অর্ণব আশিক
সম্পর্কের ধারাপাত
সময় বড়ো অদ্ভুত
মুছে দেয় পদচিহ্নমালা
খুব যত্নে রাখা সম্পর্কও;
বেঁধে রাখা মন শুধুই দোল খায়
ভুলে যায় চলার কথা,
জানেনা কোন জল কীরকম।
বাঁধন খুলে দিতে হয়
যেভাবে খুলে দেয় ভোরের আলো
বন্ধ রাখা দরজা সব সব.
সময় মাপুক সম্পর্কের ধারাপাত...
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
সত্য জেগে থাকে
সত্য জানা বড়ো কঠিন
পর্বতের মতো ঘাড়ে তুলে নিতে হয় বহু ভার
বহু কষ্ট নিতে হয় প্রাণে;
পর্বত বেয়ে নেমে আসে জল, কঠিন দুর্গতি বেয়ে সত্য
জল রূপ নেয় ঝর্ণার, মিথ্যা পরিশুদ্ধ হয় সত্যতে
ঘনান্ধকারেও সত্য জ্বলে ওঠে
সূর্যের মতো আলো দিতে।
বয়সের ভারবাহী মানুষ,
কুড়ায় জীবনের ধুলো, দেখে স্বার্থের সাম্রাজ্য
বেড়ে উঠে ঈর্ষার ভ্রুকুটিতে
দেখে ভালোবাসা থেকে ছিন্ন হয় রক্তের বীজ, আপনজন;
ফুলের পাপড়িতে জমে বিষ, ঘৃণা
পড়ে থাকে শূন্য ময়দান, পোড়া ছাই
তবু সত্য জেগে উঠে জীবনের মোহনায়।
সত্য জানা বড়োই কঠিন
স্বার্থ সচকিত চতুর্দিকে, অকৃতজ্ঞতা সর্বদা চুরমার করে,
ওলোটপালট করে সব
ভুতুড়ে জমিন স্পর্শ করে প্রতিদিন
ছুরি বিঁধে সরল জমিনে।
তবু সত্য জেগে থাকে
পার্বত্য নির্ঝর।
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
মৃত্যু অনিবার্য, ভালোবাসাও তাই
চূড়ান্ত ভালোবাসা বলে কিছু নেই
কিছুটা আবেগ কিছুটা পাওয়ার আকাঙ্খা
দূর থেকে চাঁদ দেখার মত
এই হলো ভালোবাসা।
ভালোবাসা মানে সারা জীবন কষ্ট
না পাওয়ার কষ্ট, পেয়ে হারানোর কষ্ট
তবুও ভালোবাসে মনুষ
না জেনেও মৃত্যুকে যেমন।
মৃত্যু অনাবিল ভালোবাসা জীবনের।
মৃত্যুই শুধু
তাড়াতে তাড়াতে নিয়ে যায় মানুষকে
পরিপূর্ণ জীবনের দিকে
অপূর্ব বাঁচোয়া হয়ে, ভালোবাসা যেমন।
মৃত্যু অনিবার্য, ভালোবাসাও তাই।
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
ক্রান্তিকাল
জেগে থাকে দিন-রাত,
চতুর্দিকে বিপন্ন মানুষ
আড়মোড়া ভেঙে উড়তে চায়
আঁধারের পাখি, মনুষ্যজীবন।
এ এক ক্রান্তিকাল
অন্ধকার দুর্দিন হানাদেয় প্রতি ঘরে
থাবা তোলে হাহাকার
দূর্বিষহ জীবন
আঁধার চিরে ঘুরতে থাকে-
স্বপ্ন-ঘোর মানবতা
জীবনের দু'দিকে গভীর খাদ...
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল
শেফালির জীবন
সরু রাস্তার পাশে পান বরজ
এক ধারে শেফালির ঘর
শেফালির মেয়ে কইতরি ঘুটি দেয় বসে
ছেড়া জামা, নাকদিয়ে শানকি ঝরে
রোদে হাসে জীবনের সর।
মাস কলাই, মশুরি ও মুলার ক্ষেত
কী অহংকারে ফুটে আছে হলুদ ফুল
শর্ষে ক্ষেত ভরে, পাশে দাঁড়ানো খেজুর গাছ
রস পরে টুপটাপ, চাষি সাদা মুলা রাখে ঝাঁপিতে
যেন কবরে রাখে শেফালির বরের কাফন।
করিম মাঝি শেফালির বর
ইলিশের জালে পাওয়া গেল তারে
মহাজনের নায়ে ছিল ঝড়ের রাতে
তারপর ইতিহাস, শেফালির জীবন শুরু।
মহাজন বলে আমার ঘরেই থাকো
মেয়ে নিয়ে, খেতে পাবে
করিমের বউ তোমরা আমারই মানুষ
যাবে কোথা একা একা মেয়ে নিয়ে।
শেফালি কামলা দেয় মাঠে
ছেড়া কাপড় শীর্ণকায় দেহ
কইতরি ঘুটি দেয়, শীতের সকালে
যদিও দেশ গেছে উন্নয়নে ভেসে;
এদের শূন্য পেট ভরেনা দু'মুঠো অন্নে
ক্ষুধায় কাতর, তবু এরা মা-মেয়ে
বিশ্বাসের আলোকে বেঁচে থাকে
হাত পাতেনা বিধ্বস্ত মানবতার কাছে।
যেকোনো বিভাগে অপ্রকাশিত লেখা পাঠান
আপনার মতামত একান্ত কাম্য
bimalmondalpoet@gmail. com
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন