বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১

ধারাবাহিক ভ্রমণকথা(পর্ব—২০)।। পৃথিবীর উল্টো পিঠ— বিশ্বেশ্বর রায়।।Ankurisha ।।E.Magazine ।। Bengali poem in literature ।।

 



ধারাবাহিক ভ্রমণকথা(পর্ব—২০)





পৃথিবীর উল্টো পিঠ
    বিশ্বেশ্বর রায়

      
আমাদের পরবর্তী গন্তব্য 'রক ফেলার সেন্টার'। যেখানে প্রায় প্রতিদিনই গানের নানা প্রোগ্রাম হয়।সেখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আমরা চললাম আমাদের পরবর্তী এবং আমেরিকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ দ্রষ্টব্য 'স্ট্যাচু অব লিবার্টি' এবং নিউইয়র্ক স্কাইলাইন দেখতে। ক্রুজ বা জাহাজে চড়ে সেখানে যেতে হয়। অনেক ছবি তোলা হল অনেকক্ষণ ঘুরে  ঘুরে।
      এরপর দুপুরের খাওয়া সেরে পরবর্তী দ্রষ্টব্য 'টাইম স্কোয়ার' এবং 'মাদাম তুলো মিউজিয়াম'।
      এ দিনের ভ্রমণ শেষ করে মাঝে একটা দিন বিশ্রাম নিয়ে আবার সেই রাত্রি বারোটার গ্রে হাউণ্ড ধরে আড়াইটায় নিউইয়র্ক পৌঁছালাম। এবার আমরা তিন জন। মুনিয়া-জয়দীপের নায়াগ্রা ট্যুর অনেক আগেই সারা। ফলে ওরা দ্বিতীয়বার গেল না। আবার সকাল সাতটা পর্যন্ত  গ্রে হাউণ্ড বাস টার্মিনাসে প্রতিক্ষা। ট্যাক্সি ধরে চায়না টাউন 87, বোয়ারি স্ট্রিট। তারপর আটটায় Stytus বাসে তিনদিনের জন্য যাত্রা।আমাদের ভাগ্য এবার ভাল ছিল। কারণ,ক্রুডিকে আমরা গাইড পেলাম। যে কিনা এখানকার সব গাইডের মধ্যে সেরা।

      প্রথম দিন, পাঁচ তারিখ, একটানা বাস জার্নি। দুপুরের পরে 'সিক্রেট কেভান'। সন্ধ্যায় নায়াগ্রা। নৈশাহার সেরে নায়াগ্রা ফলস্ নাইট ভিউ। 'হলিডে ইন'-এ রাত্রিবাস।  সকালে প্রথমেই  'নায়াগ্রা ফোর্ট '।1654 সালে নির্মিত এই সুপ্রাচীন  ফোর্টটি। ওখানে 'মাস্কেটিয়ার্স শো' দেখা হল। বিখ্যাত নাবিক কলম্বাস এখানে এসেছিলেন। পরবর্তী দ্রষ্টব্য নায়াগ্রা নদীর তীরে 'Power Vista'. যেখান থেকে নিউইয়র্কে পানীয় জল সরবরাহ হয়। এরপর 'নায়াগ্রা ফলস্ ডে ভিউ' এবং 'Maid of the Mist'.ক্রুজ বা জাহাজে চড়ে  জলপ্রপাতের নিচে গিয়ে ফিরে  আসা। জাহাজে ওঠার আগে সবাইকে রেনকোট বা বর্ষাতি দেওয়া হয়। মাত্র পনেরো-কুড়ি মিনিটের জাহাজ-ভ্রমণ জীবনের অন্যতম স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। বিপুল জলরাশি(প্রতি সেকেন্ডে নব্বই হাজার কিউসেক) নদীর দ'পার থেকে প্রায়  সত্তর ফুট উচ্চতা থেকে পাথরের উপর আছড়ে পড়ছে। সেই বিপুল পতন এবং তজ্জনিত ভীম নির্ঘোষে এলাকাটি মুখরিত এবং উৎক্ষিপ্ত জলকণা প্রবল বৃষ্টির মতো নদীর মধ্যভাগ পর্যন্ত  আচ্ছাদিত। তার মধ্য দিয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে জাহাজ। তখন দশ ফুট দূরের কোনোকিছুও আর দেখা সম্ভব নয়। এবং সেই কুয়াশাচ্ছন্ন বৃষ্টিতে সবাই চুপচুপে ভিজে। জলপ্রপাত কর্তৃপক্ষের দেওয়া নীল রঙের প্লাস্টিকের ওয়াটার প্রুফও ভেজার হাত থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা দিতে অপারগ। ওরই মধ্যে কিছু ছবি তোলা গেল।

      দ্বিতীয় দিনের শেষ দ্রষ্টব্য বা পদব্রজে ভ্রমণ (ট্রেকিং) 'জর্জ ট্রেইলের পথ ধরে অবতরণ। প্রায়  এক ঘন্টার সেই ট্রেকিং। পাশেই ছিল 'ইণ্ডিয়ান ট্রেইল।' তবে ট্যুর কোম্পানির নির্দেশ 'জর্জ ট্রেইলের' পথে যাওয়ার। কারণ, আমাদের বাস তারই বহির্মুখে দাঁড়িয়ে থাকবে। এই ট্রেকিং-এর পথচলা 'ওয়াটকিন গ্লেন্স পার্ক'-এর মধ্যে।
       
শেষ দিনের প্রথম দ্রষ্টব্য হোয়াইট হাউস। পরবর্তীতে আব্রাহাম লিঙ্কনের বিশাল মূর্তি শোভিত প্রাসাদ। এরপর যথাক্রমে স্টেট ক্যাপিটাল, আমাদের মনুমেন্ট সদৃশ স্মৃতিস্তম্ভ(ওয়াশিংটন ডি সি মনুমেন্ট) এবং জেফার্সন হাউস। পরবর্তীতে 'পোটোম্যাক রিভার ক্রুজ'। সবশেষে বিকেলে ফিলাডেলফিয়া নগরীর Independence Hall ও Big Bell দেখে সন্ধে আটটায় নিউইয়র্ক। হার্টফোর্ড ফিরতে  ফিরতে রাত্রি প্রায় সাড়ে বারোটা।
      এই তিনদিনে বাবাই-এর উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেল। প্রমদ ভ্রমণ প্রমাদ ভ্রমণে পর্যবসিত হল ওর ক্ষেত্রে তো বটেই,আমাদের দু'জনের ক্ষেত্রেও। কারণ, ওকে সারাক্ষণ ফোনে, ট্যাবলেটে ওর অফিসের সঙ্গে,ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছিল। এক্ষুনি শুনলো ওকে  আগামী এগারো তারিখেই ইণ্ডিয়ায় ফিরে যেতে হবে। পরদিনই নতুন mail এলো যে, Bank of America-র নতুন ক্লায়েন্টের সঙ্গে ইন্টারভিউতে বসতে হবে। রাস্তাতেই ইন্টারভিউ চলতে লাগলো।  শেষ পর্যন্ত ট্যুরের শেষ দিনের দুপুরের পর বাবাই নিশ্চিত জানালো যে, ওকে আপাতত আর ইণ্ডিয়ায় ফিরতে  হবে না। দিন দশেক বা দু,সপ্তাহ ক্যানসার সিডিতে বসে কাজ করলেই চলবে। তারপর শার্লটে পোস্টিং। আপাতত 31 May 2013 পর্যন্ত। ওর সঙ্গে আমরাও স্বস্তি পেলাম। পরবর্তীতে আমাদের দু,জনের ফ্লাইট টিকিট ক্যানসেল করা এবং পরবর্তী যাত্রার দিন ঠিক করে আবার টিকিট কাটা ইত্যাদি করতে করতেই আট তারিখ পেরিয়ে গেল। ফলে আজ বিকেল চারটের দিকে ও একা রওনা দিল ক্যানসাস সিটির উদ্দেশে। পৌঁছোবে রাত্রি বারোটায়।










চলবে...




আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾
https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/08/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_4.html





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন