গোলাপ বাগান
এখন আর রাত্রি কোনো দীর্ঘশ্বাস নয়
বনফুলের পাপড়িতে ঝরে পড়া গাঢ় গভীর জোৎস্ন্
আমি তো আজন্ম জেনে এসেছি
জোৎস্নার জন্ম রহস্য প্রগাঢ় দুঃখ।
শিথানের পাশে থাকা চাঁদ
শুধু জানে গোপনে বেড়ে ওঠা জলের শিল্পকলা
আমি তো আজন্ম দেখেছি
অশ্রুকণায় জ্বলে থাকা আলো ।
রাত জাগা চন্দ্রমল্লিকা
অলক্ষ্যে লিখে রাখে রাত্রির অন্ধকার
আমি তো আজন্ম বুঝেছি
বেদনাই গোলাপ বাগান।
পাথর প্রেম বুঝে না
হৃদয়ের ব্যবসা ছেড়ে পাথরের ব্যবসা ধরেছো
প্রত্যুষে শপথ ছিলো শব্দের কারিগর হবার
ইচ্ছেরা এখন রুপান্তরিত কঠিন শিলায়।
বাণিজ্য বেসাতিতে লক্ষ্মী,
লাভের খেরোখাতা শূণ্য সঞ্চয়।
পাথর প্রেম বুঝে না,
হৃদয় ভেঙ্গে গেলে প্রেম ক্ষয়ে যায়
পাথর ভেঙ্গে ভেঙ্গে প্রেমের সমাধি গড়া যায় ।
পাথর বেদনা বোঝে না,
মানচিত্র চেনে না, সভ্যতার দহন চেনে
বেদনার রক্ত, নখরের চিহ্ন, কালো মখমল
ঝাড়বাতি, ঝুলন্ত প্রদ্বীপ জানে।
প্রাসাদের দেয়ালের ঘন অন্ধকারে,
পাথরে, পাথরে গোপন কান্নারা বিলাপ জমায়
ইতিহাস রক্ত হয়ে ফোটে শ্যওলা পরা শিলায়,
শৌর্য –বীর্যের নিচে চাপা পড়ে গোলাপ কুড়ি।
পাথর প্রেম বুঝে না, বেদনা বুঝে না
পাথরে প্রাণ নেই, প্রায়চিত্ত আছে ।
এখন সঙ্গোপনে সাজাই
এখন সঙ্গোপনে সাজাই নিজের মৃত্যু।
পূর্বসূরীদের মতো আমিও মৃত্যু ভালোবাসি।
লোবানে ঢেকে রেখে পূর্ব মৃত্যু, ধ্বংস, কফিন
স্তুপাকৃত অতীত, পুরার্কীতি নষ্টমায়া
লোভী বেড়ালের মতো শুকি নতুন মৃত্যুর ঘ্রাণ ।
ব্যালকনিতে জমা রাখা সুখ, দীর্ঘশ্বাস, নির্জনতা
ধুয়ে দিই মৌসুমী বৃষ্টিকণায়,অনাবাদী জলে
পূর্বসূরীদের মতো আমিও মৃত্যু ভালোবাসি,
পাপোষে পাপের ক্রিস্টাল ধূলি ঝেড়ে
ফিরে আসি মৃত্যু মাদকতায়, প্রসন্নসন্তাপে।
রাংতার আগুনে ঝালাই করি সুখ, প্রিয়মুখ, বিস্ময়
কবিতার মলিন প্রচ্ছদে ঢাকিঅবিশ্বাস পূণ্য, প্রণয়
অহর্নিশ পান করি মৃত্যুর অমৃত নীলবিষ,
পান করি নদী, শর্বরী, জোৎস্না, আগুন।
নিশাচর পাখির মতো খুটে খাই অন্ধকার।
অভিশপ্ত নাবিকের মতো বারবার বৃত্তাকার
ঘূর্ণিপাকে মৃত স্কাইলার্কের মালা পরে
মৃত্যু উপত্যকায় চাটি জীবনের নোনা স্বাদ।
পূর্বসূরীদের মতো আমিও মৃত্যুর নেশারু
মৃত্যুই জাগিয়ে রাখে জীবনের বিশুদ্ধ সংরাগে।
নারী
কেউ বৃক্ষ হতে চেয়ে ছিলো
কেউ নদী, পাহাড় ,সমূদ্রের নীল
কেউ হতে চেয়েছিলো নিশব্দ কবর।
হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালা হতে চেয়ে ছিলো কেউ
রোদ্দুর হতে চেয়ে ছিলো অমলকান্তি
আমি কি হতে চেয়ে ছিলাম?
খুব শৈশবেই দেখতাম
বেড়ে যাওয়া বিলিরুবিনের মতো
চায়না নিলু কিংবা সাথীর হলুদ মাখা মুখ
ব্যাপিস্ট গ্রীর্জার পাশে দাঁড়িয়ে শুনতাম
আলাতুন নাহারের কন্ঠ- “প্রভূ অ্যা শুনি পুজিন
তম আন্দামানে গান পাড় চেদাম”
কেউ কেউ বলতো -মেয়েটা নষ্ট।
পুরু চশমা চোখে নিবিষ্ট মনে কাঁথা সেলাই করতেন কচির মা।
ফোকলা দাতে ঘোলা চোখে তাকিয়ে বলতেন- বুঝলে মনা,
এভাবেই গাঁথি রাখতি হবি সংসার
দুই বেনী দুলিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে
আসমা বলতো- আমি সংসার করবো না।
তবে কি তুই মাগী হবি?
নীল নীল রাতে মা গল্প শোনাতেন
সীতা বিবি মরিয়াম, মাদাম তেরেসা।
কপাল চুমে বলতেন- সোনামনি তুইও হবি একদিন
কি হতে চেয়েছিলাম আমি
আমার স্বপ্ন শৈশব, নির্বোধ কৈৗশর আর নতমুখ যৌবনে
কি হতে চেয়েছিলাম আমি
আমি কি জানতাম
নারী হতে পারে অন্য কিছু ছাড়া...
আলো দেখি না
আব্বা ভোররাতেই ডেকে বলতেন,
জানালা গুলো খুলে দাও না কেন
দরজাটা খুলে দাও।
সকালের হাওয়া আসুক, আলো আসুক।
আব্বা আপনি ঘুমান এখনও অনেক রাত ’
রাত কোথায়? এই তো কত আলো।
মাঝে মাঝেই আমাকে তাড়া দিতেন-
বসে আছো কেন?
মেহমানদের শরবত এনে দাও
তখন জানালায় ঝিম রোদ,খা খা দুপুর।
মানুষ কোথায়? সানসেটে বসা শুধু দুটো কাক
আব্বা আপনি কি যে বলেন- কোথায় মেহমান’
প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে তখন বলতেন-
‘বাড়িতে জেফত হচ্ছে। উঠান ভরা মানুষ
বৈঠকখানায় দস্তরখানা বিছিয়ে সবাই বসেছে
মেহমানরা ঘরে পাতা দই খাচ্ছে।
আর তুমি কিছুই দেখো না?’
শেষ বয়সের ছানি পড়া চোখেও
বাবা আলো দেখতেন, মানুষ দেখতেন
আমার ঝকঝকে তরুণ চোখেও
আলো দেখি না, মানুষ দেখি না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন