সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২০

তিনটি কবিতা।। লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল

 



তিনটি কবিতা

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল    


সান্ধ্যধর্ম 

সামান্য হাওয়ায় ছায়াগুলি উড়ে যায় গ্রীষ্মের দিকে। কেউ কেউ গ্রহণ করেছিল তাদের - দুঃসহ নামের সাথে দোয়েল পাখিটিও নীলাভ আকাশ নিয়ে ধারণ করেছেে পিপাসা। কথা দিয়েছিল খড়িপড়া গায়ে এঁকে দেবে আলপনা; অথচ শিয়াল ডাকতেই ঠোঁটে  তুলে নিল রাত  - 

১.

চেনাজনের ঘর বাড়িতে ঘামভেজা শরীর স্পষ্ট, কেবল নীরবতা প্রাপ্য তাদের, পতঙ্গের কামড় জিতেছে তারা । কোথাও আঘাত নেই - সন্ধ্যামনির রঙ পাল্টে দেওয়া সন্ধ্যাটি নিঃস্ব হতে থাকে শুকতারায় -

২.

আমি মিলিত হতে চেয়েছিলাম সে পথের সাথে। কাকেই বা ছুঁয়ে ফেলি - মহাকাশ গমনের ইচ্ছা নিয়ে ইশারায় হেঁটে গেছি সাকোঁ পর্যন্ত,  অসংখ্য বুদবুদে শেওলায় আটকে থাকা গুগলি ঢুকে গেছে  গুহার ভিতর।


৩.

কান পাতলে শুকনো ডাল ভাঙার শব্দ। যে কোনো উচ্চারণে আগুন থেকে বেরিয়ে আসে লোমকূপ, আলুথালু ভঙ্গিমায় উচ্চতা আর দূরত্ব নিয়ে দীর্ঘ দিন কৃশকায় থেকেছে এই অরন্য-


ক্লোরোফিল কম্পাঙ্ক        


প্রতিটি সারিতে নদীর সিক্ততা নিয়ে নিঃশব্দে বেড়ে ওঠে মিটিং মিছিল। আলোচনা চলতে থাকে  দেশ শুদ্দ পরকীয়ার সাথে সাথে শ্লেষ্মাজনিত চুমুর পূর্ণিমা। রাস্তার ধারে ঘোলা জল। কেবল আগুনের বাছবিচার নেই বলেই  যথায় তথায় জড়িয়ে যায় শুদ্ধ রাত -


বর্ষা অব্দি যত দিন যায় এই বাঁচা আর মরে যাওয়া গুলো সব আলাদা হয়ে যায়,  কাক তাড়ুয়া দাঁড়িয়ে থাকে ধান খেতের মাঝে -  ভিজতে ভিজতে মুছে যায় খড়ি দিয়ে আঁকা চোখ  - খড়ের বুকে নিজস্ব কেন্নোর  বসবাস, বাঁচাটাই সত্য জেনে রক্তাক্ত করে দেয় জানালা দরজা।  


কোমর থেকে একটা স্নায়ুরেখা  ব্যথা ছড়ায় পায়ের পাতা পর্যন্ত। কতবার বলেছি এসো একদিন,  বালিস বিছানা ছাড়াই,  শুধু ঘাম ঝরবে- ঝড় বাঁধবো পাখি আর আমাদের সমস্ত সকাল নিয়ে হবো ফুটিফাটা - সাকুল্যে যা কিছু ঘরকন্না, পেয়ে যাবো শ্যামা ঘাস আর  ক্লোরোফিল কম্পাঙ্ক - 


সবটাই অজানা। গাছের ছায়ায়, রোদের ভিতর অন্তঃস্থল।  কাঁটাঝোপের স্বপ্ন নিয়ে  গ্রামীনরা অ্যামেচারই হয়।   আত্মপরিচয় নিয়ে শেষ পর্যন্ত ভোটজীবন আর  ভোরবেলা পেরিয়ে যাবার প্রশংসাটুকুই মেলে।  তবু দেখো - আরেক শরীর চায়  মরণের কাঁপন; ক্ষত বিক্ষত আঁধারে নদীতট - 


ঠোঁট ফাঁক হয়ে যায় তখনই - এক অজানা পাখি ডেকে উঠে। গাছের মাথার দিকে তাকিয়ে থাকার মুহূর্তে ঝরঝর কয়েক বিন্দু জল - ঝরার কথা ছিল না এ সময়। হেঁসাতি জঙ্গলে আটকে যাওয়া ঢেউ নীল হয়ে যায়,  গোড়লির সুত্র ধরে আকাশ শুয়ে থাকে ধানক্ষেতে-




আকাশি রঙে আঁকা          

নেমে যাওয়ার পর বাঁকা তালগাছের অভিমানে আটকে আছে আলো। তার ওপাশে আর কোনো কিছু দ্যাখা পাওয়ারই কথা নয়।  নয় জ্ঞান, নয়  প্রজ্ঞা । কেমন করে দুঃখ ঢাকব আমরা ! 


চাকার দাগে জমেছে কয়েক ঢোক জল, এই সত্যে কানশিড়ে লতাটি বাড়তে থাকে সূর্যের দিকে - সেখানেই  ঠোঁট ডুবিয়ে  জলকেলিতে মত্ত  ছাতার পাখির দল। এই সহজ স্বপ্নে মেঘ জমে --


হয়তোবা কাছেই কোনো গৃহপ্রবেশ। সেদিকেই ভেসে যায় নির্ভয়ের জ্বর। না বুঝেই কেউ কেউ ভাবে পারিজাত। এখন তো মিলনকাল নেই  -  ভীষণ রকম উষ্ণে হৈহৈ করে সরে যায় পোশাকগুলি; পার হয় মায়াহীন মর্মর।


সূর্যাস্তকে পেছনে রেখে স্নান করে সুডৌল নীরবতা ; ভঙ্গীতে চালাভাঙা শ্বাস নিয়ে চোখ পোড়ায় বিদ্যুৎ । আর থামেনা শরীরের ক্ষুধার্ত কৃমি; ক্রমশ নেশালো হতে হতে পথ খুঁজে নিতে চায় উঠোন। সেই ভোর থেকে নয়নতারার অনাদর  হয়ে যায় সাদা সাদা -


নীলমায় স্বাধীনতা থাকলে আড়াল করতো না কোনো  ঝোপের বাঁক।  কেউ কেউ পালাতে গিয়ে ভুলে যায় দীর্ঘশ্বাসের কথা। সারা গায়ে কালো - নত চোখ তামাম প্রহর জুড়ে আকাশ নেমে আসা পুকুর থেকে হাঁস ওঠে আসে ডাঙায় - খুঁটে খায় কীট আর ঝরা শষ্যদানা ।

 এ জীবন  কোনোদিন হবেনা পথ -


ডানহাতে পোলিও নিয়ে তখনও পুবে তাকিয়ে আছে আকাশি রঙে লেখা পাখির হৃদয়।




----------------------------------------------------------------

আপনিও এই বিভাগে মৌলিক ও অপ্রকাশিত  লেখা পাঠাতে পারেন। 


মতামত জানান। 


ankurishapatrika@gmail. com



-----------------------------------------------------------------               

1 টি মন্তব্য:

  1. সান্ধ্যধর্ম এবং আকাশি রঙে আঁকা কবিতায় কবির সঙ্গে একাত্ম হতে পারলাম |

    উত্তরমুছুন