বৃহস্পতিবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৪

অঙ্কুরীশা-য় প্রকাশিত হল... ৭৫তম প্রজাতন্ত্র দিবসের কবিতা সংখ্যা।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 


 
৭৫তম প্রজাতন্ত্র দিবসের কবিতা সংখ্যা 


কলমে-
জ্যোতির্ময় দাশ
দুর্গাদাস মিদ্যা
তাজিমুর রহমান
মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস
বিকাশ চন্দ
স্বপনকুমার রায়
ফটিক চৌধুরী 
উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় 
দুরন্ত বিজলী
গৌতম রায়
বিকাশরঞ্জন হালদার 
বিকাশ বর
সুদীপ কুমার চক্রবর্তী
জয়শ্রী সরকার 
গোবিন্দ ব্যানার্জী
অশোক রায়
অর্ণব আশিক
সৌমেন কুমার চৌধুরী
রমলা মুখার্জী
সুমনা রায়
অরবিন্দ সরকার
বিশ্বজিৎ রায় 
বিমল মণ্ডল 









প্রজাতন্ত্র 
জ্যোতির্ময় দাশ 

অনেক রাজা ছিল একদিন আমাদের দেশে 
রাজাদের রাজত্বে সুখে কিংবা দুখে বাস করত যারা
 সবাই বলত তাদের প্রজা 
আর দেশটা ছিল— রাজতন্ত্র
একদিন সিংহাসন ছেড়ে  
রাজারা সবাই চলে গেল বনবাসে 
কিন্তু সিংহাসন তো খালি থাকতে পারে না সেখানে বসল প্রজারা 
আর সবাই মিলে যে দেশটি গড়ল তারা 
সেখানে তারাই রাজা, তারাই প্রজা
আর সেই নতুন দেশের নাম হল—প্রজাতন্ত্র!



ভারতমাতা
দুর্গাদাস মিদ্যা

পঁচাত্তরে পা দিয়ে ভারত মাতা
 কাঁদছেন পা ছড়িয়ে। 
কত শত সন্তানের জীবনের বিনিময়ে
যে স্বাধীনতা  ভোগ করছে দুর্বৃত্ত ক' জনা। 
শ্রমের বিনিময়ে যারা গড়তে চাইছে দেশ 
তাদের দুঃখ অশেষ। আর যারা ভাওতা দিয়ে
খায় সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের দিন কেটে যায় 
অবলীলায়। তাই মায়ের চোখে জল । 
ফসল ফলায় যারা তারা ভুখায়  থাকে
প্রতিবাদে আন্দোলনের ডাক দেয়
আর রাজা উজির যারা নাকে সর্ষের তেল দিয়ে
ঘুম যায়  দেখে মা ভীষণ দুঃখ পায়। 
কালোবাজারের রমরমা চলছে এই স্বাধীনতায়। 
দুর্বৃত্ত রাজা মহারাজাদের হাতে পড়ে স্বাধীনতার
ইতিহাস বদলে যায় 
ভারতমাতা মুখ ঢাকে লজ্জায়। 



নান্দীপাঠ
তাজিমুর রহমান

এই হনন কোন অঙ্গীকারের দর্পণরেখা ছুঁয়ে রয়েছে পরমেশ্বর!
তুমি তো বিপন্নতার সঙ্গীত চেনো
দুঃখ পুড়তে পুড়তে কিভাবে একদা সকল অসুখ 
বিষাদপীড়িত জানাজা হয়ে ওঠে, তাও জানো
তবু জলের ধর্ম হয়ে এই নিস্তরঙ্গ যাপন কোন অশনি!

আদিগন্ত জুড়ে যে কান্নার ধ্বনি ভিজিয়ে দিচ্ছে
মানবসভ্যতার প্রবহমানতা
তার ভেতরে জৈবিক ক্ষুধার কম্পন শিরোনামহীন; 
রাত্রি নিবন্ধন হলে অক্ষে চঞ্চল হয়ে ওঠে তথাগত
যদি কখনো বৃষ্টি জারিত করে নিঃস্ব চরাচর

এই বোধে চিরকাল অক্ষর সাজিয়েছি বর্মরূপে।
দু'হাত পেতে চেয়ে নিয়েছি পরিজনের উপেক্ষা, 
অঙ্গার সদৃশ ক্রোধপত্র
কেবল প্রিয় শিক্ষার্থীদের জন্য জমিয়ে রাখা  
ত্রাণপুরাণে
কোন নান্দীপাঠ রাখা হল না...



এখনো প্রতীক্ষায়
মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস

শ্বাস নেব বলে সবুজের দিকে এখন তাকিয়ে কার পায়ের শব্দে কান পেতে আছি
অসংখ‍্য মানুষ মিছিলে খুঁজি সে মুখ কতবার দৃপ্ত উদ‍্যম সে চাহনিতে সে ছেলে 
আমার দেশের মাটি ছুঁয়ে থাকে,হাঁটে উদ্দীপ্ত বাড়ানো আঙুলে
মিশে গেছে দাবানল,রক্তবীজ হয়ে পিছনে হেঁটে যায় 
সে সুর বাজে ভালোবাসার ,মাটি থেকে যে আলো
উঠে এসেছে সোনার ফসলে...
তোমার আমার গান ছড়িয়ে যাব অফুরন্ত কালো মেঘ
সরিয়ে সরিয়ে ঐ যে স্বাধীনতা নেমে
আসে কাজের অনন্ত বিস্তারে...দেশ মায়ের আঁচলে তখন
একরাশ কাঠচাঁপা, ছেলেদের উজার করে দেবে বলে...




ছেঁড়া তমসুক ও প্রজাস্বত্ব বিধি
বিকাশ চন্দ 

১.
একই বুকের ভেতর অসম যন্ত্রণা রক্ত বিভাজন 
অবিরাম ঠোক্কর একই হৃদয়ে এদিক ওদিক 
ভাতের গন্ধে ভিজে যায় প্রতিদিন 
শ্রমিক শরীর লিপিবদ্ধ অধিকার অকাল জ্বরায়
সাক্ষরতা শ্লেটপেনসিল হারিকেন এসবও জানে
মহাশয় ইতিহাস বদলে ঐতিহাসিক ঘর বদলে ব্যস্ত 
এ মারী কাল বুঝেছে বই কলম পাঠশালা উচ্ছেদ
হপ্তার হিসেবে শুঁড়িখানা ঘিরে থাকে জন্ম কুয়াশা
শিশু শ্রম বহাল ফন্দি ফিকির বহাল উর্দিকেতা বহাল 
ভয় আছে কোথাও হামাগুড়ি দেয়া শিশুরা 
হঠাৎ বেয়াড়া ছোকরা নির্নিমেষ তাকিয়ে 
ঝলমলে পোশাক সামলাতে ব্যাস্ত ধর্মাবতার 

২.
অশ্রু মোচনের অবশিষ্ট কথাগুলো ভিজে যাচ্ছে প্রতিদিন 
জগন্ময় পদ্মযোনি বিষকথা পুষে রাখে সোনালী জোব্বায়
বনেদি তেজারতি কসরতে ছিঁড়ে ফেলে বাঁচার তমসুক
দেশ জুড়ে জন্ম বেদের কথা বদলে দেবে শীত সময়
সকল মানুষ জানে পাতাল ঘরে আগুন জন্ম প্রসব
আগলে আছে প্রতিঘরে মহা জীবনের স্তব
মানুষের কথায় এখন চিরন্তন প্রজাস্বত্ব বিধি 



ছাব্বিশ জানুয়ারি
স্বপনকুমার রায়

ভোর না হতেই ছুটছে গাড়ি
বাজছে মাইক ডিজে,
বাগানবাড়ি নদীর পাড়ে
ভিড় জমেছে কী যে!

চলছে আমোদ মত্ত মজায়
নাচছে চতুর্দিক,
শীতের দিনে সবাই মিলে
আজকে যে পিকনিক!

পেট ভরে না যে শিশুদের
অবাক পথের পাশে ---
তাকিয়ে থাকে কষ্ট বুকে
দু চোখ জলে ভাসে।

কিসের নাচন কিসের মজা
কিসের আমোদ ভারি?
আজকে ছুটি বলছে সবাই
ছাব্বিশ জানুয়ারি।

ছাব্বিশে জানুয়ারি মানেই
কেবল ছুটির দিন,
প্রশ্নটা কি সবার মনে
হচ্ছে ধীরে ক্ষীণ !
       


রক্ত বনাম স্বাধীনতা
ফটিক চৌধুরী

চারিদিকে কুয়াশার ভারী আস্তরণ ভেদ করে
একটু একটু করে ভোরের আলো ফুটছে
সূর্যের আলোর কাছে কুয়াশা টেকে না।
সূর্যের কাছে সবাই আনত হয়।

আকাশে একটিই সূর্য থাকে
নম্র কখনো, কখনো ঝলসানো রোদ্দুর
যার আঁচ সারা ভারতবর্ষ পেয়েছিল।
সেই সূর্যটা থাকলে কি হত
কিংবা সেই সূর্যের আভা
আমাদের মধ্যে যদি বিচ্ছুরিত হত
তাহলে দেশটা বুঝি অন্যরকম হত।

কটক থেকে এলগিন রোড হয়ে জাপান
এক দীর্ঘ লড়াইয়ের প্রক্রিয়া
স্বাধীনতার জন্য ফরোয়ার্ড ব্লক
আজাদ হিন্দ ফৌজ
কদম কদম বড়ায়ে যা।
সেই সূর্যের নাম নেতাজি সুভাষ
স্বাধীনতার জন্য যার আবেদন ছিল :
'তোমরা আমাকে রক্ত দাও,
আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব'।


মূর্তি
উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়

মূর্তি ভাঙি,মূর্তি গড়ি
আমরা কেবল,এই পারি,
জন্মদিনে,মৃত্যুদিনে
বেড়িয়ে আসি,তাঁর বাড়ি।
ভেতর বাড়ির খোঁজ রাখি না
কী ছিল সেই মানুষটা,
আমরা কেবল দিবস মানি
উড়িয়ে মেলায় ফানুস টা।
আজও তেমন,কাল ও তেমন
হুজুগে সব মাতছে দেশ,
রক্তদানের শিবির গড়ে
স্বাধীনতার গল্প শেষ।


রাজার রাজা
দুরন্ত বিজলী


এই যে আমরা রাজার রাজা
হৃদয় জুড়ে ভারতবর্ষ
এই যে আমরা স্বাধীনতা
ভোগ করছি অবিরত
এই যে আমরা মুক্ত এবং
ভালো থাকার আলো মাখি
এসবের মূলে যাঁদের
রক্তে লেখা মুক্ত আলোয়
ভারতমাতা সূর্যদ্যুতি
তাঁদের চরণধূলি আজকে
আমরা সবাই মাথায় রাখি।

বিঘ্নবিপদ যতই আসুক
ঝড়ঝঞ্ঝা যতই নামুক
মাটিমায়ের জন্য আজ
শপথ নেবার মহান দিন
ফুল্লকুসুমিত মানবতা
রক্ষা করার উচ্চ শীর
প্রজাতন্ত্র দিবস ।
 
জয়!
ভারতমাতা কি জয়!



পাখির কাছে ফিরে যাবো
গৌতম রায়

গাছ পাহাড় নদী পাখি
অন্তরে অন্তরে শৃঙ্খল ,
পৃথিবীকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য 
ওদের কোনো লিখিত সংবিধান লাগে না।

আমাদের  ক্ষমতা আর সমৃদ্ধির লোভ 
জরতি করে সময়,
অন্ত‍রে সততা থাকলে
লোকতন্ত্র প্রজাতন্ত্র সুদৃঢ় হয়।
হৃদয়ের পতাকার সামনে এসে
সততার সাথে সত্যি সত্যিই   
বলতে ইচ্ছে করছে 
নদী পাহাড় গাছ পাখি আমাকে
গণতন্ত্র শেখাবে?



নিষেধ-সম্বল
বিকাশরঞ্জন হালদার 

লিখে রাখি, মুছে ফেলি, অগ্নি অথবা ভূমি

আমার  তল্লাটে আমি নিষেধ-সম্বল। ঘোলা জলেও সেরে নিই, শিশির-স্নিগ্ধ স্নান

পরের পৃষ্ঠায় কাছে টানে, পথের 
 নমুনা ...


অতিসাধারণ
বিকাশ বর

সংবিধান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল
সুন্দর, নিশ্চিন্ত ভবিষ্যতের
সাধারণ চেয়েছিল খোলা আকাশ
এ ছবি বড় ধূসর দৃশ্যে ভরা
সাধারণ অতিসাধারণ হয়ে যায়
হাহাকারের শব্দ ছাপিয়ে যায়
প্রতিশ্রুতির অমোঘ শব্দ ছাপিয়ে।
আসমুদ্রহিমাচল রাস্তায় নামে
মানচিত্র মুড়ে যায় তেরঙ্গা পতাকায়
এক ও অভিন্ন সুর সংবিধানের ছড়ে
গর্বে ফুলে ওঠা বুকে, আশার সঞ্চার
বেলুনটা চুপসে যায় বাস্তবের মাটিতে
প্রজাতন্ত্র হয়ে যায় গণতন্ত্রের মন্ত্র
সাধারণ অতিসাধারণ হয়ে যায়
কোন তন্ত্রের হাত ধরে, এ মন্ত্রণা
অধরাই থেকে যায় সাতদশকের পরেও
পেটের হাহাকার ঠিকানা খোঁজে
বুকচাপা কান্নায় প্রজাতন্ত্র ফেরে
কী অসাধারণ জাদুবলে সাধারণতন্ত্রে
সাধারণ মানুষ হয়ে যায় 'অতিসাধারণ'।



আমার স্বদেশ 
সুদীপ কুমার চক্রবর্তী

২৬শে জানুয়ারীর হিমেল সকাল 
মনে হলো আজ অন্তত একবার স্মরণ করি
আমার প্রিয় স্বদেশকে - যেখানে জন্মালাম।
আজীবন শুধুমাত্র নিজের জন্যেই এই ছায়াযুদ্ধ
অন্যের কথা মনে করার সময় কোথায় !

অথচ পরিবার পরিজন ছেড়ে সীমান্তে 
দাঁড়িয়ে ওরা একা এবং অনেকজন।
ট্রেঞ্চে দাঁড়িয়ে যুদ্ধের পোশাকে আমাদের সদাজাগ্রত প্রহরী।
কার্তুজ আর বারুদের গন্ধ বুকে আগ্নেয়াস্ত্র 
হাতে প্রতি মুহুর্তে যেখানে মৃত্যুর প্রতিধ্বনি।

আজ আমার নরম হৃদয়ে বাস্তবের রূপরেখা।
এই মুহুর্তে আমি মনে করছি এক যুদ্ধকবি
অওয়েনের নির্জন বসন্তের বিষাদ মর্মগাথা।

পিকনিকের আনন্দে মাতোয়ারা এই সকাল অনুভূতিহীন।
বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে জন্মভূমির সব আরোগ্যচেতনা।
যদিও মেঠোপথে রাজপথে যান পরিবহনে ক্লাবে ময়দানে 
পত্ পত্ উড়ছে আমাদের জাতীয় পতাকা।
আমরা দাঁড়িয়ে নিরাপদ দূরত্বে—
গরম চা এর কাপে মজলিশি গল্পে মশগুল ।
তবু আজ আমি নিঃশব্দে ফেললাম দুফোঁটা চোখের জল 
আমার প্রিয় স্বদেশের পবিত্র ধূলিকণায়।
ইন্ডিয়ান নাইটঙ্গেলের কণ্ঠস্বরের মাদকতা 
ছুঁয়ে আছে  আজ আকাশ বাতাস -
হ্যায় মেরে বতন কে লোগো...
এ গানের প্রতিটা শব্দ শিহরিত করছে আমাকে।

আজ আমি ভাবছি স্বপ্নের এক অখণ্ড ভারতবর্ষের কথা যেখানে 
কবিগুরুর জনগণমনোধিনায়ক আর ইকবালের সারে জাহাসে আচ্ছা
 লীন হয়ে আছে আমাদের নিজস্ব সত্তায় - স্বদেশ চেতনায়।

নতুন ভারতবর্ষ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে আজও 
দাঁড়িয়ে এক তেজদীপ্ত লৌহ পুরুষ—
সিমলা স্ট্রীট থেকে কন্যাকুমারিকায়
সার্ধ শতবর্ষ পেরিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতায়।

আমি অবার একবার নতুন করে জন্ম নিলাম
 এ মাটির পৃথিবীতে
আমার মাথা নত হয়ে এলো স্বদেশ বন্দনায়
ঠিক তখনই বেজে যাচ্ছিল বেতারে—
বন্দেমাতরম - 
সুজলাং - সুফলাং -মলয়জোশীতলম শস্যশ্যামলাম...
বন্দেমাতরম...



হে মহাজীবন 
জয়শ্রী সরকার
       
সেদিনের সেই ছোট্ট সুবি আজকে নেতাজি সুভাষ
দেশপ্রেমের মন্ত্র নিয়ে জাগিয়েছো মনে আশ।
নেতার মতো তুমিই নেতা হে নেতাজি, হে সুভাষ,
তোমার তুলনা তুমিই কেবল --- তুমি যে বৃটিশ ত্রাস!

সংগ্রামেতে নও তো ক্ষুদ্র , স্বপ্নে তোমার দেশমাতা
পাহাড় প্রমাণ বাধার সামনে তুমিই ছিলে পরিত্রাতা।
পরাধীন এই ভারতবর্ষে দেশপ্রেমের মন্ত্রকে
অস্ত্র করেই স্তব্ধ করেছো বৃটিশ ষড়যন্ত্রকে!

" দিল্লি চলো " স্লোগান দিয়ে ডেকেছো তরুণ দলকে
ভয়াল চোক্ষে বৃটিশ দেখেছে তোমারই মনোবলকে।
" আজাদহিন্দ্ ফৌজ " গড়েছো শক্ত করতে ঘাঁটি
পরাধীনতার শৃঙ্খল হতে মুক্ত স্বদেশ-মাটি!

ক্ষমতালোভীর বাঁকা চোখ হেনেছে শুধুই আঘাত
দৃপ্ত কন্ঠে মুক্তির মোহে করে গেছো প্রতিবাদ।
পরাধীন এই ভারতবর্ষে তুমি তো আলোর দিশা
দেশপ্রেমের মহান মন্ত্রে কাটিয়েছো অমানিশা!

দিনবদলের পালার পরেও আজো আছো অমলিন
স্বার্থের মোহে ভুলেছে যারা তাদের মহিমা ক্ষীণ।
তোমার শুভ জন্মদিনে স্মরণে ভারতবাসী
হৃদয় দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই তোমার শরণে আসি!



রাতলিপি
গোবিন্দ ব্যানার্জী

একটা চওড়া দুপুর পাশে এসে বসলেই
তাসের আড্ডা জমে ওঠে উঠোনে, 
ঠানদির মাখা আমতেল মুড়ি 
আর খাল থেকে গামছা ছেঁকে তোলা 
মেথি মাছের বড়া, প্রজন্মের ইতিহাস লেখা হয়। 
তারপর ঘুম যখন রাত্তিরকে জড়িয়ে ধরে 
তিলের নাড়ু পাকাতে বসে পরিশ্রান্ত মা,
প্রতিবেশিনীর মস্করা ঘিরে থাকে মাঝরাত পর্যন্ত 
স্বপ্নের ভিতরে গেঁথে যায় অবিরাম রাতলিপি।
আর গান হবে প্রভাত হ'লেই...
একটা দেশের স্বপ্ন
একটা কিশোর দেখছে
একটা নদীর গল্প
একটা কিশোরী বলছে...


শপথ
অশোক রায় 

শামুকের খোলে ঢুকে বসে আছি। নেতাজি নিয়ে বড় বড় বুলি কপ্‌চাচ্ছি, উনি এই করেছেন ওই করেছেন কিন্তু নিজেকে ঠায় বসিয়ে রেখেছি বন্ধ ঘরের নিশ্চিন্তিতে।

ব্যাঙ্কে কিছু টাকা আছে তাতে দিন-গুজরান হয়ে যায়। প্রয়োজন বড় কম দুটি ভাত একটুক্‌রো মাছ। বাকি জনগণ মরুক বাঁচুক থোরাই কেয়ার। ব্যস নেতাজির জন্মদিনে ভালো ভালো কথা বলি, প্রশংসার মালা পরাই। উদ্দীপ্ত ভাষণ দিই। যখন বলি “তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব” তখন মনে পড়ে যায় বেশিরভাগ মানুষ আমারই মত শামুক-খোলে প্রবিষ্ট ছিল নিজ নিজ স্বার্থে মশগুল হয়ে।

প্রকৃত স্বার্থত্যাগ যাঁরা করেছিলেন তাঁরা নেই। সাধুবেশে নেতাজির ছবি চোখে আনে জল, কিন্তু ব্যস ঐ পর্যন্তই। আমরা জোর গলায় বলতে চাই – আমাদের স্বার্থ যে যার অটুট রেখেছি

এক বিন্দু রক্তও দিই নি খেটে-খাওয়া তিলে তিলে মৃত্যু বরণ-করা আমারি দেশবাসীদের

যাদের কিচ্ছু নেই সেই নব্বই শতাংশ দেশবাসী,  

যাদের বেঁচে থাকার স্বাধীনতা কেড়ে রক্ত নিংড়ে নিজ ভান্ডার গড়েছি আমরা দশজন --

বেশ আছি বহাল তবিয়তে দেশ-মাতার কথা ভেবে কি হবে, জানই তো বীর-ভোগ্যা বসুন্ধরা,

জয়তু সুভাষ, রক্ত চাই কিন্তু তোমার মত নিঃস্বার্থ হতে চাই না…।  



প্রজাতন্ত্র দিবসে
অর্ণব আশিক 

গোধূলির সন্ন্যাস রাঙা আলো থেকে 
সোনালী আভা খুলে যায়
ফুল, মালা আর পতাকা নিয়ে
সবাই করছে প্রভাতফেরি।
ভোরের গায়ে লেগে থাকে কিছু আলো
প্রজাতন্ত্র দিবসের ডাক মেঠো পথ করে সরগরম
আকাশ বাতাস মুখরিত মন্ত্র
বন্দেমাতরম,...বন্দেমাতরম।


কেউ কুথা'ট রাখ্যে নাই
সৌমেন কুমার চৌধুরী 

পঁচাত্তর বছর কাইটল্য
কেউ কুথা'ট রাখ্যে নাই 
রাইস্তা নাই, জল নাই
শিক্ষ্যে নাই, সাসথ্যো নাই 
খাদ্য নাই, ঘর নাই... 
চারিদিক্যে শুধু নাই আর নাই 
পঁচাত্তর বছর কাইটল্য
কেউ কুথা'ট রাখ্যে নাই 

দশবার ভিন্ন রঙের এম এল এ
ভিন্ন প্রতিশ্রুতির বইন্যা,
কত্যো সইপন্যো আসিছে আর
গুরায়েন গ্যেছে...
হোগলাপাতার ঘর দাঁত বের করে 
মুকে ভেংচি কেটেছ্যে,
উঠোনের ছোট্ট চারাগাছটা 
আজ পেকান্ড রূপ ধরেয়েনছ্যে
উর পেত্যাশা নাই, আক্ষেপ নাই!
পঁচাত্তর বছর কাইটল্য
কেউ কুথা'ট রাখ্যে নাই 

মুদের ভাল্যো করনের লেইগ্যে
কত্তো মানুষের রেতে ঘুম নাই, 
কুথার'পর কুথা,ভাষণ,মিছিল 
তুদের লেইগ্যে মুর কইষ্ট্য হয়
ভোটের আগের সাদা কাপড় 
জিতনের পর চাপ চাপ কালো
অইনধোকার মাখা, সারা শরীলে
পুচা পাঁকের গইনধ্যো!
কুথা দিয়েনছিল্য কিন্তুন 
কুথা'ট রাখ্যে নাই 
পঁচাত্তর বছর কাইটল্য
কেউ কুথা'ট রাখ্যে নাই।



আত্মত্যাগের আত্মভূমি 
  রমলা মুখার্জী

শত শহীদের সংগ্রাম আর রক্তের বিনিময়ে -
 স্বাধীনতার সূর্য উদয় ভারতের মৃন্ময়ে।
লাল-বাল-পাল, শ্রীঅরবিন্দ আত্মত্যাগে মহান-
স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে প্রথম সেই সোপান।
অহিংসা আন্দোলনে মহাত্মাজীর সংগ্রাম-
গডসের গুলিতে নিহত, অমর গান্ধী নাম।
বড়লাটকে মারতে গিয়ে কিশোর ক্ষুদিরাম-
ফাঁসির মঞ্চে দেখিয়ে দিলেন জন্মভূমির দাম।
বীর নেতাজী আজাদ হিন্দ্ ফৌজ করে নির্মাণ,
জন্মভুমির কল্যাণে শেষে অজানা  অন্তর্ধান!
আজ্ঞাত সেই রহস্যের হয় নি তো সমাধান -
দেশবাসী তবু ভুলবে না তাঁর অমর অবদান।
ভগৎ সিং প্রীতিলতা বিনয় বাদল দীনেশ,
দেশের জন্য সংগ্রামীদের জীবন নিঃশেষ।
গুলি-বিদ্ধা মহিয়সীর মহতী জীবন দান-
বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনীর অমূল্য সে প্রাণ।
সহস্র শহীদের তাজা রক্ত গোলাপে আঁকা-
ভারতের আকাশে উড়ল তেরঙ্গা পতাকা।
জাগো দেশবাসী গাও সবে আসি,
"জয় ভারতবর্ষ "-
ত্যাগ-সততা-তারুণ্যে বাড়ুক দেশমাতার উৎকর্ষ।
এত কষ্টে অর্জিত সোনার স্বাধীন ভারতে-
জনগন জেগে উঠুক আত্মনির্ভরতার শপথে।
পরনির্ভর হয়ে থাকলে পিছন হাঁটবে প্রগতি -
নিজের বুদ্ধি বলেই বাড়বে জাতির অগ্রগতি।
সবাই তাই হাত মেলাই, বলি "দেশেতে জিনিস গড়ব"-
দেশের মর্যাদা বাড়াতে প্রাণ দিয়ে সব লড়ব।



হে  স্বাধীন ভারতবর্ষ
সুমনা রায়

হে আমার স্বাধীন দেশ
মাটি খোঁড়ো একবার।
নির্বিঘ্নে ঘুমোতে দাও
তোমার পাতাল কোলে।

এখানে কোনো গান নেই 
যা আমায় ভুলিয়ে রাখতে পারে।
এখানে কোনো প্রেম নেই
যা ঢেকে দিতে পারে দৈন্য।

রুক্ষ  মাটির তলে
তোমার আশ্রয়
জানি এখনও নরম ও ভিজে
কবিদের হৃদয়ের মতো।



        
প্রজাতন্ত্র দিবস
  অরবিন্দ সরকার
        

প্রজার নাম ভাঙিয়ে  নামে প্রজাতন্ত্র,
প্রজারা ভিখারী সদা হাত পেতে রয়,
গনতন্ত্র রাজবেশে  দীক্ষা  ঠকা মন্ত্র,
প্রাসাদে আরামে রাজা  প্রজার সংশয়।

নেতারা পতাকা তোলে  সাবধানী গেট,
ভাষনে মাইকে বুলি  প্রজাতন্ত্র জয়,
ভিখারী হাতড়ে খোঁজে  ছোঁড়া চকোলেট,  
উপাধি ভূষিত নেতা  হাততালি পায়!

গরীবী হটানো ধ্বণি  গরীবের লজ্জা,
হাত পেতে ভোট নিয়ে  ছিঁটে ফোঁটা দান,
প্রজারা ভিখারী সেজে  পথে পাতে শয্যা,
উন্নয়ন অনুদানে    কাঁচকলা পান।

প্রদীপের নীচে ছায়া  সত্যি বিদ্যমান,
উজিরের বিপরীতে   ফকির মানান।


হে প্রিয় দেশ 
বিশ্বজিৎ রায় 

হে  প্রিয় দেশ, তোমাকে নিয়ে আর ভাবিনা এখন। আসলে, ভাবার সময়ই পাইনা, ভাববো কখন বলো?ভাবনায় তো শুধু এই কোভিড-অতিমারী কালে চাকরিটা কোনক্রমে বাঁচিয়ে রাখার চিন্তা,
বাড়ির পাঁচটা পেটে দুবেলা অন্ন জোগানোর লড়াই,
চেনা পরিজনদের মতো নিজের চাকরিটা হঠাৎ চলে গেলে বৃদ্ধা মা, রূগ্ন স্ত্রী,আর দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে কোন রাস্তায় গিয়ে বসবো তার  শঙ্কা...

হে আমার দেশ, তুমি বলবে, আমি আত্মকেন্দ্রিক, 
পাতি মধ্যবিত্ত----
হ্যাঁ,  তা বলতে পারো, আমি পাতি মধ্যবিত্ত,
দেশের কথা ভাবার আগে নিজের ছেলেটাকে 
মানুষ করার কথা মাথায় আসে, লেখাপড়া শিখিয়ে 
মেয়েটাকে সুপাত্রে দান করার কথা মাথায় আসে,
প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে বারংবার লোন নিতে নিতে
ভাঁড়ার শূন্য হয়ে যাওয়ার কথা মাথায় আসে,
কী করব বলো? 
আগে বন্ধুদের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান,  ভারত-পাকিস্তান,  বিজেপি-তৃণমূল, শাহরুখ - ঋত্বিক  নিয়ে গলা ফাটাতাম খুব ---
এখন,মাইরি বলছি, এসব চর্চা শুনলে পাশ কাটিয়ে চলে যাই---
মনের মধ্যে তখন ঘোরে ছেলেমেয়ের
টিউশন ফি জোগাড় করার কথা, 
শালিকার মেয়ের বিয়েতে নিজের মান বাঁচানোর কথা...

হে প্রিয় দেশ, আমাকে তুমি ক্ষমা কোরো।
তোমার ওই স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, গান্ধী জয়ন্তী,  সুভাষ জয়ন্তী-তে আমার কিস্যু যায় আসেনা---
ওগুলো একটা ছুটির দিন ছাড়া আর কিছু নয় আমার কাছে,
বরং,  ওই দিনগুলোতে কোথাও বাড়তি কিছু কাজ করতে পারলে হাতে দুটো পয়সা আসতো ---
আমার কোম্পানির মালিক দিনে দশ ঘন্টা খাটায় 
কিন্তু,  বেতন বাড়াতে গেলে যে তার হাতটান পড়ে...

তোমার স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর সন্তানদের আমি প্রণাম করি, তাদের আত্মবলিদানের ইতিহাস পড়ে চোখে জল এসে যায়---- সেটুকুই,  পরক্ষণেই ঝাঁপিয়ে পড়ি আমার নিজের বেঁচে থাকার সংগ্রামে, 
আমি তখন একাগ্র এক  সংসার-সংগ্রামী,
ওদের কথা তখন একটুও মনে থাকেনা  আমার ...

জানি, চারপাশে এখন চোর-জোচ্চর-লুটেরারাই  ভালো আছে, রসেবশে আছে,  কিন্তু 
আমিতো কোনদিন ওদের মতো হতে পারবনা, 
সেই শিক্ষা, সেই কোমরের জোর আমার নেই---
আমার শক্তি,  আমার মেধা সবই মধ্যস্তরের,
সামান্য বিদ্যাবুদ্ধি আর মনের জোরে প্রতিদিন 
আমি লড়ে যাচ্ছি,  লড়ে যেতে হবে আমাকে---

হে প্রিয় দেশ,  ভুল বুঝোনা আমাকে,
তুমি আমার জন্য নও, আমিও তোমার জন্য নই...






উত্তর দাও!
বিমল মণ্ডল 

হাত বাড়িয়ে  তেরঙ্গা পতাকার দিকে দাঁড়িয়ে 
 বুট পরা পায়ের শব্দ সহজে মেখে নিচ্ছি বুকে 
হিসেবহীন মানুষের বুকে রক্তাক্ত বিবর- বিলাসী হিংসা 
কঠিন ভাবে খুঁজি জীবনের সমস্ত পরমায়ু 
তেজোদ্দীপ্ত আমার দেশকে ভয়,প্রতিবাদ, পরিচয় বাণী শেখাই
উদীপ্ত সাহসের পথে।

উজ্জ্বল আলো উঠে আসছে দেখে
বুকের  ওম থেকে  নামিয়ে আনি শেষ লয়

কতগুলো হাত মিশে যাচ্ছে কালো আকাশে 
মেঘের পাশ দিয়ে সুরু চাঁদ
প্রাণের আবেগে অস্থির 
তবুও দূর ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখি
তোমার - আমার ইতিহাসের দিকে 
কারা যেন হাত বাড়িয়ে বলছে...
উত্তর দাও!





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন