লেবেল

শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২০

একগুচ্ছ অনুবাদ কবিতা।। মূলভাষা- অসমীয়া।। ভাষান্তর - বাসুদেব দাস




একগুচ্ছ অনুবাদ কবিতা 
মূলভাষা- অসমীয়া
ভাষান্তর - বাসুদেব দাস   
 
১.
একটি নিঃসঙ্গ হাসপাতাল
সৌ্রভ শইকীয়া
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদ-বাসুদেব দাস 


গাছের পাতার মতো একটি আকাশ…
একটি হাতে টানা রিক্সা ঘুমোচ্ছে 
দুপুরবেলাটা মরছে।পিপিই কিট পরে 
দুটো ঢেঁকীয়ার সঙ্গে একটি কালো পিঁপড়া ঘুমোচ্ছে
একটা হাসপাতালের সঙ্গে রশির একটা বিছানা ভেসে যাচ্ছে
ভেসে যাচ্ছে স্বপ্নে 
ভেসে যাচ্ছে সমুদ্রে 
যুদ্ধকালীন একটা প্রস্তুতি 
একটা খবর 
সবচেয়ে মারাত্মক রাস্তাটাই দৌড়ে যাওয়ার একমাত্র পথ 
সবচেয়ে মারাত্মক পৃথিবী্টাই 
খট খট খট 
খট খট খট 
কাল সারা রাত আর্তনাদ 
কেউ সংক্রামক ছড়িয়ে দিয়েছিল
কাল সারা রাত রক্তপাত 
কেউ লকডাউন ঘোষণা করেছিল 
আর আমি মৃত্যুর গন্ধ পেয়েছিলাম,যখন 
স্তব্ধ কাগজের চাঁদটিকে সরাসরি 
কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছিল।
সারারাত সেইসব মৃত অক্ষরের বিলাপ 
সারা রাত আহত-নিহত সেই নক্ষত্রমালার মধ্য দিয়ে  
উদভ্রান্তের মতো আমি দৌড়ে গিয়াছিলাম 
আঃ।জানালার ওপারেই অট্টহাসি 
জানালার ওপারেই শ্মশান 
কে ডাকে…?
ভারী বাতাস গায়ে জড়িয়ে ধরে।
স্বাভিমানী,অহঙ্কারী ভাইরাস 
আর কত ডেড বডি চাই তোমার?
কত ডেড বডি চাই তোমার?
যার জন্য তাড়াহুড়ো করে এই হাসপাতাল
একটি হলুদ হাসপাতাল। 
(মৃত্যু প্রবেশ করে ফুসফুসে অনুগ্রহ করে দূরে যান) 


২.
কবির সমাধি ফলক
রুদ্র সিংহ মটক
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদঃবাসুদেব দাস 

 আজও বন্দি আমি জানালা বিহীন ব্যাঙ্কের
 আবদ্ধ ঘরে 
রোদের কোনো অক্ষর নেই এখানে 
কেবল ‘কোর ব্যাঙ্কিং’,গ্লোবালাইজেশন
 আর লাভালাভের কোটি টাকার অঙ্ক ঢেকে রেখেছে 
আমার সভ্যতার চোখের পাতা 
বহুজাতিক কম্পিউটার ফ্যাক্স-ইন্টারনেটের ছন্দহীন
প্রেত-ছায়া স্বরলিপি,মোবাইল এবং দামী জুতোর
 কৃত্রিম কোলাহল কেড়ে নিয়েছে আমার লাল 
হৃদপিন্ডের সবুজ শ্বাস
 আজ সবই হারিয়েছি, স্বপ্ন পাখির শিস 
নারীর  প্রেম 
হারিয়েছি কলম এবং হৃদয়ের যুদ্ধভূমি 
আলোড়িত সূর্য এবং শস্যোজ্জ্বল কবিতার পথ
'হরিণার  মাংস বৈরী'  হওয়ার মতো
         হাতের ঘড়িটাই আজ কাল হল আমার, যে 
সাত শত্রুর মতো গোপনে নিরীক্ষণ করে আমার 
প্রতিটি মুহূর্তের বোবা অস্থিরতা আমার মৃত্যু 
এবং আর্তনাদ 
কখনও কখনও ভাবি,
 পৃথিবীটা অভাবিতভাবে সংকীর্ণ,যেন  
 এস বি আইর স্ট্রং রুম,যেখানে ক্ষুদ্র একটা অক্সিজেন
 সিলিন্ডার নিয়ে অসহায় আমি ছটফট করছি সারারাত
 অসম্ভব একটি স্বপ্নের দরজা মুখে 
কংক্রিট ভেঙ্গে অকস্মাৎ ঝাঁপিয়ে 
চলে আসবি নাকি সাতটি তারা সাতটি পাগলা 
ঘোড়া 
তারই উজ্জ্বল  চোখের কালো ঘোড়াটি
 দৌড়ে চলে যাব আমি দূর-দূরান্তের সেই সবুজ ঘাসে
 অথবা নিষিদ্ধ বনগোলাপের অবিন্যস্ত কোনো
 গহন অরণ্যে 
আর যদি তা সম্ভব না হয়
 কাল আমার অনিবার্য মৃত্যু হবে
 পাখিগুলি গুনগুন করে সকালের গান আরম্ভ করার 
আগে আগে 
উডহাউসের গল্প পড়ে ভালোলাগা আমার 
উদাসী বন্ধুটি সেদিন সন্ধ্যার আড্ডায় বিষণ্ণ 
স্বরে বলেছিল 
আমার সমাধি-ফলকে নাকি কালো অক্ষরে লেখা 
থাকবে,-
‘ তিনি ছিলেন এই পৃথিবীর সবচেয়ে 
 ভাগ্যবান অথচ করুণার পাত্র
 টাকার চেয়েও বসন্তের মতোই স্বাধীন,উজ্জ্বল 
শব্দগুলির গন্ধটা 
 তিনি অনেক বেশি ভালোবাসতেন।’


৩.
মায়াবন
নিবেদন দাস পাটোয়ারী 
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদঃ বাসুদেব দাস

 
আকাশটা কখন কোথায় গেল 
টেরই পেলাম না 
এখন ভাবতে ভয় হচ্ছে 
আকাশ ছাড়া 
কীভাবে কাটাই দিন

হে আমার প্রাণের পাখি 
তোর আকাশের বরফ সাদা 
মেঘের খোঁজে 
তুই উড়ছিস কোথায় 
পাখা মেলে 

মুখ ফুলিয়ে 
ক্রন্দনমুখী 
রাতের বেলা ফসফরাস হয়ে জ্বলছে 
আমার  ধানক্ষেতে

এই কয়েকদিন 
আমার সমস্ত বানান ভুল 
নীরবতার দীর্ঘ প্রুফ দেখে দেখে 
বসে রয়েছি 
তোর ছাপাশালায় 

আকাশ বিহীন একটা দিনে 
কোন রাখাল খুঁজে বেড়াবে 
অশ্বত্থের ছায়া 
আকাশ বিহীন রাতে 
তুই কী প্রসাধন মাখলে 
উজ্জ্বল হবে 
সন্ধ্যার জোনাকী মুখ 

সময় 
কাউকে ছোট হয়ে থাকতে দেয় না 
এমনকি 
আকাশকেও
ডায়েরির শূন্য পাতা 
পূর্ণ করে নিজের আকাশ 
ঠিকই আঁকতে জানে 
সময় 
অন্ধকারে নিজেকে বাঁচানো 
কত কঠিন 
আকাশ আজও বুঝল না

  

৪.
ননস্টপ
নিবেদন দাস পাটোয়ারী 
মূল অসমিয়া থেকে বাংলা অনুবাদঃবাসুদেব দাস

পাঁচ টাকায় ছয়টা কলম 
পাঁচটা কিনলে একটা ফ্রি 
কলম নিন দাদা কলম 
ছেলেমেয়েদের জন্য নিন 
ননস্টপ কলম 
সকাল ছয়টার আগে 
আদাবাড়ি পৌছে যায় সে 
হাতে কাঁধে সবখানেই কলম 

প্রথম বাসটা সাড়ে ছয়টায় ছাড়ে 
মঙ্গলদৈ হয়ে তেজপুর 
প্রতিটি যাত্রীর শার্টের পকেটে 
তার চোখ 
একটাই আশা 
পকেটে একটা কলম না থাকুক 
আদাবাড়িতে সারাদিনে অগণন বাসের 
আসা যাওয়া 
অলেখ যাত্রী 
কলম থাকা কলম না থাকা 

আজ দশ বছর কলমের সঙ্গে 
বন্ধুত্ব করেও 
‘ক’অক্ষরের কোণটাও সে আঁকতে পারে না 
রোজই বিক্রি করছে কলম 
সন্ধ্যেবেলা রান্নার জন্য চাল কিনেছে
তার সঙ্গে
আঁক-বাঁক করার জন্য একটা খাতা 
ক্রেতাকে ননস্টপ লেখার 
প্রমাণ দেখানোর জন্য 
দিনটাকে কবর দিয়ে 
বাড়ি ফেরে সে  
পড়ার টেবিলে থাকা 
ছেলে-মেয়েদের 
প্রায়ই বলে 
কখনও কলম বিক্রি করবি না 
যত পারবি কিনবি 
কিন্তু বিক্রি করবি না
ওরাও বোধহয় কিছু একটা বোঝে 
এবং 
মাথা নাড়ায়।


----------------------------------------------------------------------------------------
আপনার মতামত একান্ত কাম্য। ভালো থাকুন। 
ankurishapatrika@gmail.com  

---------------------------------------------------                









৪টি মন্তব্য:

  1. মূলটা পড়া নেই তাই অনুবাদের মূল‍্যায়ণ করতে পারবো না। কিন্তু সব গুলোই কবিতা হিসেবে সার্থক। অভিনন্দন।

    উত্তরমুছুন
  2. প্ৰতিটো কবিতাই সমকালীন জীৱন আৰু সমাজ সত্যক
    সুন্দৰকৈ তুলি ধৰিছে। সংবেদনশীল কবি হৃদয়ৰ মগ্ন
    চৈতন্য আৰু ৰুঢ়, নগ্ন বাস্তৱৰ স'তে দ্বন্দ্ব-অভিঘাত
    জনিত যি আলোড়ন সেয়া ফুটাই তোলাত কবিসকল
    সফলকাম হোৱা পৰিলক্ষিত হ'ল।

    উত্তরমুছুন
  3. খুব ভালো লাগলো পড়ে। মূল কবিতাগুলো পড়তে চাই।

    উত্তরমুছুন