ছোট ভাই
ছোট ভাই মানেই স্নিগ্ধ সমীরণ
প্রখর তপন তাপে,
ছোট ভাই মানেই উষ্ণ পরশ
শরীর যখন হিমেল হাওয়ায় কাঁপে।।
ছোটবেলার দিনগুলো আজ
কেবলই মনে পড়ে,
আম কুড়োতাম দু'জনে মিলে
বৈশাখের মাতাল ঝড়ে।।
অপু-দুর্গার মতোনই ছিলাম
শৈশবের মনোরম বেলায়,
খেলাঘর সাজাতাম
বকুল ফুলের মালায়।।
তার কথায় জানিনা কেন
দুচোখ ভরে জলে,
তোমরা সবাই বলবে জানি
এ জল স্নেহের ফলে।।
দিদি-অন্ত প্রাণ তার
বড্ড আকুল করে,
প্রীতির কথা সদাই থাকে
তার গলার স্বরে।।
লকডাউনের দুর্দিনে আজ
সময় কাটে ত্রাসে,
ছোট ভাইয়ের মিষ্টি মুখটা
চোখের সামনে ভাসে।।
সে যে আমার রাজা ভাই
চাঁদের মতো তার মন,
হাতে তার নাইবা থাকল
হাজার-লাখো ধন।।
হৃদয়ের ধনে ধনী যে ভাই
কাগজের নোটে নয়,
সকল দিদির পাশে যেন
এমনই ভাই রয়।।
সার্থক হোক ভাইফোঁটা আর
রাখীর অটুট বন্ধন,
ভাই-বোনের অপার প্রেমে
যাক বিষাদ - ঘুচুক ক্রন্দন।
পুরনো বন্ধু
পুরনো বন্ধু মানেই আবেগের স্রোত
শুধু স্রোতে ভেসে যাওয়া -
উত্তর বাতাসের রিক্ততায়
হৃদয়ে তখন যেন দখিনা হাওয়া।
পুরনো বন্ধু মানেই -
হাসিঠাট্টা- জমজমাট আড্ডা,
হাতটা চেপে ধরা -
প্রকৃতিতে হোক না তখন
শ্রাবণের অবিরাম ধারা কিংবা
গ্রীষ্মের দাবদাহেভরা খরা।
কবেই তো কালামজী বলেছেন ::
"একজন ভালো বন্ধু একটি পুরো
লাইব্রেরির সমান"।
ভালো বন্ধু মানেই তাই বুঝি
সমস্যার সমাধান হয় যে অনেক আসান।
পুরনো বন্ধু মানেই প্রাণের টান
একতারার সুর আর ভাটিয়ালি গান।
নিজে ভালো বন্ধু হলে
বন্ধু পাওয়া সহজ হয়,
বন্ধুত্বের শ্রেষ্ঠতায় অট্টালিকা আর
পর্ণকুটির যে এক হয়ে যায়।
এতদিন পরে
এতদিন পরে জানতে চেয়েছো তুমি
কেমন আছি আমি আর
আমার কিছু কথা -
শুনবে তুমি?আগ্রহভরে শোনাব তোমায়
মনে আবার পেয়ো না যেন ব্যথা।
জীবনসংগ্রামে ক্লান্ত আমি,
অস্থিরচিত্তে নেই কোনো সান্ত্বনার বাণী
তাই অশান্ত হৃদয়খানি।
ভালোবাসি কবিতা -
কবিতা আসে না আর,
চেষ্টা করেও বারংবার।
কবিতা নিয়েছে ছুটি,
ব্যস্ত আমি খুঁজে চলেছি
পেটের দানা দুটি।
তাই সুকান্তবাবুর কবিতার লাইন
করলাম আজ ধার,
পথ পাইনা আর -
মানলাম তাই হার।
" ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়
পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি "।
স্বপ্নময় কিশোর
মাথার উপর অনন্ত প্রসারিত নীল আকাশ
নিন্মে শ্যাম-শোভাময়ী ধরিত্রী,
তারই মাঝে ছোট্ট একটি গ্রাম,
দারুচিনির গন্ধে সেখানে
বাতাস হয় না উতলা-
সেখানের বাতাসে বুনোফুলের গন্ধে
ভ্রমর আর মৌমাছিদের খেলাধুলা।
সেখানে থাকে এক স্বপ্নময় কিশোর -
যার জীবন শুধুই সংঘর্ষময়।
তবুও দুচোখে তার বড়ো হওয়ার
অদম্য আকাঙ্ক্ষা পরিপূর্ণময়।
সেই আকাঙ্ক্ষার কল্পলতায় জড়ানো
দৃষ্টি তার এগিয়ে চলে বহুদূর।
সবুজ বনবীথির মতো
জীবন হয়েছে তার সবুজে ভরপুর।
তার জীবন নিয়ে কাব্য লেখা যায়,
তার জীবন নিয়ে এখন
উৎসবের আলো জ্বালানো যায়।
তার জীবন ঘোষণা করে
কেবল মানবের জয়-
নিজের সুখের জন্য করেনি সে
তিলার্ধ সঞ্চয়।
এভাবেই বুঝি সফল জীবন হয়!
শেষ ইচ্ছে
তুমি যখন কাজী নজরুলের মতো
তোমার প্রেয়সীর অঙ্গ-সজ্জায় ব্যস্ত ছিলে,
আমি নিভৃত চিন্তনে-মুদ্রিত নয়নে
পড়ে ফেলেছিলাম তোমার সেই
বধূ বরণের অপূর্ব কবিতাখানি।
জমিয়ে রেখেছিলে তোমার অন্তর ভান্ডারে
কত না অমূল্য রতন!
শত চেষ্টাতেও পারব না আমি
লিখতে তোমার মতন।
তোমার প্রেমের মদিরা ঘোরে
থাকুক তোমার দয়িতা তোমার বাহুডোরে।
আমি না হয় অস্থির-মতি হয়ে রইব জেগে
তোমার কবিতা পড়ার তরে।
আমার মুখপানে চেয়ে নাইবা বললে তুমি
নাইবা লিখলে কিছু আপন খেয়ালে-
অধরা থাক আমার বিলাস স্বপন
তোমার মুখে ডাকা 'প্রিয়া' সম্ভাষণ।
যে স্মৃতি করেছ চিরতরে বিসর্জন
আজ তার নেই কোনো প্রয়োজন।
শুধু আমার অন্তিম সমাধি-শয্যায়
তোমার দুটো আবেগভরা প্রীতিকথা
আমার নিরুত্তাপ কর্ণমূলে যেন বাজে,
থেকো তুমি চিরকাল আয়ুষ্মানের সাজে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন