সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৪

আজ প্রকাশিত হল.... অঙ্কুরীশা-র পাতায়... প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণে - বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্মরণ সংখ্যা অঙ্কুরীশা-র পাতায় কবিতায় শ্রদ্ধাঞ্জলি।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 


 প্রাক্তন  মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্মরণে -


মাননীয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য  স্মরণ সংখ্যা 

------------------------------------------------ 


অঙ্কুরীশা-র  পাতায়  কবিতায়  শ্রদ্ধাঞ্জলি 







কলমে—


অমিত কাশ্যপ 

বিশ্বজিৎ রায়

বিকাশ চন্দ

সঞ্জয় সাহা

জয়শ্রী সরকার 

মহাদেব চক্রবর্তী 

মঞ্জির বাগ

স্মৃতি শেখর মিত্র

সমাজ বসু

বিমল মণ্ডল 





সততার শুভ্রপ্রতীক

অমিত কাশ‍্যপ


আটতলার ওপর দিয়ে গঙ্গাকে দেখলাম 

অনেকদিন পর, এত ওপর দিয়ে গঙ্গাকে দেখার

সৌভাগ্য হয়নি কখনো, স্রোতসিনী

অন্য পাড়ে বৃহৎ বৃহৎ অট্টালিকা

আকাশ ফুঁড়ে আছে, উত্তরে সাবেকি রবীন্দ্রসেতু

দক্ষিণে বিদ‍্যাসাগর সেতু, হাওড়াকে জুড়ে রেখেছে 

গড়িয়ে গেলেই বেনেপোল, কী সহজ হয়ে উঠেছে 

শিবপুর, ক‍্যারি রোড, খুলে উঠেছে বাগনান, আন্দুল, মৌরিগ্রাম

দূরে দূরে কারখানার ধোঁয়া ওড়ার চিমনিগুলো অদৃশ্য প্রায়

বুকটা ছ‍্যাৎ করে ওঠে, তবে কি কারখানাগুলো নিশ্চিহ্ন হল


আপনি কারখানার পক্ষে, কারখানা লাগোয়া অনুসারি শিল্প 

কত মানুষের স্বপ্ন হবে, রুটিরুজি হবে 

ভুলভ্রান্তি জীবনের একটা বিচ্ছিন্ন পৃষ্ঠামাত্র

সততার শুভ্রপ্রতীক মাথা থেকে পা পযর্ন্ত 


ক্ষমা করবেন  

বিশ্বজিৎ রায়

 

আপনি রাজনীতির মানুষ ছিলেন না

আপনি ছিলেন গান-কবিতা-ছবির মানুষ,

তাই, রাজনীতিত আপনাকে সফল  হতে দেয়নি —

আপনি যদি রাজনীতির মানুষ হতেন, তাহলে এতদিনে

আপনার ও আপনার আত্মীয়দের অনেক

গাড়ি-বাড়ি-হোটেল-রিসোর্ট, টাকা হতো,  সর্বোপরি আপনি প্রতিদিন

ঝুরিঝুরি মিথ্যা কথা বলে জনগনকে ভুল বোঝাতে পারতেন,

প্রতি বছর লণ্ডন-দুবাইতে ছুটি কাটাতে যেতে পারতেন,

দুর্নীতি- খুন--ধর্ষন ইত্যাদি আপনার লাছে লঘু ঘটনা বলে মনে হতো—

আপনি এসব কিছুই পারেননি বলে 

ধুরন্ধর রাজনীতিক হিসাবে আপনাকে

শূন্য দেওয়া ছাড়া আমাদের আর উপায় নেই ---

 

তবে হ্যাঁ, আপনার কাছ থেকে শিখেছি,

একজন কম্যুনিষ্টের জীবন কেমন হতে হয়,

এস ইউ ভি  গাড়ি, হাজার পুলিশের কনভয়, লাখ টাকা দামের আইফোন

বাদ দিয়ে একজন রাজনীতিকের জীবন কেমন  সাদামাটা হতে পারে ---

সাদা পোশাক পরলেই হলনা,

সেই সাদা পোশাক  কীভাবে কলঙ্কহীন সাদা রাখতে হয়

সেটিও আপনি শিখিয়ে গেছেন।

পুরনো ,ছেঁড়া জুতো ছেড়ে নতুন জুতো পায়ে কীভাবে দৌড়াতে হয়

সেই প্রচেষ্টাও আপনি দেখাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু

অন্ধ শত্রুতায়  আমরা সেদিন আপনাকে ভুল বুঝে

টেনে-হিঁচড়ে ট্র্যাক থেকে সরিয়ে দিয়ে এক ‘ট্র্যাজিক হিরো’-তে

পরিণত করেছি ।

আপনার শেষযাত্রায় তাই, অশ্রুভেজা লাখো মানুষের

একটাই আর্তি ছিল – ‘ আপনি  আমাদের ক্ষমা করবেন’ …

 




 

ইতিহাসের মুখ ভবিষ্যের পাতায়
বিকাশ চন্দ

শুদ্ধ হৃদয়ের একটি শুভ্র মানুষ 
মাটি ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে 
দেখেছিল আত্মার দর্পণে আলো মুখ 
মানবিক সংগ্রামে সমুন্নত শির 
খুঁজেছিল নতুন প্রজন্ম 
কেউ কেউ দেখেছিল বিলিয়ে দেয়া নশ্বর জীবন 
শেষ দিনের দরদী শরীর ও হৃদয় 
আজীবন রয়ে গেল মানব মন্দিরের পূজায় 

কৃষি শিল্পের মেলবন্ধন ছিঁড়ে দিয়েছিল হৃদয়ের পাটাতন 
কেউ ফিরে দেখেনি এপার ওপার বাঁধন 
চির শ্বেত শুভ্র সমুজ্জ্বল তিনিই বুদ্ধদেব 
ভাষা জাতি ধর্ম বিভেদ নয় 
তিনি আজীবন পূজারী মানব আত্মার
ঈশ্বর  দেখিনি দেখেছি শুদ্ধ মানব 

যারা শুনতে চেয়েছেন শুনেছেন সাম্যের বাণী 
প্রশাসনিক চেয়ারে দেখেছি 
কখনো সন্ন্যাসী কখনো স্বপ্নদ্রষ্টা কবি 
দু'চোখের উজ্জ্বলতায় এই বাংলার ছবি 
দেখেছেন অনিচ্ছুক দ্রোহ কাল 
তবুও অশান্ত সময় ও জানতো 
ইনিই চিরকাল সমুজ্জ্বল থেকে যাবেন 
তিনিই ইতিহাসের মুখ ভবিষ্যের পাতায় 






কমরেড
সঞ্জয় সাহা 

হাঁটতে হাঁটতে দ্যাখো মানুষ 
যেতে যেতে তো একদিন ফুরোবে...
চিরদিন তুমি  ছাতা ধরে থাকো
বাকিরা সে পথে বৃষ্টি কুড়োবে

এত সুগন্ধ পথে এত ব্যপ্তি 
কমরেড জেগে থাকো চির-শয়ানে
এ স্মরণ  থাক চির পথিকের পথে
ওই লাল সেলামের দৃঢ় বয়ানে



বিবেক প্রদীপ 
 জয়শ্রী সরকার 


পশ্চিম আকাশে সূর্য ডোবার আগেই              নিভে গেলো আমাদের বিবেক প্রদীপটা।        চলে গেলে একবুক যন্ত্রণা নিয়ে হে প্রণম্য ! মনে হয়, যেন --- না-থামা কোনো নাগরদোলায় চেপে 
পাড়ি দিলে তুমি চিরকাঙ্খিত সেই স্বপ্নের দেশে, 'যেখানে বাঁচবে সবাই রাজার মতো!' 

সার্থকনামা তুমি। 
ক্রোধ-দ্বেষ-ঈর্ষা-লোভ সবকিছু থেকে দূরে 
সাদামাটা সৎ-সাধারণ সুশিক্ষিত লড়াকু যাপনে 
'দশ-বাই-দশ' ঘরে বিবেকের আলো 
জ্বেলে রেখেছিলে তুমি --- হে প্রণম্য !
অন্তরে-বাহিরে পবিত্র শ্বেতশুভ্র তুমি,
শিল্পী তুমি মনেপ্রাণে । স্রষ্টা তুমি।   
এত অক্ষর-পিরামিড গড়েছ, তবু ---     আত্মপ্রচারের ছিল না কোনো কাটআউট, 
সংস্কৃতির আলোয় জ্যোতির্ময় তুমি !
তোমার 'দুঃসময়' আজও সময়ের কথা বলে। 
দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এ-বঙ্গে শিল্প গড়তে চেয়েছিলে, মেঘলা আকাশে ভেস্তে গিয়েছে সব। 
কত না কলরব ! 

ভাগ্যবান তুমি। কেউ সুখ্যাত হয়ে বিখ্যাত হয়, 
আর কেউ কেউ.......
শেষের সারিতে নও তুমি। 
তোমার সাদা পোশাকে লাগেনি এতটুকুও কাদার দাগ ! 
পরম শত্রুও মনে মনে শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে তোমার আদর্শকে। 

জানি, এ-দেহ নশ্বর। তবু দ্যাখো -----
নাম-না-জানা কত অসংখ্য মানুষ তোমায়        নিঃশর্ত ভালোবেসে ফেলেছে। এ যে সব পাওয়ার পরম পাওয়া। 
একবারই দেখেছি তোমায়। খুব কাছ থেকে। 
স্মৃতির সারণি বেয়ে ------
যতদূর মনে পড়ে, ২০০২-এ,
খড়গপুর স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম। ওখানেই অফিস আমার। 
ট্রেন থেকে নেমেছ। সঙ্গে সঙ্গে ছুট্টে গিয়ে 
ভীড়ের মাঝেই আমার সদ্য প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 
'বেশ তো আছি সর্বনাশে' তোমার হাতে দিয়েছিলাম গভীর নম্রতা আর শ্রদ্ধায়। 
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম ----
ব্যস্ত তোমার চলে যাওয়ার দিকে 
যতক্ষণ না একটা বিন্দুতে মিলিয়ে যাও......!
শুভ্র-ধবল সেই ছবিটাই স্ফটিকস্বচ্ছ হয়ে        এখনোও আমার চোখের ভাসছে, ঠিক যেন 
দুধসাদা ধুতি আর পাঞ্জাবি পরে বাবা হেঁটে 
চলেছে স্কুলের পথে !
আজ মনে হচ্ছে, দ্বিতীয়বার পিতৃহারা হলাম।
তবু বলি, মৃত্যুকথারা চলে যাওয়া শুধু না যে 
              মৃত্যুঞ্জয়ী জীবনেরই সুর ভাজে !

নতুন দেশে রাজার মতো থেকো তুমি, তোমার স্বপ্নের না-ফোটা ফুলগুলোকে ফুটিয়ে তুলো,  উন্নত-শির, হে প্রণম্য ! 
রক্তিম শুভেচ্ছা নিও। 

হৃদয়তান্ত্রিক উচ্চারণে -----
তোমারই গুণমুগ্ধা.......
জয়শ্রী সরকার।




অসমাপ্ত কাহিনী 
মহাদেব চক্রবর্তী 


কৃষ্ণচূড়া শিমুল পলাশের আহ্বান 

কান পেতে শুনতে শুনতে গোল্লাছুট।

পাহাড় নদী জঙ্গলের মাটিতে আঁচড় 

কেটে কেটে চেনা,তার রূপ রস গন্ধ।

বন্ধুর পথ,চারপাশে হিংস্র জন্তু জানোয়ার।

আঘাতে আঘাতে জর্জরিত,তবুও ভয়হীন।

শুনতে পেয়ে যৌবনের ডাক,পেতেছিল 

অঙ্গন জোড়া ভালোবাসার আঁচল।



সাদা পাঞ্জাবি

মঞ্জির বাগ 


প্রতিদিন আমাদের বাড়িতে কলতলায় 

বাদ বিবাদ সম্বাদ। 

সাদা পাঞ্জাবিতে ভিন্ন ধরনের দাগ। 

দাগ হীন পাঞ্জাবি যেন আমরা দেখিনি 


শুভ্র পাঞ্জাবি পরা শুভ্র কেশের এক মানুষ হেঁটে আসছে

তার সাদা পাঞ্জাবির উপর ক্ষমতার দানব কালো ছাপ একে যেতে পারেনি। 

ক্ষমতা দখল তার সৃজন চিন্তায় কালিমা এঁকে যেতে পারিনি। 

তার কলম থেকে যেমন বেরিয়েছে প্রশাসনের নির্দেশ। 

সেই কলমে আবার লেখা হয়েছে গদ্য কবিতা নাটিকা। 

মানুষটি সংস্কৃতি হারাতে পারেনি।

ক্রুর রাজনীতিক সম্ভব ছিল না বোধহয় 

সুজন সৃজন এই মানুষটি পাঞ্জাবীতে

কখনো রং লাগাননি। 

ফুলের জলসায় যেতে যেতে সবাই বলছে মানুষটি বড় ভালো ছিলেন।

অনেক মানুষের ভিড়ে সাদা রং জেগে আছে





                             
কমরেড
স্মৃতি শেখর মিত্র

বুদ্ধবাবুর সঙ্গে তপস্বী বুদ্ধদেবের তুলনা করা 
অনেকাংশেই সমীচীন। তপস্বী বুদ্ধদেব 
রাজার দুলাল হয়েও পার্থিব পৃথিবীর
মোহ মায়া থেকে দূরে থেকেছেন।
সবকিছু পরিত্যাগ করে এগিয়ে চলেছেন
মহা নির্বাণের পথে। বুদ্ধবাবুও সংসারে
থেকেও একমাত্র মানব কল্যাণে ব্রতী হয়েছেন।
উদাসী বাউলের মতো তিনিও সবকিছু পরিত্যাগ
করেছেন। জাগতিক সব গুণগুলি তাঁর জীবনে
প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন তিনি। যাঁর শেষ
যাত্রায় লক্ষ মানুষ সামিল। সততা, করুণা এসব
সদগুণ তাঁকে মানুষের হৃদয়ের রাজা করে
রেখেছেন। তাঁর মূল্যবোধ, সততা সবকিছুর উর্দ্ধে।

তাঁকে আমার সেলাম ( লাল) জানাই।



সাদা পোশাকের মানুষ
সমাজ বসু


শ্বেত পাথরের কোন মূর্তি নয়---
সাদা পোশাক পরিহিত একজন মানুষের কথা,
আজীবন যাঁর মননে ছিল ---
লাল পতাকার আদর্শ ও মতবাদ।
কু-সংস্কৃতির ছায়া থেকে যোজন দূরে ছিল 
যাঁর অবস্থান।
অক্ষরবৃত্তে প্রদক্ষিণরত নিতান্তই সাধারণ এক মানুষ 
জীবদ্দশায় বুনে চলা অসমাপ্ত শিল্পের স্বপ্ন-চাদর গায়ে জড়িয়ে
চলে গেলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে---
শুধু তাঁর অসংখ্য অনুগামীর অন্তরে রয়ে গেল 

কোন এক শ্বেত পাথরের মূর্তির পবিত্র স্মৃতি।




তোমার সতর্কবাণী 
বিমল মণ্ডল 

সেদিন,তোমার  সতর্কবাণী  কেউ-ই  শোনেনি 
তবু, অসঙ্গতি শিখা নেভাতে  বহু চেষ্টা করে গেছ তুমি
শিল্প,চাকরি, তরুণ প্রজন্মের চিন্তায় কেটেছে সময়
শুধু হিংসাতন্ত্র  পেছনে পেছনে 
টের পাওনি,নদীর বাঁকও সরে গেছে কোথায়, কখন 
কখন বা বন্ধ হয়ে গেছে মাঝিদের গান
শোনেনি  বা উন্নাসিক কিছু — শোনেনি  সে সতর্কের বাণী 
বরং ক্রমশ বেড়ে গেছে চক্রের দোর্দণ্ড প্রতাপ
মানুষের জন্য তোমার চাওয়া 
নি:সঙ্গ হয়ে গেছে ধীরে
অসহায় বিবেক আজ কাতর

আজ দুর্নীতি  খাচ্ছে অবিরাম, চৌ প্রহর কথা বলছে আড়ালে দলবাজ
প্রতিদিন বিষণ্ণ, নি:সঙ্গ হয়ে যাচ্ছে জনতা মনের আকাশ 
তবুও কারোর ভ্রুক্ষেপ নেই , নেই কারোর  চোখ-

তবুও তুমি রেখে গেলে  ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে 
নতুন ভোরের প্রশ্ন! 










কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন