।।প্রতিদিন বিভাগ।।
।। জুন সংখ্যা।।
।। বিষয় - মুক্ত (গুচ্ছ কবিতা) -১।।
বিকাশ ভট্টাচার্য -এর গুচ্ছ কবিতা
১.
নির্জনস্বপ্নের দেশ
সামন্ত প্রভুর মতো নয়; কোনো এক নির্জনস্বপ্ন
আমাদের
কাঁধের উপর থেকে কোনদিন উড়বে না
দুরন্ত বাজ; শুধু বুকের অলিন্দ থেকে
ওড়াব কুসুমকথা দূরবাসকালের
কপোতাক্ষের তীরে সেই পরিচিত সন্ধ্যার মতো
আমাদের দেখা হবে না
দেখা হবে না আমাদের
কথাগুলো খেলা করে জলচ্ছায়ায়
আমাদের সময় আর আসবে না
মুখোমুখি বসবার মতো
কোনদিন
ল্যাপটপে ডেস্কটপে টেবিলে টেবিলে
আমরা ক্রমে হয়ে যাব অশত্থপ্রাচীন
২.
অদৃশ্য পাঁচিলের দু'ধারে
অদৃশ্য পাঁচিলের দু'ধারে দাঁড়িয়ে দু"জনের
গাঢ় করমর্দন। দুজনেরই চোখে মুখে
লেগে আছে ভোরবেলা পুরোদস্তুর
বুনো গাছপালার মতো ছড়িয়ে পড়েছে
ভালোলাগার শ্বাসমূলগুলো। তিতলিবসন্ত যেন
এসে গেছে বুকের ভেতরে। আমরা
স্তব্ধ হয়ে অবাক চলচ্চিত্রে ডুবে যাই
আসলে এ এক জাগর ঘুমের মধ্যে নিরুদ্দেশ
হওয়া। স্বপ্নময় দৃশ্যকাব্যগুলো ততক্ষণে
অদৃশ্য পাঁচিলের দু'পাশ থেকে সরে গেছে। রোদ
পড়ে গেলে ঘনায়মান আঁধারের ভেতর
একে একে জেগে ওঠে রাঙা চোখগুলো
আমাদের মোসায়েবি চিত্রকলায়
বিস্তীর্ণ গোচারণ ভূমি ছাড়া হাঁটবার
জায়গাটুকুও কোথাও পড়ে নেই
৩.
ঘোড়া
বুকের পাটা নেই শুধু তত্ত্ব কপচানোর হ্রেষা
মহীনের ঘোড়া তবু মন্দের ভালো
একটা ঝকঝকে আকাশ যে পেয়েছে এতদিনে
একটুকরো চাঁদের ফালিও। আর
দিগন্তজোড়া প্রান্তর
টাটকা সবুজ ঘাস
শুকনো খড়বিচালির চেয়ে যা
অনেক অনেক বেশি উপাদেয়। তারওপর
নিষেধের বিজ্ঞপ্তিও ঝুলছে না কোথাও
আস্তাবল ছেড়ে এ ঘোড়া
অবশেষে পালাতে পেরেছে
৪.
খনন
তিরগুলি নিবদ্ধ ছিল না সেই পাখিচোখটিতে
অনিবার্য দ্বৈরথে
দিগভ্রষ্ট করে যায় তীব্র টানাপোড়েন
কত যে অপাপবিদ্ধ চোখে নেমে আসে বিষঘুম
বীতরাগে স্ফীতরাগে অযুত পাখির চোখে
অন্ধকার এঁকে দেবে বলে একবুক ঐতিহাসিক
কবর খুঁড়ে রেখেছে যে রণকৌশলী
তারও আছে প্রত্নপরম্পরা
শ্রেষ্ঠ তিরন্দাজও সাফল্যের পরতে পরতে
লিখে রাখে পথের পাঁচালী
প্রয়োজন শুধু ঠিকঠাক আত্মখনন আর
দৃঢ় এষণা
৫.
প্রত্ন আবাসে
বুকের অলিন্দ জুড়ে মরা শ্যাওলার আস্তর
তন্তুজালে ভ'রে গেছে অন্তরমহল
কতকাল শ্রীময়ী আঙুলছাপ এখানে পড়ে না
বাজে না উলু শাঁখ। দ্বারমুখে
পলেস্তারা খ'সে যাওয়া সিঁদুরে মঙ্গলছাপটুকুই
টেনে আনে কবেকার চুপকথাগুলো
কান পাতলে আজও শোনা যায়
ঝোপঝাড়ের নিচ থেকে সাপের নিশ্বাস শুনে
অলিন্দে ঢুকবার সাধ জাগে না
কোনোদিন জাগবেও না
একমাত্র ভেঙে ফেলা ছাড়া
কীভাবে পাঠোদ্ধার হবে এই প্রত্ন আবাসের
আমরা জানি না।
ভালো লাগলো কবিতাগুলো
উত্তরমুছুনবেশ সুন্দর সবগুলি।
উত্তরমুছুনসত্যিই আমরা ক্রমে হয়ে যাব অশত্থপ্রাচীন! বেশ ভালো লাগলো কবিতাটি। শিরোনামটিও। অন্যগুলিও ভালো।
উত্তরমুছুন