শনিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২১

আজ ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস।। আজকের গল্প।। নন্দিনী মান্না।। Ankurisha ।।E.Magazine ।।Bengali poem in literature ।।

 





৭৫তম স্বাধীনতা দিবসে 

আজকের গল্প 


মুঠোর বাঁধনে

নন্দিনী মান্না


     রিতি মিতি দুই বোনে মিলে আমেজ করে চাউমিন খাচ্ছিল, ঘরের ডাইনিং টেবিলে বসে।মিতির পিসিমণির মেয়ে হল রিতি। এই বছর কলেজে ইতিহাস অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছে। ভাইফোঁটা উপলক্ষে মামার বাড়িতে এসেছে। এই সময় সব ভাইবোনরা প্রতিবছর এক জায়গায় হয়। খুব মজা- হাসি-আনন্দে সময় কেটে যায়।মিতি বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে একাদশ শ্রেণীতে পড়ে।

     রিতি খুব সুন্দর চাউমিন বানাতে পারে। তাই মিতি বায়না করেছিল, দিদিকে, তার হাতে তৈরি করা চাউমিন, আজ সকালেই খাবে। নয়তো,আড়ি, আর কথাই বলবে না তার দিদির সাথে। বোনের বায়না বলে কথা, তারপর দীর্ঘ এক বছর পর।

     কতদিন পর তোর হাতে চাউমিন খাচ্ছি, বলতো? কোথা থেকে এক ভিলেন রুপী ভাইরাস এল, সারা বিশ্বের সব মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন তছনছ করে দিলো।

    রিতি- সে সব কথা বলে কি আর হবে বল? আমার বাবা কোত্থাও বের হতে দেয় না। জানিস তো, আমি বাবাকে খুব ভয় পাই। ঘরে বসে বসে একঘেয়েমি, আর ভাল লাগছে না। এই কোভিডের জন্য স্কুলের শেষ দিন গুলো বন্ধুদের সাথে মজাই করা হলোনা।

    মিতি- হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস তুই। বন্ধুদের সাথে কত প্ল্যান করেছিলাম, স্কুলের শেষ দিন আমরা ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান করব। তাও করা হলো না। মোবাইল ফোনে গেম খেলার নেশাটাও মায়ের বকুনিতে কমেছিল। কিন্তু কি আর করব? সেই ফোন এখন সারাক্ষণের সঙ্গী হয়ে গেল।

    রিতি- প্রতিদিন বিকেল বেলায়, কি সুন্দর ছোট বাচ্চাদের সঙ্গে মজার খেলা খেলতাম। এই এক বছরে  সবই যেন এলোমেলো হয়ে গেল। আমরা নয়তো বড় হয়েছি, বুঝতে শিখেছি। কিন্তু ছোট্ট বাচ্চাদের কথা ভাব, এই ছোট্টবেলা থেকে ফোনে ক্লাস ফোনেই টিউশান। যেন ফোনময়  জীবন হয়ে গেল। মাঝে মাঝে খুব রাগ হয়। কিন্তু কি আর করবো?

    মিতি- জীবনের পুরো রুটিনটাই বদলে গেছে। তাছাড়া আমাদের শরীর ও মনের কত ক্ষতি করছে।  ফোনের কৃত্রিম যে রশ্মি একটানা আমাদের শরীরের ঢুকছে,নার্ভ গুলোর অবস্থা পরপর খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমার তো মাঝে মাঝে আঙ্গুলগুলো ব্যথা ও অবশ হয়ে যায়।

     রিতি- আমাদের পাশের বাড়ির কাকুর ছেলে কোথাও লুকোচুরি বা  খেলাধুলা করার সাথী পায় না। তাই তার  মাকে শুধু বায়নায় ঝালাপালা করে দিত। তাই তার মা সবসময় জ্বালাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাচ্চার  হাতে নিজের ফোন তুলে দিলো। তখন থেকে দিপুর সারাক্ষণ গেম আর কার্টুন দেখে দেখে চোখের বারোটা বেজে গেছে। এখন, ও  মাইনাস পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করছে। তার মা তো খুব ভেঙ্গে পড়েছে।

     মিতি- সেই স্কুলে যাওয়া, ভয়ের চোটে পড়াশোনা করা, পরীক্ষার জন্য রাত জাগা, মজা- খুশি- হাসি- ঠাট্টা, খেলাধুলা, মনোমত জায়গায় ঘোরা ফেরা-সব যেন আলমারি বন্দী হয়ে গেল। সবেতেই শুধু না  আর না। এখন বেরোনো যাবেনা, পূজোয় জামাকাপড় কেনা যাবে না, এবছর পূজো হবে না,যদিও হয় বাচ্চাদের যাওয়া যাবে না-ইত্যাদি। একবার করোনা হয়ে গেলে, বাপরে এত ভয় যেন নাম মুখে আনতে ও আতংক লাগে।

     রিতি- কেউ আর এখন বেড়াতে যাচ্ছে না। টিভির খবরে দেখায়, দিঘা- পুরীর ব্যবসায়ীরা হাতে একটা মশা ও পাচ্ছে না। আর সাধারন খেটে খাওয়া মানুষের কথা ভাব, ফেরিওয়ালা- ভিখারি- বাসের গেটম্যান- কন্ডাক্টার- এরা তো রোজগারের আশায় দিশেহারা হয়ে গেছে। তার উপর কেমন ঘূর্ণিঝড়?

     মিতি- এই অতিমারির সময় উটকো বিপদ আমফান আর ইয়াস আচ্ছা খেল দেখালো। যেন সব মানুষ উভয় সংকটে পড়েছে। মহামারী বলেছে- ঘর থেকে বাইরে বেরোনো মানা। ঘূর্ণিঝড় বলছে-এখন ই আশ্রয় শিবিরে যাও, নয়তো বিপদ আছে।

    রিতি-সত্যি,আচ্ছা অসময় এসে হানা দিল। মানুষ যে কোন্ খড়কুটো ধরে বাঁচবে  ভেবে পাচ্ছে না। এ যেন অদৃশ্য দোলনায় আর ভাবনায় কেবল  দুলেই চলেছে। ব্রিটিশ রাজশক্তির শোষণ ও পীড়ন থেকে বহু কষ্টে স্বাধীন হলো মানুষ। সামনে স্বাধীনতা দিবস, পালন করবে--

    মিতি- আমাদের স্কুলে স্বাধীনতা দিবস নিয়ে আঁকা- কবিতা- গান- নাটক হতো--।এখন কোথায় কি? সব যেন ঝরাপাতার মত নীরবে লুটিয়ে পড়েছে।

    রিতি- এত আধুনিক প্রযুক্তি আরো কতকিছু কিন্তু এক্ষেত্রে ও বিজ্ঞান যেন মুখে কুলুপ এঁটেছে। কোনো সঠিক দিশা দেখাতে পারছে না। কি যে হবে? চুপচাপ ঘরে ফোন নিয়ে বসে ভবিষ্যতে কি হয়  শুধুই তাকিয়—

     এমন সময় মিঠু,নাড়ু,রাজু- সবাই হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল। এই মিতি আমাদের কখন ফোঁটা দিবি রে? কি কি খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিস? আমাদের আর তর সইছে না...




আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾


https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/08/ankurisha-emagazine-ben.html


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন