মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

প্রকাশিত হল.... অঙ্কুরীশা-র পাতায়... অমর একুশে অঙ্কুরীশা-র কবিতায় শ্রদ্ধাঞ্জলি।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 


অমর একুশে অঙ্কুরীশা-র কবিতায়  শ্রদ্ধাঞ্জলি 



সম্পাদকীয়

"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’'—আজ সেই মহান একুশে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালি জীবনে একুশে ফিরে ফিরে আসে নবজীবনের ডাক নিয়ে। মহান একুশে আজ শুধু শহীদ দিবসই নয়। জাতিসংঘের ইউনেস্কোর স্বীকৃতির মাধ্যমে দিনটি এখন বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও পালন করা হয়। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতেই দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পথ ধরে সালাম, বরকত, রফিক,সফিক জব্বার তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনাই হচ্ছে কোনো জনগোষ্ঠীর ভাষাই হারিয়ে যেতে দেওয়া  যাবে না। আর এ দায়িত্ব শুধু বাঙালির নয়, পৃথিবীর সকল মানুষের। আমরা যেন শুধু আবেগতাড়িত হয়ে অমর একুশের কথা না বলি। ভাষা আন্দোলনের চেতনা তখনই সার্থক হবে যখন প্রত্যেক জনগোষ্ঠী তার নিজের মাতৃভাষায় কথা বলতে পারবে।শিক্ষা লাভ করতে পারবে। শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি করতে পারবে। তবেই সার্থক হবে একুশ। এবারের একুশ   এই বোধ জেগে উঠুক সকলের মধ্যে-এটাই প্রত্যাশা রেখে অঙ্কুরীশা-র  কবিতা সংকলনের এই বিশেষ সংখ্যায় যাঁরা  কলম ধরেছেন  তাঁদের  সবাইকে হার্দিক অভিনন্দন  ও শুভেচ্ছা  জানাই। 









সূচিপাতা 

অজিত বাইরী
বীথি চট্টোপাধ্যায় 
দীপ মুখোপাধ্যায় 
শাহীন  রেজা
সৌমিত বসু
গৌতম  হাজরা 
রবিন বণিক 
সাতকর্ণী ঘোষ
অমিত কাশ্যপ 
মণিদীপা  বিশ্বাস  কীর্তনিয়া 
মঙ্গল প্রসাদ মাইতি 
তাজিমুর রহমান 
সুধাংশু  রঞ্জন  সাহা 
অশোককুমার  লাটুয়া 
শুভঙ্কর  দাস
সঞ্জীব  দে
পাপড়ি  ভট্টাচার্য 
সুবীর ঘোষ
ফটিক চৌধুরী 
বিপ্লব  গঙ্গোপাধ্যায়ের 
শুভঙ্কর  ঘোষ 
দুরন্ত বিজলী 
দেবাশীষ  মুখোপাধ্যায় 
জুলি  লাহিড়ী 
স্বাতী ভট্টাচার্য  পিউ
দীপা কর্মকার 
জগদীশ  মণ্ডল 
শুভ্রাশ্রী  মাইতি 
সৈকত  নায়ক 
অশোক রায় 
রঞ্জন ভট্টাচার্য 
ব্যোমকেশ  দত্ত
পার্থ সারথি  চক্রবর্তী 
ইউসুফ  মোল্লা 
তপন জ্যোতি  মাজি
জয়দেব  মাইতি 
দেবব্রত  ভট্টাচার্য্য 
চন্দন  দাস
দীপক বেরা
হীরক  বন্দ্যোপাধ্যায় 
হামিদুল ইসলাম 
পুষ্প সাঁতরা
জয়শ্রী  সরকার 
দীনেশ সরকার 
গৌতম  রায়
শ্রাবণী  বসু 
ঊষা দত্ত(বহ্নি শিখা) 
বিশ্বজিৎ রায়
মুক্তি দাশ
দেবপ্রসাদ  জানা 
ভক্ত  গোপাল  ভট্টাচার্য 





মাতৃভাষা  
অজিত বাইরী


যেন নৌকা নিয়ে  ভেসে যাওয়া নদীবক্ষে;
এমনই মসৃণ প্রবহমান মাতৃভাষা।
যেন বৃক্ষের ডালে ডালে ফুটে থাকা ফুল;
এমনই আবেগময়,বর্ণোজ্জ্বল মাতৃভাষা।

শরতের ভোরে সিক্ত দূর্বাদলের মতো
আমার হৃদয় ভিজে যায় মাতৃভাষার স্পর্শে।
আমি ভালোবাসা ও অশ্রুর কাছে ঋণী;
সে শুধু পুণ্যব্রত মাতৃভাষার অমোঘ টানে।



ভাষা 
বীথি চট্টোপাধ্যায় 

বাংলা ভাষায় দূর থেকে চিঠি এল
প্রথম দিনের সূর্য প্রশ্ন করে
কত কী নিয়েছ; কিছু কি পেরেছ দিতে?
বাংলা ভাষাটি ফুল হয়ে ঝরে পড়ে।

সেই ফুল নিয়ে জানালার ধারে একা
বসে আছে কেউ করতলে রেখে মাথা
সেই ফুলটিকে আগুনের ফুলকিতে
বদলে দিয়েছে কয়েকটি ঝরা পাতা।

বাংলাভাষায় বোকমির একশেষ
নীললোহিতের বয়স রয়েছে থেমে
যেখানে থেমেছে সেইখান থেকে শুরু
ধানের ওপর বাতাস বইল নেমে

জ্যোৎস্নার বুকে বিদ্যুৎ চমকাল
মিছিল মিটিং রাস্তা অাটকে দিয়ে,
নীলাভ আকাশ; আলো ক্রমে আসিতেছে
কেউ মরে গেল ট্রাম থেকে পড়ে গিয়ে।

বাংলাভাষায় নতুন একটি দেশ
ও শরনার্থী... ভাঙা মুখ, ধুলোমাখা;
এপারে ওপারে ঢিল ছুঁড়ে ডাকাডাকি
মেঘ রোদ্দুর ; কলকাতা থেকে ঢাকা।


অমর একুশে 
দীপ মুখোপাধ্যায় 

ভাষার জন্য সেই শহীদেরা লড়েছে অকুতোভয়ে। 
চেতনাকে যেন শান দিয়ে গেছে, জীবনের বিনিময়ে। 
লোহিতকণিকা ছটফট করে অমর একুশে এলে। 
মৌসুমী প্রেম উথলিয়ে ওঠে, শোক আসে বুক ঠেলে। 
কিন্তু যখন হারিয়েছে দিশা, নড়িনি তো একচুল 
ভেসে আসে মনে রবীন্দ্রনাথ সুকান্ত নজরুল। 
লক্ষ তারার খোঁজ করে যায় বাউলের একতারা। 
স্বপ্ন দেখেছি এই ভাষাতেই, হয়েছি আত্মহারা। 
বিশ্বায়নের রূপ নিয়ে আজ গর্বে ও সম্মানে 
বাংলা ভাষা যে অভূতপূর্ব শ্রদ্ধা বাহবা আনে। 
তবুও রয়েছি উদাসীন হয়ে, থাকিনি অহংকারে, 
বিপন্নতায় হাবুডুবু খাই ম্লান হই বারে বারে। 
ভাষা চেতনায় ভর করে সেই শিকড়ের কাছে আসা। 
শহীদ রক্তে রাঙা আমাদের বেদনাস্নাত ভাষা। 
পা দুটো হেঁটেছে অভ্যাস বশে প্রভাতফেরীর ডাকে। 
শপথের মালা শহীদমিনারে বেওরিশ পড়ে থাকে।
র‍্যাট -রেসে নামি আধুনিকতার, বাংলাকে ভুলে যাই। 
এগারটা মাস বেঙ্গলি ছেড়ে ইংরেজি আওড়াই। 
ফের আসে সেই মহান দিবস আবেগের বাড়াবাড়ি। 
আমার ভাইএর রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি।



একুশ
শাহীন রেজা 

দেয়ালের দিকে পেছন ফিরে দাঁড়ানো দেয়াল
আরও একটি দেয়ালের ছবি আঁকছে–
কষ্টেরা চাঁদ হয়ে ফুটে আছে হাতের তালুতে;
সেই হাত আলোর বয়সী,
কাটতে কাটতে কাঠগুলো রাতগুলো টুকরো ছায়া– ভালোবাসা যেন এক নিভাঁজ চাদর; কমনজেন্ডার 
আমি ছু্ঁলে তুমি আর তুমি ছুঁলে আমি।

বেতবনে আজ অনির্দিষ্টকালের আলো-হরতাল
তবুও ফুটছে ভোর তবুও মায়ের ঘ্রাণে 
অ আ ক খ ; আমার কবিতাসুর
একুশ–একুশ।





আমার একুশ
  সৌমিত বসু


তুমি আমার শেখানো অক্ষর
তুমি আমার অন্নপূর্ণা ভাষা
বরফঠোঁটে জানিয়েছিলাম তাকে
সম্বলহীন তুচ্ছ ভালোবাসা।

তুমি আমার জন্ম প্রতিবেশী
বুকে তোমার অনন্তরাত জাগে
স্বপ্নে যারা মরতে চেয়েছিলো
শহীদ হতে ছোটে আলোর আগে।

আমি তোমার ছাত্র হয়ে শিখি
মায়ের ভাষা আগলাতে হয় কেন।




২১ শে ফেব্রুয়ারি
গৌতম হাজরা

ঘোরের মধ্যে বার্তা লিখছি আজ
বাঙলা ভাষার জোয়ার নেমেছে পথে, 
শহীদ ভাইয়ের রক্তে লেখা আছে
ফিরবো না কেউ ব্যর্থ মনোরথে। 

আজকে দিনটা একুশে ফেব্রুয়ারি
আজকে দিনটা ভাষাবন্ধণ দিন, 
অনেক রক্তে তোলপাড় এই পথ
শ্লোগান শোনো, হয়েছি আমরা স্বাধীন। 

ঘোরের মধ্যে বার্তা লিখছি আজ
মাটিতে মিশিয়ে দুরৃর্ত্তের মুখ, 
মেঘ কেটে গিয়ে আলো ঝরে ঝরে পড়ে
বাঙলাধ্বনিতে ভরে ওঠে এই বুক। 


মাতৃভাষা 

রবিন বণিক 


ফেলে  দিয়ে  গেছে

যেভাবে  ফেলে  দিয়ে  যায়  অবৈধ  মাটির  ফুল

 

মস্তিষ্কের  ভেতর  আপাতত  কোনো  শুশ্রূষা  নেই

কোনো  ডাকনাম  নেই,  শরীর  ঘেঁষে  স্তনের  বৃন্ত  নেই

ছুঁড়ে  দেওয়া  সম্পর্কের  মত  খুঁজছে  মাতৃভাষা

বিবর্তিত  পিতার  মত  হাতে  পায়ে  আশ্রিত  দুপুর

 

ফুটপাত  তাদের  ভাষা

যেভাবে  তাকিয়ে  থাকে  শরীর  অন্য  কোনো  ভাষায়

সেভাবে  তাকিয়ে  আছে  পথিকের  ঠোঁটে,  মাতৃভাষার  দিকে–




অজান্তে ঘুম ভেঙে যায় 
সাতকর্ণী ঘোষ 

এখন উচ্চারণ ঘন হলে 
মাথার মধ্যে বর্ণমালা বিদ্রোহ করে ওঠে 
অ-অজগর হয়ে আর আ -আম খেতে চায় না 
বরং সে মানুষ খেতে চায়। 
অজগরের পেটের ভেতর থেকে স্বরবর্ণ। 
ব্যাঞ্জনবর্ণ বাক্য তুলে তুলে শব্দ করে 
মিছিল করে,  ই - ইঁদুরের  বংশেরা 
ঈ- ঈগলের ভয়ে আর ক্লান্ত নয় 
বেশ দাপাদাপি করে এখন তারা শিখে নিয়েছে 
দাঁতের ধারালো আঘাতে বই- পত্র কেটে কেটে 
নষ্ট করে দিতে চাইছে বাংলা বর্ণ 
অথচ সেদিন অবাক হই দেখে 
ঘরের এক কোণে জড়ো হয়েছে কিছু টুকরো 
স্তূপিকৃত পড়ে আছে - 
একটা একটা হাতে তুলে ধরতেই 
টুকরো কাগজের বর্ণগুলি বর্ণমালা হয়ে উঠলো। 
আর যে লেখাটি ইঁদুরের বংশেরা ছিঁড়ে ফেলেছিল 
তার নাম মাতৃভাষা। 
পরের টুকরোগুলিতে লেখা মাতৃভাষা।




কাঁটাতার
অমিত কাশ‍্যপ

ফিঙে হঠাৎ উড়ে এসে 
বলল সুরে যাব দূরে 
সুধাই তারে
কোথায় যাবে ভেসে

ওই যে আকাশ, ওই যে আলো
হাওয়ায় হাওয়ায় রোদে 
বেশ হবে না ছন্দে ছন্দে 
ঘুরব ফিরব আনন্দ জমকালো 

তারের বেড়া রইল মাঝে 
কার কি আছে মানা
আমরা সেজে পাখায় যাব
পথ আছে সব জানা। 




আসবে ওরা 
মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া
     

শিমুল যখন ফুরিয়ে যাওয়া ঘুমের ভেতর
রঙ ঝরিয়ে একলা আনে অস্ফুট ভোর
লালচে পাতার আগুন কুঁড়ি জাগবে বলে
সমর্পণে ওড়ায় ধুলো খেলাচ্ছলে
ঠিক তখনই বাতাস আসে গানের মত
সালাম,রফিক,বরকতেরই নামের মত
পুরোনো গান,অনন্ত নীল শূন্যতাময়
"দাও,খুলে দাও,সব জানালা ",ডাক দিয়ে যায়
রক্তভরা দোয়াত -কলম আগলে রেখে
 দামাল জীবন আঙুল বাড়ায় স্মৃতির থেকে
শব্দ-ধ্বনি-বর্ণমালার স্রোতের পাশে
এপার-ওপার তরঙ্গময় রাস্তা ভাসে
মাখবে বলে পাগল সে ঢেউ বাংলা ভাষার
এই পৃথিবী রাখছে খুলে জানলা অপার
ছিন্ন শরীর কৃষ্ণচূড়ার আলপনাতে
আসবে ওরা আসবে সবার ঘুম ভাঙাতে....




ভাষা পাখি

মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি

 

রাত পোহালো-একুশ এল

ভাষার পাখি গাইল গান

শিশির মেখে বাংলাভাষা

করছে যেন মুক্তিস্নান

 

প্রাণের ভাষা বুকের ভাষা

প্রিয় আমার বাংলাভাষা

আকাশ ছুঁয়ে যায় এগিয়ে

ছড়িয়ে দিতে ভালোবাসা

 

যন্ত্রণা সে সয়েছে কত

তবুও মাথা করেনি নত

ডানায় লেগে রক্ত আবির

শুকোয়নি তার সেই ক্ষত

 

মায়ের ভাষার মান বাঁচাতে

সফি জব্বার দিল প্রাণ

রফিক সালাম শহিদ হল

বাংলাভাষার এমন টান


হার না মানা লড়াই তাদের

নিয়ে এল জয়ের ভোর

হৃদয়মাঝে আসবে তারা

তাইতো খুলে রেখেছি দোর


জননীচরিত

তাজিমুর রহমান


বর্ণমালার ভেদশক্তি কতটা বিনীত হলে 

তুমি ভাঙতে পারো লালার প্রাচীর! 

শুধু জেনো,শিয়রে বসে থাকা চাঁদ একান্তে ডাক দিলে 

মায়ের হাতের চুড়ির শব্দ ব্রহ্ম হয়ে যায় 


আর ভোরের আজানে বেজে ওঠা ধ্বনি 

দ্বার্থক ভাষায় উঠোন জাগালে 

ভূখন্ড জুড়ে অনন্তের গান, তখন মিঠে আলোয় 

খেলা করে বর্ণপরিচয়, আর সবুজ ঘাসের ডগায়

দোল খায় মায়ের কণ্ঠলালিত ফসল 


বাহান্ন,মে মাস তখন আমাদের জননীচরিত ছেড়ে আন্তর্জাতিকতার সংলাপ বুনে দেয়…


রক্তে ভেজা একুশে
সুধাংশুরঞ্জন সাহা


শীতের কুয়াশাকে বিদায় দিয়ে
এক অদ্ভুত কড়া রোদ্দুর নিয়ে ফেরে ফেব্রুয়ারি
প্রতিদিন জেগে ওঠে চর
ভেসে ওঠে একাধিক ক্ষত
তবুও ফিরে আসে একুশ
কান্না নিয়ে গর্ব নিয়ে শিরদাঁড়া নিয়ে
চারিদিকে ঘন হয় একুশের ডাক
বাংলাভাষার নিযুত আগুনের গল্প নিয়ে
অগুনতি ভাষা শহিদের বীরগাথা নিয়ে
নিভৃতে ফিরে আসে একুশ 
পৃথিবীর দেশে দেশে যতোদূর আছে বাংলাভাষা
যতোদূর আছে বাংলাভাষাভাষী
আমার ভাইয়ের রক্তে ভেজা একুশে ফেব্রুয়ারি
যার পোশাকি নাম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষাদিবস


একুশের কৃষ্ণচূড়া আমার 
 অশোককুমার লাটুয়া 

নাড়ীর সাথে নক্ষত্রের কী সম্পর্ক আছে জানিনা। 
বাড়ীর সাথে শুকোতে দেওয়া শাড়ীর কী মিল আছে জানিনা।
রক্তের সাথে কী স্বভাব কী সম্বন্ধ আছে তাও জানিনা। 
হামাগুড়ির সাথে চলতে শেখা উঠে দাঁড়ানোর 
কী ঘনিষ্ঠ অভ্যাস 
আমাকে তোমার বুকের গন্ধে 
উতলা ক'রে দেয় 
যে বিশুদ্ধ বিনম্র উচ্চারণে 
সেকথা তোমার কাছেই শিখেছি প্রথম। 
সে নামেই তোমাকে ডেকেছি — ' মা!' 
কী আশ্চর্য সাক্ষাৎকার 
মাটি আর অমৃতের মাখামাখি 
প্রিয়তম বাংলা বর্ণমালা আমার। 
তোমাকে ঠোঁটে নিয়েই 
চিতার আগুনে শুয়ে পড়বার আগে 
একুশের কৃষ্ণচূড়া 
তোমাকেই ক'রে যাবো প্রণাম এবং শেষ নমস্কার 
অভিভূত অনুরাগে বারবার। 
তারও পরে যদি হই কোনদিন জাতিস্মর আবার 
বর্ণমালার সহনশীল আত্মায় যেন জেগে থাকে অস্তিত্ব আমার। 





বাহান্ন
শুভঙ্কর দাস 

আমি যদি মরে যাই,ছাইগুলো জলে দিলেই,
দেখবে,নদীতরঙ্গ প্রতিটি বর্ণমালা হয়ে উঠছে তারপর তৃষ্ণা পেলে, আঁচলা করে খেও
আমি কেমন বিষাদে-আনন্দে-আবেগে-আঁধারে বাহান্নটা দরজা হয়ে ছিলাম...




অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। 
সঞ্জীব দে। 

ধানের শীষে যখন দুধ জমতে থাকে, 
     কৃষকেরা যেই ভাষায় সোহাগ করে
     বাতাসে দুলতে শেখায়, 
            বেড়ে ওঠার সান্নিধ্য দেয়
আমি বলি আলো-ছায়া। 

কামারেরা যেই ভাষায়
      হাঁপরে টান মারে বিড়ি মুখে, 
          প্রতিবাদে আগুন জ্বেলে
              ধারালো হয়ে উঠতে বলে
                    ছুরি, কাঁচি লাঙলের
                                       ফলাকে, 
 আমি বলি ধারাপাত। 

কুমোর যেই ভাবে 
   আদর স্নেহ ভালোবাসায়, 
         সংসারী করে তোলে
            ঘর মুখী করে সৌখিন, 
             প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রকে-
আমি বলি মোহ-মায়া;

প্রত্যেক দেশের প্রত্যেক অঞ্চলের
    কালো সাদা মানুষেরা
       যে ভাষায় জেগে ওঠা গান গায়, 
           মা-বাবাকে ডেকে ওঠে
                  আত্মীয় পরিজনকে, 
আমি বলি ভালোবাসা। 

সেই ভাষার স্বাধিকারে
জেগে উঠি উৎসব পালনে
শহীদ বেদিতে মাল্যদানে, 

অমর একুশে ফেব্রুয়ারি। 

                  -


    

ভাষার ধারাপাত 
পাপড়ি ভট্টাচার্য

ভাষা মানে রক্তের উচ্চারণে শহীদের ঋণ ভাষা মানে বীরদর্পে পাএকুশের সকাল
ভাষা মানে ছিন্ন শিকড়ের নির্বাক কান্না
ভাষা মানে স্বজন হারানো অবুঝ দিন। ভাষা মানে প্রথম অক্ষর প্রথম পাঠক
ভাষা মানে স্কুল দুপুরে এক মুঠো ভাত
ভাষা মানে শিশুর মুখে প্রথম শব্দ কথা ভাষা মানে দেশমাতা ভালবাসার স্মারক।


একুশে ফেব্রুয়ারি
ফটিক চৌধুরী

তবুও বসন্তদিনে কোকিল গেয়ে ওঠে গান
তবুও পলাশ-শিমুল ঝরায় আগুন
নিশ্চিত জেনে রাখো এ সবই প্রকৃতির দান
বিষাদগাথা লিখেছিল এমনি ফাগুন।

এমনই ছিল তাদের মাতৃভাষার ওপর টান
সেদিনের বাতাস হয়েছিল ভারি
নির্বিচারে চলে গুলি,গিয়েছিল সাতটি প্রাণ
দিনটি ছিল একুশে ফেব্রুয়ারি।

বাংলাভাষায় তাদের এই যে অমূল্য বলিদান
আমরা কি আয়নায় দেখি মুখ!
মাতৃভাষায় মাতৃদুগ্ধের মতো পাই যদি ঘ্রাণ
বাংলাভাষায় পাই যেন অমল সুখ।

বাংলাভাষার জন্য আমাদের যুদ্ধ থাকুক জারি
তরতাজা বীর শহীদদের এই একুশে ফেব্রুয়ারি।


তস্য ভাষা সর্বমিদং বিভাতি

সুবীর ঘোষ

 

যাবতীয় প্রাণী তার স্বজাতির ভাষা বোঝে---

ভাষা যেথা ধ্বনিরই অন্য নাম।

মানুষ বোঝে না শুধু স্বজনের ভাষা;

প্রিয় ধ্বনির জন্য তার কান্না বিরল।

 

মানুষ বোঝে না শুধু শৃঙ্খলিত থাকা কত প্রয়োজন,

শৃঙ্খল মানে তো শুধু কারাবেড়ি নয়।

শৃঙ্খল শৃঙ্খলা আনে, তাকে তার গোষ্ঠীর উপযোগী করে।

 

ভাষা দেয় সেই শৃঙ্খলা যাতে তার অধিকার ফোটে;

মাতৃভাষাটি তার দাবি বটে, অপরিহার্য প্রাপ্যও নিশ্চয়। 

ভাষা তার চেতনা জাগ্রত করে, ভাষা তাকে নিশানদিহিতে গাঁথে।

 

ভাষার ওপরে নামে শাসকের তীব্র চাবুক বারবার,

যেমন আমরা দেখি একুশে ফেব্রুয়ারি বা  মে মাসের উনিশে ---

একদা কী শ্বাসরোধী আক্রমণ শানিয়েছিল শাসকের পাল!

উদ্ধত নিপীড়ক জানে না ভাষা অবধ্য, ভাষা যেন দধীচির হাড়।

পাখির কুজনে আর নদীর প্রবাহে থাকে মানুষের ভাষা ---

মানুষ আদর করে ভাষাকে সংগীত করে কণ্ঠে ধরে রাখে।



একুশের ঘরবাড়ী


বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় 


যে ভাষায় মা বলে ডেকেছি প্রথম 

সেই ভাষা আমার  ঘরবাড়ি

কান্না পেলে কীভাবে জানাবো বলো? 

বেদনাপর্বের নীচে শুয়ে থাকে অশ্রুর অক্ষর, 

সঞ্চিত কষ্টের গায়ে অনুতাপ লেখা 

 মনখারাপ এবং বিষাদ লিপি হাহাকার যা শুধু আমারই। 


যে ভাষায় বাল্যকাল লিখি 

নৌকা ভাসিয়ে দিই নদীজলে যে ভাষায় দুরন্ত আবেগ 


ভেসে ভেসে স্মৃতিগুলি চলে যায় কিনারার দিকে 

বৃষ্টি জমে আমার আকাশে  জমে ওঠে কত কথামেঘ


প্রেমপত্র লিখে ফেলা আপন শব্দেরা 

জানে এই ঘরবাড়ি আমার একুশ 

নিজস্ব মুক্তির জন্য আমরা শহীদ হই

 প্রতিদিন শব্দে শব্দে চিন্তার বিপ্লব ।

নিজস্ব মাটির জন্য নিজস্ব  ভাষার জন্য 

গড়ে তুলি বাসগৃহ এবং নতুন কলরব।





বাংলার মুখ
শুভঙ্কর ঘোষ

বাংলার মুখে আজ এক অনাবিল আনন্দ,
জানলা দিয়ে দেখি ভোরের দোয়েল,
জাম বট কাঁঠাল হিজলের মলয় সমীরণে,
মনের কোণে জীবনানন্দ যেন উঁকি মারে।

কিংবা অন্ধ বাউলের একতারার সুর,
  দোলনা দুলিয়ে মায়ের ঘুম পাড়ানি গান শিশুপাঠ্য কাহিনীতে পড়া কবিতা -
পড়ে মনে "বাংলা ভাষা উচ্চারিত হলে"।

আজকের দিন তাই প্রতিদিনের আলাদা
 যেদিন প্রকৃতি মেলেছে তার ডানা,
বিহঙ্গের মুক্ত কলতান আর সবুজ স্বপ্ন
  ২১ শে ফেব্রুয়ারী আবার এসেছে আজ।

বাংলা প্রকৃতি আনন্দকে জাহির করে,
যেন বলতে চায় রক্তমাখা সেদিনের কথা;
যেদিন শুভ সূচনায় ছিলেন মহাবিপ্লবীরা,
রফিক,জব্বার,শফিউল,সালাম,বরকতরা
ভাষা দিবস স্মরণে। 



ভাষা দিবসে 
দুরন্ত বিজলী

এখনো বুকে আগুন জ্বলে মা
শহিদের মা ডুকরে কাঁদে ওই,
আমাদের সেই রক্তমাখা চোখে 
চমকে তাকাই ছোবল দেবে কেউ!

শব্দগুলো ফুলের মতো ফোটে 
ফুটিয়ে তোলে দুঃখসুখের ডালি,
ভাষামায়ের পরম প্রীতিস্নেহে
ভরে ওঠে গান-কবিতার থালি।

শহিদবেদির উপর ফুল-মালা
ফুল-মালা তো পূজা প্রেম আলো,
এপার-ওপারে বাতাসের মেহফিল--
আজ একুশের মশালখানি জ্বালো।


 চিকণিয়া তুমি
 দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়
              

প্রসবের সংহৃষ্টে তোমার পরিচয়
কোলাহল আনন্দে তুমি
কালো স্লেটে প্রথম ভালোবাসা
উল্টানো পাতার সারা বুক জুড়ে তুমি

চোখ জুড়ে ভালোবাসার প্লাবন
মন জুড়ে শরীরের আকুতি
ব্যর্থ প্রেমের আলিপ্ত বিষন্নতায়
তুমিই যেন বাঁচার ত্বিষাম্পতি

স্মৃতির পরিণদ্ধ প্রগাতায়
বিস্মৃতির প্রতন পাতালেও তুমি
বৈরূপ্য সৌমনস্যতার খোঁজে
শময়িতার ঘ্রাণও যেন তুমি

জ্বলতে থাকা চিতার ধোঁয়ায়
পোড়া কাঠের গন্ধে ভৈরো তুমি
বৈশ্বসিত জীবনের বুভুৎসায়
বাতাহত প্রাণের বিক্লবও যে তুমি.....





আমার আছে
জুলি লাহিড়ী

আমার আছে বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্র-নজরুল
মধুকবি ছন্দ ভাষায় ফুটিয়েছিলেন ফুল।
আমার আছে স্বপ্ন আঁকা পেঁজা মেঘের দল
বাংলার নদী পুকুর দিঘির উপচে পড়া জল।
আমার আছে তৃণলতা, রাখাল বাজায় বাঁশি
কুসুম রোদের রামধনুর উপচে পড়ে হাসি।
আমার আছে জন্মভূমির স্নিগ্ধ নরম মাটি
গরিব চাষি হাসিমুখে ফসল ফলায় খাঁটি।
আমার আছে টাপুর টুপুর ভিজে যাওয়া বৃষ্টি
বাংলা আমার এপার-ওপার, নতুন নতুন সৃষ্টি।


আ মরি বাংলা ভাষা 
স্বাতী ভট্টাচার্য্য পিউ 

যে ভাষাতে মা' কে ডাকি, সুর করে গাই গান। 
যে ভাষাতে কথা শিখি, বাংলা মোদের  প্রাণ!  
 প্রাণের ভাষা,  মনের ভাষা, আ মরি বাংলা ভাষা। 
মাটির সুরে মেঠো সুরে প্রাণের আবেগে ঠাসা।  
মাঝি ভাই  ভাটিয়ালি গায় বৈঠা ধরে হাতে। 
মনের কথাই কয় সে মাঝি, আবেশে মন মাতে।  
ছন্দে  সুরে  শিশু মাতে রবির সহজপাঠে। 
 কচি কাঁচার কোলাহল,আহা!  ভারি মিঠে!  
যে ভাষাতে রবি ঠাকুর লিখেছিলেন গান, 
মাতৃ ভাষা বাংলা তাঁরও বিশ্বে পেলেন মান।  
শিকল ভাঙ্গার গান রচেন বিদ্রোহী কবি নজরুল । 
 তাঁদের চরণ করিতে স্মরণ না যেন করি  ভুল। 
আজকে দেখি এই সমাজে নেই সে ভাষার মান। 
বাংলা তে "মা " কয়না ছেলে ভাষারে করে অপমান!   
বাংলা ভাষার মান বাঁচাতে রক্তে রেঙ্গেছে ভূমি। 
আজও তাঁদের করিনু স্মরণ ভাষা দিবসে নমি।



ভাষা দিবস
দীপা কর্মকার 


ঢাকা রাজপথ    রাঙালো একুশে
             একুশের তাজা রক্তে
দৃঢ়,অবিচল       বিল্পবী তারা
             শেখেনিযে  পিছু হটতে।
হয়েছিল সেই     ভাষার লড়াই
             ঝরেছিল রক্ত বুকে
শহীদ দল         যায়নি থেমে
           দাঁড়িয়েছিল রুখে।
গুলির আগুন       পারেনি তাদের
           স্বপ্ন পুড়িয়ে দিতে
রক্ত দিয়ে         লক্ষ্যটাকে
          নিয়েছিল তারা জিতে।
বাংলা হল          রাষ্ট্রভাষা
       বসল ভাষার সিংহাসনে
জয় হল         বিপ্লবীদের
         দাবি সবাই নিল মেনে।
করছি পণ      বলবো কথা
          মাতৃভাষায় সবার সাথে
অশিক্ষিত      বলুক লোকে
          মোদের কিছু যায় না তাতে।
ফেব্রুয়ারির     একুশ টাই
      বিশ্বজুড়ে আনল জয়
'ভাষা দিবস'      তকমা পেল
         বাংলা আজ বিশ্বময়।



একুশের শপথ

জগদীশ মন্ডল


ফাগুন এলে একুশ আসে
আর আসে জব্বার,
রফিক,সালাম,বরকত ভাই
ডেকে যায় বারবার।

স্মরণ করে লক্ষ মানুষ
শহীদ বেদির পাশে,
চোখের মাঝে বীরের ছবি
ঘুরে ফিরে আসে।

একুশ এলে সাদা ফুলে
গাঁথা হাজার মালা,
মাতৃভাষা মায়ের কোলে
মুক্ত মশাল জ্বালা।

একুশ আমার প্রানের কথা
সহজ সরল মুখ,
ভাষা দিবস আমার কাছে
গর্বে ভরা বুক।

একুশ আসে চোখে ভাসে
রক্তে ভেজা ঋণ,
মাতৃভাষা রক্ষা করার
শপথ নেওয়ার দিন।


বরাভয় পদ্ম
শুভ্রাশ্রী মাইতি

অক্ষরআলো তাপে ছেলের শরীরে নিরাময় আঁকব বলে
হাতে তুলে নিয়েছি সনাতনী আলোকশাস্ত্র...

দূর থেকে ভেসে আসছে রূপশালী ভাত ফোটার টগবগ শব্দ...
নিকানো উঠোনে খুন্তি নাড়তে নাড়তে
শ্লেটে দাগা বুলাচ্ছেন আমার মা, আমারই হাত ধরে...
উনুনের গনগনে আঁচে মার মুখে গোলাপী পদ্মের আভা
আশ্চর্য বইটার গোলাপী রঙের মতোই...
কোলের কাছে আদর উত্তাপে গুটিশুটি আমি।
তপোবনীয় পবিত্রতায় মার কন্ঠে ‘অ', ‘আ-র উদাত্ত সামগান
আমার নাভিপদ্ম জুড়ে তখন বাহান্ন বর্ণের হলুদ পরাগউৎসব।
কোমল সৌরভে ডুবে যাচ্ছে নরম লেবুপাতা রোদ 
ধুয়ে যাচ্ছে এতদিনের জমানো সব অন্ধকার অয়ন
অমোঘ পুষ্পযাত্রা শুরু হবে এবার...
ছেলের বাড়ানো হাতের পাতায় বরাভয় পদ্ম তুলে দিই স্হির বিশ্বাসে...


বাংলার বোধোদয় 

সৈকত নায়েক 

বাংলার পরাণজুড়ে লালন

সহজিয়া লালন

মাধুকরী প্রব্রজ‍্যায়

ধরে রেখেছে রমলার ময়দান

কুষ্টিয়ার মাটি ছুঁয়ে যে দাগ লেগেছে 

ঢাকার পল্টন শহরে 

অক্ষরে শব্দে আজ

ফুলমালা ধূপের শয‍্যায়

ঈশ্বর হয়ে ওঠেন বোধদয়ের গতিলিপি।


মাতৃভাষা

অশোক রায় 


শত জন্মে তোমায় পেয়েছি সুতমা

বাঙ্‌ময়-রূপ নদীর আকর

মাতৃজঠরেই হয়েছিল পরিচয়

শিশু হতে কিশোরী ছন্দঝর্ণা

মস্তিষ্ক বেয়ে কলম পুর্ণযৌবনা

পুণ্যসলিলা ধায় সাগর-সঙ্গমে

গভীর উপলব্ধির সোনালি চর

তোমার আগ্রহে ভেসে চলি

সীমাহীন দুঃখহীন অন্তরঙ্গতায়

প্রিয়তম শহীদের রক্তে রাঙা

শ্রেষ্ঠ ভাষার শিরোপা তব অলঙ্কার  

লেখা-পড়ার অবসর তোমাতেই সাকার ।।

                                  

বাংলা ভাষা

রঞ্জন ভট্টাচার্য

বাংলা আমার প্রাণের ভাষা 

হৃদয়ের বন্ধন 

বাংলা আমার চোখের মনি 

হৃদয়ের কাঞ্চন ।


বাংলা আমার জীবন আলো 

ঘুচায় অন্ধকার 

নিত্য দিনের চলার পথে 

শুধুই যে দরকার ।


বাংলা জানি বাংলা মানি 

বাংলা আমার ধন 

বাঙালি আর বাংলা ভাষা 

আমার আপনজন।


আমার মায়ের ভাষা 
ব্যোমকেশ দত্ত

সুদূর প্রবাসে যত দূরে থাকি প্রথম সে ভালবাসা
শয়নে স্বপনে ঘুমে জাগরণে আমার মায়ের ভাষা।

বিদ্রোহী কবি, কবি সুকান্ত, মৃত্যুঞ্জয়ী ভাষা
সত্যজিতের, জীবনানন্দে, রবি লেখনীতে ভাসা,
'' মোদের গরব, মোদেরই আশা, আ মরি বাংলা ভাষা। ''
হয়েছি ধন্য  এই জন্মেই  এই বাংলায় আসা। 

ভাইয়ের লাল রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী,
জগৎ মাঝারে আমাদের ভাষা জায়গা নিয়েছে কাড়ি।
রবির কলমে এই ভাষাতেই নোবেল যে এলো ঘরে
সত্যজিতের বাংলার অপু বিদেশে তেপান্তরে;
জুড়ায় পরাণ যখন আমরা বাংলা করি গান, 
গুপী বাঘা তেই মানিকবাবুই দিয়েছেন সেরা দান,
''সুরেরই ভাষা, ছন্দের ভাষা, আনন্দেরই ভাষা;''
বাংলা আমার আমি বাংলার বাংলা ই ভালোবাসা। 


মাতৃভাষা 
পার্থ সারথি চক্রবর্তী 

এক জীবনের ছবি এঁকেছি 
                       মায়ের মুখ দেখে
এক জীবনের গান শুনেছি
                       মায়ের মুখ থেকে
জীবনের প্রতিক্ষণে, প্রতিপদে
দাঁড়াতে চেয়েছি বা পড়ে গিয়েছি
হাঁটতে চেয়েছি ও হোঁচট খেয়েছি
বলতে পেরেছি বা অস্ফুট থেকেছে
বুকে বেজেছে একই কথা, সুর
                     মাতৃভাষার সুর।
আমার শয়নে, আমার জাগরণে-
শুধুই মায়ের মুখের ভাষা
          আমার গর্বের  মাতৃভাষা
আমার জীবন শুধু তোমার- প্রণাম  তোমায়





আত্মবলিদান
 ইউসুফ মোল্লা

গাছের নিচে পড়ে থাকা শুকনো পাতার উপর-
তুমি যখন হেঁটে চলো, 
সে তখন খস্ খস্ করে কী মধুর ধ্বনি তোলে! 
ও শিখেছে কীভাবে যৌবন খসিয়ে
নিজেকে বিসর্জন দিতে হয়, 
তারপর এই মধুর ধ্বনি পাওয়া যায়। 
তুমি আজও হেঁটে গিয়েছো নির্দ্ধিধায়-
কিন্তু তার সেই বেদনার আওয়াজ শোনোনি কখনো! 
যেভাবে ভাষা শহীদদের আত্মবলিদানকেও জানোনি। 
তারাও যৌবন বিসর্জন দিয়ে এই মধুর ধ্বনি শিখেছিল।


ভাষা

তপনজ্যোতি মাজি

নদীর স্রোতের মতো সাবলীল মাতৃভাষা।  

হৃদয় বিলক্ষণ বোঝে প্রতিটি বুদবুদে 

চির প্রন‍ম‍্য অক্ষরের স্পন্দন।


ভাষা-পথ  ইতিহাস বুকে নিয়ে প্রসারিত

দুই বাংলার শ্যাম প্রান্তরে।

সহস্র বৃক্ষের মাঝে বনস্পতি দাঁড়িয়ে আছেন

রবীন্দ্রনাথ , নজরুল ও জীবনানন্দ দাশ।


ভালবাসা ও প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভাষার

অধিকার স্বাধীনতার পূর্বআখ্যান। 

দ্যাখো, রক্তের দাগ স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণমালায়। 

ভাষা শহীদদের হাড়ের পাঁজরে গড়া ভাষা-স্মারকের 

সামনে দাঁড়িয়ে উদাত্ত সংগীতে আকাশ আলোড়িত 

করার অন্যনাম একুশে ফেব্রুয়ারী।


ভুলিনি তোমাদের। আবুল বরকত, আব্দুল জব্বার, 

রফিক উদ্দিন, আব্দুস সালাম,শফিউর রহমান,

অহিউল্লাহ, আব্দুল আউয়াল । তোমারা নক্ষত্র

হয়ে আছো দুই বাংলার আকাশে। 







আমার ভাষা উঠোন জুড়ে 
জয়দেব মাইতি 

একুশ আমার উঠোন জুড়ে 
একুশ আমার বুকে
বাংলা ভাষা এখনো বাঁচায়
মরি ভাষার সুখে। 

ভাষার টানে স্বদেশ আনি
ভাষার টানে গান
ভাষার টানে মায়ের কোলে 
মৃত্যুহীন প্রাণ।



ভালবাসায় কেনা 
                   রক্ত দিয়ে কেনা 

    দেবব্রত ভট্টাচার্য্য 

মায়ের বুকের ভালবাসা অমৃত ভাণ্ডার 
ভালবাসা ই ভালো ভাষা এই বুঝেছি সার, 
রক্ত দামে কিনেছি এই ভাষার অধিকার।।

আমার ভাষা রবীন্দ্রনাথ দুখু মিয়ার গান 
জসিমুদ্দীন শঙ্খ ঘোষের কাব্য সুধা পান। 
বুকের মাঝে আমার ভাষা আলোক সে অপার 
পলাশ লালে কিনেছি এই ভাষার অধিকার।।

নীরেন্দ্রনাথ আমার ভাষা নির্মলেন্দু গুণ 
ভাষার হোমে জ্বালিয়ে রাখেন অন্তরে আগুন। 
জহিদুল হক লেখেন ছবি বাঙালী যোদ্ধার 
ভালোবাসায় কিনেছি এই ভাষার অধিকার।।

ভাষা আমার মুকুন্দ দাস শপথ ক্ষুদিরাম 
দ্বিজেন কবির ভাষায় বলি মধুর মায়ের নাম ।
এই মাটীতে আসবো ফিরে গাইবো অনিবার 
রক্ত দামে কেনা আমার ভাষার অধিকার। 
ভালোবাসায় কেনা আমার ভাষার অধিকার 
পলাশ লালে কেনা আমার ভাষার অধিকার।



অক্ষরকুসুম
চন্দন দাস

নিকষ- অন্ধকারে ঘড়ির কাঁটাটা ছুটছে টিকটিক 
রেডিয়ামের অহংকার জানান দিচ্ছে 
ঘণ্টার কাঁটা এখন বারোটা পেরিয়ে, 
এবার শেষ হবে বর্ষযা আমাদের।
আহাঃঃ
আলোর রোশনায় ভেসে যাচ্ছে চরাচর 
 নবাগতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছি,
বুকের পাঁজরে বেজে চলেছে বেহাগের সুর
যেন এক সত্যস্মরণ।

ঝুল- কালি মাখা পুরনো স্মৃতির মালা
খসে খসে পড়ছে পুঁতিকাঠির মতো 
এক একটা বিষাদদানা,
দানাগুলো লাফাতে-লাফাতে
কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে বেশ!

বুকের ভিতর গনগনিয়ে উঠছে উত্তাপ 
আমাকে নির্দেশ  করছে আর এক সময়ের দিকে,
শ্রম-ঘাম- রক্তে ভিজে যাচ্ছে আমার কবিতাশরীর!
 
আমি স্পষ্টত দেখতে পাচ্ছি 
আমার শূন্য -আঁচল ভরে যাচ্ছে অক্ষরকুসুম,
দাঁড়িয়ে আছি নির্বাক-নিথর
আলোরা আলিঙ্গনে -শ্বেতপাথরের গালিচায়!

আমার দু'চোখে জেগে উঠছে একটা ক্ষেত
পৃথিবীময় এখন শব্দের ফসলসম্ভার,
আমার চতুর -বোধ খুঁটে খুঁটে তুলে নিচ্ছে নিজস্ব গোলায়।



একুশে ফেব্রুয়ারি
দীপক বেরা


আমার মুখের ভাষা, বাংলা ভাষা
আমার মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা। 
আমার সেই মুখের কথা বলার অধিকারে
রাষ্ট্রশক্তি যদি চাপিয়ে দেয় ভিন্নতর ভাষা 
তখনই গর্জে ওঠে অগণিত প্রতিবাদী স্বর 
রুখে দাঁড়ায় সমষ্টি সমন্বয়ের গণশক্তি
ধূমায়িত হয় দীর্ঘ পুঞ্জীভূত বিক্ষোভ, বিপ্লব! 

১৪৪ ধারায় ঢাকার রাজপথ শুনশান 
রফিক, জব্বার, শফিউল, সালাম, বরকত.. 
কতশত নির্ভীক দামাল ভাইয়েরা সেদিন 
শোষণের থাবা ভেঙে হেঁটেছিল রাজপথে
দুর্বার আগ্নেয়-স্পর্ধায় বুঝে নিতে অধিকার 
পাঁজরে পাঁজরে লেখা তাদের দাবির গান 
স্লোগান মুখর বজ্রকন্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল 
বলিষ্ঠ বাংলা ভাষার তীক্ষ্ণ দাবির উচ্চারণ 
সাহসী বুক চিতিয়ে গেঁথে নিল বুলেটের মালা 
পিচঢালা কালো রাস্তা ভিজেছিল তাজা রক্তে 
রাজপথ জুড়ে আঁকা হয়ে যায় রক্তের আল্পনা! 

বাঙালির জাতীয় চেতনায় ফুটিয়েছে রাঙা পলাশ 
বিশ্বের অলিন্দে ছড়িয়েছে মাতৃভাষার অনন্য সুবাস! 

হাড়হিম করা হিমেল শীত ফিরে যায় একদিন 
বসন্তের শিমুল বার্তা দিয়ে যায় কানে কানে 
পলাশ, কৃষ্ণচূড়ায় রক্তরাঙা ভোর মনোহারী 
অলস কোকিলটিও কুহুতানে গেয়ে উঠে বলে
আজ যে, মহান অমর 'একুশে ফেব্রুয়ারি'! 

হে বীরসেনানী ভাইয়েরা আমার, 
আজ পুণ্য 'ভাষা দিবস' এর সেই মাহেন্দ্রক্ষণে
তোমাদের হাজারো লাখো সালাম, কুর্নিশ করি! 


একুশের ভাষা
হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়

আমার দুহাতে ফুল দাও,আমার দুহাতে ভাষা
যাতে বৃষ্টি হয়ে ঝরে মাটিতে, শিকড়ে লাগে টান
যাতে আশ্চর্য মমতার স্মৃতি ভালোবাসা
মুদ্রাদোষে ঢুকে পড়ে অন্দরে নিষেধ সুন্দর
যদি বিষ লেগে যায়, যাবে পরোয়া করবো না
বরকতেরা যেদিকে গেছে সেদিকেই গন্তব্য হোক
কৃতজ্ঞ ছন্দ চিত্রকল্প নির্বিবাদে রেখে যাক উজ্জ্বল
 আয়নায় মুখ ধুয়ে নেবো সারিবদ্ধ বিপ্লবের জানলা যেখানে রক্তের কিছু দাগ
রয়ে গেছে অত্যন্ত সহজ জীবনে, জলপ্রপাতের
তলে শুনেছি সমুদ্র ঢেউ তখনই উঠেছে
রাজকীয়  হাসি ছিল আবদুস সালাম
নির্দিষ্ট ব‍্যথার দিনে নিভৃতে সতর্কতা জারি
জঙ্গল পাহাড় নদী নিয়ে আজও ডাকে বাংলাভাষায় একুশে ফেব্রুয়ারি ...







একুশে ফেব্রুয়ারি 
   হামিদুল ইসলাম
                             

একুশে ফেব্রুয়ারি 
রক্ত আবিরে রঞ্জিত মুহূর্ত
যেনো প্রাণের গভীরে এখনো গেঁথে আছে দিনখানি 
                          ভুলি নি তোমায় 
                        একুশে ফেব্রুয়ারি ।।

সালাম রফিক বরকত জব্বার 
এক একটি সংগ্রামী নাম 
ভাষা আন্দোলনে উৎসর্গ করেছেন নিজেদের জীবন 
                        ভুলি নি তোমাদের 
                           একুশের শহীদ ।।

রক্ত দিয়েছো তোমরা দিয়েছো প্রাণ 
নিষ্ঠুর শাসকদলের বুলেটে ঝাঁঝরা 
ফুটন্ত ফুল। তবু থামে নি চির অক্ষয় ভাষা বিপ্লব
          বিপ্লব তোমাকে কি ভুলতে পারি   
                   তুমি একুশে ফেব্রুয়ারি ।।





বাংলা ভাষা  
পুষ্প সাঁতরা

ভরপুর তান করে আনচান 
আমার বাংলা ভাষা 
ভারত আত্মার অতন্দ্র প্রহরী 
আমৃত্যু কাঁদা হাসা।।
দশরথের শব্দ ভেদী বান 
নির্ভিক বিশ্বাস, 
অতলান্তিক হৃদয়ের ভাষা 
পবিত্র নিঃশ্বাস। ।
ভাষারেনু প্রাচীন কাব্যে 
অস্তিত্বের অহংকার 
সংহাতনয় সম্প্রীতি আনে 
'একুশ '- বারবার। ।
গড় করি আমি সন্ধ্যাতারা 
আটপৌরে জননী 
অমর শহীদে আরতি করি 
তুমি যে পবিত্র মনি। ।
বিজাতীয় পোশাক শরীরে 
ধুলো মুছে কোলে নাও 
ছলকে ওঠে ঠোঁট মিষ্টি ভাষা য় 
শুধু বাংলার গান গাও। ।




ভাষা মাকে
জয়শ্রী সরকার
     
কোন্ ভাষাতে গাইবো মাগো দেশপ্রেমের গান ?
মুখের ভাষা, বুকের ব্যথা বাংলা আমার প্রাণ !

খুশি মতো তুমি বলে যাও আজ ভিন্ দেশী যত বুলি
প্রাণের গভীরে নাড়া দিয়ে বলো, বাংলাটা যেন না ভুলি! 

এই বাংলায় জগতসভায় শ্রেষ্ঠ আসনে রবি
এই ভাষাতেই জীবনানন্দ এঁকেছেন কত ছবি !

এপার-ওপার আজো বেঁচে আছে বিভেদের রেখা ভুলে
বাধাগুলো সব ম্লান হয়ে গেছে রবীন্দ্র-নজরুলে !

একুশের নামে বঞ্চনা নয়, প্রাণ-মন ঢেলে দিও
বাকি সব ভাষা শেখার পরেও বাংলাকে বুকে নিও !

শহিদুল্লার কবিতা আমায় শিখিয়েছে ভালোবাসতে,
এই ভাষাতেই মরণ-বাঁচন শিখেছি আমি তো হাসতে !

চেনা মুখগুলো জ্বলজ্বল করে ভাষা শহিদের শোণিতে,
গভীর মননে ধ্যান করি আমি একুশের শুভ ধ্বনিতে !

ঠিকানা আকাশ, চিঠি লিখি আমি ভাষা শহিদের নামে,
ঘুমাও তোমরা শান্তিতে সব শুভ কামনার খামে !



ডাকছে একুশ
দীনেশ সরকার

ফেব্রুয়ারির একুশ এলেই মনটা কেন কাঁদে
ভাষা-মায়ের দামাল ছেলের রক্ত দিয়ে বাঁধে ।
ভাষা-শহিদ, অমর তোমরা হৃদয়ে রাখবো ঠিক
ডাকছে একুশ আয় ফিরে আয়, আয় জব্বার আয় রফিক ।

শহিদ শোণিত যায় নি বৃথা, স্মরি বারে বারে
মাতৃভাষা স্বীকৃত আজ জগতের দরবারে ।
ভাষা-শহিদ, শুধবো কেমনে আত্মত্যাগের দাম ?
ডাকছে একুশ আয় ফিরে আয়, আয় বরকত আয় সালাম ।

সুপ্ত জাতি জাগলো সেদিন তোমাদের বলিদানে
মাতৃভাষা মুক্ত করতে তাকায় নি পিছন পানে ।
অমর শহিদ, জীবন দিয়ে ভাঙালে ঘুম সব্বার
ডাকছে একুশ আয় ফিরে আয়, আয় সালাম আয় জব্বার ।

ভাষা-মায়ের দামাল তোমরা, ভুলতে কি আর পারি ?
তোমরা ছিলে ভাষা-মায়ের শানিত তরবারি ।
ভাষা শহিদ, রক্তে তোমাদের রঞ্জিত রাজপথ
ডাকছে একুশ আয় ফিরে আয়, আয় রফিক আয় বরকত ।




একুশে ফেব্রুয়ারি
গৌতম রায়


বাংলা ভাষার স্মরণীয় দিন
আজ একুশে ফেব্রুয়ারির দিন
বহু শহীদের রক্ত, বৃথা যায়নি কখনো
বাংলা ভাষা স্বীকৃতি পেল
তাদের আন্দোলন!
বাংলাদেশের জন্ম হলো
বিশ্বের দরবারে!
বাংলাভাষার বিশ্বকবি
নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ
বাংলা ভাষার বিদ্রোহী কবি
কাজী নজরুল ইসলাম!
বাংলা ভাষা মিষ্টি ভাষা
বাংলা ভাষা মাতৃভাষা
এই ভাষাতে গর্ব মোদের!!।


ভাষা প্রদীপ
শ্রাবণী বসু

আমের বনে বোল ধরেছে।
মৌমাছি প্রেমময়  শব্দ উচ্চারণ করে
হৃৎপিন্ডকে বসনমুক্ত করছে।

মঞ্জরীর কানের লতির 
উত্তাপ বাড়ছে
গাল রাঙা হচ্ছে
চার অক্ষরের উচ্চারণ শুনে।

মৌমাছির মতো করে না হলেও
আমিও বলতে পারি।
সবকটা অনুভবের সিঁড়ি বেয়ে
তরতর করে উঠে যেতে পারি
নেমে আসতে পারি
 তিনটি সপ্তক ছুঁয়ে ছুঁয়ে।


পূর্বপুরুষের  রক্তনদীতে ভেসে ভেসে
এসেছে আমার উচ্চারণ।
আমি কখনো আত্মাকে
মাদুরের মতো গুটিয়ে রাখি
কখনো শীতলপাটির মতো
বিছিয়ে দিই - ধূলার পৃথিবীতে।

ভাষা আমার অস্তিত্বকে 
জড়িয়ে রেখেছে অঙ্গের ভূষণ করে।
ভাষা আমার  অনুভূতি মাপার
একমাত্র যন্ত্র।

আমি নতজানু হয়ে  বসে আছি-
সেই পুরুষটির জিহবার কাছে,
 ভাষার জন্ম দিয়ে যিনি
মাতা-পিতা হয়েছেন।

ভাষার জন্ম দিয়ে যিনি
পৃথিবীর প্রতিটা ঘরে জ্বেলেছেন
বিস্ময়ের অনির্বাণ প্রদীপ।

ভাষার জন্ম দিয়ে যিনি
হৃদি ভাসিয়েছেন যমুনায়।



ভাষাদিবস,
ঊষা দত্ত


অনেক রক্তের বিনিময়ে 
পেলাম বাংলা ভাষা, 
সুখে দুঃখে এই ভাষাতে 
মিটে সকল আশা। 
সে ভাষাকে করবো লালন 
থাকি যথা তথা, 
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেবো  
সবার মনের কথা। 
সন্তান আমরা বাংলা মা'য়ের 
খুবই সহজ সরল ,
প্রাপ্য যাহা বুঝে নিতে 
কঠিন- নই যে তরল। 
সাম্য ন্যায়ের শিলুক বলা 
সন্তান আমরা মাটির,  
মা'য়ের ভাষার বিশাল আকাশ 
কোত্থা ও নেই প্রাচীর। 
আজকে যে সেই ভাষা দিবস
একুশ-ফেব্রুয়ারি, 
শহীদমিনারে শ্রদ্ধা জানাই 
হৃদে প্রভাতফেরী।




হে প্রিয়   

বিশ্বজিৎ রায়

 

শিশুস্বর’  ডাকে ‘মা , পাখিস্বর ডাকে  ‘ কুহু ‘  

ধানের শিষে হাসে ‘ধা’ , উতসবে বাজে বিহু

 

নদ-নদী ভেসে চলে  ছন্দে ছন্দে ফেলে ‘পা’

ঝর্ণা-ঝোরা  কথা বলে  ছুটতে ছুটতে  ‘গা’

 

এসব তোমারই  দান,   হে প্রিয়   বাংলাভাষা

আমৃত্যু তোমার সঙ্গে   থাকবে ভালোবাসা

 

অনেক দিয়েছো   পদ্য   অনেক দিয়েছো  গান

অনেক দেখেছো  রক্ত   অনেক গুনেছো  প্রাণ

 

দিয়েছো ভাষার দেশ,  করেছো ভাষার জয়

সারা পৃথিবীতে তুমি আশ্চর্য ভাষাময়

 

থাকবে শহিদের নাম,  থাকবে শিলচর-ঢাকা --

সেদিনের রক্তচিহ্ন  ইতিহাসে আছে  আঁকা …



 বাংলা হরফে সাজাবো আকাশ

মুক্তি দাশ

বাংলা হরফে সাজাবো আকাশ,

ফুল-লতাপাতা-নদী–
বাংলাভাষা তো ছাড়বে না আর
একচুলও তার গদি!
তোমার আকাশে এখনো তো দেখি-
রবি-শশী-তারা হাসে,
ভাষা দিয়ে ছবি আঁকবো তাদের
কবিতার ক্যানভাসে।
বাংলাভাষার দাবীকে ছিনিয়ে
কে বা নেবে? কই নিক-
আমরা যে আছি বাংলাভাষার
অতন্দ্র সৈনিক!
করে যাবে ওরা মা-র অপমান
যখন-তখন যে খুশি?
রক্তের দামে যোগ্য জবাব
বিনিময়ে দেবে একুশই!


বাংলা ও বাঙালি
 দেবপ্রসাদ জানা 
    

কাকের বাসায় জন্মেছে বলে 
কোকিল কখনো কাক হয়ে যায়নি।
কুহু কুহু ডাক ছেড়ে কাকের মতো
কা কা রবে গায় নি।

তবে কেন মানুষ অন্যের বাসায়
অন্যের মতো হয়।
অন্য দেশে অন্য মানুষের 
মতো কথা কয়।

নিজের ভাষা ভুলে গিয়ে হায়
আপাদমস্তক মুখোশের আড়ালে থাকি।
অন্যের বাসায় অন্যের মতো করে
ভাষায় অভ্যন্তরস্থ করে রাখি।

সুদূর পশ্চিম হতে সাগর নদ নদী 
পাহাড় পরিয়ে আশে কত বিদেশিরা।
তাদের ভাষায় টান পড়ে না একটুও
শুধু টান পড়ে বাংলা ভাষা ভাসি থাকে যারা।

ভুলে যাই ভাষার মাধুর্য্য ভাষার ঐতিহ্য 
বিষন্নতার ঘোর কুয়াশায় আবছা হয়ে যায় মন।
আকৃতি প্রকৃতিহীন অন্যান্য শব্দসত্তা
বাংলা ভাষায় ঢুকে পড়ে যখন তখন।

অনুর্বর স্বরচিত শব্দও ভিড় করে আছে 
নির্জনে ভাষার অভ্যন্তরে অজান্তে।
এটা কেন? এমন কেন হয়? শব্দ ভান্ডারে কি
এতোই অভাব বাংলা ভাষার দিগন্তে ?

এই অপরিচ্ছন্ন অপরিণত শব্দের তান্ডবে
বাংলা শব্দের বুকে লেগে যাচ্ছে যক্ষ্মা।
বাংলা ভাষার বিস্তৃত স্বর্ণভূমির শব্দ ভান্ডারে
ঘুন পোকার উৎপাত,রক্ষা করো রক্ষা।



মহান  ভাষা দিবস
 ভক্ত  গোপাল   ভট্টাচার্য 

আজ  একুশে  ফেব্রুয়ারি 
    আমি  ভুলতে কি  পারি।
প্রাচীন   ইতিহাস  মানচিত্র  করেনি  আমায় 
  কখনো   বিপথ  গামী।
    উচ্ছেদ  করেছো  তোমরা 
        সাম্রাজ্ বাদী  শক্তি ।
মাতৃভাষার  বীর  সেনাদল  করেছো  তোমরা  জয়,
মাতৃভাষার  উত্থানে পরাজিত  করেছো 
মৌলবাদী  ধর্মীয়  কূপম্ভকতা ওরা  সব 
  কাপুরুষের দল, গোপনে  গায়ে সন্ত্রাস  মাখে
  আনে নৃশংসতা ।
একুশে  ফেব্রুয়ারি সালাম  বরকত  রাস্তায় 
বুক  পাতে ঘাতকদের থাবার  সন্মুখে,
ঝরে   ছিলো অবিরত  অবিনাশী  বর্ণমালা
  শিরায়  শিরায়  বহেছিলো ওদের  উষ্ণ রক্তস্রোত,
 মুষ্টিবদ্ধ  হাত  হয়েছিল 
উদ্বেলিত  নতুন  শপথের  আয়োজনে।
একুশে  ফেব্রুয়ারি আহত
 অভিজিৎ রায়, বাহির হায়দার
 ওয়াশিকুর  রহমান, নীলাদ্রি চট্টপাধ্যায়, ফুয়েজ আরফিন
আরো  যারা  মৌলবাদে, নৃশংসতা  জেনেও 
জীবন   রক্তে  পথ  করেছে  রক্তাক্ত 
    তাদের   জানাই   সেলাম ।
একুশে  ফেব্রুয়ারি  মায়ের  লাগিয়া সকলি
দিয়াছো  প্রাণ দেওনি  কেউ  মাকে  ফাঁকি।
  এই  স্তম্ভতলায়  দাঁড়িয়ে করি মোরা  আহ্বান মানব কল্যাণে 
শেষ  করবো  মোরা  ওরে ধ্বংস পথের যাত্রীদল।
একুশে  ফেব্রুয়ারি  এলে কন্ঠে  ধ্বনিত  হয় 
     অমর  একুশের   জয়গান।


বাহান্ন তুমি আবার জাগো
  মনোজ ভৌমিক 


ও বাহান্ন তুমি কেমন আছো খুব জানার ইচ্ছে জাগে!
তুমিই নাকি একুশ এনেছে সেই রক্ত ঝরানো ফাগে!!

এ একুশ তবে বলছে কেন ইংরেজিটাই আজ আগে!
ভাবনাগুলো যাচ্ছে মরে যেন মাধূর্যহীন অস্তরাগে!!

ওগো বাহান্নদর্শী নীরব কেন? আওয়াজ তোলো আজ।
বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা,তার এমনিতর সাজ!!

নয়'মাস ভীষণ যুদ্ধ করে যার জন্মদিলেন পিতা, 
সেই ভাষার একি অবহেলা! আজ অন্তরে জাগে ব্যথা। 

ভাষায় জন্য শহীদরা কি আজ পাচ্ছে সঠিক সম্মান! 
যে ভাষাতে দেশ গড়লো সে ভাষারই এত অসম্মান !! 

এমন মিষ্টি মধুর ভাষা এ বিশ্বে কোথায় আছে বলো? 
বাংলা মোদের অহঙ্কার তাই বাঙলার পথেই চলো! 

ধর্মের অজুহাত দিয়ে কেন ঊর্দুটাকেই করে খাড়া ! 
তবে কি আজও সেই পাকিস্তানী মারছে পিছনে ছোরা!! 

ইংলিশ না হয় ইংলিশই থাক যেমন আছে তেমন,
বাংলাটাকে ছাড়াও এ বিশ্বে একুশকে পেয়েছো যেমন।

আজকে আবার নতুন করে শপথ নেওয়ার পালা, 
বাহান্ন তুমি আবার জাগো কাটুক বাংলার কালবেলা।


আশ্রয়-মুখ মায়ের আঁচলে
অজিত জানা

জীবনের আস্বাদে ভাষার ঘ্রাণ
জিহ্বার প্রগলভতায়
কণ্ঠভরা অমৃত ভাষার বর্ণমালা
মাতৃভাষার অমোঘ টানে
রক্তের পুষ্পাঞ্জলিতে নৈবেদ্যের ডালি
শহিদ স্মরণে সালাম-রফিক-জব্বার
অমর একুশে ঝরে পড়ে
সহজাত আবেগ
মর্মমূলে  সত্তার টান
মাতৃভাষার জয়গান
ভাষাতরী প্রবহমান স্রোতে চির অম্লান
ফেব্রুয়ারির বিজয় নিশানায়
ঘরে ঘরে মাতৃভাষার আরাধনা
কথাকলি ফোটে অক্ষর প্রাণে
স্বভাষার প্রেমে আঁকি উজ্জ্বল সিঁথি
অশ্রুসিক্ত অমর ফেব্রুয়ারি
আশ্রয়-মুখ মায়ের আঁচলে। 



প্রতীক্ষার অক্ষরমালায়
অনিন্দিতা শাসমল

সীমান্তে যুদ্ধরত প্রহরীর কর্তব‍্য-পোষাকের বুকপকেটে 
বৃদ্ধা মায়ের চিঠি ; কাঁপা হাতের লেখায় নিজের প্রিয় অক্ষরমালা।
দৃপ্ত কন্ঠে প্রতিবাদ আর কোমল স্বরে প্রেমের কথা  
দুটোই মায়ের ভাষায়...
যে ভাষা প্রতিটি হৃদয়ের স্পন্দন! 

পলাশের ডালে শুভাগত কুঁড়ি, পাতাঝরা রিক্ত শাখায় কোকিলের কুহুস্বর ; বাতাসে বসন্তের ছোঁয়া।
মনে পড়ে যায় ভাষায় জন‍্য ওদের লড়াই, আমাদের ঋণ ।

রক্তভেজা মাটির গভীরে প্রসারিত আমাদের চেতনার ভাষা।
 গান কবিতা আর পথের আলপনা তোমার অপেক্ষায় ...
আমার বর্ণমালা ।


বাহান্নের  ফুল 
বিমল মণ্ডল 

বাংলা  ভাষার  গায়ে  বাহান্নের  ফুল
ভোরের সূর্যের  আলোতে নিয়মিত 
ফুটে উঠতে উঠতে 
ভালোলাগার  বিষাদ হয়ে ঝরে পড়ে। 

হাতে হাতে অক্ষর পাতা বড্ড একাকিত্ব 
দুপুর সূর্যের  তাপ
নিজস্ব  ছায়াতে ক্রমশ  বদল।



বাংলাভাষার ওপর  সহসা বাতাস নেমে
বীভৎস কালবৈশাখীর কাছে
মুখের কথায় রোজ রোজ  প্রতিহিংসা 
গোধূলির আকাশেও  মুক মৃয়মান। 

ঘনঘন  বিদ্যুৎ  প্রহসন মানুষের  অধিকারে
শিশুরা ভুল শেখে বাংলা ভাষার অন্তর্লোকে 
গ্রামপথ আনাগোনা  রাজপথ ধরে
হাতে বেমানান  পতাকা মিশেল রাজনীতি। 


বাংলা ভাষা যেন এক উড়ালপুল 
যে যেমন পায়ে পায়ে  হাঁটে
হিসেবেহীন মৃত্যুর  দাগ ধরে ধরে
বাহান্নের ফুল এখনও 
মেঘ -রোদ্দুরেও  অন্ধকারে। 


















                                             

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন