ।

আত্মার সনে আত্মার মিলন
উৎসবের  নাম  রাখী  বন্ধন,
জাগে  সবার হৃদয় স্পন্দন
প্রেমানন্দের  হয়  জাগরণ। 

সবার মঙ্গল  আরাধনায়
হাতে হাতে  রাখী  পরায়,
সবার মাঝে মিষ্টি বিলায়
ভ্রাতা ভগ্নীর মিলন ঘটায়।

রাখী বন্ধন মৈত্রী স্থাপন
বিশ্বভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধন,
সুসম্প্রীতির মহা-মিলন
মানবতার এক নিদর্শন।



জ্যোৎস্না মাখা রাখি
বিমল মণ্ডল 

আজ ভোরের দরজায় এসেছিল পূর্ণিমা জীবন 
বলল,সে এক আনন্দ আছে
হাতে হাত পাতো তুমি আবারও সহদরের কাছে

প্রিয় বন্ধন সুরে শ্রাবণভোরে জন্ম নিলে সম্পর্ক 
ফুটপাত থেকে রাজপথে 
চেয়ে থাকা অশ্রুভারে অবোধ ছেলে - মেয়ের বেঁচে থাকা 

আজও তারা জানে নি ভাই-বোন — চেনে নি পূর্ণিমা রাখি
অনাহারে শুয়ে থাকা প্রাণোচ্ছল মন
বাতাসে উড়ে আসা  রঙিন সুতো,ধূপগন্ধী  — নীরবে জোড়ায় হাতে

মায়ের মুখে রাখি পূর্ণিমার গল্প ফুটপাত জুড়ে 
দূর থেকে  রাখি পরানোর  ধুম ভেসে আসে
জ্যোৎস্না রঙ? ফুটপাত? রাজপথ? জ্যোৎস্না মাখা রাখি? আলোর রোশনাই? — আধোমুখে পুলকিত হয়,অশ্রুতে ভেসে যায় ফুটপাত। 












সবাই কে  অঙ্কুরীশা-র  পক্ষ থেকে শুভ রাখিবন্ধন উৎসবে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন