শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২০

অঙ্কুরীশার শারদীয় সংখ্যা ১৪২৭।। কবিতা/ছড়া -(পর্ব-৩)

 



কবিতা/ছড়া(পর্ব- ৩)
---------------------------

 দেবাশিস মুখোপাধ্যায় , অজয় দেবনাথ, দীপক বেরা, কাজী সামসুল আলম, কবিতা ভট্টাচার্য, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, বনশ্রী রায় দাস, শেখ একে এম জাকারিয়া, দীপক বড়ুয়া, প্রদীপ কুমার রায়, বিপ্লব গোস্বামী, কিশোর নাগ






জানালা দিয়ে যতদূর দেখা যায়
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
১.
হেঁটে যাচ্ছে হারুর বউ। হাতে একশো তেল আর পাঁচশো আলু। বৃষ্টি পড়ছে। ছিপ ফেলে বসে আছি। অপেক্ষা  সুতোর।  অসুখের দিন পেরিয়ে ফিরে আসবে ঘরের পুরুষ। মাটি গলছে। খেলতে খেলতে ক্রমশ এগিয়ে আসছে মাছ
ছায়াঘর পেরিয়ে মৃত্যুর আঁক কষবে বলে

জানালা দিয়ে যতদূর দেখা যায়

২.
চোখের নিখিলে ডুবে আছে ভোর। 
কান্না ব্যাকরণ ডিঙিয়ে যায়। সারুর
গান শুনি। ছোট ছোট কাগজের নৌকা সারুর থাকে না। অসুখের প্রাচীর পেরিয়ে যায় স্রোতে। গানের শব্দগুলি ভেসে যেতে যেতে ভেজা
ভেজা কথা কখন কাহিনী যেন অনিঃশেষ

জানালা দিয়ে যতদূর দেখা যায়

৩.
জানালা দেখছে জানালাকে জলের ওপর। আকাশের ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘে
শ্যাওলার রঙ। রান্না হচ্ছে কোথাও। 
সুবাস ঠিক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক
পুরনো কথা মাকে ডেকে নিয়ে আসে। স্বাদ ভরিয়ে তোলে জিভ। সেই লালার ভিতর কোনো অসুখ
নেই। লোহার গারদ পেরিয়ে ভিজে
যাচ্ছে চোখের ডানা 

জানালা দিয়ে যতদূর দেখা যায়

৪.
বাসন মাজার দৃশ্যটি সযত্নে তুলে নেয় জল। কেশবতীর গল্প মেঘ হয়ে পার করছে ছাদ। ছাদের শরীরের ছাঁদ খুব আকর্ষণ করে। কাদাখোঁচা বকের ডানা ছাদ ছুঁয়ে
বুক ভিজিয়ে নেয় পুকুরে। সেখানে
হলুদ আলো তাকে খেয়ে নেয়। বৃষ্টি
পরবর্তী এই জীবনের কোথাও অসুখের দিনলিপি লেখা নেই। চকচকে বাসনের গায়ে তার উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ মুখ মেঘকে ভেংচি
কেটে হাসি ডাকে চোখের

জানালা দিয়ে যতদূর দেখা যায়

৫.
অর্ধেক মানুষ ধরা পড়ে। তার ভিতর বয়ে যাচ্ছে দুঃখের স্রোত। কিছুই করতে পারি না। তার ছায়া
রাস্তায় পড়ে থাকে। হলুদ ফুল ঝরে পড়ে। তার বেদনা এসে বসে থাকে। 
অসুখের দিনগুলো পেরিয়ে যাবার পর তার বাড়ি যাব। হাতের উপর হাত রেখে তুলে নেব সব যন্ত্রণা। এসব ভাবনার গায়ে ঝাঁপিয়ে নামে
একটি বাইক। ছায়া মানবের শরীর কেটে দিয়ে যায়। দেখা না হওয়া একটি অসমাপ্ত গল্প চোখের কালিতে ডুবে থাকে




শূন্য থেকে
অজয় দেবনাথ

চলে যাচ্ছ সময়!
সঙ্গে নিয়ে দিন-তারিখের হিসাব?

কবেই তো ভুলেছে মানুষ যৌথ-জীবন।
মানুষ আদৌ ভুলেছে কি যৌথ-জীবন,
নিজের স্বার্থ ছাড়া?

দূরত্বের স্বেচ্ছাবাসে
নির্জনতার নিরালাবাসে এত কোলাহল!

অভুক্ত অসুস্থ বর্তমান, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।
আলো নিভেছে ক্রমশ… ঘনিয়ে আঁধার
আজব আঁধার!
দিনের আলো পথ দেখাতে ব্যর্থ।

এভাবেই বয়ে যাবে নদী
এভাবেই, নিভে যাবে প্রাণ
নির্ভার অসীম শূন্য…
হয়তো টিকবে তবু কেউ…

এ আঁধার কেটে যাবে ঠিক
লোভ কমবে কি তবু...
শূন্য থেকে হবে শুরু নতুন সময়।




ছায়ামাখা নীড়
দীপক বেরা।
                

সারারাত বিছানায় জেগে থেকে থেকে 
ঘুমের কথা ভুলে যায় ওরা ---
ফুটপাত বস্তিতে ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকা জীবন 
কুন্ডলী পাকিয়ে ঠাসাঠাসি শুয়ে থাকা মানুষ। 

এখনও সারারাত ঘুমহীন জেগে থাকে চাঁদ 
এত কলঙ্ক ক্ষত নিয়ে বুকে, তবু আলো ঝলকায়
ছেঁড়া পলিথিনের আড়ালে তবুও দীর্ঘ ছায়া নামে
দ্রুত রক্ত চলাচলে ঘন ঘন শ্বাস, ওরা ঘর বাঁধে
ফুটপাত সংসার জুড়ে গাদাগুচ্ছ ছেলেমেয়ে
টুকরো টুকরো বেড়ে ওঠা অবিন্যস্ত জীবন 
হাড়গিলে খিদেপেটে দাউ দাউ জ্বলে আগুন 
ওরা দলে দলে তবু শুয়ে থাকে চুপ! 

কলঙ্কিত চাঁদটা মুখ লুকায়
অবশেষে আবার একটা সকাল হয়, 
মুহূর্তে হারিয়ে যায় সবাই জনতার ভিড়ে ---
কিসের টানে যেন, ওরা ফিরে আসে আবার 
পলিথিনের আড়াল করা, সেই ছায়ামাখা নীড়ে!



অভিলাষ 
কাজী সামসুল আলম 

দুপুর বেলা টুপুর মেয়ে, করছিল হইচই 
বারান্দাতে দাঁড়িয়ে আমি 
অকারনে শুধুই ঘামি 
ভাবতে গিয়ে তোমার কথা, একটু উদাস হই 

সন্ধেবেলায় তুলসীতলায়, কাঁসর ঘন্টা শুনি 
আকাশপানে তাকিয়ে ভাবি 
যা আসে সব হাবিজাবি 
ব্যাঘাত ঘটে ভাবনা মাঝে, তারার সংখ্যা গুনি 

ভোরের বেলা ঘোরের মাঝে, স্বপ্ন দেখি শুয়ে 
রাগ কমিয়ে এলে ফিরে 
তোমার দুই হাতটি ধরে 
দাঁড়িয়ে থাকি অনেকক্ষন, তোমার পানে চেয়ে 

তুমি আমি আগের মতো, দাঁড়িয়ে রেলিং ধরে 
দেখব শালিক দোয়েল টিয়ে 
গাইবে তারা শিস দিয়ে 
গুনগুনিয়ে সুর মেলাবে, ওদের সুরে সুরে 




কটা অলস শব্দ 
কবিতা ভট্টাচার্য 

নির্জন গাঢ় রাত 
দপদপ কাঁপে হৃৎপিন্ড 
আকাশে একটি তারা- আমারি মতো একলা 
ফ্যালফ্যাল চোখে চেয়ে থাকলুম 
কটা অলস শব্দের দিকে 

সমস্ত সুখ দুঃখ এলোমেলো বিষাদ 
সেই গোলাপী সন্ধ্যা 
বয়ে যাওয়া পাগল হাওয়া 
হাস্ন্যয়নোয় মাতাল গন্ধ 
মিলিয়ে যাচ্ছে ঝড় বাতাসে
মাথার উপর খোলা আকাশ 
এখনও কালো 
সারারাত জ্বল জ্বলে তারারা ক্লান্ত 
বুকের একটা পাঁজর কনকন করে 

শুধু কটা অলস শব্দ 
সমস্ত স্বপ্ন মুহূর্তে 
ছিনিয়ে নিল 
অসীম নিঃস্তদ্ধতার মধ্যে 
ভেসে যায় মনভূমি ।





অমরত্ব   

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

এখনও বসন্তের মেঘলাবিকেলে আপনি আসেন
বাসন্তী পোশাকের ফিনফিনে অস্তিত্ব বেশ বুঝি
প্রিয় নদীর চিকচিক স্রোতের মতো আপনার কপালে
আজও ব্রীড়া আর ঝুরোচুলের লুকোচুরি।
এইটুকুর জন্য ক্যানভাস জুড়ে কত রম্যকাহিনি.....

বিরল স্নায়ুরোগে পঙ্গু এক কিশোর কখন কীভাবে
স্টিফেন হকিং হয়ে ওঠে আপনি জানেন না
জানার কথাও নয় তবু
জলের ভেতর অন্ধকার তারপর গভীর থেকে গভীরতম
দূর মহাকাশে একটা নয় বেশ কয়েকটা মহাজাগতিক
শূন্যগহ্বর নিয়ে তার খেলা আর গণিতপাত
গণিতের সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে স্বপ্নময় ধ্রুবত্বে অবিচল

অমরত্ব সবার জোটেনা স্টিফেন হকিং অমর।
কিশোরটি এখনো স্মৃতি গোনে মহাকাশ ঘাঁটে আর
কয়েকটি অসমীকরণের উত্তর খোঁজে

সে কিন্তু অমর হয়নি।



বেসুরো গান 
বনশ্রী রায় দাস

আজ আর আসবে না ভাস্কর ,পড়ে আছে 
ছেনি হাতুড়ি ,কে করবে মূর্তির চক্ষুদান ?
ক্ষীণ তুণে আঁধি ঝড়ের দাপট, অসুস্থ সুর 
দুটো গাছের মাঝে উপেক্ষিত ক্ষুধা-দহন।


আকাশ ছোঁয়ার আশা সমূহ টাইপ করে 
চৈত্র খরায় ঝলসে যাওয়া প্রেমিক ঠোঁট ।

সখ্যতার ভাঁজে পুষে রাখে অসুখ,অজীর্ণতা
ঢেঁকিও স্বয়ং ঢুক পড়েছে মিছিলের লাইনে,
হায় রাতদিন ঝুরঝুর খসে পড়ে মৃত-পাতা ।





        


পুজোর রানি
শেখ একেএম জাকারিয়া

ঢাক কুড়াকুড় উলুধ্বনি
চলছে ডানে-বায়,
পুজো এলে জোয়ান বুড়ো
মনখুলে গায় গান।

প্রসাদ নাড়ু মিঠাই পায়েস
কত্ত লোকে খায়,
শারদ আলো সবার ঘরে
মন জুড়িয়ে যায়।

দুর্গা লক্ষ্মী সরস্বতী
গণেশ আর অসুর,
দেখার পরও মিঠে না সখ
রাত পেরিয়ে ভোর।

পুজোর রানি দুর্গা দেবী
লড়াকু এক বীর,
অশুভকে হটান তিনি
ছুঁড়ে শান্তির তীর।


এখানে  ওখানে   

দীপক বড়ুয়া


এখানে আকাশ নীল, নীল নীলে ঝিলমিল
এখানে সূর্য আছে,আছে রোদ কড়া
এখানে শিশির আছে, উড়েউড়ে নাচে
জ্বলজ্বলে তারা হাঁটে, যায় নাতো ধরা!

ওখানে ফুল পাখি, মেঘনা, সুরমা নদী
সবুজের কণা হাসে স্বপ্নীল  চারিপাশে
মা মাটির ধুলো ভাসে সবুজ মাঠে
অন্তর  ছুঁয়ে আছে, জুঁই বেলি শরতের কাশে!

এখানে, রূপে ঝরা, চকচকে চাঁদ
মিষ্টি  স্নিগ্ধ আলো ধবধবে
এখানে সূর্য ডোবে, আঁধার গর্বে দোলে
স্বপ্নীল বৈভবে থির অনুভবে!

ওখানে বৃষ্টি নামে টুপটুপটুপ
ঝুপঝুপ ঝড়ে ভাসে রঙধনু গাঁও
সমুদ্দুর ঢেউ রাগে, রাগে অনুরাগে
দূর দেশে ভেসে দেয়,প্রিয় ডিঙি না'ও!

এখানে ওখানে, নয় কোন ভাগ
আকাশ, পৃথিবী, প্রকৃতি, কারুকাজ
শৈল্পিক ছন্দে রবে চিরখন
বদল হবেনা কভু, মিহি রঙে,- সাজ!




লুকোচুরি

প্রদীপ কুমার রায়   




পায়ে পায়ে অনেকটা পথ পেরিয়ে

চলে এসেছি তোমার সীমানা ছাড়িয়ে।

কাঁটাতারে আজও ঢাকা সীমান্ত মুখ

এক পাড়ে প্রতীক্ষায় অশান্ত অসুখ।

চোরাবালিতে পা রেখে চলমান

কোরাসে গান,"শুধু তোমাকে চাই"

নীরব অভিমানে সরে এসেছি তাই।


যত সুন্দর সাজানো থাক চলচিত্রখানি,

জীবনের ধারাপাত সম্পূর্ণ হবে না জানি

সত্যিই কি পূর্ণ হয় পায়ে চলা পথ

যোগ্য সম্পূর্ণ করে ফিরে আসে জয়রথ।

আশা ভরসার যুগ্ম হাঁড়িকাঠে

রাত কেটে দিন হয়, খেলা জমে ওঠে।

জীবন যন্ত্রনার চাপা কণ্ঠস্বরে

একটু একটু করে হতাশা চুঁইয়ে পরে।


এ অতি সরল সত্য খোলা আকাশ তলে

মনের শামিয়ানায় , আঁধারে

জোনাক জ্বলে।


মায়া মোহে মনে মনে চলে লুকোচুরি

তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে উড়ে চলে ঘুড়ি।

অভিমানে পথ চলা শুরু সেই থেকে

পায়ে পায়ে এই পথ গেছে এঁকে বেঁকে।

কাঁটা তার পেরিয়ে চলে এসেছি দূরে

তুমি ভালো থেকো, আপনার নীরে।



খোকার বায়না

বিপ্লব গোস্বামী


দুদিন হতে খোকন সোনার
মুখ হয়েছে ভারী,
মায়ের কাছে বায়না তার
যাবে মামার বাড়ি।

মামার বাড়ি যাবে সে
চড়ে রেল গাড়ী,
সঙ্গে নিবে বাবুর হাটের
রসগোল্লার হাঁড়ি।

মামা বাড়ির দক্ষিণ পাশে
বিশাল খেলার মাঠ,
খেলবে তাতে নানান খেলা
নাইবে নদীর ঘাট।

পশ্চিম দিকের পুকুর পাড়ে
আম বাগানে মাঝে,
শুনতে পাবে পাখির কূজন
সকাল দুপুর সাঁঝে।

মামা বাড়ি ভারী মজা
পড়ার চাপ নাই,
খেলা ধুলা শুধুই মজা
বয়না ধরেছে তাই।


নৈঃশব্দের কবিতা

কিশোর নাগ

যত ভাবি এই শেষ 
থাকে তবু তার রেশ
         এখনও তো হ'ল না শেখা

পরিচিত কিছু ভুল
হ'ল নাতো কই ফুল
          নৈঃশব্দের কবিতা লেখা  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন