মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০

সাহিত্যিক অক্ষয়কুমার দত্তের জন্মদিন শ্রদ্ধা ও স্মরণেঃঃ দীপক বেরা



সাহিত্যিক অক্ষয়কুমার দত্তের জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও স্মরণেঃঃ দীপক বেরা 
 অক্ষয়কুমার দত্ত ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার নবজাগরণ যুগের অন্যতম লেখক ও ধর্মচিন্তাবিদ। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই  জুলাই বর্ধমান জেলায় নবদ্বীপের কাছে চুপী গ্রামে। তিনি ছিলেন পীতাম্বর দত্ত ও দয়াময়ী দেবীর কনিষ্ঠ পুত্র। প্রখ্যাত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন তাঁর নাতি। 



শৈশবে তিনি পিতাকে হারিয়ে অতি দারিদ্র-দশার মধ্যে প্রতিপালিত হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি দীর্ঘকালব্যাপী নানাবিধ অসুখে ভুগেছিলেন। ওরিয়েন্টাল সেমিনারীতে বছর দুই পড়ার পর পিতৃবিয়োগের ফলে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা স্থগিত হয়ে যায়। এরপর তিনি অর্থোপার্জনে উদ্যোগী হন। তিনি নিজের চেষ্টায় সংস্কৃত, ফারসি, জার্মান প্রভৃতি বিভিন্ন ভাষায় গভীর পান্ডিত্য অর্জন করেন। মাত্র ১৪ বৎসর বয়সে তিনি 'অনঙ্গমোহন' নামক কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। একটু বড় হয়ে তিনি ঈশ্বর গুপ্ত সম্পাদিত "সংবাদ প্রভাকর" নামক পত্রিকার জন্য ইংরেজি সংবাদপত্র থেকে প্রবন্ধাবলী বঙ্গানুবাদ শুরু করেন। এইভাবে তাঁর গদ্য রচনার সূত্রপাত। 



১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি তত্ত্ববোধিনী সভার সভ্য হন এবং কিছুদিন এই সভার সহ-সম্পাদক ছিলেন। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে তত্ত্ববোধিনী পাঠশালার শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন। 1841 খ্রিস্টাব্দে তত্ত্ববোধিনী সভা থেকে তাঁর রচিত বাংলা ভূগোল প্রকাশিত হয়। ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে টাকির প্রসন্নকুমার ঘোষের সহযোগিতায় 'বিদ্যাদর্শন' নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। দু'টি সংখ্যার পর পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। 

১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬-ই আগস্ট তারিখে তাঁর সম্পাদনায় ব্রাহ্মসমাজ ও তত্ত্ববোধিনী সভার মুখপাত্র "তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা" আত্মপ্রকাশ করে। রচনাসম্ভার ও পরিচালনার গুণে পত্রিকাটি শ্রেষ্ঠ বাংলা সাময়িকপত্রে পরিণত হয়। পত্রিকাটিতে তত্ত্ববিদ্যা, সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব, বিজ্ঞান, ভূগোল প্রভৃতি নানা বিষয়ক প্রবন্ধ থাকত। সচিত্র প্রবন্ধও থাকত। স্ত্রী-শিক্ষার প্রসার ও হিন্দু বিধবাদের সমর্থনে এবং বাল্যবিবাহ ও বিবিধ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যুক্তিবহুল বলিষ্ঠ লেখাও এতে প্রকাশিত হত। নীলকর সাহেব ও জমিদারদের প্রজাপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি এই পত্রিকায় নির্ভীক ভাবে লেখনী চালনা করেন। দীর্ঘ ১২বছর এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। 



১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দের ২১-শে ডিসেম্বর তারিখে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অপর ২১ জন বন্ধুর সঙ্গে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য এই দলই প্রথম দীক্ষিত ব্রাহ্ম। বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদে বিশ্বাসী অক্ষয়কুমার বেদের অভ্রান্ততা স্বীকার করতেন না। ব্রাহ্মসমাজে সংস্কৃত ভাষার পরিবর্তে বাংলা ভাষায় ঈশ্বরোপাসনার তিনি অন্যতম প্রবর্তক। 

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭-জুলাই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কলিকাতায় নর্ম্যাল স্কুল স্থাপন করলে, অক্ষয়কুমার ১৫০ টাকা বেতনে প্রধানশিক্ষকের পদে নিযুক্ত হন। 

"ভারতবর্ষীয় উপাসক-সম্প্রদায়" নামক পান্ডিত্যপূর্ণ  গবেষণা গ্রন্থটি তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি (১ম ভাগ ১৮৭০ ২য় ভাগ ১৮৮৩। গ্রন্থখানির সুদীর্ঘ উপক্রমণিকায় তিনি আর্যভাষা ও সাহিত্যের প্রধান শাখাত্রয় (ইন্দো-ইউরোপীয়, ইন্দো-ইরানীয় এবং বৈদিক ও সংস্কৃত) সম্বন্ধে গভীর পান্ডিত্যপূর্ণ আলোচনা করেন। 



১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮-ই মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন