আজ ভারতের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস
অঙ্কুরীশা-র পাতায় প্রকাশিত —
কলমে —
অমিত কাশ্যপ
বিকাশ চন্দ
রূপক চট্টোপাধ্যায়
সমাজ বসু
প্রদীপ্ত সামন্ত
দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়
দুরন্ত বিজলী
রমলা মুখার্জী
সমর আচার্য্য
জুলি লাহিড়ী
সুদীপ কুমার চক্রবর্তী
বাপ্পাদিত্য দে
মলয় কুমার মাঝি
গোবিন্দ মোদক
দেবপ্রসাদ জানা
পুষ্প সাঁতরা
বৈদূর্য্য সরকার
বিশ্বজিৎ রায়
শান্তনু ঘোষ
হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়
বিমল মণ্ডল
স্বাধীনতা
অমিত কাশ্যপ
রবীনবাবু ইতিহাস পড়াতেন, স্বাধীনতার অধ্যায় প্রিয় বিষয়
পড়াতে পড়াতে কোথায় চলে যেতেন
মাতঙ্গিনী হাজরা, বীণা দাস, বিনয় বাদল দীনেশ
কখন যেন তাঁর কণ্ঠ রুদ্ধ হত, চশমা মুছতেন
অনেক পরে জেনেছি, বাবা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী
জেল খেটেছেন, অত্যাচার সয়েছেন বৃটিশদের
দেশের শৃঙ্খলামোচন ছিল তাঁর আর্দশ
পালিয়ে পালিয়ে ঘুরেছেন দেশের নানান প্রান্তে
পনোরোই আগষ্ট ছিল রবীনবাবুর প্রিয়দিন
সকাল সকাল স্কুলে আসতেন, পতাকা তুলতেন
ভাষণে দু'এক কথা বলতে বলতে বসে পড়তেন
তেরঙা পতাকাকে জড়িয়ে কত শহিদের স্মৃতি
স্বাধীনতা সংগ্রামী বাবাই এখন ইতিহাস, একটা অধ্যায়
বন্দেমাতরম ধ্বনির মধ্যে প্রণাম জানান রবীনবাবু
প্রসঙ্গে ৭৭ বছর
রূপক চট্টোপাধ্যায়
হাট খোলা দূর আকাশের নীলে
চিল বোনে রোদ কথা।
তোমার আমার শেকলে বাঁধা
সুখে থেকো, স্বাধীনতা!
আল্লারাখার তবলার বোলে
খুলে যায় চোখ পূবে।
এখানে এখনো শঙ্খ ধ্বনিতে
পশ্চিমে দিন ডোবে।
সেগুনের রেণু, ছাতিমের সারি
ভবঘুরে ছায়া মেঘে।
চণ্ডীদাসের পদাবলী স্রোতে
রামি থাকে একা জেগে।
নব দূর্গারা, মা হয়ে যায়,
শিব ঘোরে পথে ঘাটে।
এখানে দেবতা,চমড়া কালো
চড়া রোদে ধান কাটে!
নদীর বাঁধন,সবুজ সীমানা
পরিধিতে ট্রেন, সাঁকে।
স্বাধীন তুমি বুনো ফুল হয়ে,
ষোড়শী খোঁপায় থাকো।
টোটো রিকশার চাকার তালে
কিশোরের টানা সংসার।
অনুসন্ধান
সমাজ বসু
উনিশ, সাতচল্লিশ আর পনেরো নম্বর লেখা
সেই তিনটে ঘড়া---
তন্ন তন্ন অনুসন্ধান খুঁড়ে পাওয়ার পরও
সেই কাঁটাতার ---
সেই রক্ত, সেই চিৎকার।
আর অদৃশ্য শেকল পায়ে হেঁটে যাচ্ছে---
সেই বিভিন্ন বর্ণের খন্ড খন্ড মানুষগুলো আজও
অমূল্য গুপ্তধনের সন্ধানে।
স্বাধীনতা নিভে গেলে
স্বাধীনতা কে না চায়
প্রদীপ্ত সামন্ত
স্বাধীনতা কে না চায় --
মুক্ত হাওয়া ,পরিচিত গন্ডি থেকে বেরিয়ে
প্রাণভরে একটু গভীর নিঃশ্বাস ;
মাছও জাল ছেড়ে জলে ফিরে যেতে চায়,
পাখি খাঁচা ছেড়ে আকাশে - বন্দী ;
লোহার গরাদ ভেঙে বাইরে ...
আবদ্ধ হবে বলে যে সংসার পেতেছিল
সেই সংসারীও সংসার নামক বন্দি দশা থেকে বেরিয়ে এসে একটু অন্য ভাবে কাটাতে চায়; চাকুরিজীবী একঘেয়েমি কাটাতে
ক'দিনের জন্য ঘুরে আসে --
মোদ্দাকথা স্বাধীনতা; স্ব অধীনতা- নিজের অধীনে থেকে ইচ্ছে খুশি মত কাটাতে প্রত্যেকেই চায়;
প্রত্যেকেই ভালোবাসে --উন্মুক্ত বিহঙ্গের
খোলা আকাশের বিচরণ.....
স্বাধীনতা নিভে গেলে
দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়
পা টিপে টিপে পালাবারও জো নেই আজ ;
টের পেয়ে যাবে ঠিক স্বপ্নভাঙা রুঢ় বাস্তবতা ।
হাভাতে সময়ের দায় মেটাতে মেটাতে তাই
ভুলে যেতে বসেছি যেন প্রায়
পুরোনো ও প্রিয় আকাঙ্খারই নাম ---
... স্বাধীনতা !
অনন্ত আকাশের মতো সেও অসীম,
তবু অধরা ...
স্নিগ্ধতম কামনার মতো কমনীয়,
তবুও অনিশ্চয় ...
পা টিপে টিপে পালাবার জো না থাকায়
হাভাতে সময়ের দায় মিটিয়েই চলেছি রোজ ;
টের পেয়ে যাবে ঠিক স্বপ্নভাঙা রুঢ় বাস্তবতা ।
স্বাধীনতা নিভে গেলে চারিদিকে জমে ওঠে
অন্ধকার ও হীনতা প্রচুর ।
ক্ষেদ
দুরন্ত বিজলী
এই যে 'আমরা সবাই রাজা'
রবিঠাকুর বেশ বলেছেন।
রাজা মানে মুক্ত মানুষ,
তার মানে শৃঙ্খলাহীন নয় তো।
তোমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে
আর এক মুক্ত মানুষ প্রতিবেশী,
তার কথাটা, তাদের কথাটা একটু ভাবো।
সেই ভাবনাই গণতন্ত্র, মানবতা যার
পরম সূত্র। তাহলে আমরা স্বাধীনতার
সঠিক মূল্য দিতে পারবো, অনুভবে
নিতে পারবো।
কিন্তু,
রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা পেলাম ঠিকই,
শান্তি ও স্বস্তির জন্য আজও
আমরা লড়াই করি।
মাতঙ্গিনী, ক্ষুদিরাম,ভগৎ সিং, সূর্য সেন
প্রমুখ মহান শহীদদের মহান দানে
স্বাধীনতার পতাকা ওড়ে।
শহিদ বেদীর চারপাশে মহাত্মা গান্ধীর রক্তে ভাসে।
সেই শুরু এখনও রক্তে ভেসে যায় শহিদ বেদীর ভূমি।
মৃত্যু মিছিল এখন চোখে প্রশ্নচিহ্ন আঁকে।
আত্মত্যাগের আত্মভূমি
রমলা মুখার্জী
শত শহীদের সংগ্রাম আর রক্তের বিনিময়ে -
স্বাধীনতার সূর্য উদয় ভারতের মৃন্ময়ে।
লাল-বাল-পাল, শ্রীঅরবিন্দ আত্মত্যাগে মহান-
স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে প্রথম সেই সোপান।
অহিংসা আন্দোলনে মহাত্মাজীর সংগ্রাম-
গডসের গুলিতে নিহত, অমর গান্ধী নাম।
বড়লাটকে মারতে গিয়ে কিশোর ক্ষুদিরাম-
ফাঁসির মঞ্চে রেখে গেলেন জন্মভূমির দাম।
বীর নেতাজী আজাদ হিন্দ্ ফৌজ করে নির্মাণ,
জন্মভুমির কল্যাণে শেষে অজানা অন্তর্ধান!
আজ্ঞাত সেই রহস্যের হয় নি তো সমাধান -
দেশবাসী তবু ভুলবে না তাঁর অমর অবদান।
ভগৎ সিং প্রীতিলতা বিনয় বাদল দীনেশ,
দেশের জন্য সংগ্রামীদের জীবন নিঃশেষ।
গুলি-বিদ্ধা মহিয়সীর মহতী জীবন দান-
বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনীর অমূল্য সে প্রাণ।
সহস্র শহীদের তাজা রক্ত গোলাপে আঁকা-
ভারতের আকাশে উড়ল তেরঙ্গা পতাকা।
জাগো দেশবাসী গাও সবে আসি,"জয় ভারতবর্ষ "-
ত্যাগ-সততা-তারুণ্যে বাড়ুক দেশমাতার উৎকর্ষ।
এত কষ্টে অর্জিত সোনার স্বাধীন ভারতে-
জনগন জেগে উঠুক নির্ভরতার শপথে।
পরনির্ভর হয়ে থাকলে পিছন হাঁটবে প্রগতি -
নিজের বুদ্ধি বলেই বাড়বে জাতির অগ্রগতি।
সবাই তাই হাত মেলাই, বলি "দেশেতে জিনিস গড়ব"-
দেশের মর্যাদা বাড়াতে প্রাণ দিয়ে সব লড়বো।
হানাহানি আর দ্বন্দ্ব দ্বেষ সব ভুলে গিয়ে-
ভারত মাকে করব রক্ষা ঐক্যবদ্ধ হয়ে।
স্বাধীনতা দিবস
সমর আচার্য্য
আমরা স্বাধীন, নহি পরাধীন, আমরা ভারতবাসী
কত শহিদের রক্তে ভেজা আমাদের মুখের হাসি,
বিনয় বাদল দীনেশ ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা সূর্য সেন
কত বীর সন্তানের প্রাণ গেল, রক্তে ভাসলো লেন,
নেতাজি সুভাষ, মহাত্মা গান্ধী ঋষি অরবিন্দ
লেখনী হাতে রুখে দাঁড়ালেন রবি,শরৎ, বঙ্কিমচন্দ্র l
ঘরে ঘরে তখন প্রস্তুত লাখো লাখো সন্তান দল
যে করেই হোক ঘুচাতে হবে দেশমাতার শৃঙ্খল,
হাজার, লাখো ভারত মায়ের বীর সন্তানের কথা
গাণিতিক অঙ্কে মিলাতে তারে অন্তরে লাগে ব্যথা l
তাঁদের সে রক্ত, হলো না ব্যর্থ, এসে গেল সেইদিন
ঘোষণা হলো পনেরই আগস্ট ভারত হবে স্বাধীন,
১৯৪৭সালের ১৫ই আগস্ট আমরা হলাম মুক্ত
ত্রিবর্ণ রঙের পতাকা হাতে, দাঁড়ালো লাখো ভক্ত l
ব্রিটিশ শাসনের অবসান হলো,মুক্ত হলে তুমি
ওগো আমার ভারতমাতা, আমার প্ৰিয় জন্মভূমি
৭৫ তম বর্ষ পূর্তির দিনে ওগো স্বাধীনতা দিবস
ভেদাভেদ ভুলে তোমাকে জানাই সশ্রদ্ধ কুর্নিশ l
'জনগণ মন' গানে আর 'বন্দে মাতরম' মন্ত্র বলে
স্বাধীনতা দিবস পালন করি ত্রিবর্ণ পতাকা তুলে
শৌর্য বীর্য ত্যাগ শান্তি সাম্য আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে
ভারত মায়ের স্বাধীন পতাকা ওড়ে মুক্ত গগনে l
স্বাধীনতা
জুলি লাহিড়ী
কত প্রাণ করে সংগ্রাম, তবেই পেয়েছ আমায়
ছিলাম, থাকবো চিরকাল তোমাদের ভাবনায়
বুকে ছিল জমাট বাঁধা আকুল পিপাসা
স্বাধীনতা আমি, তোমাদের মনের ভাষা
সর্বহারা ভিখারিনীর স্বাধীন চিত্ত ময়
স্বাধীনতা আমি, চিরদিন থাকব অক্ষয়
আছি মনেপ্রাণে তোমাদের নিঃশ্বাসে
সংগ্রামীর কাতর কন্ঠ ভাসে আকাশে বাতাসে
কত প্রাণ গেছে মারা, ভেঙেছে শত মন
হৃদয়ের মনি কোঠায় আছো সর্বক্ষণ।
উচ্চারণ আরও অন্তরঙ্গ হলে
সুদীপ কুমার চক্রবর্তী
উচ্চারণ আরও অন্তরঙ্গ হলে আমাদের
প্রিয় স্বদেশ ভেসে ওঠে চোখের সামনে ।
উচ্চারণ আরও র্নিমোহ হলে
প্রিয় তেরঙ্গা উত্তোলিত হয় আবেগ অশ্রুজলে ।
জাতীয় সঙ্গীত সমস্বরে উচ্চারিত হলে
মন ছুঁয়ে যায় ঐক্যের সুর অন্তরঙ্গ কোলাহলে।
ফিরে আসে আমাদের আশ্চর্য নতুন জন্মকথা
নিঃশ্বাসে প্রাণভরে এ মাটির গন্ধ নিলে।
জেগে ওঠে বিশ্বভাতৃত্বের আন্তরিক চেতনা
সহনাগরিকের কাঁধে সহানুভূতির হাত রাখলে ।
এ স্বাধীনতা শতাব্দীর শত শহীদের আত্মবলিদান
জনগণের বাঁচার নতুন প্রতিশ্রুতি - মুক্তির লক্ষ্যে
মানবতার জয়গান।
শেষ রঙ
বাপ্পাদিত্য দে
আকাশের কাছে জান্তে চেয়েছিলাম
তুমি এত রঙ বদলাও কেন ?
আমি চাইলেও প্যালেটের বাড়তি ঘর
আমায় কেউ জুগিয়ে দেবে না।
বিছানার পাশে ভিজে যাওয়া
ভাঙা স্বপ্নগুলো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে
অতিরিক্ত রঙের মিশ্রণে।
এখনও কি নীরবতা ফেরত দেবে না ?
তোমার নীরবতা ভেঙে দিয়ে
বিষাদের মেঘ চিরে
আনন্দ অশ্রুকে এক করেছি,
নদীর বুকে সাঁতরাব বলে।
আকাশ বলেছিল---
নিশ্বাস নেওয়ার অধিকার থেমে গেলে
শুধু ধূসর পড়ে থাকবে
তবে আর রঙিন আকাশ নিয়ে
এত আকাঙ্ক্ষা কেন ?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন