রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০

ধারাবাহিক বিশেষ নিবন্ধ ।। উৎসব- উৎস, বৈচিত্র্য, প্রভাব ও কার্যকারিতা (পর্ব-৩)।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

 



ধারাবাহিক বিশেষ নিবন্ধ   

উৎসব- উৎস, বৈচিত্র্য, প্রভাব ও কার্যকারিতা (পর্ব-৩)

পার্থ সারথি চক্রবর্তী 

যুগ যুগ ধরে মানুষ জীবনসংগ্রামে ব্রতী হয়েছে। বেঁচে থাকার স্বার্থে, অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। আর এই সংগ্রামে পরিশ্রান্ত হয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি, শান্তি খোঁজ করেছে আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে। মানব জীবনে তাই উৎসবের অসীম গুরুত্ব বর্তমান। উৎসবের বিরাট ব্যাপ্তি। দিনযাপনের খাটুনির পর কিছুটা বিনোদনের যে দরকার পড়ে, তা তো সভ্যতার সূচনা থেকেই ছিল। আধুনিক যুগে পশ্চিমী সভ্যতায় তার অঢেল ব্যবস্থা। এর কিন্তু বৈজ্ঞানিক ভিত্তিও আছে। বিনোদনমূলক সংস্কৃতি নিয়ে যতই রক্ষনশীল মনোভাব পোষণ করা হোক না কেন, তার প্রয়োজনীয়তা কিন্তু অস্বীকার করা যায় না! গরিব দেশগুলোতে উন্নত দেশগুলোর মতো উপকরণ না থাকলেও,  হাতের কাছে যা পাওয়া যায় তাকেই মানুষ আঁকড়ে ধরেন। সারা বছরের ক্লান্তি, অবসাদ কাটাবার অবলম্বন উৎসব।
সারা পৃথিবী জুড়ে হাজার হাজার উৎসব পালিত হয় । আমরা ভারতের প্রধান উৎসবগুলোর উপরে সংক্ষেপে আলোকপাত করছি। এই ' প্রধান ' কিন্তু ব্যাপ্তি আর উন্মাদনার মাপকাঠিতে। যাদের কথা হয়তো এখানে আলোচনায় আনা সম্ভব হবে না, তাদের প্রতিও একইরকম শ্রদ্ধাশীল মনোভাব পোষণ করা হয়।

দুর্গাপূজা-  বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। এখন আর অঞ্চল ও জাতীয়তার ঘেরাটোপে আবদ্ধ নেই। দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিকতায় উত্তীর্ণ। প্রায় লক্ষ কোটি টাকার অর্থনীতি জড়িত এই উৎসবের সঙ্গে। ভিত্তির দিক থেকে উৎসবটি ধর্মমূলক হলেও আজ সর্বধর্ম সমন্বয়ের প্রতীক। লক্ষ লক্ষ মানুষ যেমন আনন্দ খুঁজে পায়, তেমনি প্রচুর মানুষও তাকিয়ে থাকে এই উৎসবের দিকে। মৃৎশিল্পী, ঢাকী, মন্ডপশিল্পী ইত্যাদি বিভিন্ন মানুষের রোজগারের উৎস এই দুর্গাপূজা। বিশেষত বাংলায় সর্বত্র দুর্গাপূজা হয়। মহালয়া, বোধন থেকে শুরু করে বিসর্জন, বিজয়া; মানুষ বিশেষতঃ বাঙালী বুঁদ হয়ে থাকে। রাঢ়বঙ্গে ও উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন বনেদি পূজার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী পূজাও সংঘটিত হয়। উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে রাজ আমলের বড়দেবীর পূজা, জলপাইগুড়ির কিছু স্হানে মা ভান্ডানির পূজা, বনদূর্গার পূজা সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। কলকাতার  বিভিন্ন জায়গায় কোটি টাকা বাজেটের থিম পূজা সকলের নজর কাড়ে।

কালীপূজা ও দীপাবলী-
মা কালী দশমহাবিদ্যার প্রথমা দেবী। শক্তির দেবী। চোদ্দ বছর বনবাসের শেষে ও লঙ্কা বিজয় পালন করতে দীপাবলীর প্রচলন বলে হিন্দুমতে বিশ্বাস। আর মা কালীর আরাধনা এর সাথে মিলেমিশে একাকার। বলতে গেলে এর ব্যাপকতা বহির্বঙ্গে অন্য কোন উৎসবের চাইতে বেশি। আক্ষরিক অর্থেই জাতীয় উৎসবে পর্যবসিত। হাজার হাজার প্রদীপ জ্বালিয়ে চতুর্দিক আলোকিত করা হয়। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রচুর টাকার বাজিশিল্প ডানা মেলে। কিন্তু দূষণের কারণে ও বর্তমান করোনা অতিমারির জন্য রাশ টানতে হয়েছে। এবং তা বাধ্য হয়েই ও ভালোর জন্যই।

যতই কৃত্রিমতা আসুক না কেন জীবনযাত্রায়, বাঙালি আজো উৎসবমূখর থাকতেই ভালোবাসে। নতুন প্রজন্ম হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে আবার দেখছে। এটা কিছুটা হলেও আশার কথা। কর্মব্যস্ত মানুষও ফুরসত খুঁজে বের করে এই উৎসবগুলোর জন্য ।
এছাড়াও আরো অনেকগুলো পূজোকেন্দ্রিক ছোটবড় উৎসব পালিত হয় বাংলায়।
যেমন জন্মাষ্টমী, বুদ্ধপূর্ণিমা, বাংলা নববর্ষ বেশ উল্লেখযোগ্য।

মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, মহরম বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে।



চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন