মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ


         তুলসীদাস মাইতি 


অন্নদামঙ্গল

সেতুহীন পারঘাটে দাঁড়িয়ে আছে ঈশ্বরী পাটনিদের নৌকো 
শরীর জুড়ে রুপালি মাছেদের গন্ধ । ঢেউএর মুখর সঙ্গীত আর পালখোলা হাওয়ায় চলতে চলতেই দিন শেষ হয়।
অদূরে আধছাওয়া ঘরের দরজায় পাহারা দেয় উদরের চঞ্চলতা।
দুধেভাতে নেই সন্তান তার, শূন্য অন্ধকারে জেগে থাকে নিঃসঙ্গ চুল্লি।
তবু এ গায়ে সবাই মাঝি। তরল বাঁশের লগি ঠেলে যাওয়া- আসা।
ভাঙা  ভাঙা কাঠ জুড়ে সরল হাল হাতে অন্নপূর্ণার প্রার্থনা।

নিথর চোখের সুগভীর মায়া  নিঃশব্দে খোঁজে রায়গুণাকরকে।

অলংকরণ-বিমল মণ্ডল  



  শুশ্রূষা


দুচোখ মেলে দেখে নাও অদৃশ্য ছাযাদের শুশ্রূষাঘর,
ক্রমশ গভীরতর হচ্ছে বাঁচার রীতিনীতি।
অন্ধকারের আলোয় তার অস্পষ্ট অন্তর ভেসে ওঠে।
ঝড়ের মুখে  তোমার বাকশক্তি,তোমার তর্জনীমুদ্রা 
কতখানি সোজা থাকে দেখেছো?
পার হয়ে যাচ্ছ স্মৃতির বারান্দা,  তোমারই  পেতে রাখা 
উদাসীন মাদুর ও অনাদরে পড়ে থাকা আশ্রয়।

দুচোখ মেলে দেখে নাও অদৃশ্য আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ পৃথিবী।
তোমার চোখের নদী অচেনা মরুভুমিতে শুকিয়ে যাচ্ছে,
ছায়াহীন বৃক্ষহীন বিবর্ণ দ্বীপে হাঁটতে হাঁটতে তুমিও

শীর্ণ রূপকথার উপসংহার লিখে চলেছ নিবিড় মগ্নতায়।

অলংকরণ- বিমল মণ্ডল  



  ছোবল


অন্তর বেয়ে উঠে এলো একটা আস্ত সাপ,নকশিকাঁথার রঙে ভরে দিলো পৃথিবী।
বসন্তগোধূলির নিসর্গনারীর মতো তার উড়ো চুলে ডুবে গেল সব বাতি।
অন্ধকারের এই আলোয় যেই  তাকে স্পর্শ করতে গেলাম
অমনি সে একটা কুচকুচে নীল রহস্য জড়িয়ে চলে গেল নির্বিকার ।

তবে আবার  সে ফিরে এলো।  হঠাৎই তার অতৃপ্ত বৃত্তে পরিধি বাড়িয়ে সোজা ঢুকে পড়ল অতল বুকে। ওলটপালট করে দিলো অলিন্দের সবটুকু আশ্রয়।

অদৃশ্য সর্বনাশের ছায়ায় এখন শুধুই ছোবলের শব্দ শুনতে পাই।

অলংকরণ- বিমল মণ্ডল  




   অপেক্ষা


দিনরাত -খুঁজে চলি অক্ষর ,কমা সেমিকোলন
কবিতায় কবিতায় পুঁতে রাখবো বলে।
এখানে জল নেই  হাওয়া নেই  মাটির গভীরে রস নেই।
যতি সংকেতেও অস্থি-মজ্জাহীন অনর্থক আসা যাওয়া।

পুরানো বেহালার তারগুলো এ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
কবিতার পাশে নেই কেউ।
কোলাহলহীন পঙক্তিতে মরুভূমির নিঃশব্দ চলাচল।
পাণ্ডুলিপি  মিশে যায়  প্রাচীন ধুলোর আস্তরণে। মৃত লিপি ঘিরে জমা হয় অসহায় ছায়া ।
 
ঋতু র চাকায় এভাবেই দিন আসে রাত যায়………..
অজস্র  কবিতার ভেতরে বসে থাকি..একটি নির্ঝর বৃষ্টিদিনের অপেক্ষায়।

যেদিন কবিতার ওষ্ঠে-শিকড়ে ছড়িয়ে যাবে ব্যবহার্য জল

অলংকরণ- বিমল মণ্ডল  



   বুদ্ধ ও সনাতন বটবৃক্ষের সেই পাখিরা 


ধ্যানে বসেছেন বুদ্ধ।সনাতন বট বৃক্ষের শাখায় পাখিরা গেয়ে উঠল।
পাশের খেতে ধানের বীজ পুঁতে পাহারা দিচ্ছিলেন সুজাতার পূর্বজরা।
পাখিরা আবারও গেয়ে উঠল।কয়েকটা অমাবস্যা পেরিয়ে এলো পূর্ণচাঁদ।
বুদ্ধের ধ্যান ভাঙল।কৃষকের ঘরে এলো নতুন অন্ন।সুজাতার হাতে অমৃতস্বাদ।
বুদ্ধ হাসলেন।
বুদ্ধ বাঁচলেন। 
নৈরঞ্জনার জলে ভাসলো নৌকো।

সনাতন বট বৃক্ষের সেই পাখিরা গেয়ে উঠল।



যেকোনো বিভাগে অপ্রকাশিত লেখা পাঠান
মতামত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com        







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন