ধারাবাহিক ভ্রমণকথা:(পর্ব-২৭)
বিশ্বেশ্বর রায়
গয়ংগচ্ছ দিনযাপন চলছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রাতঃকৃত্য সেরে রেস্টুরেন্টে যাওয়া, ব্রেকফাস্ট করা। ফিরে আসতে না আসতে বাবাইয়ের অফিসের তাড়া। ওকে একটু লাঞ্চের খাবারদাবার গুছিয়ে দেওয়া। পৌনে নটা থেকে ন'টার মধ্যে বাবাই চলে যায় অফিসে। তারপর আমাদের কাজকর্ম কিছু থাকে না। নিজেদের জন্য একটু রান্নাবান্না, ব্যস। তারপর দুপুরের খাওয়াদাওয়া সেরে ভাতঘুম। বিকেলে বা সন্ধের দিকে হোটেলের চারপাশে একটু ঘোরাঘুরি।এছাড়া সারা দিনরাত টি ভি দেখা, মুনিয়া-জয়দীপের সঙ্গে Skype-এ কথা বলা বা কলকাতার কারও সঙ্গে ফোনালাপ। এরই মধ্যে সন্ধেবেলা অফিস থেকে ফিরে বাবাই আবার আমাদের নিয়ে কোনোদিন Wal-Mart, কোনোদিন Patel Brothers, কোনোদিন অন্যান্য Mall-এ যায়। আর যাওয়া মানেই কিছু না কিছু কেনাকাটা। প্রয়োজন ছাড়াই অকারণে কেনাকাটা করতে যে বাবাইয়ের এত আনন্দ তা বলার নয়। গুচ্ছের জামাপ্যান্ট, শীতের নানা পোশাক ভর্তি হয়ে রয়েছে ওয়রড্রোব, স্যুটকেস, ট্রলি ব্যাগে। তারপরও কিনছে এবং সেগুলোর সবই যে ব্যবহার হয় তা নয়। নতুনই পড়ে থাকে ডাঁই হয়ে।
এখানকার যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই অফুরন্ত সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্যের সিংহভাগই প্রাকৃতিক। এখানকার যেকোনো রাস্তার দু'পাশ জুড়ে অজস্র গাছগাছালি। প্রায় ঘন বনের মতো। শুধুমাত্র Down Town বা Up Town-এর আশপাশের কিছু অংশ ছাড়া সারা দেশটাই বনময় বা বাগানময়। সেই গাছগাছালির কোনোটাই প্রায় আমাদের দেশের সমতলে দেখা যায় না। অবশ্য পাহাড়ি অঞ্চলে দেখা যায়। ঝাউ বা ক্রিসমাস ট্রি আকারের গাছ, ম্যাপল ট্রি এবং সুউচ্চ ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া বট-অশ্বত্থ জাতীয় গাছ সর্বত্র। তবে আমাদের দেশের সমতলের গাছপালা --যেমন, বট, অশ্বত্থ, অশোক, বাবলা, শিরিষ, তেঁতুল, নিম, আম, জাম, কাঁঠাল, শাল, সেগুন, শিশু, নারকেল, তাল, খেজুর, চালতা, ডুমুর, অর্জুন, কুল, ভেরেণ্ডা, বেড়াচিতি, বকুল, লিচু, হরিতকি, শ্যাওড়া ইত্যাদি গাছ, এমনকি কলা, পেঁপে, সফেদা, আতা, ড্যাফল, পেয়ারা ইত্যাদি ফলের গাছও চোখে পড়েনি। হয়তো এসব গাছ এখানকার চাষিদের বাগানে, গ্রামের দিকে কোথাও চাষ হয়। কারণ, এসবের বেশিরভাগ ফলমূল বাজারে পাওয়া যায়। মনে হয় না এর সবগুলিই বিদেশ থেকে আমদানিকৃত। তবে গাছগাছালি অফুরন্ত বলে কাঠের সামগ্রীর প্রাচুর্য সর্বত্র চোখে পড়ে। প্রতিটা বাড়ির মেঝে, দেওয়ালের ভিতর দিক কাঠের। আসবাবপত্র বেশিরভাগই কাঠের। লোহা বা অ্যালুমিনিয়ামের আসবাবপত্র প্রায় নেই বললেই চলে। এমন কি অনেক বাড়ির পাঁচিল বা ঘেরাগুলিও স্রেফ গাছ চেরাই করে বড় বড় পেরেক বা গজাল ঠুকে তৈরি। অনেক পার্কে বসার বেঞ্চগুলিও ওভাবে গাছ চিরে দু, ভাগ করে আচাঁছা ডালের পায়ার উপর বসানো। অতি সাধারণ ও সহজভাবে তৈরি। কিন্তু তার মধ্যেও কী সৌন্দর্যবোধ, শিল্পভাবনা।
রাস্তার বা ফুটপাতের পাশের গাছের অবাঞ্ছিত ডালপালা, পার্কের মধ্যে গাছের ঝুলে পড়া ডালপালা কী সুন্দরভাবে যান্ত্রিক করাত দিয়ে এমন নিখুঁতভাবে কাটা হয় যে তার মধ্যেও সৌন্দর্যবোধ ধরা পড়ে। কুড়ুল বা দা দিয়ে এবড়োখেবড়োভাবে কাটা নয়। এছাড়া প্রায় প্রতিটি বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, অফিস, পার্ক, রাস্তা বা ফুটপাতের পাশের বাগানগুলির পাতাবাহার জাতীয় গাছগুলির ছোটবড় ডালপালা নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিখুঁতভাবে ছাঁটা হয়। একটা ডগা বা পাতাও যেন ছোটবড় না থাকে। আর গাছগাছালির ছাঁটা ডালের টুকরো আর পাতাগুলি ছোট্ট কুচিকুচি করে সব গাছের গোড়ায় বিছিয়ে দেওয়া হয়। যা পরবর্তীকালে গাছগুলির সারে পরিণত হয়।
চলবে...
আরও পড়ুন 👇👇
*প্রেমের কবিতা পর্ব-৫৪*
*আজকের কবি*
*দেবাশিস চক্রবর্ত্তী*
🌹🌹🌹🌹🌹🌹
https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/09/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_21.html
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন