লেবেল

বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০২১

ধারাবাহিক উপন্যাস (পর্ব-১৪)।। ছায়া- ছায়া অন্ধকারের আড়ালে — অনন্যা দাশ।। Ankurisha ।। E.Magazine ।। Bengali poem in literature ।।

 





ধারাবাহিক উপন্যাস (পর্ব-১৪)

ছায়া - ছায়া অন্ধকারের আড়ালে 




অনন্যা দাশ 


ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম আমি। সাড়ে সাতটা বাজে। সেই কাল বিকেল থেকে এখানে লুকিয়ে বসে আছি আমি। কিন্তু এভাবে তো চলবে না। আমাকে কিছু একটা করতে হবে। এখানে বসে থেকে অনেক ভাবনা চিন্তা করে আমি আরো বেশি করে বুঝতে পারছি যে ঐশী আমার মনের ভুল নয়, সে আছে। এখন ওর আসল নাম ঐশী কিনা আমি জানি না। আর আমার কেন জানি না বার বার মনে হচ্ছে গোপাদির বাড়িতে দেখা ওই ঘটনাটার সঙ্গে আমার এই দশর কিছু একটা যোগাযোগ আছে। কিন্তু কী সেটাই বুঝতে পারছি না। নাহ, এখান থেকে বেরতেই হবে আমাকে! এখানে বসে থাকলে আমার কোন লাভ হবে না। অলরেডি একটা দিন কামাই করে ফেলেছি ল্যাবে। আর বেশি কামাই করলে আমার বস নির্ঘাত আমাকে তাড়িয়ে দেবে। অথচ আমি যে কাজ করিনি তার জন্যে আমাকে জেলে পুরে দেওয়া হবে সেটাও তো ঠিক মেনে নেওয়া যায় না! তাছাড়া জেলে গেলেও তো আমার এ দেশে আর থাকা চলবে না, আমাকে ডিপোর্ট করে ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দেবে এরা। দেশে ফিরে যেতে এমনিতে আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু এতদিন ধরে করা কাজগুলো জলে যাবে সেটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। আর পি এইচ ডি টাও হবে না! খাবারও আনতে হবে কিছু। ওই প্রোটিন বার খেয়ে খেয়ে বোর হয়ে গেছি আমি। মানে লোকে শুনলে হয়তো বলবে কী মেয়ে রে বাবা! এত বিপদের মধ্যেও খাবারের কথা ভাবছে! কিন্তু ওই মিষ্টি আর বিস্বাদ খেতে বার আর কতক্ষণ খাওয়া যায়? তাছাড়া বসে বসেও পায়ে হাতে ব্যথা হয়ে গেছে। শুধু কয়েকবার লুকিয়ে মুখে মাস্ক পরে বাথরুমে গেছি মাত্র, এ ছাড়া আর কোথাও যায়নি! মুখে মাস্ক পরলে লোকে মনে করে ছোঁয়াচে রোগ তাই দূরে থাকে!

আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সাড়ে আটটা নাগাদ যা থাকে কপালে বলে বেরিয়ে পড়লাম। ততক্ষণে অন্ধকার হয়ে গেছে। রাতের আঁধারে গা ঢাকা দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। এদিকে গাড়িটা তো চাই নাহলে তো কোথাও যাতে পারব না ভেবে চট করে গাড়িটার কাছে পৌঁছে গেলাম। অ্যাপার্টমেন্টের পার্কিং লটেই গাড়িটা পার্ক করে রাখা ছিল। ওমা দেখি কে যেন চারটে চাকাই ফালা ফালা করে দিয়েছে! আর চাকা ওই ভাবে ফালা ফালা করাটা মোটেই সহজ নয়! কে করল কাজটা? মনটা খারাপ হয়ে গেল। চাকা বদল করা অনেক ডলারের ধাক্কা! পুলিশ করল কী? যাতে আমি কোথাও যেতে না পারি সেই ভেবে?

যাক আমার পার্সটা আমার সঙ্গে রয়েছে। আমি একটা বাসে চড়ে বসলাম। এখানে বাস টাস খুব একটা বেশি নেই তবে আছে। বেশি লোক নেই। যারা আছে তারাও দিনের শেষে ঝিমোচ্ছে। আমি পাশের সিটে কার একটা ফেলে রেখে যাওয়া খবরের কাগজটাকে দেখছিলাম। সেটাতেই হঠাৎ চোখে পড়ল গোপাদির বর গৌতমদার মুখ! কোন এক স্থানীয় কাউন্টি ইলেকশানে দাঁড়িয়েছেন উনি! বাহ সেটা তো বেশ গর্বের ব্যাপার! বিদেশি হয়ে এদেশে এসে...

বাসটা আমাকে নিয়ে গিয়ে যেখানে নামাল সেখান থেকে গোপাদির বাড়ি মিনিট দশেকের পথ। ওদের বাড়ির নম্বরটা মনে নেই তবে দেখলে চিনতে পেরে যাব।  

আমি গোপাদির বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম। নিজের মনেই হাঁটছিলাম। অন্ধকার রাস্তায় লোকজন বিশেষ নেই। তাছাড়া এটা হাঁটার রাস্তাও নয়। গাড়ির রাস্তার পাশে যে শোল্ডার সেটা দিয়ে হাঁটছি আমি। পাশ দিয়ে মাঝে মাঝে কয়েকটা গাড়ি সাঁ সাঁ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ একটা গাড়ি দেখলাম আমার দিকেই ছুটে আসছে! এখানে তো পালাবার পথ নেই! আমার গলা শুকিয়ে গেল, পা যেন আর নড়ছিল না। আসন্ন মৃত্যুকে চোখের সামনে দেখতে পেলাম আমি। আমি সুপার ফিরো নই যে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে বিশাল কিছু একটা করে ফেলব! এখানেই আমার জীবন শেষ এই রকম ভাবছি এমন সময় এক জোড়া শক্ত হাত আমাকে টেনে হিঁচড়ে ওই চলন্ত গাড়িটার সামনে থেকে সরিয়ে দিল! আমি হুমড়ি খেয়ে রাস্তায় গিয়ে পড়লাম আর আমার ঘাড়ের ওপর এসে পড়ল আমার রক্ষাকর্তা! তাকে চিনতে অবশ্য আমার কোন অসুবধা হল না – রোহন কুমার! ততক্ষণে ওর পার্টনার গাড়িটাকে লক্ষ করে গুলি করেছে। গোঁ গোঁ শব্দ করে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে আমাকে যে মারতে এসেছিল সে পালিয়ে গেল। 

রোহন কুমার উঠে গায়ের ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে রেজে মেগে বললেন, “তোমার কী আত্মহত্যার করার শখ হয়েছে? গাড়িটার সামনে হাঁ করে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?” বেশ আপনি থেকে তুমি হয়ে গেছে সেটা অন্যমনস্ক ভাবে খেয়াল করলাম। 

আমি তখনও রাস্তাতেই বসে আছি। ওঠার সাহস হচ্ছিল না কারণ আমার পা তখনও কাঁপছে। কোন রকমে বললাম, “জানি না, ভয়ে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম মনে হয়! তোমরা এখানে কী করে এলে?”

“কী করে আবার? তোমার পিছু নিয়ে! তোমার গাড়িটার ওপর নজর রাখা হচ্ছিল। আমাদের মনে হয়েছিল কোথাও যেতে হলে ওই গাড়িটা তো লাগবে!”

“ও আমার গাড়ির চাকা বুঝি তোমরাই ফালা ফালা করেছো!”

“না, বিশ্বাস করো! আমরা করিনি। মনে হয় যে তোমাকে এখুনি মারতে চাইছিল ওটাও তারই কাজ। সেও অবশ্য তোমার পিছু নিয়ে এই খান পর্যন্ত এসে গেছে! কে হতে পারে এনি আইডিয়া?”

“না! আসলে একটা ঘটনার কথা আমার মনে পড়ল সেই জন্যে আমি গোপাদিদের বাড়ি যাচ্ছিলাম, উনি বা গৌতমদা যদি সেই ব্যাপারে কিছু বলতে পারেন।”

“কী ঘটনা?”

আমি বললাম। শুনে রোহন আর মেগান দুজনেই ভয়ঙ্কর উত্তেজিত হয়ে উঠল!

“ও মাই গড! তুমি ছাড়া আর কে দেখেছিল?”

“পলাশ ছিল তো আমার সঙ্গে! আসলে ওটা অ্যাটিকের একটা ঘর। আমাদের ওখানে যাওয়াটাই ঠিক হয়নি, মানে উচিতও ছিল না কিন্তু পলাশ বাড়ি দেখানোর উৎসাহে মত্ত হয়ে আমাকে ওখানে নিয়ে গিয়েছিল।”

“কারা ছিল কিছু মনে করতে পারছ?”

“না। না, আমি তো লজ্জায় এক ঝলকের বেশি তাকাইনি মোটেই। আমরা সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে এসেছিলেন যতদূর মনে পড়ছে মেয়েটার সোনালি চুল ছিল!”

“কিন্তু পলাশ মনে হয় দেখেছিল। ও বুঝতে পেরে কাউকে ব্ল্যাকমেল করছিল। সেটাই ওর কাল হল! তবে ওরা খুব চালাক। পলাশকে মারার জন্যে জায়গাটেয় নিয়ে গিয়েছিল তোমার ফোন ব্যবহার করে!”

আমি আর কী বলব, বললাম, “আমি ওই ফোন করিনি! আপনারাও কী আমার সঙ্গে গোপাদির বাড়িতে যাবেন?”

“হ্যাঁ, চলো!”

বাড়িতে তখন শুধু গোপাদি ছিলেন। আমাকে দেখে খুব আশ্চর্য হলেন। পরিচয় ইত্যাদি করিয়ে দিয়ে আমি বললাম, “আচ্ছা গোপাদি কয়েকমাস আগে তোমাদের বাড়িতে যে অনুষ্ঠানটা হয়েছিল সেটার কোন ছবি তোমার কাছে আছে? গ্রুপ ফটো হলে ভালো হয়!”

“ও হঠাৎ ছবি কেন চাই?”  

“একজনকে খুঁজছি। সে মনে হয় তোমাদের পার্টিতে ছিল!”  

“আমার ফোনে মনে হয় আছে কিছু। শঙ্কর তুলেছিল বেশ কয়েকটা আর গৌতমের ফোনেও কিছু আছে মনে হয়। দাঁড়াও দেখছি! কিন্তু কাকে খুঁজছ সেটা বললে সুবধা হত।”

আমি কোন উত্তর দিলাম না। কয়েকটা গ্রুপ ছবি দেখতে দেখতেই পেয়ে গেলাম মেয়েটাকে! লম্বা সোনালি চুল একদম অন্য রকম দেখতে মেয়েটাকে কিন্তু তাও এখন আমার ভুল হওয়ার জো নেই!

“আচ্ছা গোপাদি এই মেয়েটা কে বলতে পারবে?”

গোপাদি দেখে বললেন, “ও, ওটা তো জুলি! নয়ন আর লারাদের বেবি সিটার! এ ছাড়া ওর সম্পর্কে আমি বিশেষ কিছু জানি না। তুমি ওদের জিজ্ঞেস করে দেখতে পারো!”

আমি রোহন কুমারের দিকে ফিরে বললাম, “এটাই আমার রুমমেট ঐশী!”

“অ্যাঁ! সে কি!”

“হ্যাঁ, আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে এই মেয়েটাই ছিল তিন মাস! আমার ডি আই ডি নেই বলেই মনে হচ্ছে!”



চলবে...





আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾


https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/07/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_79.html

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন