বিপদের মাথায় আষাঢ়
তোমার ভারী-বর্ষণে অনুরক্ত ছোট্টোবেলা
থইথই পানি ফেলেছি বড়শি কই শিং গেঁথে
রেঁধেছি মসলা ছাড়া আগুন-বিহীন চুলো
উঠেছি চেঁচিয়ে ধুলোবালি গৃহস্থালি হুলুস্থুল।
নদীনালা খাল-বিল পুকুর-ডোবা জমির-ক্ষেত
সবাই যেন এক সারিতে নেই কোনো ভেদাভেদ
সবুজ হাওয়া মনের ভেতর এক তেজি ঘোড়া
ভয়কে করেছি জয় মেলেছি মনে ভয়হীন ডানা।
ডুবে ডুবে ডুব সাঁতারেই যেন দিয়েছিলাম হারিয়ে
শাপলা এবং শালুকের লোভে পানকৌড়িকেও
কত বিঁধেছিল পায়ের তলাতে জিওল মাছের কাটা
ছোট্টো বন্ধুর গড়িয়েছিল গাল বেয়ে মুক্তো দানা।
হইহই করে হাতে হাত রেখে কদম কুড়াতে গিয়ে
পিছলে গিয়ে করেছি কত গড়াগড়ি কাঁদার মাঝে
তুলে আবার কপালে পরিয়েছে কাঁদার তিলক
গাল ফুলিয়ে কেঁদেছি কত হয়ত ছিল ভালোবাসা।
এই আষাঢ়ে শুধু হাঁটছে ফেলে আসা পথগুলো
স্মৃতিচারণে থাকছে মন মনের কপাট খুলে ঘরে
সময় রেখেছে অনাগ্রহী মৃত্যুর চুক্তি ঝুলিয়ে
মনে হয় শুধু সব ঋতু যেন আমার মৃত্যুর দূত।
ইঁদুর
অন্য গ্রহে মানুষকে স্থানান্তর করতে যখন ব্যস্ত
হৃদয়ে তখন ঝুম বৃষ্টি
মৃত অন্তরকে ঢাকঢোল পিঠিয়ে ঘোষণা করা
সবুজ পত্রে অক্সিজেনের বুদবুদ সমারোহ
তবুও প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে চাপধরা ব্যথা
বরফের ভেতরে পৃথিবীর আয়ু
চারিদিক জীবাণুর জাঁকজমক মহড়া।
অন্যদিকে দুইয়ের মধ্যে এক
ইঁদুররা গণতন্ত্র মন্থনে অমৃতপানে অমর
হাতের মুঠোয় মৃত্যুর সমনজারি বন্দি করে
বুনো ঘোড়ার মতোই ভাগবাটোয়ারায় নিযুক্ত
কিশোর কালকে নিয়ে।
লিস্টে রয়েছে অনেক মোরগ-মুরগি কুকুর-বিড়াল
ও-ই গুলো শুধুই নাটকের গর্ভাঙ্ক
ভেতরে ভেতরে ইদুরের পোয়াবারো।
ক্ষুধার্ত পেটের বিক্ষোভ মিছিল
পরোয়াহীনভাবে ছুটছে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে
শুধুই একটু ক্ষুধা নিবারণের প্রয়াসে।
পড়ন্ত বিকেল
পড়ন্ত বিকেলেই পেয়েছি ঝড়ের আভাস
নিগুঢ় নিস্তব্ধতায় ভরা সমস্ত আকাশ।
গোধূলির লালিমা মুছেছে কখন কে জানি
অন্ধকারেই ছেয়ে রয়েছে সবুজ বনানি।
তখনও আকাশের অন্তরে উঠেনি নক্ষত্রমালা
শলাকার আগুনেই বাড়ছে দু'ওষ্ঠের জ্বালা।
ধেয়ে এসেছে ঝড়ো বাতাস বাড়ছে মাদকতা
গ্লানির অনলে পুড়ে যায় জগৎ দেবতা।
টুপটাপ বৃষ্টির নূপুর তুলেছে তুফান
হরিণী হারিয়ে ফেলে বুঝি সমুদ্বয় মান।
বেনোজল ভাসিয়ে নিয়েছে চাঁদের বসন
আদিমতায় মিটিয়ে নেয় মনের রসন।
অঝোর বর্ষণেই স্খলিত কুসুমকানন
নুয়ে পড়ে ক্লান্ত দেহলতা যখন তখন।
সশ্রদ্ধ
জীবনকে ঘিরে স্বপ্ন দেখে
ছুটে যাওয়া কাল
আঁকড়ে ধরতে চায় বিদ্যাবত্তার আঙুল
জ্ঞানপিপাসার লোভে।
বাসনার কাছে পরাজিত বুদ্ধিমত্তা
ঘড়ির কাটা আপোষহীন
পরাজিত স্বপ্ন ধুঁকে ধুঁকে জ্বলে
সময়ের কাছে।
তবু ছুটে চলে তটিনীর বাঁকেবাঁকে
স্বপ্ন ভরা দু'টো চোখ
কিছুটা সময় এখনো রয়েছে
সূর্যাস্তের।
সশ্রদ্ধ উৎসর্গ
পরাজিত সৈনিকের
জয়ের পতাকা ঝড়োমেঘ
কিংবা জলচ্ছ্বাসে যায় যদি ভেসে
তবু করবেই মুষ্টিবদ্ধ।
ছুটে যাওয়া স্বপ্নগুলোর এ ছিল
কল্পনা-বিলাস।
উন্মনা অন্তর
অনন্তকালব্যাপী একত্র-আবাস দৈবে নেই কারো
কখনো কোথাও।
ধীরপায়ে আলতো উশৃঙ্খলতায়
আক্ষেপে গুটায় হিমানী চাদর।
এলোমেলো চুল বিস্তৃতি ভুবন
অধরে চিত্রিত বাংলার নকশা।
ফাগুন ছুঁয়েছে অবনির-বুক উড়ে উত্তরীয়
শাল্মলির-ডালে দোদুল্যমান শিমুল,
ফাগুনে আগুন কোকিলের কণ্ঠে দরদিয়া গান
উদাস বাতাস উন্মনা অন্তর
কি জানি কেন যে...
বিদায়ী বাঁশির সুর না-কি আগমনি গান
কার জন্য এই উচাটন!
ভুবনজুড়ে শুধুই খোঁজে দু'চোখ আমার
গাণিতিক প্যাঁচে কয়েদি এখন
প্রশ্নের উত্তর।
অভিনন্দন বন্ধু
উত্তরমুছুনঅশেষ কৃতজ্ঞতা সুহৃদ।
মুছুন