বৃহস্পতিবার, ৬ জুন, ২০২৪

।প্রতিদিন বিভাগ।। ।। জুন সংখ্যা।। ।। বিষয় - মুক্ত (গুচ্ছ কবিতা) -৭।। স্বাগতা ভট্টাচার্য -র কবিতা।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 




          ।।প্রতিদিন বিভাগ।। 

          ।।  জুন সংখ্যা।। 

 ।।  বিষয় - মুক্ত (গুচ্ছ কবিতা) -৭।।



স্বাগতা ভট্টাচার্য -র  কবিতা 
১.
অসবর্ণ 



সিঁথিতে সিঁদুর আর পায়ে আলতা দিয়ে
রক্ষিত হলো পিতৃকুলের মান।
ছেলেটি স্বজাতি ছিলোনা বলেই
ভাবনার কুঁড়িরা প্রস্ফুটিত হয়নি
গাঁটছড়ার বোঁটায়।
চৌকাঠ ডিঙিয়েই শাড়ির খুঁটে 
বাঁধা পড়লো সংসারের চাবিকাঠি। 
এ চাবিকাঠি স্বপ্নের না-কি স্বপ্নভঙ্গের তা এক্ষুনি স্পষ্ট নয়।
দীর্ঘদিন পাশাপাশি সহাবস্থানে
সেতুবন্ধ  হলেও,
মন আটকে আছে অসবর্ণেই।



২.
উত্তরসূরী 


একটি দীপ জ্বেলে রেখে যেতে হবে।
যে দীপ আমায়  বাঁচিয়ে রাখবে আমি চলে যাওয়ার পরেও। 
 দীপের নরম আলোয় আলোকিত হবে, নির্জন আর সেঁতসেঁতে কানাগলিটিও।
সেই আলোকিত পথ ধরে ঘরে ফিরবে
শতশত অন্ধকারের যাত্রী।
তাই যাবার আগে, 
একটি দীপ জ্বেলে যেতে হবে


৩.
জীবনথেকে 


যেখানে আবাহনের ঘটা নেই 
সেখানে বিসর্জনের বিষাদও নেই।
এক সের জীবনের তিন পোয়া অতিক্রম করে  প্রখর লাগে সূর্যোদয়ের নরম আলোটাও ।   
বৈশাখের মধ্য দুপুর মনে হয়, পড়ে থাকা এক পোয়া জীবনটুকু। 
প্রেমহীন,স্পর্শহীন ছায়াহীন!
তিনপোয়া জীবনের বিলিয়ে দেওয়া 
দুপুরের বিশ্রাম, রাতের ঘুম আর সদ্য প্রসূত মায়ের পেটের খিদে সব উবে যেতে থাকে 'লু' হয়ে!
ফুটিফাটা মাঠের মানচিত্র বহন করে 
প্রেম ছায়া আর স্পর্শহীন শরীরটা!




৪.
রবিপুজো


আমার বিগত শৈশব -কৈশোর -যৌবন 
সবটুকুই রাখলাম তোমার পায়ে।
এখন পড়ে থাকা একভাগ মিলিয়ে নিতে থাকি তোমার  গীতবিতানের পাতা উল্টে।
গান নয়,ছুঁয়ে দেখি আমার যাপিত জীবনের এক-একটি অধ্যায়।
আমার ঠোঁট থেকে ঝরে পড়া মুক্তো আর চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু হিরে নিয়ে গেঁথে নিয়েছো রত্ন হার। 
সাজিয়ে রেখেছ আমারই উত্তরসূরীর জন্য। 
আর এভাবেই পূর্বজদের হাত ধরে আরো কয়েকটি প্রজন্ম নিজেদের খুঁজে পাবে তোমার গীতবিতানের পাতায়।


৫.
উপেক্ষা  নয় অপেক্ষা 


'অপেক্ষা' আর 'উপেক্ষা'রপ্রথম পুঁতি দুটি,
 স্বরবর্ণ রূপে খুব কাছাকাছি অবস্থান করে বর্ণমালায়।
 কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে
তাদের চেহারায় প্রভূত মিল থাকলেও
আসলেই তারা সম্পূর্ণ দুটি বিপরীত অর্থ বহনকারী শব্দ। 
মাত্রএকটি বর্ণের স্থান পরিবর্তন যেমন চীর কালের চেনা মানুষটিকে সরিয়ে নিয়ে যায় সহস্র যোজন দূরে।
আবার কেবল 'অ' সংযোগে মীরাবাঈয়ের মতো কাটিয়েও দেওয়া যায় গোটা একটি জীবন।
তাই জীবনে ' উ'কে উপেক্ষা' করে বেঁচে থাক 'অপেক্ষা '!



৬.
ঝুমকোলতা



উঠোনের এক কোণে জীর্ণ পাচিলটার কোল ঘেঁসে বেড়ে ওঠা ঝুমকোলতার মতো অনাদৃত  জীবনে আশা থাকলেও নেই  অঙ্গীকার! 
উপড়ে ফেলার ভয়ে বুক ক্ষত-বিক্ষত হয় প্রতিনিয়তই। 
 সার-মাটি-জলের প্রলেপ দিতে কখনো কোনো মালি এসে দাঁড়ায়নি। 
অনাদৃত শৈশবের গল্প সারা শরীর জুড়েই। 
পাতার ফিকে সবুজ, র্দুবল কাণ্ড, এমনকি নিম্নাঙ্গের লজ্জা ঢাকতেও নেই পর্যাপ্ত মাটি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন