রবিবারের গল্প
দূরত্ব
দুর্গাদাস মিদ্যা
সুমন যতবার আয়নার সামনে দাঁড়ায় ততবার সুমনার মুখটা ভেসে ওঠে ।সাদা কুসুম ফুলের মতো সাজানো দাঁতগুলো সব দেখা যায় যখন ও হাসে। তখন সুমন সবে ব্যাংকে চাকরিতে ঢুকেছে । ব্যাংক থেকে কোনাকুনি সুমনা দের বাড়ি যাওয়ার গলিটা ক্যাশ কাউন্টার থেকে দেখা যায়। সুমনা তখন ক্লাস টেন অথবা ইলেভেন । দেখতে এতটাই সুন্দরী চোখ ফেরানো যায় না।ওকে দেখতে দেখতে সুমন প্রায় পাগল । সবচেয়ে ভালো লাগতো যখন একটা ঘটি হাতা কালো ফ্রক পরে সুমনা গলির মুখে এসে দাঁড়া তো এবং একনাগাড়ে ব্যাংকের দিকে চেয়ে থাকত। মনে হতো যেন সুমনের দিকেই তাকিয়ে আছে, অন্ততপক্ষে সুমনের তাই মনে হতো ।
ক্যাশে কাজ করতো সুমন। তিনটে সাড়ে তিনটের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে গেলেও সুমন ব্যাংক ছেড়ে বাড়ি যেত না অপেক্ষা করত কখন সুমনা এসে দাঁড়াবে গলির মুখে।
বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ার পর সুমন সিদ্ধান্ত নিল যে ওদের বাড়িতে যাবে । ওর দাদার সাথে আলাপ ছিল না তা নয় তবে বয়সের ফারাকের কারণে দূরত্ব ছিল বেশ ।
ঘনিষ্ঠতা তেমন বেশি কিছু ছিল না যা থেকে সুমনা দের বাড়ি যাওয়া আসা করা যায় । আভে ভাবে সুমন বুঝতে পেরেছিল-- এমন একটা বলয় তৈরি হয়েছে যা থেকে বয়সের চাহিদা অনুযায়ী একটা রসায়ন গড়ে উঠেছে অন্তরে।
সুমনাদের একটা পারিবারিক ব্যবসা ছিল ।
তাহলো মিউজিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট এর ব্যবসা।হারমোনিয়াম তবলা তৈরি ও বিক্রির দোকান। এই ব্যাবসার সূত্রে সমরেশ ব্যাংকে টাকা জমা দিতে আসতো।
ব্যাংকার কাস্টোমার সম্পর্ক কে একটু অন্যভাবে ব্যবহার করতে সচেষ্ট হল সুমন।উদ্দেশ্য অবশ্যই সুমনা।সুমনার দিক থেকে হালকা
একটা প্রশ্রয় চোখে পড়েছে বলেই মনে হয় । যাকে সম্মোহন বলে । তাই একদিন সুমনাদের দোকানে গিয়ে হাজির হয় সুমন। দেখে সমরেশ বসে আছে। আমাকে দোকানে আসতে দেখে অবাক হয়ে গেল সমরেশ । চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো এবং আমাকে বসতে বলল।
আমি বসলাম--- বললাম আমি গিটার শিখতে চাই।সমরেশ বলে উঠলো--- সে তো খুব ভালো কথা । আমি বললাম--- তোমার কাছে শিখব তুমিতো ভালই গিটার বাজাও। । আর শেখাও তো তোমার ঘরে। ওতো বেশ ভালো কথা ,বেশ ভালো কথা।
কখন শিখবেন? সপ্তাহে দুদিন শেখাবো।আমি বললাম-- বিকেল চারটে থেকে ছটার মধ্যে।তাহলে অফিস থেকে আমি আর বাড়ি যাব ন। ও রাজি হয়ে গেল। আমারও মনটা কেমন যেন চনমনে হয়ে উঠলো । সপ্তাহে দুদিন সুমনার কাছাকাছি থাকা যাবে এটা ভাবতেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল । সুন্দরের প্রতি আকর্ষণ মানুষের চিরকালের । আমারও তার কম ছিলনা। দিনের-পর-দিন যেতে-যেতে কেমন যেন নেশা গ্রস্থ হয়ে গেল সুমন । ধীরে ধীরে তৃষ্ণা বেড়ে উঠলো । সমরেশ তো কচি খোকা নয়।বুঝেতে পারল সুমনের গিটার শেখার কারণ । কিন্তু খুব একটা আমল দিচ্ছিল না । বলতে ভুলে গেছি সুমনার বাবা মারা গিয়েছিল বছর দুই আগে। মা অর্থাৎ মাসিমা বেশ সাধারণ এবং ভদ্র। সুমনার একটা দিদি আছে তবে সে দেখতে সুমনার ধারেকাছে দাঁড়াবার উপযুক্ত ছিল না। এই কথাগুলো এসে গেল এই কারণে যে ওদের বাড়ির সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হতে বেশী সময় লাগেনি । খুবই অবস্থাপন্ন ঘর তাও বলা যাবে না সব মিলিয়ে বেশ একটা সুবিধা হয়েছিল সুমনের । সুমন বেশ ব্রিলিয়ান্ট। পড়াশোনতে ওর খুব সুনাম ছিল। সুমনাকে মাঝেমাঝে পড়াশোনাতে সাহায্য করতে থাকলো সুমন।
এমনি করে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকল দেখে ওর দিদি সহ্য করতে পারছিল না ওর মনের আকাশে মেঘ জমেছিল একটু একটু করে।সুমন সেটা বোঝে নি তা নয় কিন্তু মুগ্ধতা এমন এক একরোখা গোঁ এর জন্ম দেয় যা পারিপার্শ্বিক বাধা বন্ধকেও ধর্তব্যের মধ্যে আনতে চায় না।আসন্ন বিপদের কথা ভুলে যায় । বছর দেড়েকএইভাবে চলতে চলতে সুমন যখন সম্পূর্ণ সম্মোহিত, যখন বাড়ির অজান্তে সিনেমা যাওয়া আসা, মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যাওয়া সেই সময় অকষ্মাৎ বজ্রপাত বিনা মেঘে।
সুমনের বদলির নির্দেশ এসে গেল গেলো সুদূর মালদাতে। গড়ে ওঠা ইমারত চোখের সামনে ভেঙে খান খান । এমনও ভেবেছিল সুমন -- যে চাকরি ছেড়ে দেবে কিন্তু সেটা যে একেবারেই বোকামি হবে একথা সুমনাই ওকে বুঝিয়েছিল।বলেছিল ও অপেক্ষা করে থাকবে।
মাসিমার হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতার কারণে সব ওলট-পালট হয়ে গেল । চাপে পড়ে গেল সমস্ত পরিবার, তারপর যা হবার তাই হল। মধ্যবিত্ত পরিবার নিজের মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলো। এর প্রতিবাদ যে হয়নি তা নয় । ধোপে টেকেনি দূরত্বই হয়ে উঠল দূরত্বের কারণ। না পাওয়ার বেদনা আজও বয়ে নিয়ে বেড়ায় সুমন।
আরও পড়ুন 👇👇
https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/06/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_28.html
সুমন বড়ই ভালোমানুষ। নইলে সে উপার্জনশীল হয়েও অসহায়। তার প্রেমিকার বয়স মাত্র ১৮ -১৯। তার আগে এক দিদি আছে। দুজনেরই সামাজিক বিয়ে হয়ে গেল। অথচ আমাদের নায়ক শুধুমাত্র 'সুদূর' মালদাতে থাকার জন্য কিছু করে উঠতে পারল না।
উত্তরমুছুনসুমন বড়ই ভালোমানুষ। নইলে সে উপার্জনশীল হয়েও অসহায়। তার প্রেমিকার বয়স মাত্র ১৮ -১৯। তার আগে এক দিদি আছে। দুজনেরই সামাজিক বিয়ে হয়ে গেল। অথচ আমাদের নায়ক শুধুমাত্র 'সুদূর' মালদাতে থাকার জন্য কিছু করে উঠতে পারল না।
উত্তরমুছুন