মহালয়া-র গল্প
আশ্বিনের শারদপ্রাতে
মুক্তি দাশ
মহালয়ার সকাল। আকাশে-বাতাসে আগমনী সুরের মুর্ছনা। পূবের সিঁদুরগোলা আকাশ যেন চরাচরে ছড়িয়ে দিচ্ছে ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে’র বার্তা।
বারোয়ারি তলায় পুজোমন্ডপের গা ঘেঁষে ফটিকের চায়ের দোকান। এরই মধ্যে দোকানের ঝাঁপ খুলে গেছে। একে একে জড়ো হচ্ছে পাড়ার ছেলে-ছোকরার দল। রতন, ঝন্টু, খয়রুল, বাবলু, আশিফ, বিকাশ আরো অনেকেই। প্রবীণরাও আছেন অবশ্য। এই যেমন, জগদীশ সামন্ত, ভবানী হালদার এমনকি, পাড়ার মুরুব্বি বৃন্দাবন খাটুয়া পর্যন্ত।
ফর্টিক উনুনে আঁচ দিয়েছে। আঁচটা আরেকটু গনগনে হলেই চা চাপিয়ে দেবে। ঝন্টুর ধৈর্য বড় কম। সে গলা উঁচু করে বলল, ‘কিরে ফটকে, তোর হলো?’
ফটকে বলল, ‘এই তো হয়ে গেল ঝন্টুভাই, আরেট্টু…সংগে বিস্কিট দেবো তো?’
বাবলু বলল, ‘সে তোর যা ইচ্ছে দে না বাওয়া! আগে শিগ্গির গোটা পাঁচেক চা লাগা দেকিনি! খয়রুল, তোর চা চলবে তো?’
বাবলুর কথা শেষ হবার আগেই লাঠি ঠুকঠুক করতে করতে এলেন হালদারদাদু। পুরো নাম রাধাবিনোদ হালদার। নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ। হেডমাস্টার ভবানী হালদারের বাবা। বড় একটা এদিকে আসেন-টাসেন না। নদীতে পিতৃতর্পণ সেরে ফেরার পথে আজ কী মনে করে হঠাৎ ঢুকে পড়েছেন। তাঁকে দেখেই রতন বলল, ‘ও দাদু, মহালয়া শুনলেন?’
মাড়িসর্বস্ব হাসি হেসে হালদারমশাই বললেন, শুনব না? বাঃ! ভেবেছিস কী তোরা? কাল নাতিকে দিয়ে রেডিওটা সারিয়ে এনেছিলাম। আহা! বীরেন ভদ্রর গমগমে গলায় সেই চন্ডীপাঠ…আ-হা-হা-হা!’
তারপর একটু থেমে কেমন ঘোর লাগা গলায় বললেন, ‘ভাগ্যিস আজানের শব্দে ঘুমটা ভেঙেছিল, নইলে আজ মহালয়া শোনাই হতো না!’
শুভ মহালয়া |
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন