মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪

প্রকাশিত হল... অঙ্কুরীশা-র পাতায় কবি প্রণাম সংখ্যা।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।












✍🏾সম্পাদকীয় ✍🏾
'মরণ রে, তুঁহু মম শ্যামসমান’। লিখেছিলেন তরুণ রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath Tagore)। ভানুসিংহের ছদ্মনামে ‘মরণ’ কবিতায় মৃত্যুর অনুষঙ্গে ‘শ্যাম’ তথা প্রেমকে খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর কর্কশতাকে অনুভব করতে হয়েছিল তাঁকে। মৃত্যুর মাঝে অনন্তের প্রবাহকে খুঁজে ফিরলেও আপনজনদের হারানোর শোক যে তাঁকেও আকুল করেছিল, তা বোঝা যায় তাঁর  'জীবন স্মৃতি ' নামক গ্রন্থে। বাঙালিরা রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন বলতে ২৫ বৈশাখই বোঝেন। দেখতে গেলে '২৫ বৈশাখ' বঙ্গসংস্কৃতির অন্যতম এক 'আইকনিক ডে'তে পরিণত। কিন্তু বহির্বঙ্গ তথা বহির্ভারতের কাছে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ২৫ বৈশাখ নয়, ৭ মে। কেননা, ১৮৬১ সালের এই দিনেই জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই মহাপ্রতিভাধর সন্তানটি।তবুও আমরা বাঙালি হিসেবে জানি ২৫শে বৈশাখ মানেই   রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন।।  আজ সেই দিন।  সেই বিশ্বকবির আজ ১৬৩-তম জন্মবার্ষিকীতে অঙ্কুরীশা-র কবিতাজ্ঞলি। তাই আমরা অঙ্কুরীশা-য় কবিতার মধ্য দিয়ে  কবিকে জানাই কবি প্রণাম।।




         ।।কবি প্রণাম  সংখ্যা।। 





পঁচিশে বৈশাখ 

তপন বন্দ্যোপাধ্যায় 


আরও একবার ভোরের ঘুম ভাঙায় পঁচিশে বৈশাখে বেজে ওঠা রবীন্দ্রগানের কলি, 'হে নূতন, দেখা দিক আর-বার...:। বহুবার শোনা গান, তবু মন্দ্রকণ্ঠে গাওয়া এই গানের সুরের অন্য মহিমা। চোখ মেলতেই দেখি সামনে রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ ছবি। তাঁর মন-ভালো-করা দুটি চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, 'আজ আকাশে বাতাসে শুধু রবীন্দ্রনাথ আর রবীন্দ্রনাথ।'

দেওয়ান থেকে  ছবিটা নামিয়ে রাখছি ধবধবে সাদা চাদর বিছোন টেবিলের উপর, প্রণাম করে গলায় পরিয়ে দিচ্ছি রজনীগন্ধার মালা, বলছি, 'তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকি। বুঝতে নারি কখন তুমি দাও যে ফাঁকি।'

কিন্তু সত্যিই কি কখনও ফাঁকি দিয়েছে! তোমাকে নিয়েই তো কেটে যায় আমার কত দিন কত রাত। তুমি ছিলে বলেই তো আমি আজ আমি। তুমি আছো শয়নে, তুমি আছো স্বপ্নে, তুমি আছো জাগরণে, সত্তার গভীরে।





একমাত্র আইকন তুমি রবীন্দ্রনাথ

দুর্গাদাস মিদ্যা


  গেঁথো বাঙালির একমাত্র মূলধন তুমি, রবীন্দ্রনাথ
সবেধন নীলমণি।
তাই তোমার জন্মদিনের বাঁশি বাজলেই হাজার উচ্ছ্বাস ঘিরে থাকে নিঃস্ব বাঙালির।
আর তেমন কোন আইকন নেই যার বাজার দর আছে বিশ্ববাজারে।
গত গালাগাল নিঃশব্দে হজম করেছ একদিন,
কেউ কেউ তোমাকে পাপোশ করেছে অন্ধ অহমিকায়।
তারা সব চলে গেছে পর্দার পিছনে
তুমি কিন্তু রয়ে গেছ হেড লাইট হয়ে আমাদের
জাতীয় অন্ধকারে।
তোমাকে প্রণাম জানাবো তেমন অধিকার ও বোধহয় আমাদের নেই এমনই অপদার্থ আমরা।



গুরু মন্ত্রের ধ্যানে
বিকশ চন্দ

১.
বাঁশি ফেলে বসে আছে কালের রাখাল
শুধু জানে বংশীবটের ছায়া
এভাবেই ছুঁয়ে আছে রক্ত করবী 
আলোর বৈশাখ দেখে যাবে চিরন্তন 
কালোর বিসর্জন 
রক্ত ভেজা মন্দির উঠোনে
করজোড়ে বিনীত প্রার্থনা পুজোর দালানে
ভিজে যাচ্ছে করতল বিষের ফেনায়
তবুও তো তোমাকে প্রণাম ঠাকুরের মতো 
শৈশবে কৈশোরে উত্তাল যৌবনে বার্ধক্যে 
এইতো আমাদের চিরন্তন পরম্পরা 
প্রতিদিনই অপলক খুঁজি রবি করে আলোর উজান 

২.

সকল প্রীতিময় মানুষের মুখ
আজও উজ্জ্বল প্রতিদিন আলোয় আলোয়
মুমূর্ষু আত্মায়ও সহজিয়া সুরের উজান
নিয়তির চৈতন্য গোধূলি কোথায়
কোথায় থাকে রসকলি জানে কি কৃষ্ণকলি 
কে জানে আদিকবি বাল্মিকী প্রতিভার ধ্যান
তবে জীবনের মুখোমুখি জ্ঞানে বা অজ্ঞানে
পাশাপাশি প্রতিদিন আমিও ঠাকুর 
পরস্পর গুরু মন্ত্রের ধ্যানে 




আলোকিত তুমি
দীপক বন্দ্যোপাধ্যায়

আলো জ্বেলে বারেবারে আসো ;
অন্ধকারে ভাসো তুমি, চাঁদের মতো ----
তাতে শুধু আলো আর আলো !
স্বভাব রেখেছ ভারি নির্মল, শাশ্বতে সংহত ।

ভালোকেই বেসেছ শুধু ভালো,
কলঙ্ক লাগেনি কোনো তাতে ;
তোমার শরীর যেন কোনোদিন ----
অনন্ত এ-জীবনে, না-হয় আলোহীন !

আমরাও যেন প্রতিদিন, প্রতি ক্ষণে,
সে-আলো তোমার, ভালোবাসি ।



দুই বিঘা জমি
অমিত কাশ‍্যপ

কচি হাত ধরে পিসি নিয়ে যেতেন
সবে মোরাম পড়েছে, গ্রাম‍্য গন্ধ 
সবুজ ছড়িয়ে আছে এখানে সেখানে 
অদ্ভুত এলোমেলো রোদ সকালের

কেউ কেউ যান শহরে তখনই 
সাইকেলের দাগ নরম জমির ওপর 
জল নেবে গিয়ে ঘোলা ডোবায়
কোলাহল প্রিয় বালকের উল্লাশ

আহা, বাসনাপিসি কত জায়গায় নিয়ে যেতেন 
সবার বাড়িতে একটা বড় ছবি থাকত
কৌতূহল থাকত, প্রশ্ন থাকত, কিন্তু 
কোনো কথা হয়নি, পরে বইয়ের পাতায় 

'দুই বিঘা জমি' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর




অথৈ জল
দুরন্ত বিজলী


রুক্ষতম সূক্ষ্মতম দুঃখতম প্রিয়তম
হৃদয়জুড়ে আলোয় আলো শ্রেয়তম
বৃষ্টিঝরা জ্যোৎস্নাকুসুম দৃষ্টিপ্রহর
খুঁজে ফিরি বৈশাখী ঝড় সৃষ্টিলহর
স্রোতের টানে ভাসতে ভাসতে সাগরহারা
বুকের ভেতর তুমি ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ ধ্রুবতারা
কূলকিনারা পাই না তো তাই
অথৈ জলে ডুব দিয়ে যাই
               সারাজীবন ডুব দিয়ে যাই.....
 



জন্মদিনে 

গোবিন্দ মোদক


রবির সমান দীপ্তি যে তাঁর 

তিনি-ই বিশ্বকবি, 

কাব্যে গানে গল্পে আঁকেন 

জীবনবোধের ছবি।


চার লাইনে ধরবো তাঁকে 

এমন কলম নাই, 

জন্মদিনে তাঁর মনীষায় 

প্রণাম রেখে যাই॥





যদি ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ না হ'তে

 বিকাশ ভট্টাচার্য 

স্কুলফেরতা নুরুন্নেসার বাল্যকালও যেদিন 
আমবাগানে খুন হয়ে গেল, সেদিন আমার 
'কাবুলিওয়ালা'র খোঁকিকে মনে পড়ছিল খুব 

নেতাজী সুভাষ বসুর বাড়ির ভেতরে যারা 
 বেলাগাম ঢুকে
গৃহস্থদের ঘরছাড়া করার হুমকি দিচ্ছিল                                        
সেদিন লালমুখো ব্রিটিশদেরই মনে পড়ছিল

কাঁটাতারের বেড়া টপকে 
যেদিন এক দেশব্রতী সেনার কাটামুণ্ড
এপারে ছুড়ে ফেললো ওপারের জল্লাদ
মুহূর্তের জন্যে হ'লেও সেদিন মহাত্মা গান্ধীর
শেষ আক্ষেপটিও যেন স্বকর্ণে শুনলাম : হে রাম!

আমার কেবলই মনে পড়ে রানাঘাটের বৃদ্ধা
সন্ন্যাসিনীকে। মনে পড়ে 
বিষঘুমে ঢলে পড়া চোলাই মদের ঠেকে
মরা মুখগুলো আর
দুর্নীতির চওড়া থাবার নিচে আটকে পড়া 
স্বপ্নালু চোখের নিচে কালসিটে দাগ

তুমি যদি ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ নাহয়ে  
হ'তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আমি তবে  
প্রত্যেকটা লাইটপোস্টে প্ল্যাকার্ড টাঙাতাম
আর লিখে দিতাম দুটো সাদা কথা :
লাইটপোস্টে হাত দেবেন না কেউ। কারণ
নামকরা দুর্নীতিবাজরা এখানে লটকে আছে

ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ 
তুমি স্বপ্ন দিয়ে তৈরী স্মৃতি দিয়ে ঘেরা 





অশেষ করেছ হে
শুভ্রাশ্রী মাইতি


তোমার থাকা, না-থাকার মাঝে
অস্তিত্বের সুতো হয়ে দুলতে থাকি রোজ

যে পাখির গান স্পর্শ করে যায় চোখ; দেখি, 
সে ও গীতবিতানের নরম আলো কোন
সঞ্চয়িতারোদ ছড়িয়ে পড়ে সারা উঠোনে
উঠোনও কবিতা হয়; ধানিরঙা মাদুর
তাতে শোকশাক মেলে দিই কিছু, কিছু
ভিজে যাওয়া বেদনের আনন্দখড়

তোমার শব্দ, অক্ষর অমলতাস বাতাস হয়ে
খুলে দেয় সব অমলের জানালা; শুদ্ধ স্বর 
ঢোকে কতদিনের আত্মার আত্মীয় যেন,
কিছু পড়শি গান্ধার; আধচেনা কোমল ধৈবত

মা সহজপাঠের ফরাস পেতে বসতে 
দেয় তাদের; জলবাতাসা, লাল ডুরে গামছাও
আমি মন দিয়ে তোমার গান তুলি; হে বৈশাখ,
আমার অনন্ত হয়ে আসা হারমোনিয়ামে অবিরত




তুমি রবীন্দ্রনাথ
বিদ্যুৎ মিশ্র

যেভাবে ফুলগুলি ঝরে যায় বসন্ত শেষে
আগমনী ভেসে আসে শরতের আকাশ,
যেভাবে চুপ করে দেখি
তোমার স্পন্দনে জাগরিত হয় শুদ্ধ বাতাস।
যেভাবে আমি পরিপূর্ণ তোমায় ছোঁয়ায়
আর নতুন করে ফুল ফোটে বাগিচায়;
যেভাবে একটা সকাল হয়
আলো ছড়িয়ে পড়ে পূর্ণ জোছনায়।
যেভাবে ভ্রমর এসে ভিড় করে
যেভাবে ইচ্ছেরা জন্ম নেয় হঠাৎ,
পাহাড় থেকে নেমে আসে ঝর্না
কল্লোলিত প্রবাহিনী জলপ্রপাত।
এভাবেই মিশে আছে রবীন্দ্রনাথ
অনুভবে, সৃজনে, অনুভূতি ঘিরে,-
হয়তো এভাবেই পথ চলা
হৃদয়ের গভীরে স্রোতস্বিনী তীরে।
এভাবেই ছড়িয়ে আছে সবুজ লতা গুল্মে
আলো এবং বেঁচে থাকার শেষ প্রয়াস,
প্রতিটি ধমনী বেয়ে হৃদয়ের গোপন ঘরে
প্রিয় কবি তুমি রবীন্দ্রনাথ
যাবতীয় প্রাপ্তি আনন্দ আর হা হুতাশ।





পাতার নূপুর,হাঁস,কৃষ্ণচূড়া 

 জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়


থেমে গেছে ফিসফিস পাতার নূপুর
এক চিলতে ঝড় মুছে দেয় দাগ
জলের স্বপ্ন দ্যাখে পুকুরের হাঁস
রাস্তার কোণে জাগে কৃষ্ণচূড়ার লাল
ওই দূরে অমলতাসের হলুদ বাসর
রাগী সূর্যের পথে চেয়ে আনমনা ভোর
আজ উৎসব দিন।

কে যেন দরাজ বলে,শুধু বিঘে দুই
ছিল মোর ভুঁই ...
বাতাসে কি বাঁশি বাজে ?
বুড়ো আমগাছটির নীচে ক্লান্ত উদাস বসে যে
সেই কি উপেন ? তার গাছে আম দেখি কই !
অমল সুধার কথা,কেষ্টর মায়া,রতনের মুখ ...
বালিকারা নাচে,গায়,
হাসেন কোমলমন্দ্র রবীন্দ্র ঠাকুর
মুখে মুখে লেখা হয়, 'পঁচিশে বৈশাখ '।






আমার রবীন্দ্রনাথ...
বিকাশরঞ্জন হালদার 

পাড়াগাঁ'র মোহিনী আলো হাসিমুখে কাছে এসে দাঁড়ায়, বৈশাখের হাত'টি ধরে।তুমি জেগে ওঠো যেনো ধ্যান-মধুর হৃদয়-বিমোহন। উড়ে আসে দূরান্তের আমন্ত্রণ। আকাশের নীল মিশে যায়, সাগরের বুকে। সে তো তোমার'ই সুরে! যেনো-" বাঁশিতে ডেকেছে কে..." ধুলো-ময়লা জীবন তোমাকে ভালোবাসে ঠাকুর। মানুষের একটা নিজস্ব অন্তর থাকে ভালোবাসবার। আমার ভালোবাসার ধন, তোমাকে আমি ভালোবাসি! তোমার বিস্ময়কর জীবন, আমাকে প্রতি মুহূর্তে শিক্ষিত করে তোলে। তোমার থেকেই তো শিখেছি 'সময়'! শিখেছি তা নষ্ট করতে নেই। শিখেছি 'ধৈর্য'। যেভাবে ধরেছো তুমি অফুরন্ত কাল! 

জেগে উঠুক আমার বাউল, অদৃশ্যত ঐ একতারাটা হাতে নিলাম কবি! রেশম-পেলব যাপন না'ই থাক, যেনো দেহাতী মানুষের  মাঝে বয়ে যায় দিন আর দিনান্ত আমার! তাম্র-করতলে ভরে উঠুক  শুধু ভালোবাসা, তোমার-আমার-আমাদের। অন্ধ চোখে আলো, সে তো তুমি'ই দিলে বারবার! 

প্রভু আমার... প্রিয় আমার... আমার  রবীন্দ্রনাথ...




অবিনশ্বর
  কৃপাণ মৈত্র

আমি না স্তুতি করলে কবির কোন ক্ষতি নেই
 যেমন সূর্য কার ও তোষামাদের অপেক্ষায়
 থাকে না অথবা শীতের পত্র মোচন
 বা বসন্তের কিশলয়। এরা কাজ করে চলে
 আপন গতিতে
 কম মর্মপীড়ন  সহ্য করতে হয়েছিল
 কি কবিকে। পায়ে পায়ে মৃত্যু মাড়িয়েছেন
 বিদ্রুপ শ্লাঘা তীঘ্ন বাণ হয়ে বিঁধেছে বারবার। 
  তবুও স্রষ্টার সৃষ্টি থামেনি। যেমন অগ্নুৎপাতের
 আগুন ফুলকির মতো ছড়িয়ে পড়ে, 
বিঁধিয়ে দেয় বিবেক বিভ্রম দিশা। 

 আমি না স্তুতি করলে ছবি থেকে
 কবি বেরিয়ে এসে ধমক দেবেন না
 অথবা স্তুতি করলে আমায় পুরস্কৃত করবেন না।
 পৃথিবীর মানুষ হিংসা অসূয়ার শিকার
 অক্ষমের পর্বত লঙ্ঘন স্বপ্নদোষ সক্ষমের
কর্পুর পরাকাষ্ঠা অভিলাষ।
 তবুও দুর্লঙ্ঘ প্রজ্ঞা স্থির অবিচল
 ধ্রুবতারা হয়ে পথ দেখায়। 
 আমার স্তুতিবাক্য অথবা দ্বেষবাণীতে
 তার হিমেল শরীরে উত্তাপ অথবা
 মরুতৃষ্ণার মরীচিকা হয়ে আদূরদৃষ্টির শাসন হয় না। 
আমার স্তাবকতা অথবা বিরোধিতায় ও তিনি অবিনশ্বর। 



তোমার ছবির সামনে
অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় 

এখনও তোমার ছবির সামনে এলে
নিস্তব্ধ হয়ে যাই
সব কাজ হারিয়ে গিয়ে 
কেমন এলোমেলো
শুধু শুধু চেয়ে থাকা
যেমন সমুদ্র তীরে বসে দেখা তরঙ্গ ঢেউ 
একটা ভাঙা গড়া দেখতে দেখতে 
কোথাও যেন গিয়ে নিস্পন্দ জলতলে ভেসে থাকি

এখনও তোমার ছবির সামনে এলেই
ভূমিতল জুড়ে ছড়ানো জোৎস্নার কথা মনে পড়ে
অনুভূতির ভেতর খেলা করে শীতল উপত্যকা
আর যেন বয়ে চলা নীরব নদী পথ

এখনও তোমার ছবির সামনে এলেই
চলে যাই মেঘের ওপর মেঘ সরিয়ে
এক অজানা উপত্যকায়
হাতে উড়ে আসে বর্ণমালা...







রবিপুজো
স্বাগতা ভট্টাচার্য 


আমার বিগত শৈশব -কৈশোর -যৌবন 
সবটুকুই রাখলাম তোমার পায়ে।
এখন পড়ে থাকা একভাগ মিলিয়ে নিতে থাকি তোমার  গীতবিতানের পাতা উল্টে।
গান নয়,ছুঁয়ে দেখি আমার যাপিত জীবনের এক-একটি অধ্যায়।
আমার ঠোঁট থেকে ঝরে পড়া মুক্তো আর চোখ থেকে বিন্দু বিন্দু হিরে নিয়ে গেঁথে নিয়েছো রত্ন হার। 
সাজিয়ে রেখেছ আমারই উত্তরসূরীর জন্য। 
আর এভাবেই পূর্বজদের হাত ধরে আরো কয়েকটি প্রজন্ম নিজেদের খুঁজে পাবে তোমার গীতবিতানের পাতায়।




রবীন্দ্রনাথ
তীর্থঙ্কর সুমিত



যে পথ রঙায়িত
বসন্ত রঙা ভোরে
সে পথ গেছে বেঁকে
ভালোবাসার রোদ্দুরে।

আকাশের দিকে চেয়ে
সুখ কথা মনে
আজও প্রদীপ জ্বলে
প্রতি কোণে কোণে।

নিভৃতে চাওয়া আজ
একাকি সাথ
চেয়ে দেখো আজও হাসে
প্রাণের রবীন্দ্রনাথ ।



পঁচিশে বৈশাখে
সুব্রত চৌধুরী


আজ পঁচিশে ঘুম ভেংগে যায়
রবির গানের সুরে,
‘আঁধার টুটে আলোর বুনন’
ছাতিম তলায় দূরে।
ফুলের মালায় বরনডালায়
সবাই নামে পথে,
কবিগুরুর ছবি শোভে
জন্মদিনের রথে।
ছাতিম তলায় ফুলে ফুলে
রবির ছবি সাজে,
মনের মাঝে গীতবিতান
আপন সুরে বাজে।
প্রাণের মাঝে দোলা লাগে
রবির গানের সুরে,
আজ পঁচিশে মনটা হারায়
কোন সে অচিনপুরে।





রবীন্দ্রনাথ
ভবানীশংকর চক্রবর্তী 


এখন যুদ্ধকাল চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার
কেউ কাউকে দেখতে পায়না স্বভাবত 
দস্যুভয় চৌর্যভয় যাবতীয় ভয় ইত্যাকার
নিরন্তর খননে হৃদয় ক্ষতবিক্ষত 

দেয়ালে পিঠ ক্ষুৎকাতর বিক্ষুব্ধ জনতা
মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে বলে চাই ভাত
নিত্যদিন পিষ্ট করে পৈশাচ ক্ষমতা 
বিদ্রোহী সে জনতার বুকে রবীন্দ্রনাথ 

ভয় নেই আছে পুণ্য রবীন্দ্রযাপন  
খিদে  নিয়ে রবীন্দ্রচর্চায় আছে অন্নপ্রেম
দুঃসময়ে মহান ভারততীর্থের জনগণমন 
তাকেই করেছি ধ্রুবতারা করেছি যোগক্ষেম

রবীন্দ্রনাথ ছুঁয়ে বাঁচি  ছুঁয়ে মৃত্যু হোক
রবীন্দ্র-আলোর স্পর্শে জাগে বিশ্বলোক 






কবি প্রণাম
 সঞ্চালী রায়

বোশেখ মাসে রবি আসেন
নিয়ে শত আলো,
সকল গ্লানি ভুলবে সবাই
মনের প্রদীপ জ্বালো।

গাছের শাখায় নতুন কলি
নতুন পাখির গান,
রবির গানে মুগ্ধ হতেই 
পেতে রাখি কান।

বছর বছর আউড়ে থাকি
কবি গুরুর পদ্য,
জীবন মাঝে পাই খুঁজে গো
রবির যত গদ্য।

সৃষ্টি সুখের উল্লাসে আজ
মাতে সবার মন,
প্রণাম জানায় কবিকে তাই
বাংলার প্রতি জন।




কাব্য কোলাজ 
 সুদীপ কুমার চক্রবর্তী


সর্ষেক্ষেতের শেষ সীমানায় শালবনের নীলাঞ্জনে আমি প্রথম দেখেছিলাম এক স্বপ্নের প্রেয়সীকে।
কবিতার প্রতিটা শব্দ প্রলুব্ধ করেছিল আমাকে
হঠাৎ দেখার আমন্ত্রণে।
এরপরে রেলগাড়ির কামরায় জানালার দিকে
তাকিয়ে তাকিয়ে বহুবার ভেবেছি তার কথা।
মনে মনে অনুরণিত হয়েছে এক আশ্চর্য প্রেমের সুর - 
আমার জীবনের কবিতা।

আজও খুঁজি সেই কিনু গোয়ালার গলি শহরের আনাচে কানাচে। শুনি এক বাঁশিওয়ালার সুরধ্বনি। 
বেজে ওঠে এক কনিষ্ঠ কেরানীর মর্মব্যথা
আকবর বাদশা আর হরিপদ কেরানীর অপ্রাপ্তির দুঃখ বিলাসিতা।
জেগে ওঠে দিগন্তে উদ্ভাসিত কল্পলোক - 
ধলেশ্বরীর গোধুলিবেলায়  এক অপরিণত প্রেমের প্রতিচ্ছবি।

এমন কিছু বৃষ্টিভেজা রূপকথা এখনও ছড়িয়ে আছে মনের
অন্দরে বাহিরের প্রেমাস্পদ আইভিলতায় আর
আমার মানসলোকের কাব্য কোলাজে।






ঈশ্বর 
বিমল মণ্ডল 


যে আলো ছড়িয়েছিলে শুরুর সময়
পূর্ণজ্যোতি  দীপ্তি  তোমারই সৃজনে
এনেছিলে সাথে করে  কালের প্রণয়
কঠোর সাধন ব্রতে সাধকের নির্মানে।


তোমার সাহিত্যের শরীরে  অনন্ত বলয়
তোরণ খুলছে যেন আদি মহাকাল
সেখানে প্রবেশ করে  দেখি বিশ্বময়
সাহিত্যের  কোণে কোণে দিয়ছো যে পাল।

তোমার সৃষ্টির সুর সবাই মনে রাখে
এসেছিলে কবে সেই সবার নির্ভর 
যখন সাহিত্যের কুঁড়ি ফোটেনি  সাহিত্য শাখে
এনেছিলে সাথে করে এই বিশ্বের ভর।

ঈশ্বরের বেশে এসেছিলে বৈশাখী আকাশে
তোমার জন্মদিনে ভরে যায় সৃষ্টির বাতাসে।











1 টি মন্তব্য:

  1. সুসম্পাদিত কবি প্রণাম।
    অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
    সুন্দর ও আনন্দময় হোক আমাদের রবীন্দ্রযাপন ।

    উত্তরমুছুন