রবিবাসরীয় বিভাগ-২৯
আজকের গল্প
শীতকাতুরে
মুক্তি দাশ
এবার শীতটাও পড়েছে তেমনি জব্বর! বাপরে বাপ! ‘শীত’ শব্দটা উচ্চারণ করলেই যেন দাঁতে-দাঁত লেগে ঠকঠক করছে। হাড়সুদ্ধু কাঁপিয়ে দিচ্ছে একেবারে! শীতকালে এমনিতেই বিছানা ছাড়তে না-ছাড়তেই সকাল সাতটা। তারওপর তাকে আবার সাড়ে-আটটার মধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তে হবে। নইলে আপিসে লেটমার্ক। বোঝো ঠ্যালা!
বিছানায় বসে বসেই কার্তিক চা-পর্ব শেষ করল। বেড-টী। আদা দিয়ে বেশ জম্পেশ একখান চা বানিয়ে দিয়েছে রাণু। আরাম করে খেল। তবু যেন শীতভাবটা যেতে চাইছে না। কিন্তু তাকে তো যেতেই হবে। আজ আবার ঠান্ডাটা যেন একটু বেশি। লুঙ্গিপরা অবস্থায় গায়ে একটা তোয়ালে জড়িয়ে নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে ঘর থেকে বেরোলো কার্তিক। কিচেনে উঁকি মেরে রাণুকে একবার দেখে নিল। ভয়ানক ব্যস্ত সে। কাঁপা-কাঁপা গলায় একটু চেঁচিয়ে কার্তিক বলল, “শুনছ, আমি চললাম!”
রাণু প্রথমে তেমন একটা গা করল না। কার্তিকের দিকে না তাকিয়েই খুন্তি নাড়তে নাড়তে নির্বিকারভাবে বলল, “কোথায় যাচ্ছ?”
কার্তিক করুণস্বরে ধরা গলায় বলল, “শোনো, আমি যদি আর ফিরে না আসি, তাহলে…তাহলে আমাকে এ-জন্মের মতো মাফ করে দিও!”
এবার টনক নড়ল রাণুর। সব কাজ ফেলে সে আলুথালু হয়ে ছুটে এসে বলল, “মরণদশা! কী বলে রে বাবা লোকটা! বলি, যাচ্ছটা কোথায়? আজ তোমার আপিস নেই?”
কথাগুলো কানেই গেল না কার্তিকের। সে আপনমনে বলে চলেছে, “তোমার সাথে এতদিন যে দুর্ব্যবহার করে এসেছি, সেসব আর মনে রেখো না প্লিজ! তারজন্যে আমি সত্যিই অনুতপ্ত। জানি, এর ক্ষমা হয়না, তবু পারলে ক্ষমা করে দিও…প্লিজ প্লিজ!”
আর সহ্য করতে পারছে না রাণু। হলো কী লোকটার? পাগল-টাগল হয়ে গেল নাকি? অধৈর্য গলায় রাণু বলল, “আরে ধ্যাত্তেরিকা! কোন চুলোয় যাচ্ছ বলবে তো!”
কার্তিক সম্মোহিতের মতো বলেই চলেছে, “আর যদি কখনো না ফিরি, তুমি…তুমি বরং একজন ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নিও, বুঝলে? যে তোমাকে অনেক সুখে রাখবে, অনেক শান্তিতে রাখবে, অনেক আনন্দে রাখবে…আর ভুলে যেও আমার কথা…ভুলে যেও আমাকে!”
রাণু তো রেগে কাঁই। বলল, “অ্যায় দ্যাখো, ভালো হবে না বলে দিচ্ছি!” বলে খুন্তিটা উঁচু করে ধরে ফের বলল, “ভালো চাও তো এক্ষুণি বল, কোথায় যাচ্ছ, নইলে…নইলে…”
গতিক সুবিধের নয় দেখে কার্তিক এবার প্রায় কাঁদো-কাঁদো গলায় বলে উঠল, “বাথরুমে। চান করতে। উরে বাবারে! গিজারটাও ক'দিন হল খারাপ হয়ে পড়ে আছে!...উঃ উঃ উঃ...”
বাহঃ বেশ মজার।🤣🤣🤣
উত্তরমুছুন