শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০

অঙ্কুরীশার শারদীয় সংখ্যা ১৪২৭।। কবিতা /ছড়া -(পর্ব- ৪)

 




কবিতা/ছড়া(পর্ব-৪)   
জয়দেব মাইতি, শাহীন রায়হান, সীমন্ত মৈত্র, মায়া দে
সুমিত্র দত্ত রায়,    নীলৎপল জানা,  সুদীপ্ত আচার্য, খুকু ভূঞ্যা, বকুল জানা,  বিশ্ব বন্দ্যোপাধ্যায়।  পার্থ সারথি চক্রবর্তী, সঞ্জীব রাহা, রঞ্জন ভট্টাচার্য।  

অভিসারী হলে

জয়দেব মাইতি 


আমি অভিসারী হলে - আকাশের বুকে বৃষ্টি নামে। 

বৃষ্টি গান করে-আমি সিক্ত হই-

আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় নিয়ে ইতি উতি চর্চা হয়।


যতই চর্চা বাড়ে,

ততই তোমার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ি-

তুমি নানা অছিলায় - আমার অন্তরাত্মার ঘর বারান্দা আঁকো-


আঁকতে আঁকতে কখনো তুমি  অভিমানী হলে-

আমি নীলাকাশে রাধা বাঁশি শুনি।



সকাল
শাহীন রায়হান


আবছা আঁধার যায়নি কেটে
নেই পাখিরা জেগে
সবুজ পাতা ছোঁয়নি ফড়িং
আকাশ ঢাকা মেঘে।

ঘাসের ঠোঁটে শিশির কণা
শাল-পিয়ালে অলি
দুলছে হাওয়ায় কলমিলতা
জুঁই চামেলি কলি।

দুলছি আমি দুলছে ঘুড়ি
চাঁদের বুড়ি মেঘের চুড়ি
নীল আকাশের ফাঁকে
হঠাৎ দেখি সকাল এসে
পূব আকাশে হাওয়ায় ভেসে
হাত বাড়িয়ে ডাকে।



শারদ অন্তরালে
সীমন্ত মৈত্র 

মাঠের ওপারে বন, আগুন জ্বলছে বনে;
দগদগে লাল রঙ, কি জানি কি আছে তার মনে!
আগুনের ওইপারে কিছু মানুষেরা বাসা বাঁধে...
আগুন নিভলে আসবে বনে, একসাথে এই সাধে
জোনাকির মত মিটিমিটি সেই স্বপ্ন দু'চোখে জ্বেলে
তারই আগুনে খোঁজে তারা সুখ, বনেতে আগুন জ্বেলে।

আর, লাল রক্ত পুড়ে যায় খালি নীল আকাশের তলে...

বাতাস উড়ে বেড়ায় ঘুরে পাকস্থলীর বাঁকে,
প্রশ্নগুলো বেড়ায় খুঁজে দুষবে তারা কাকে...
ঘাস জমি সব ছাই হয়ে গিয়ে জ্লার জংলা কোলে
স্বপ্ন বাঁচা পাওয়ার মাঝে ত্রিশঙ্কু হয়ে দোলে!
শুধু ভাতের গন্ধ লাফায়, গড়ায় সারাটা মাঠ জুড়ে;
আর কাশের রঙে ঢাক বেজে যায় বনের অল্প দূরে!

আর, আঁধার ঘরের দাওয়ায় শুধু নিভন্ত দীপ জ্বলে...

মা এসেছে এক চালাতে, আটচালার ওই ঘরে
লাগবে মাটি, গাছের গুঁড়ি খাতিরদারির তরে;
তাই কিছু মানুষ দল বেঁধে সব বনের দিকে চলে।
তখন পোড়া বনের গন্ধ তাদের আঙ্গুল তুলে বলে...
"ফিরে যা আজ, মা কে তোরা আসতে বলিস পরে
নিভবে যেদিন আগুন বনে মায়ের ভাতের বরে"!



শরৎ এলেই
মায়া দে

শরৎ মানেই খুশির আমেজ
পূজো আসবে বলে 
শরৎ এলেই কাশের চামর
হাওয়ায় মাথা দোলে।
শরৎ এলেই শিশির ভেজা
শিউলি ফুলের মেলা
শরৎ মানেই চলছে নাচন
রোদ বৃষ্টির খেলা।
শরৎ মানেই জল টলমল
দীঘি ভরো ভরো
শরৎ এলেই শালুক তুলি 
মানা তো নেই কারো।

শরৎ এলেই সারা বেলা
সাদা মেঘের ভেলা
ঝাঁকড়া মাথা মহিষাসুর
আর মা দুগ্গির খেলা।
শরৎ এলেই জামা জুতো
নতুন নতুন সাজ
শরৎ মানেই কুমোর পাড়ায়
ঠাকুর গড়ার কাজ। 
শরৎ এলেই বাঁশির সুর
ড্যাম কুড়াকুড় বোল
শরৎ মানেই পূজো প্যান্ডেল
খুশির তুফান তোল।




একটু ছোঁয়া

সুমিত্র দত্ত রায়


কাছাকাছি বেশ তো ছিলো

হঠাৎ কোথায় গেল?

কথা দেয়া  কথাগুলো

বৃথাই পাঁকে ম'লো!



মানবতা! গদি পাতা

মনের থে‌কে দূরে,

হাতেতে হাত রাখার কথা

মানায় কি আর সুরে?



মিটি মিটি হেসেও নেতা

ভোট তো ঠিকই খুঁজবে,

মানুষের কি কোন কথা

কানেতে তার ঢুকবে?



একটা আঁটি পাটের কাঠি

ভাঙাটা বেশ কষ্ট,

ভেঙে তা যায় পরিপাটি

দলছুটেতে স্পষ্ট!



বিপদ সীমায় এখন আছো

রাশ টানা তাই বন্ধ,

কাঁধে কাঁধটা রেখে বাঁচো

নয় যে হবে অন্ধ।



মানবতা যদি থাকে

কষ্ট সবার বুঝবে,

পড়ে থাকা ওই লাশটাকে

ঠিকই টেনে তুলবে।



গোপন অভিসার

সুদীপ্ত আচার্য্য

হতে পারে এখনও ভোরের আলো ফোটেনি
দীর্ঘ অব্যক্ত প্রবাসকালে নিগুঢ় নিস্তব্ধতা,
তবে এ আঁধার সাময়িক..
আস্থা,বিশ্বাস, আশা এসবের উর্ধ্বে -
মনে করো তুমিও অজ্ঞাত প্রেমিক
প্রতি রাতে শিহরিত হওয়া এক অবয়ব;
না, হ্যালুসিনেশন নয়! হয়ত ইলিউশন
স্মৃতিতে ফিরে আসা বাস্তবের স্পর্শ
সে তো তোমার অন্তরের ভরসা।।
কোনো এক দুঃস্বপ্ন যদি
জেগে ওঠে দীর্ঘ প্রবাসী ঘুম থেকে,
কিছু নাগরিক তখনও ঘুমিয়ে ..
ভোরের স্নিগ্ধ শান্ত বাতাসে ঘুম ভালো হয়?
তুমি কি তাকে বাসবদত্তা মানতে পেরেছিলে!
পারলে, সে তো প্রেম নয়!
দুটি অভিমানী হৃদয়ের গোপন অভিসার।।





আঁচড়
খুকু ভূঞ্যা

ছাদে একা,
ভারী বর্ষার মেঘ উড়ছে
ঝিঙেলতার খুব মন খারাপ
তুলসী গাছের গা গরম
আমগাছটা তোকে খোঁজে
সেবার স্বজন বলে হাত বুলিয়ে দিলি--
ও খুব প্রেম বোঝে,বড্ড চাপা, কাঁদতে পারে না
অস্থির হতে দেখি।

নিশ্চয়ই কোনো লাশের কথা লিখছিস?
ডোবায় ভাসছে কোন্ কিশোরী--
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে গিয়ে উর্দি পরা লোকটা ছুঁয়েছিল তার, ছিঃ
আলুমাখা ভাতের মতো কলম তোর
কান্না আসে ভেবে,
এতো শ্রম ঘামের মূল্য কি তুই--

ঘুমের ঘোরে চমকে উঠি
মানুষগুলো সব বাঘ
অক্ষরের হাড় আগলে বসে আছিস চাতলা পুকুরের পাড়ে, একা---


এবং মা

নীলোৎপল জানা


 সকল মেয়েই মা এ কথা কারোর অজানা নয়।


সেই মা যুগে যুগে লাঞ্ছিতা প্রহৃতা 

তাঁর সন্তান-সম নরখাদকের দ্বারা। 

যাঁর বুকের স্তন পান করে এ বিশ্বসংসার এখনো বেঁচে

 তাঁর অপমান লাঞ্ছনা বারংবার;

 যাঁর মুখের হাসি হৃদয়ের ভালোবাসা সাত সমুদ্র পার হতে উৎসাহ জায়গায়, তাঁর কেন এত অবমাননা?

 ভুলে যাই আমরা এই বিশ্বের স্রষ্টার কথা।

অর্থের মিনারে বসে অহংকারে মগ্ন আমরা।

আমরা যখন যে পরিচয়ে বড় হই না কেন-

 আমাদের একটাই পরিচয়,আমরা কোনো মায়ের সন্তান।


 অজানা সংকেতে নেমে আসুক কোনো আঘাত...

 ভেঙে যাক সব অসাম্য,ছোটো-বড়ো ভেদাভেদ,

সৃষ্টি হোক নতুন পৃথিবী;মহাপৃথিবী নামে।


তবু

বকুল জানা   



ঘনঘোর বর্ষায় ভিজছি 
শরীরে ঘামের রেখা মুচছে না তবুও 

চড়া রোদে জ্বলে যাচ্ছে পিঠের চামড়া 
তবু এতটুকু কষ্ট হচ্ছে না আর 

কোলের সন্তান নিয়ে গেল চিতাকাঠে 
শেফালি কেমন নিশ্চুপ তবুও 

আর ফিরবে না কখনো বিকাশ 
তবু স্ত্রীর কোনো আকুলতা নেই 

কত কথার জন্ম প্রতি মূহুর্তে 
নিশ্চল নির্বাক কাটিয়ে দিচ্ছি তবুও 


বিশ্ব বন্দ্যোপাধ্যায়
শান্তিনিকেতন

ঝরে পড়া মিল্কি রোদের ক্যারিশমায়
       রাতফুল জাগছে...
বিসমিল্লায়িত যৌ-সানাইয়ে ডাকছে
       খাজুরাহো শরীর ...
আমার পরজীবী প্রেমবাসায়
  ইচ্ছে বর্ণে লেখা হয় নবীন ফুর্তেমি
আজ... রোমিও রাতের কার্নিভাল এ
     খুব  জ মে গা  রং...
এখন জ্যোৎস্নায়িত আঁচলের চুম্বক থেকে 
 গড়িয়ে পড়ছে নীলবন্ত পৌরষ...আর
 চন্দ্রাবলী পঠন পাঠন শিখিয়ে দিচ্ছে
       থই থই শান্তিনিকেতন...

 
স্বেচ্ছা নির্বাসন   
 পার্থ সারথি চক্রবর্তী 


কেউ চিনতে পারছে না আমাকে 
       পেছন দিকে আজ সবাই অচেনা 
আমি তো সেই রাস্তা, সবাই চলছে 
       আমার বুকের ওপর দিয়ে 
আমি তো সেই নীরবতা, যা সবার বুকে 
        ঠায় বসে আছে পাথরের মতো 
আমি তো সেই পরীক্ষা, যাতে পাশ করতে
         দিনরাত অনুশীলন করে যাচ্ছে 

সেই মানুষটিও চিনতে পারছে না-
যে আমাকে রেখেছিল নীল আকাশের নীচে 
সবুজ ঘাসের ওপর, বাতাসের ঘেরাটোপে 
আমিও আজ মুখ ফিরিয়ে পালাতে চাই
যেখানে কিছুই আর হারাবার ভয় নেই । 


আমার আমি
সঞ্জীব রাহা


সকাল সকাল উঠতে হবে 
ব্যস্ত আমি চিরকাল ,
বাজার করা সাফ সুৎরা
ধরছি এখন ঘরের হাল ।

অফিস গিয়ে কাজের মাঝে 
মুখ গুঁজে দিই ফাইলে তাই ,
কাজের তাড়ায় প্রতিদিনই 
দেরি করে টিফিন খাই ।

কাজের শেষে বাড়ি ফেরা 
বাসে ট্রামে তুমুল ভিড় ,
ধ্বস্ত আমি সারাদিনই  
দেহে-মনে ধরছে চিড় ।

সংসারের এই ঘানির চাপে 
নিত্য জীবন জড়িয়ে যায় ,
আমার আমি কোথায় থাকে 
মনটা তখন শান্তি চায় ।

ভেতর আমি বাইরে আমি 
দুই পৃষ্ঠার দুইটি মুখ ,
প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে 
সিক্ত মনে বেজায় সুখ 

আকাশ বাতাস পাহাড় নদী
খুঁজতে থাকি রতন খানি ,
তোমার ডাকে বুকের ভেতর 
ঝরে পড়ে কান্না খানি ।

দেহে মনে প্রাণের আরাম 
স্বর্গ থাকুক বুকেটা জুড়ে ,
আবার যদি ফিরতে পারি 
ভালবাসায় রাখবো মুড়ে।।


তিতাস
রঞ্জন ভট্টাচার্য


তিতাসের কূল ভরা জল আর বুক ভরা ঢেউ 
যেন নিষ্প্রভ
আগাছা কচুরিপানা গ্রাস করেছে 
নেই মাঝি মল্লার হাঁক।
নিরবতার এক সর্পিল নিদর্শন 
অশ্রুঝরা হৃদয় বিদায়ক করুন কাহিনী 
যত দেখি শুধু মনে পড়ে তোমাকেই 
কোথায় যেন উচ্ছলতায় দুরন্তপনার আকুলি বিকুলি মন 
লগি ঠেলে ভেসে যেতাম অজানার খোঁজে 
তুমি ছিলে সাথী একাকী... 
সব ভয়-ডঢ় উপেক্ষা করে সমাজ শাসন অগ্রাহ্য করে শুধু ভালোবাসার তাবিজ হয়ে...
আজ যেন তোমার মাঝেই দেখি তিতাসের প্রতিচ্ছবি চোখে মনে হৃদয় ভালোবাসার করুন কাহিনী।



২টি মন্তব্য:

  1. ভীষণ ভালো লাগল এই সংখ্যা টি।ধন্যবাদ বিমলবাবু।

    উত্তরমুছুন
  2. শারদীয়া সংখ্যার কবিতা গুলো পড়ে খুব ভাল লাগল ।অসংখ্য ধন্যবাদ রঞ্জন বাবু।

    উত্তরমুছুন