শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪

।প্রতিদিন বিভাগ।। ।। জুন সংখ্যা।। ।। বিষয় - মুক্ত (গুচ্ছ কবিতা) -২৬।। বিশ্বজিৎ রায় -এর গুচ্ছ কবিতা।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।





      ।।প্রতিদিন বিভাগ।। 


      ।।  জুন সংখ্যা।। 

 ।।  বিষয় - মুক্ত (গুচ্ছ কবিতা) -২৬।।













 














বিশ্বজিৎ রায় -এর গুচ্ছ কবিতা 




 এক 

খোলসবাসী  

 

অনেকদিন খোলসের ভেতর কাটিয়ে

গুটিগুটি পায়ে  একদিন শহরের কাছে এসে দাঁড়ালাম,

শহর আমাকে দেখে অদ্ভুত চোখে তাকালো,

বুঝে নিতে চাইল আমি ঠিক সেই আমি কিনা …


ঝড়-বৃষ্টি-তীব্র শীত-প্রখর গরম থেকে বাঁচতে

আমি যে এতকাল খোলসের ভেতর কাটিয়েছি

সেটা জানার পর  শহর প্রথমেই যেটা

আমার দিকে ছুঁড়ে দিল, সেটা হলো, তীব্র ঘৃণা

তারপর প্রচণ্ড ধিক্কার জানিয়ে বলল --

তোদের মতো খোলসবাসীতে ছেয়ে গেছে সব জনপদ,

তোরা এখন মূক-বধির-মেরুদণ্ডহীন,

আরাম  উপার্জন করার মেসিন মাত্র,

তোদের গাধার পিঠে চাপিয়ে

আমার বুকের ওপর দিয়ে হাঁটানো উচিৎ ---

 

আমাকে প্রতিদিন খুবলে খাচ্ছে যে যার মতো

সারা শরীর আমার নোংরা করে দিচ্ছে, ছড়িয়ে দিচ্ছে

মারণ বিষ , আর তোরা আত্মমর্যাদা-বিবেক

বিসর্জন দিয়ে আমাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে

নিজেরা খোলসে  ঢুকে আরাম করছিস?

 

পারলে, আমাকে বাঁচাতে, নতুন  শপথ নিয়ে

জেগে  ওঠ তোরা …


 

 দুই

খোলসবাসী 

 

সারাদিন অফিস, দোকান, ব্যবসা, সংসার,

প্রেম, পরকীয়া, ছল্লিবল্লি করে, দু-পাত্তর মেরে, 

মাংসের হাড় চিবিয়ে যে যার মতো বিছানায় সেঁধিয়ে যাচ্ছি -

ওদিকে যারা সারা শহরটাকে নিজেদের পুটলির ভেতর

বেঁধে নিয়ে উড়ে যেতে চাইছে, স্নিগ্ধ আকাশী নীল মুছে

বিষ নীল রঙ করে দিতে চাইছে, তাদের চোখে ঘুম নেই,

আধো-অন্ধকার ঘরে দলবেঁধে তারা নানা শলা করছে,

নতুন মানচিত্র আঁকছে, গোপন অস্ত্রে শান দিচ্ছে,

ভয়ংকরেশপথ নিচ্ছে---

 

শহরের  আলো ঝলমল অট্টালিকায় শুয়ে

আমরা কিছুই টের পাচ্ছিনা,

নিশ্চিন্তে নাক ডেকে সবাই ঘুমা্চ্ছি …

 



 তিন

খোলসবাসী 


 

চেয়েছিলাম আইসক্রিমের মতো ঠাণ্ডা

স্নিগ্ধ একটা জীবন

সারাদিন সুশীতল থাকবে  মন

মেজাজটা হয়ে থাকবে সারাজীবনের ‘ফাণ্ডা’—

 

অথচ হলো কী? হু-হু করে ঢুকে পড়লো

মরুভূমির  যত গরম হাওয়া

লণ্ডভণ্ড করে দিল স্নিগ্ধ জীবন গাওয়া

তীব্র গ্রীষ্মের কাছে

নিষ্প্রভ শীত হেরে গেলো

 

 



চার

খোলসবাসী  


 

নিজের ফটোফ্রেমগুলোর ভেতর

নিজেই ঢুকে পড়ে  

খুজি শৈশবের দামালপনা

কৈশোরের আত্মভাবনা

যৌবনের হারিয়ে যাওয়া ছায়া---

তারা আমাকে ডেকে শোনায়

অজস্র হারিয়ে যাওয়া গল্প,

পাহাড় পেরিয়ে উঠে আসা জীবন-সঙ্গীত

নষ্ট পথে দিন কাটানো সন্ধ্যা-সকাল …

 

আমি শুনি আর মুছি, মুছে আবার

নতুন করে আঁকতে চাই সব,

আমার তুলি থেকে অন্ধকার গড়িয়ে নামে,

আমার সঙ্গীতের ভেতর আর্তনাদ গেয়ে ওঠে  …

 

 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন