শনিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২২

রবিবাসরীয় বিভাগ-৩৪।আজকের গল্প।মায়া দে।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।



রবিবাসরীয় বিভাগ-৩৪


আজকের গল্প


গল্প হলেও সত্যি(-তিন)

         মায়া দে

শ্রাবনসন্ধ্যা।  অবিরাম বৃষ্টি।  গ্রামের বাড়ি। সন্ধ্যা নামতেই ঘরে ঘরে শাঁখের মা- মা- ডাক। পরিমল বাবু বারান্দার সব কটা আলো জ্বালিয়ে দিলেন। উঠোনে  বাতাবি লেবুর গাছ। তার গা  বেয়ে বেয়ে বর্ষার কি নাচন! ভেজা পাতাগুলো আলোতে ঝিলমিল করছে।  পরিমল বাবু অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে  রইলেন। চা হাতে নন্দিনী পাশে দাঁড়িয়ে। দেখে সম্বিত এলো। সাগ্রহে চা টা নিলেন। নন্দিনী পাশে বসে । চায়ের কাপে  চুমুক দিতে দিতে আবার তাকালেন বাইরের ঝরে পড়া বৃষ্টির দিকে।দেশের বাড়ি আসলে উঠোন পুকুরঘাট মানুষজন অত্যন্ত প্রিয় মনে হয়। পরিমলবাবুরা আজই দুপুর নাগাদ এলেন। মায়ের নির্দেশ  ছিল , গ্রামের বুড়ো শিবের মন্দিরে পুজো দেওয়ার ব্যাপার আছে , অবশ্যই আশা চাই।

বৃষ্টি থামতেই বাজার থেকে ফিরল  বাড়ীর পুরনো কাজের লোক।  সে জানালো বর্ষায় ডাব পাওয়া গেল না। সকালে আর একবার খোঁজ নিতে হবে। এই কথা শুনে পরিমল বাবুর মা ভেতর থেকে বাইরে এলেন। খুব চিন্তিত দেখালো উনাকে।   শিবের পুজো ডাব আনাতেই  হবে।

বাজার থেকে আনা জিনিসগুলো নন্দিনী একে একে গুছিয়ে রাখছে।  শাশুড়ি মা  কাছে  এসে বললেন এই সময় একটু সাবধানে থাকবে বৌমা। মন ভালো রাখবে —এই জাতীয় আরো কত কি! আধো লজ্জায় নন্দিনী মুখ নত  হলো।বাধ্য মেয়ের মত সব শুনছে সে। কোলে  সে আসছে ---  মনে হতেই খুশির ঝিলিক মনে।

সারারাত বৃষ্টি। সকালে গ্রামের বুড়ো মন্দিরে পুজো দিতে যাবে নন্দিনীরা। পূজোর সমস্ত আয়োজন প্রস্তুত।  কিন্তু মিলল না  ডাব। মনের মধ্যে এক রাশ খুঁতখুঁতানি।  ডাব ছাড়া শিব পূজা? মন সায় দিচ্ছে না কারোর।  তবু এলো মন্দিরে।  মন্দির চত্বরে একটা  ছোটখাটো বাজার বসে।  কিন্তু রাতভর বৃষ্টি দরুন বাজার তেমন জমে নি। এখানেও মিলল না  ডাব। পুরুত মশাই সব জেনেও পুজোর আয়োজন করছেন।  নন্দিনীর  মনে সুখ নেই। ডাবছাড়া শিব পুজো? এ কি সম্ভব? নিজে নিজেই কুঁকড়ে যাচ্ছে ভেবে। অপরাধ  বোধ যেন মনে  "ক্ষমা করো মহাদেব"—প্রবল আকুতি।

হঠাৎ । হাঁটু পর্যন্ত ধুতি পরা, খালি গা,  খালি পা গ্ৰামের এক মানুষ  ডাব হাতে   ভিজে ভিজে  মন্দিরে হাজির। এসে বললেন —" আমার নতুন গাছে প্রথম ডাব। এটা নাও মা।  কে যেন বলল তোমরা  খুঁজছো? নাও। বুড়ো শিবের মাথায় ঢালো"।

মন্দিরে কাঁসর ঘন্টা বেজে উঠল। স্বস্তি পেলেন পুরুত মশাই। পুজোতে মন দিলেন।  হাতে ডাব পেয়ে শাশুড়ি মা "জয় বাবা মহাদেব", "জয় বাবা বুড়ো শিব"  বলে মাথা ঠুকেই চললেন  কি এক পরম বিশ্বাসে।

নন্দিনী যেন বিশ্বাস করতেই পারছে না।

অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল মানুষটাকে...

 

যেন দেবতা দর্শন হলো।











1 টি মন্তব্য: