শনিবার, ৬ জুন, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ


                                            সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়



    ভারতবর্ষ


ওই শিশুটার মুখের দিকে তাকাও
ও তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে
তুমি পারবে? ওর গলাটা টিপে দিতে?

তাহলে ওর বাবার দোকানটা পুড়িয়ে দিলে কেন?
ওরা মন্দিরে যায় বলে?
ওরা মসজিদে যায় বলে?
ওরা গির্জায় যায় বলে?


রাস্তা পেরিয়ে তাকালেই চোখে পড়ে গায়ে গা লাগিয়ে
দাঁড়িয়ে আছে মন্দির,মসজিদ,গুমফা,গির্জা
আমার ভারতবর্ষ

আমি, রফিক, হ্যারি, রতন, সম্বুদ্ধ,মাইকেল, ওকাম্ব
সবাই এই পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে স্কুলে যাই

মাস্টারমশাই বলেন, আমাদের একটাই পরিচয়
আমরা মানুষ!
বাড়ি, গাড়ি, পদক, পদবী.. কারো আছে, কারো নেই ! তবু...
কিচ্ছু আলাদা করতে পারে না

রক্তটা যে আমাদের লাল!

কত মানুষ পথে হেঁটে যায়
কাল রাতে কারা দিয়ে গেছে মহল্লায় আগুন !!
তবু মানুষ হেসে বলে , "সুপ্রভাত"
সত্যিই তো, কটা মানুষ দেখা পেলি ব'ল ?







     সুজাতা

অনেক জনম পর

দেখা হলো যখন শ্রাবস্তীর পথ ধরে
লোকালয় পেরিয়ে এক নিরালা জঙ্গল মাঝে
সুজাতা এসেছিল নতুন আলো নিয়ে।

চারদিকের অন্ধকার চিরে মাঠ পড়ে আছে
আলপথ ধরে একা হেঁটে চলে এক সন্ন্যাসী
আচ্ছন্ন আঁধার লেপটে আছে মুখ।তবু সে দাঁড়িয়ে...


সে এসে ধরে ছিলে তাঁর হাত
ইতিহাসে লেখা নেই সেসব কথা
জিজ্ঞাসা ছিল সন্ন্যাসীর, কে তুমি?

ভুলে যাওয়া সেই পথ  ধরে আজও হেঁটে চলেন সন্ন্যাসী
সুজাতা ফিরে গেছে...

শুধুই এসেছিল পল মাত্র,
অপলকে দেখেছিল চোখে চোখ রেখে

সন্ন্যাসী খুলে ফেলেন সন্ন্যাস - বেশ
খুঁজে বেড়ান পথে পথে
মাটির গন্ধে শোকা অশ্রুত জীবন বেদ

সুজাতা লিখে গেছে
ভালবাসায় রক্তিম এক ক্ষণিকের মহাকাব্য
দেহলির সম্বাদে মুক্তির ঠিকানা

সে পথ কি অচ্ছুত !!

সে তো চিরসুন্দর, অনন্ত- পিয়াসী।





পরিচয়

এক অতলান্ত গহবর শুষে নিচ্ছে সমস্ত আলো
 চারিদিক হল্লা ... পুলিশ বলে, এরা কারা? নাগরিক?


কে বলেছে এই দেশটা তোমার আমার সবার
কে জানে ভাই ক্ষুদিরাম,  ভগৎ সিং 
শঙ্খচিল উড়তে জানে কাঁটা তারের পাড়ে
মানুষ হলেও আজও পারে নি সীমান্ত ওপড়াতে!




    তুমি

তুমি মানে
নিয়ন আলোর নিচের চাপ চাপ অন্ধকার!
এটা তুমি মানো না
তুমি রোজ গোলাপী ফেসিয়াল করে করে করে
ঘষে ঘষে মুখটাকে গোলাপ করে তোলো
তারপর সর্ষে বাগানে উড়ন্ত পাখির মতো ডানা মেলে
উরে যাও এক ডাল থেকে অন্য ডালে প্রতি রাতে

তুমি মানে
 দমকা হওয়ায় উরে আসা রঙিন প্রজাপতি
এটা তুমি মানো না
তোমার আনন্দ হাটে মরে সরল মনচাষা
যে সযত্নে নিরিন দিয়ে ফলিয়েছিল সত্যিকারের গোলাপ
সত্যিকারের গোলাপে তোমার বড্ড ভয়
তার সুগন্ধে  তুমি  যদি দেবী হয়ে যাও!!

তুমি মানে
ছুটন্ত হরিণী জাপটে ধরার দুনির্বার নেশা
এটাও তুমি মানো না
এপথ থেকে অন্য পথ, এপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হারিয়ে যাও
তোমাকে ছুঁতে চাওয়া মানুষের ভিড়ে
 ধরা দাও গোলাপের কাঁটা হয়ে নিজের খুশিতে
 নিঃসীম ভালোবাসার সাথে

তুমি মানে,
ভরা নদী, আমি  নৌকা ভাসমান স্রোতস্বিনী  বুকে
এটাও তুমি মানো না
 তুমি চাও নদীবুকে মিঠি মিঠি বাতাসের ভালোবাসা
 যে ভালবাসা শুধু নিতে জানে, ফেরায় শূন্য হাতে
 তথাগত,আমি মধুকর হতে চাই। চাই বুদ্ধ হতে
 এ জীবনে  যদি কোনো সুজাতা আসে।




 স্বপ্ন ভ্রষ্ট

অতীত, ফের ফিরে কথা কও
এখনও ফিরে পেতে পারি
দুজনেই সব কিছু
তবে তর্জনি নির্দেশে আর নয়।

ভেবেছ কি কোনোদিন
যাকে করেছ এত অপমান
সেও হতে পারে ত্রাতা
তোমারই দুঃসময়ে?

না। দরকার নেই প্রেম
বন্ধ হোক সুতীক্ষ্ণ বিদ্রুপশলাকা।
হে  অপমানের মঞ্চ - নির্দেশিকা
 ফের
 যদি হই নিন্দিত
তোমারই অঙ্গুলিলেহনে, তবু...ভুলি না
শিরে ধরি মুকুট, গলে জয়মাল্য সৌজন্যে তুমিই- দীপশিখা!

বন্ধ হোক লুকোচুরি, অন্তহীন ঘৃণা
নষ্ট মানুষটার জন্য না হয় থাক  সন্দেহ একরাশ,
তবু চাই  ভালো থেকো
তোমার অর্ঘ্য তোমার মুষল
তোমার আঁচলে বাধা
আমি নিরুত্তর , মহাকাল আমি
নীলকন্ঠ হয়ে বাঁচা...








অপ্রকাশিত গদ্য ও পদ্য পাঠান
মতামত জানান
         bimalmondalpoet@gmail. com        

1 টি মন্তব্য: