ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস (পর্ব-৪)
নেপথ্য সংগীতের আড়ালে
অনন্যা দাশ
৭.
“মা, রাজেশ্বরজি কিন্তু আমাদের পরিবারের ইতিহাঁসটা ভালই লিখেছেন। তুমি পড়ে দেখেছো?”
প্রভাদেবী মুখ ভার করে বললেন, “ও যদি হিন্দিতে লিখত আমি এক মিনিটে পরে ফেলতাম। ইংরাজিতে লিখেই তো
গণ্ডগোলটা করেছে! ওর একটা পাতা পড়তে আমার একঘন্টা লেগে যাবে। আমি তো আর তোমাদের মতন হু হু করে পড়তে পারি না! আমার ইংরাজি পড়তে সময় লাগে। সেই কবে মাস্টারমশাই শিখিয়েছিলেন। তারর শক্ত শব্দ হলে ডিক্সনারি খুলে তার মানে দেখে আর পারি না বাপু!”
“সে, ঠিক আছে। আমার সময় হলে না হয় তোমাকে পড়ে শুনিয়ে দেবো। কারণ তুমি শুনে তো বুঝতে পারো। এখানকার
ওই রাজ্যের কাঁদুনি-গাওয়া সোপ অপেরাগুলো তো দেখো সারাদিন বসে।”
“হ্যাঁ, শুনে বুঝতে পারি। আর ওই সোপ অপেরার গল্পগুলো তো খুব একটা এগোয় না, তাই কোন অসুবিধা হয় না। হ্যাঁ
ভূষণ তুমি পড়ে দিলে খুব ভাল হবে। বাবার ওই ডাকাতদের সাথে লড়াই করার ঘটনাটি কিভাবে লিখল সেটা আমার খুব জানার ইচ্ছে”
“ওই অংশটা ভালই লিখেছে। আরো বেশ কিছু ঘটনা বেশ নাটুকেভাবে লেখা হয়েছে। আসলে আমাদের পরিবারের ইতিহাসে এতকিছু রোমাঞ্চকর ঘটনা রয়েছে যে, সেটাকে লোকে ইতিহাস না ভেবে গঞ্পের বই হিসাবে পড়ছে। যে কৌন গল্পের বইয়ের চেয়ে কম ইন্টারেস্টিং কিছু নয় এটা। ওটাকে হিন্দিতে অনুবাদ করার জন্যে আমার কাছে অনুরোধ এসেছে। বাবার কাছেও এসেছে মনে হয়।”
“ও তাহলে তো খুব ভাল হয়!”
“হ্যাঁ, ও আচ্ছা শোনো, আমাদের অফিসের মিস্টার ফেরিস ক্রিসমাসের পার্টিতে তোমাদের নিয়ে যেতে বলেছেন। তেইশ
তারিখ সেটা। বাবাকে বলে দিও। শেষে আবার অন্য কিছু প্ল্যান করে বসলে আমি লজ্জায় পড়ব।”
“বলে দেবো। আমি আজ মালপো বানিয়েছি। একটা খাবে নাকি?”
“দাও, তারপর তোমরা তৈরি হয়ে নিও। রকেফেলার সেন্টারের ক্রিসমাস ট্রিটা দেখতে যাবো। আটতলা উচু আর খুব
সুন্দর সাজিয়েছে ওটা। এই সময় স্কেটিং রিঙ্কটাও দারুণ লাগে। তা বাবা কোথায়?”
“ঘুমোচ্ছেন তবে ডেকে দিচ্ছি। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে।”
“হ্যাঁ, ডেকে দাও ঠাণ্ডায় বেরোলে সব ঘুম ছুটে যাবে!”
মালপোতে একটা কামড় দিয়ে একটু ভেবে ভূষণ বলল, “ও, তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি, বলব কি বলব না তাই
ভাবছি!”
“অতটা যখন বলে ফেলেছ বাকিটাও বলে ফেলো না হলে আমার খাবার হজম হবে না!”
ভূষণ হেসে ফেলল। তারপর গম্ভীর হয়ে বলল, ধূর্জটি কর্মকার বলে একজন আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন মনে আছে?
তোমাকে আর বাবাকে ইন্টারভিউ করতে?”
“হ্যাঁ, মনে নেই আবার, আমার ওই হারটা নিয়ে তো?”
“হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক। ভদ্রলোক সব দামি পাথর এবং তাদের ইতিহাস নিয়ে বই লিখছিলেন।”
“হ্যাঁ, আমরা তাকে কিছু ছবিও দিয়েছিলাম কারণ হারটা তো গেছে সেটার তো আর উনি ছবি তুলতে পারতেন না।”
“ওই ভদ্রলোককে জেলে পোরা হয়েছে।”
“সে কি! কেন?”
“পুলিশের ধারণা উনিই কালনাগ।”
“অ্যাঁ! কি সাংঘাতিক!”
“হ্যাঁ, উনি একটা চুরি করে একেবারে হাতে নাতে ধরা পড়ে গেছেন নাকি। তখন পুলিশ ধূর্জটিবাবুর বাড়িঘর সার্চ করে আরো কয়েকটা দামি পাথর পায়।”
“ও তাই বুঝি,” প্রভাদেবীর চোখেমুখে একটা প্রশ্ন ফুটে উঠল।
“না তোমার সবুজ পান্না পায়নি। তাহলে তো বলতাম। সেকি আর এতদিন ওখানেই পড়ে থাকবে? কবেই পাচার হয়ে
গেছে হয়তো।”
প্রভাদেবী আর কিছু বললেন না কিন্তু ওনার মুখে একটা কালো ছায়া নেমে এলো।
“এই জন্যেই আমি তোমাকে কিছু বলতে চাইনি। বাবা জানে।”
“না, আমি ঠিক আছি। যত না হারটা হারিয়ে যাওয়ার কষ্ট তারচেয়ে অনেক বেশি ধাক্কা খেয়েছিলাম কালনাগের আঘাতে।
মরেও যেতে পারতাম বেচারা সিকিউরিটির লোকগুলোর মতন। কালনাগ যেই ছিল খুব স্বার্থপর ও হিংস্র মানুষ ছিল! ধূর্জটিকে তো সেই রকম মনে হয়নি। তবে কি মানুষ তো কত রকম মুখোশ পরে থাকে!”
“তোমার কি সব পরিষ্কার মনে আছে?”
“মানে? মনে থাকবে না?”
“না,না, তা না। আসলে পুলিশের লোকজন জিজ্ঞেস করছিল যে কালনাগ কেমন দেখতে, বা ওর উচ্চতা কি রকম সে
সব সম্পর্কে।”
“দেখতে কেমন তো বোঝার উপায় ছিল না। একে ঘর অন্ধকার তার উপর মুখোশ,” বলে প্রভাদেবী মাথাটা চেপে ধরলেন, “মাথাটা টিপটিপ করছে!”
“ছেড়ে দাও মা। আমি চাই না তুমি আর ওই সব নিয়ে ভাবো। তাই ওদের বলেছি আগের রিপোর্টটা খুঁজে বার করতে,
তাতে তুমি যা বলেছ সেটাই ব্যবহার করতে।”
“হ্যাঁ, সেটাই ভালো। ওই ঘটনাটাকে মন থেকে মুছে ফেলতে পারলেই বেঁচে যাই!”
চলবে...
-----------------------------------------------------------------------------------------প্রতি শুক্রবার এই ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাসটি প্রকাশিত অঙ্কুরীশা-র পাতায় ক্লিক করে পড়ুন ও পড়ান। মতামত জানান।
ankurishapatrika@gmail. com
-----------------------------------------------------------------------------------------

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন