শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০

অঙ্কুরীশার শারদীয় সংখ্যা ১৪২৭।। কবিতা /ছড়া - পর্ব- ১

 





কবিতা/ছড়া ( পর্ব-১) 


জ্যোতির্ময় দাশ, যশোধরা রায়চৌধুরীর, রতনতনু ঘাটী, অশ্রুরঞ্জন চক্রবর্তী,  বীথি চট্টোপাধ্যায়, অজিতেশ নাগ, দীপ মুখোপাধ্যায়, রবীন বসু, সৌমিত বসু, গৌতম হাজরা, অমিত কাশ্যপ, বিকাশ চন্দ, উৎপল মান, বিপ্লব চক্রবর্তী, শুভঙ্কর দাস, পাপড়ি ভট্টাচার্য





চড়ুই 

জ্যোতির্ময় দাশ


বিশ্ব সংস্থার বুলেটিন থেকে সম্প্রতি জানা গেল
প্রাগৈতিহাসিক বিশাল ডাইনোসরদের মতো
হারিয়ে যাচ্ছে নাকি পৃথিবী থেকে চড়ুই পাখিরাও

সংবাদটি পড়বার পর দেখলাম লক্ষ করে
বারান্দায় অথবা বাগানে চড়ুইয়েরা কোথাও
এখন আর খুনসুটি করে না গলা ফুলিয়ে
আগের মতো সারা গায়ে ধুলোবালি মেখে

অথচ বছর পনেরো আগেও দেখতাম বাবা
মই সিঁড়িতে উঠে ভেন্টিলেটর থেকে
চড়ুইয়ের ভাঙা ডিমের খোসা পরিষ্কার করছেন
ঘরদোর খড়কুটোয় নোংরা হচ্ছে বলে
মা অনবরত রাগ করছেন চড়ুইদের ওপর

তবে কি এই ছবিগুলোও জীবন থেকে হারিয়ে যাবে
যেভাবে একদিন বাঙালির ছেলেবেলা থেকে
হারিয়ে গেছে ঠাকুমার রূপকথার দুপুর আর
আকাশ-প্রদীপ জ্বলতে থাকা ঝিঁঝিপোকার সন্ধেগুলো...’




উনি

যশোধরা রায়চৌধুরী


মনোরম একটা  দিন।

আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে নীরবতা

 আর শান্ত অশ্বত্থ গাছের হাওয়া 


প্রতিদিন একটা একটা করে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে

 আমাদের জানালা

 আমাদের চোখ 

আমাদের আত্মা

বিষাদে ।  কান্নায়।  অন্ধকারে। 


মনোরম একটা দিন।

আকাশে ভাসছে আগের রাতের গোপন ধোঁয়া

চিতার 

মেয়েটির

যে চিতাটা নেই

যে মেয়েটা ধর্ষিত হয়নি

যে ধোঁয়াটাকে বারণ করে দেওয়া হয়েছে 

ছড়িয়ে যেতে


কেননা উনি বলেছেন

মনোরম একটা দিন 

আজ। 





এবার পুজোর ছুটি

রতনতনু ঘাটী                                    

 

হাজারিবাগের বকুল মাসির থেকে

পার্সেলে এল দু’-দু’টো নতুন জামা

পুজোয় কী দেব ভাবতে ভাবতে দেখি

নীল সোয়েটার পাঠালেন মেজোমামা।

 

পুজোয় কেউ কি সোয়েটার পরে নাকি?

মামা লিখেছেন, শীত বেশি দূরে নেই!

মালতী পিসির মেরুন রঙের শার্ট

তুলে রাখা আছে দশমীর জন্যেই।

 

ছোটকা দিয়েছে টিনটিন আঁকা জামা

স্পাইডারম্যান টি-শার্ট দিয়েছে ঠামি!

কী ভালো দেখতে! একেবারে ঝাক্কাস!

ষষ্ঠীর দিন সেটাই পরব আমি।

 

 

মা তো দিয়েছেন কমিক হিরোর বই

বাবা দিয়েছেন আর্চির মুখ আঁকা

স্যান্ডো টি-শার্ট আনকমন তো বটে

এই নিয়ে বেশ আনন্দে ডুবে থাকা।

 

আমি সাতখানা পুজোর গিফটে মেতে

হঠাৎ কী হল, বাবা বললেন ডেকে,

মেরুন জামাটা দেবেনের ছেলে নিক

কী এমন হবে এতগুলো জামা রেখে?

 

বকুল মাসির জামাটা ভুলুই নিক

সক্কালে ভুলু কাগজ কুড়োতে এলে।

নীল সোয়েটার টোটাকেই তুই দিস

টোটা আমাদের রান্নামাসির ছেলে

 

আমাদের বাড়ি দুধ দেয় রোজ দিলু

আর্চি টি-শার্ট তাকেই মানাবে শীতে

সকলে পড়বে এই ভেবে দিয়ে দিস

কমিক বইটা পাড়ার লাইব্রেরিতে।

 

 

 বকুল মাসির আর জামাখানা পাক

কাঁই-না-না-না-না বাজানো নবীন ঢাকি

স্পাইডারম্যান টি-শার্টটা তুই নিস

ওটা এক্ষুনি আলাদা করেই রাখি।

 

স্পাইডারম্যান টি-শার্টটা পরে আমি

ঘুরব ক’দিন আনন্দে লুটেপুটি!

নতুন জামায় ওদের খুশির পাশে

স্মরণীয় হবে এবার পুজোর ছুটি!

     



         

চলো সবাই বঙ্গে

অশ্রুরঞ্জন চক্রবর্তী


লক্ষ্মী, সর, কাতু, গণেশ মায়ের কাছে এসে

বলল, পুজোয় যাবো না মা মামার বাড়ির দেশে।


মামার বাড়ির দেশে ছড়ায় অজানা এক রোগ,

মরছে মানুষ শয়ে শয়ে বাড়াচ্ছে দুর্ভোগ!


ঘন ঘন হাত ধুচ্ছে, ভয়ে সবাই কাঁটা,

পথেঘাটে দেখি সবার মুখেতে মাস্ক আঁটা।


দুর্গা বলেন, পুজো হবে-- চলো সবাই বঙ্গে,

রোগ তাড়াবেন দেবাদিদেব, তিনি যাবেন সঙ্গে।






স্বদেশ  
বীথি চট্টোপাধ্যায়


স্বাধীনতা কীসে আর দেশ বলে কাকে?
শুধু কি সীমানা দিয়ে মাপা যায় তাকে?

এই মাটি, এই হাওয়া, এ সংবিধান
দেশ মানে সেইখানে কবুল এ-প্রাণ।

স্বাধীনতা মানে খুব বেশি কিছু নয়,
নিজের হৃদয় খুঁড়ে আনা পরিচয়। 

রক্তবিন্দু দিয়ে যাকে গড়া যায়
দেশ মানে মানুষের মুক্তির উপায়।

কতখানি দিতে পারে কেউ ভালোবেসে?
অনেকেই ঘরে আর ফিরলনা শেষে। 

মৃত্যুর মুখে দেওয়া বাঁচার শ্লোগান
দেশ মানে সেইখানে কবুল এ-প্রাণ।







জানি তুমি এখন 
অজিতেশ নাগ

জানি তুমি এখন নবমীর চাঁদ
আর এটাও জানি তুমি দেবীর মুখ দেখে যাচ্ছ একটার পর একটা
জানো, আমারও দেখতে ইচ্ছে করে তোমার মুখখানা
যা পরপর আঞ্চলিক দেবীর মুখের মত তেলতেলে হয়ে উঠছে ক্রমে 
তুমি আসতেই পার এইভাবে দেবীদর্শন শেষে সেই পূর্বনির্ধারিত পথে
আমিও তো নামতে পারি রাস্তায় 
তবে যে পথটা দিয়ে তুমি আসার প্রয়াস চালিয়ে যাবে
তার শেষ প্রান্ত আমার চৌকাঠের সামান্য আগে শেষ হয়েছে
তোমার অথবা আমার এক পা বাড়িয়ে আসাটা দেবীদর্শনের মত অলীক হচ্ছে
মাঝে তবুও একটা পরিখা, একটা দূরত্ব... 
যেমন দেবীমূর্তি আর তাঁর দর্শকশ্রেণীর মধ্যে থাকে
ঘুচে যাক অথবা থাকুক; কেন না 
ওটুকু না থাকলে আর হয়ত শরৎকাল আসবে না



মনের দোসর
রবীন বসু

তিনটে শালিক ভিজছে যখন গাছের শাখায় বসে
একটি মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন বৃষ্টি ধারার মাঝে।
ঝাপসা ঝালর মুছছে তখন দিনের আলোক শেষে
নামবে এবার ছায়ার প্রদেশ অস্তরাগের সাঁঝে।

এই মানুষটি একলা ভীষণ একলা ভেজেন দেখি
তুমুল বর্ষণ থামছে না আজ, গভীর হৃদয় খুঁড়ে
জাগছে অনেক আঁধার মানিক অন্ধরাতের তারা
ভেলকি দেখায় স্মৃতির দুয়ার ফেলছে কীসব ছুঁড়ে।

তিনটে শালিক, একলা যে জন মনের বিষাদ ছুঁয়ে
উদাস তাকায় বৃষ্টি ধারায় মনকেমনের রাতে ;
এই চরাচর ভিজছে যখন আকুল কান্না নিয়ে
একলা শালিক মনের দোসর পাবে কি কাল প্রাতে!

একলা মানুষ একলা শালিক একলা বৃষ্টি-দিন
বুকের মাঝেই কাঁদছে তাদের অনন্তের এক বিন! 




আমার জীবনানন্দ 
সৌমিত  বসু

একটি ধানক্ষেতের ভেতর দিয়ে
তুমি হেঁটে চলেছ সূর্যাস্তের দিকে ধানগাছগুলি মাথা নামিয়ে
এঁকে দিচ্ছে এক একটি সিঁড়ি
তার ওপর পা ফেলে ফেলে
তুমি পৌঁছে যাচ্ছ দ্বারুচিনি দ্বীপে
কিংবা মদের গেলাসে রাখা মুক্তোয়।
তুমি নিঃশব্দে দেখতে পাও
কিভাবে কব্জি থেকে রক্ত গড়িয়ে, কিংবা
অশ্বত্থের ডাল বেয়ে ঝুলে পড়া
একটি দড়িতে আঁকা রয়েছে 
লাশকাটা ঘর,আঁকা রয়েছে 
প্যাঁচা ও ইঁদুরের করুণকাহিনী।
উপেক্ষা সম্বল করে তোমার এই যাত্রা আকাশলীনা ,সুচেতনা কিংবা 
বনলতা সেনদের কাছে আজও 
আশ্রয় হয়ে উঠতে পারলো না।
কলকাতা একদিন কল্লোলিনী তিলোত্তমা কিংবা পৃথিবী একদিন হ'য়ে উঠবে কিনা শবহীন বন্দর ,এই জিজ্ঞাসা রেখে যাও মানবজাতির কাছে,এন্টালির গগন বিপিনদের কাছে।
আমি দূর থেকে তোমার যাত্রাপথের দিকে অপলক চেয়ে থাকি,
কুড়ি কুড়ি বছরের পর সত্যিই কি আমাকে তুমি চিনবে কখনো?








রবিন বণিকের দুটি কবিতা  

১.
বিরক্ত  উনুন

  
আত্মহননের  পর  গুছিয়ে  রাখি  আমাদের  এলোমেলো  আর্তি

আমাদের  সমস্ত  জং–ধরা  উপকরণ,  খাল,  বিল


আত্মহননের  কিছুদিন  পর   আমাদের  বিস্তারিত  শরীরে  

পাগলের  মতো  খুঁজে   বেড়াও  বিরক্ত  উনুন–




২.
বৃষ্টি  একটা  ধারণা
   
  
বৃষ্টি  একটা  ধারণা  
আর  সাঁতার  একধরণের  যৌগিক  স্বভাব 

মাছের  বিরক্তি  দেখে  মনে  হয়
জলের  গায়ে  মাখিয়ে  রেখেছে  নিদারুণ  সন্দেহ

এবছর  নদী  ও  সমুদ্রের  দূরত্ব  হ্রাস  করবার  পরিকল্পনায়   
অতল  পরিষদ  গঠন  করেছে মানুষ। 



কবিতাধর্ম 

দীপ মুখোপাধ্যায়


কবিতার ঘর বাড়ি ফাঁকা 

একটুও আলো নেই অন্ধকার মাখা 

জোনাকিও বসছেনা অক্ষরে স্তবকে

যদি কোন গোত্রহীন অন্ত্যমিল ঢোকে।


যথাশব্দ জোছনায় গলে 

আচ্ছন্ন ভাবনাজাল পথভোলা গভীর অতলে মৃতপ্রায় ছায়া ভাসে শরীরের শাখা-প্রশাখায় কলম ভুলেছে ভাষা কান্না চেপে লেখনি হারায়। 


সাবধানী স্মৃতি উবে গেছে

দিগন্ত ছাড়িয়ে এক ছায়াডোরা ঘন ঘোরপ্যাঁচে

হাওয়া ফিসফিস করে।বলে কবি শোনো -

অহেতুক কবিতায় বন্দি হয়ে থেকো না কক্ষনো। 


ক্লান্ত কবিতা তবু আসে 

ঘুম থেকে জেগে উঠি বুক ভরি সেই নিঃশ্বাসে অভিমানী কলমের মুহুর্তে ফের ঠোঁট ফোলে

আনকোরা কাগজের ভালোবাসা পাত্তাড়ি খোলে।


তখন কবিতাবোধ থেকে

কিছু মোহ বিদ্রোহ সংগ্রহ করি প্রত্যেকে. 

এটাই কবিতাধর্ম এই আছে ফের যাবে দূরে

স্বপ্নে যদি স্তব্ধ থাকে জেগে ওঠে ভ্যাপসা দুপুরে।



বিমষ' অক্ষরগুলো

গৌতম হাজরা

অশ্রু আর রক্তে কদ'মাক্ত হয়ে আছে
জ‍্যোৎস্নার সাদা পাতা।
                শব্দের গোপন অন্তিমে।
রাস্তা বিপদজনক, পারাপারও কঠিন
তবুও নিদ্রার মধ‍্যে হেসে উঠছে
এ পৃথিবী
           অসংখ্য কাটাকুটিতে।

তখন স্রোত আরও ধারালো হয়
রোদ্দুর আরও ঝিলিক মারে
             বাতাসও জোরালো হয়
অন্তিম নিবা'পনে।

দেখি, বিমষ' অক্ষরগুলো ঝুঁঁকে আছে
টুকরো টুকরো হয়ে

দূরবর্তী,  একক, নিঃসঙ্গ নিজ'নে !




মিলনমেলা 
অমিত কাশ‍্যপ

এতদিন যতটা পথ পেরিয়ে এসেছি 
শুধুই মনে হয়েছে অনেক পুণ্যফল
প্রতিনিয়ত অর্জন করেছি এই দেখা 
কম কী এই আত্মজন মানুষে মানুষে

কত মানুষ আলাপের পর সরে দাঁড়াল
আবার আলাপের থেকে আত্মিক বন্ধন
দুদণ্ড বিকেল যেমন পাশে বসে বিশ্রাম পায়
সন্ধ‍্যা যেমন আরো পাশে ঘনিষ্ঠ হয় 

তোমরা ওই আড়ষ্ঠতা রেখ না 
ছোটবেলায় ঠাকুমার গলায় রামায়ণ
সীতাহরণ পর্ব, সুখ-দুঃখ হরিহর আত্মা
কটা দিনই বা, পৃথিবীর পাঠ একটা মিলনমেলা 



আবারও কি লোহিত উৎসব

বিকাশ চন্দ

বিধ্বস্ত সময়ের চাঁদ জানে অন্ধ চোখের আলো ছায়া
শিক্ষিত প্রশান্ত ঠিকে খাজনা খোঁজে দু'হাত পেতে উঠোনে, 
কি চাই বল খাদ্য বস্ত্র পানীয় ইন্দ্রিয় সুখ আরও সব ভিন্ন স্বর---
পুরুষ প্রকৃতি দোলাচল মোহভার জেগে উঠেছে চিন্ময়ী পরিবার,
কীইবা পেলাম জানার ইচ্ছেয় জল ঢালে ত্রিনয়না আগুন স্বভাব। 

যমুনার জল বৃন্দাবনের ঘাস আর ইচ্ছে ধ্বংস আঁতুড় ঘর
ভেতরের ভয়ে মুখ দেখা বীভৎস স্বাক্ষর বোঝেন পরিজন,
অচেনা দুঃখ গুলো টেনে নিয়ে যায় বিভূঁইয়ে এ হিম সময়ে
এখন দেখছি আঁকা বাঁকা মনীষী রতন বড় বেপরোয়া খেলায়---
আহা !  পরিশুদ্ধ নীল জলে নাচে কী স্বচ্ছ ভাঁজ হীন ভদ্রতা। 

কখন কার উঠোনে বহুরূপী ঘরে ফলন্ত বীজের কল্পলোক
গোপনে গুপ্ত সখার স্বর্ণালী কথা বোনে কপট কুশলতা---
ভালোবাসার কক্ষ সুখে মন্দ পচন ঘাসে ফুলে লতায় পাতায়,
এখন সে সোহাগ সজনী বুঝেছে প্রাণ ফুলেদের মারণ সুধা---
গেরস্তের ভাঙা ঘরের চাতালেও কপট প্রেম কথা ধ্বন্দের মানুষ। 

দুর্দশায় জুবুথুবু মানুষের শরীরে কে জানে রক্ত হিসেব মুখময়
আবাদে মানুষ ফলে না বলেই ঘিরে থাকে এতো বিষণ্ণ আবাস,
শুকনো বুকের ভেতরেও কত স্পর্শ ময় আত্মমগ্ন সুখ কথা----
আবারও তো আসন্ন রক্ত হিম পর্ব সহাস্য প্রত্ন অবয়ব জাগে
 অভ্রনীলে চুমু রাখো সাথী হে,  আবারও কি লোহিত উৎসব। 





আমাদের পরি    

উৎপল মান

 

আমাদের ঘরে সেই পরি ছিল

যা ছিল ছোটবেলায় পড়া গরিব মুচির গল্পে

প্রতি রাতে সেই পরি অসমাপ্ত জুতোয় চামড়া জুগিয়ে

শিল্পময় সেলাই করে দিত    

প্রথমে লোকটা বুঝতেই পারেনি কে তার জুতোয়  

ফিনিশিং টাচ দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় রোজ

আমাদের ঘরে সেই পরি ছিল  

অফিস থেকে ফিরে দেখতাম

ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাওয়া অগোছালো বই

বাদুড়ের মতো ঝুলিয়ে রাখা পোশাক-আশাক

                পরিপাটি ছন্দে সাজানো  

এমনকি আমার না-লেখা কবিতাও

আশ্চর্য এক জাদু-বাস্তবতায় সে উতরে দিয়েছে   

কখনও দেখতাম  

বাথরুমের অন্ধকারে জৌলুসের কাজ

জানলার গোলাপি আভা

ফুলের টবে জল- সবই বেশ আচমকা প্রস্তুত  

শুধু একবার

পুরুষের ভালবাসা মেটাতে গিয়ে

সে আর ফিরে আসেনি অলৌকিক শহর থেকে।  





পুড়তে হয়

বিপ্লব চক্রবর্তী  



কয়লার বর্ন কুচকুচে কালো 
কি করে কালো জ্বালাবে আলো ! 
বাল্ববের নিজস্ব কোনো স্বয়ংক্রিয় 
ক্ষমতা নেই আলো জ্বালানোর । 
একমাত্র কয়লাই ক্ষমতা রাখে নিজে
পুড়ে ফিলামেণ্টে বিদ্যূৎ সঞ্চারিত করে 
আলো জ্বালাতে । 

সাহিত্যে , শিল্পের নিজস্ব কোনো স্বকীয়তা নেই 

একমাত্র শিল্পী কোনো শিল্পকে এক সাহিত্যিক 
সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখে । 

কবিদেরও অনেকটা অংশ কালো চাদরে মোড়া ! 

কবিদেরও অনেক অনেক পুড়তে হয় 
ঠিক কয়লার মতো ! 
তবেই না স্নায়ু কোষে শক্তি সঞ্চারিত হয়ে সাহিত্য 
সৃষ্টি হয় । 

যে সাহিত্য জীবনের কথা বলে ......
যে সাহিত্য আগামী প্রজন্মকে বাঁচার মন্ত্র শেখায়....
যে সাহিত্য অন্ধকারে ডুবে থাকা পথিককে পথ দেখায় .....
আর এভাবেই স্রষ্টার চাপা কান্না অনেকটাই 
চাপা পড়ে যায় আগামীর হাত স্পর্শ করে । 





মুখোশ
শুভঙ্কর দাস   


ধরো,শস্যশ্যামল একটা মাঠ খরার মুখোশ পরে শুয়ে আছে আকাশের নিচে
তখন আকাশ আর কাশফুলের রঙ ধরে না অথবা থাকে না মুক্তোর মতো নীল,
হয়ে যায়,লাল রঙা চক্ষুর কোনো রাক্ষস
যার ক্ষুধার কোনো শেষ নেই!
ধরো,একটা স্রোতময়ী নদী শূন্যতার মুখোশ পরে বালি,শুধু বালি হয়ে ক্ষতচিহ্নের দাগ হয়
তখন একূল আর ও-কূল পড়ে থাকে পারাপারহীন তৃষ্ণায়! 
সে তৃষ্ণার কোনো শেষ নেই!

মুখোশ পরা যতখানি সহজ,ততোখানি কঠিন,হয়তো তার চাইতে সহস্রগুণ কঠিন খুলে ফেলা!

হয়তো শ্মশানের শামিনায়া শুয়ে আছো,অনুতাপে,আশ্রয়ের আশায়, আগুনে পুড়ে পুড়ে ছাই হলে

কোথায় ফিরবে? মুখোশ কোনোদিন পোড়ে না
ঠিক ঝুলে থাকে আয়নার পাশে দেওয়ালে!




ডাকি তোমায়
পাপড়ি ভট্টাচার্য

এখন কোনো বিকেল নেই যে আড্ডা জমবে
এখন কোনো ঋতুও নেই যে মন ছোঁবে
ঘর থেকে ঘর খুব ইচ্ছে পেরিয়ে—
সেই আকুল করা পরম ডাক!

সেই প্রভাতী সুর গম গম গলা শোনা
পাচ্ছি শুনতে শুধু হাহাকার চারদিকে
তোমার  আঁচল  ধরে  ওই আসছে খুশি —
কোথাও কোনো আবাহন যে নেই আজ!

প্রিয় আমাদের চিরন্তনী মাতা শোনো
চোখের জলে এপার থেকে ডাকছি তোমায়
ফিরিয়ে  দাও সেই পুরোনো শারদপুজো—
আবার যেন আনন্দেতে জাগতে পারি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন