লেবেল

শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ





 পচা শামুক 

পচা শামুকে পা কাটে , 
তুচ্ছ ভাবা, জমিতে মাঠে ;
অকেজো কাজে জানি তা বটে
বিপদ ভাবিনা তাহাতে মোটে ৷

নিছক কাজেও আসে না চিন্তায়
পচা বিষয়টা জড়াই না মাথায় ,
কী-ই বা করিবে শামুকটি সেথায়
পচে রয়েছে জড়িয়ে কাদায় ।

চিন্তা শূন্য গতি বাড়াই
কখনো হয়তো পথে মাড়াই ,
কিছুই হবে না-ফকিরে ঝাড়াই ; 
সত্য মেনে বিপদ তাড়াই ৷ 
                                                                                                                                                                    
উল্টো বিপাকে করে হাঁসফাস        
অনেকের ওঠে এতে নাভিশ্বাস ,       
আক্ষেপ রোগের মেলে আভাস         
সড়ন-পচন দেহে বসবাস ৷ 
         
কপালে মেলে হা-হুতাশ ;                 
তুচ্ছের ত্যেজে না করে বিশ্বাস                               
অপলক চোখে চাউনি হতাশ ,               
মাথায় পড়ে ভেঙে আকাশ ! 
                                         
সমাজের বুকে এমনি ধারায়          
তুচ্ছ বিষয়ে প্রাণ যে হারায় ,        
পচা শামুকটি ভাবেনি ঠকায়         
মহাবিপদ ডেকে আনায় ৷ 
            
ক্ষুদ্রতমও ওৎ পেতে               
ধ্বংস কাজে আছে মেতে ,           
সজগ মগজে মন্থন যাতে            
সময় থাকিতে উপায় নিতে ৷
                                    
উপর নীচে আশে-পাশে                
চলা হাঁটা দাঁড়িয়ে বসে ,             
চাক্ষুস দেখিয়া চলা প্রকাশে             
অঘটন যেন নিকট না আসে ৷
        
তুচ্ছতরকে না ভাবা নগণ্য           
দুষ্কৃতি সাথীর এরাই সৈন্য ,            
কু-কর্মে আবার মহা মান্য ;         
ভাবনায় ধরে না এসবের জন্য ৷ 
      
যেমন পচা পড়ে শামুক
অকেজো না ভাবা অমুক-তমুক ,       
সারা বিষয়ে জড়িয়ে মুলুক  
সুযোগ ঘটায় অশুভ শলুক ৷  
                                         
সুবিধা বুঝে খোলে যে মুখ                
এরাই ধ্বংসে সকল সুখ ,
জ্বালায় জ্বালাবে মরণ দুখ্ ,
অকেজো না ভাবা পচা শামুক !
অলংকরণ- বিমল মণ্ডল  


  খুঁত ধরা 

কর্তা বলে, রাধো দু’টি ডিম -
বিকেলের জল খাবার ,
গিন্নি সিদ্ধ দিয়ে, বাঁচায় প্রোটিন -
সামনে রাখিল কর্তার । 

কর্তা বলে, ডিম সিদ্ধ চাইনি !
চেয়েছি ভাজা অম্লেট ,
সুন্দর করে ভেজে আনা চাই
ক্ষুধায় কাতর পেট !

তাড়াতাড়ি গিন্নি ভাজিল ডিম -
তবু কর্তা ধরে খুঁত ,
দু’টোডিম ,একসাথে কেন ভাজা ?
ভাজ আলাদা নিখুঁত !

পুনঃ গিন্নি, দু’ভাগে ডিমটি ভাজে ,
ধরেনা কর্তার মনে ;
কর্তা বলে, বাটির মত গোল-গোল -
শুনে রাখ কথা ধ্যানে ?

ভাজে ডিম সেই ভাবে, ঠিক-ঠিক -
হল না মতের খানা ;
কেন ভেজেছ ?সর্ষোতেলে ডিম !
বাদম তেলে- ভাজ-না ?



  গরীবের সংসার
মায়ের ব্যামো বহু দিন ধরে
পায় না পথ্য জল ,
জীবনটা যে অভাবে ভরা
শূন্য ঔষধ, ফল । 
বেচিয়া ঘরের ঘটি, বালটি,
কুড়ি টাকা হয় সম্বল ,
বাজার হতে শিশুর বাবা
আনিল কিছু ফল । 

ফলগুলি দেখে শিশু কেবল
ভরিয়া চোখে জল ,
শুধাল শুধু প্রশ্নটি বাবারে ,
স্বর করিয়া কোমল । 
এখনো কেন হল না জ্বর -
মার মত আমার ?
বাব কহিল, ওরে হতভাগা !
কি দিস সমাচার ?
শিশুর জবাব, বিনা জ্বরে তার,
নয় যে ফলাহার !

শিশুটি বোঝে জ্বর না হলে ,
ফল আসে না ঘরে ;
মনের মাঝে বায়না ধরিছে ,
ভোগে যেন সে জ্বরে !

অলংকরণ- বিমল মণ্ডল  


  জাতি 
জন্ম লগ্নে ঊষাকালে
লেখা হয়নি মনুষ্য ভালে
বাঁধা পড়েনি জাতির জালে ,
জাতি শূন্য ছিল সকলে ;
নর রক্ত সমান ছিল ,
তবে কেন জাতি হল !
জাতির ভেদ কে করিল !
জাতিতে জাতি ভরে গেল ?
মানুষ রূপে মানুষ হয় -
মনুষ কেন জাতির কয় !
মানুষ কখন দুষ্ট মনে
বিভেদ আনে জনে জনে ,
ধরায় মানব এসেছে যবে -
একক ছিল মনুষ সবে ,
বাঁচার তাগিদে মিলে মিশে 
সবাই ছিল সবার পাশে ৷

বিধান পুথিতে, বকছে শ্লোক -
জাতির জন্ম ! সেই পরলোক -
জাতির উদ্ধার ভুগে দুর্ভোগ !
উত্থান জাতে -কাটিয়ে দুর্যোগ !
বিচার যখন এলোমেলো
মানব জীবনে গ্রহণ এলো ,
সমাজের বুকে ঘুণ ধরিল -
অগ্রগতি বাধায় ভরিল ৷

কঠোর নিয়ম করতে যেয়ে
ভোলা মানুষ তখন পেয়ে ,
জাতি স্রষ্টার তাপ-শোক -
ছিল না কোন আপসোস !
স্বার্থ ছিল অতি ভয়ানক ৷
জাতি না কি হতেই হবে
জাতির বিনা ধর্ম কবে ?
অধর্মে সব ভরে যাবে -
জাত্য ধর্মে ধরণী রবে -
বিভিন্ন জাতি হলেই তবে !
মিলে মিশে থাকিলে সবে ,
অটুট শান্তি আসিবে ভবে !
‘চতুর্বর্ণ ময়া সৃষ্টং
গুণঃ কর্ম বিভাগশ’,
গীতার উপদেশ
পায় পরিবেশ
শুভ সন্দেশ
এ যেন, দেব আদেশ !

জাতি পেল বল, বিপুল আখ্যা
শিরঃচ্ছেদ হল সমস্ত ব্যাখ্যা ,
পেল যুক্তি পেল খ্যাতি
আবদ্ধ বন্ধনে জাতির মতি ।
সীল মেরে হল, নীচ পতিত -
সমাজের কাজ যতো 
হবে না জাতি ব্যাতীত !

সেখান থেকে জাতি-পাতি
মানব হল মন্দ গতি -
বিভেদকারী উঠল মাতি -
জাতি শাস্ত্র দর্শন নীতি -
আচারে আনে ঘোর কুমতি ,
সৃষ্টি হল সহস্র জাতি !

উঁচ-নীচ ছোট বড়ো -
স্বার্থ সাধক হয়ে জড়ো -
ভিত যদিও নড়-বড় -
জাতি চক্র ঘড়-ঘড়-
চালাচ্ছে ধারা অবিরাম !
জাতি থামানোর নেইকো নাম ৷
বড়ো জাতির বড়ো সুনাম -
স্বার্থ সিদ্ধির এটাই কাম -
ধরে রেখেছে জাতির দাম !

জাতির অসহ্য দংশ -
বয়ে চলে ধারা বংশ -
নীচুরা আবহমান কাল ধরে ,
পারিবেনা উঠিতে উপরে !
কী নিদারুণ ! উতপ্ত আগুন !
সমাজের বুকে জ্বলে -
সারাটা জীবন, দগ্ধ করিছে ,
ধিকি- ধিকি তুষানলে !

অনলে দহিলে দেহমন জ্বলে -
ছুত-অছুতের জ্বালা !
বুঝিবে সে কিসে -
না বোঝে, না মিশে -
গলায় পরিনি সে ,
জাতি বন্ধনের মালা !
বিষ সম গেলে -
তীব্র জ্বালা ভরে গলে -
যায় না কখনো ফেলা !
আরো কিছু আছে মেলা-
ফেলিতে গেলে মহা ঝামেলা ৷

জাতির বাঁধা, রয়েছে অজুত -
কেউ হরিজন- কেউ ছোঁয়াছুত -
কেউ বা শূদ্র নমঃ ,
সকলে দলিত সম ৷
ঘটি-বাটি-উঠান-তুলসী-
নল-জল-কল, ঘাট কলসী,
সমাজ যেন সজাগ চোখে -
গা বাঁচিয়ে চলে ,
একে অপরের ছোঁয়া লাগিলে ,
শুদ্ধিবে নেয়ে গঙ্গাজলে ৷
বনে-জঙ্গলে ,নীল গগন তলে ,
পাহাড়ে, বিহোড়ে-
হাটে-মাঠে-ঘাটে -
ধর্মে পূজা-পাঠে -
সভা মণ্ডপে ,
কত যে জাতির বাস ;
খাটছে তারা, বারটি মাস ,
তারাই মেটায় চাহিদার আশ ৷

কেউ কামার কেউ কুমার -
কেউ চন্ডাল  কেউ ডোম ,
কেউ মুচি ,কেউ অশুচি -
কেউ ছুতার, কেউ মেথর ,
কেউ কাঠুরে, কেউ মেছুরে ,
ছোট ক্ষৈত্র - অতি ক্ষুদ্র -
জাতিতে নিম্ন স্থান -
মানবতা হয় ম্লান !
জাতিতে এরা রয় অস্পৃশ্য -
সবারে যোগায় খাদ্যশস্য -
কত মানব বাধা ঠেলে ,
কর্মজীবন, জাতির চলে ৷

জাত্যাভিমান হয় যে মহান -
স্পর্শ কাতর কালে-
মানুষ ম’লে, বিবাহ স্থলে ,
পূজা-পার্বণ ছলে -
মিথ্যা চাল চালে !
সুযোগ সন্ধানী সুযোগ খোঁজে ,
জাতি বর্ণের ভাঁজে ভাঁজে-
তখন থাকে তাড়া -
বড়ো জাতির বড়োপ্পনে ,
নীচু জাতি অছুত মেনে -
আঁতে দেয় তার নাড়া !

যা’তি যা’তি যায় না জাতি !
জাতির যেন ঊর্ধ্ব গতি ।
কারা যে ধরে এসব কুমতি ?
আসুক ফিরে সবার সুমতি় ৷
বর্ণ জাতি সমাজের কুড় -
করতে হবে অদূরে দূর ,
ফন্দি ফিকির, কারসাজি -
মানুষ মানতে নয় রাজি ৷
রুখতে কভু হবেই হবে
জাতির মুক্তি পাবে তবে ,
জাতির যুক্তির আধার নাই -
অদূরে জাতিশূন্য হবে তাই ৷
শাসক ভূমিকা আদর্শ হলে -
উপায় হবে অতি সকালে ,
সুষ্ঠু শিক্ষা, সত্য জ্ঞান-
বর্ণ পাবে পরিত্রাণ ,
মিথ্যা সব বর্ণ ভাগ-
জাত্যাভিমান করিবে ত্যাগ ৷



 অলংকরণ- বিমল মণ্ডল  


ষাঁড়ের লড়াই 
দুই ষাঁড়, সেথা এক শান্ত-ভদ্র
অন্য হিংস্র ! জানে না সৌহার্দ্য ,
যখন মাথাটা গরম হয়ে যায় -
অভদ্র, সে সিং মারে বেজায় !

অভদ্র চায় লড়তে সব সময় ,
ভদ্রষাঁড়, স্বভাবে দূরে তায় !
অসহ্যে, যদিও ভদ্রটা লড়ে -
সে প্রতিবার লড়াইয়ে হারে ।

ষাঁড়ের লড়াই হয় আরপার !
হয় জান মাল ছারখার- সবার ,
সব নলখাগড়া, বেজো ঘাস -
পেয়ে জ্বালা ! করে হাঁসফাঁস ।

জল কাদার ছোট-ছোট মাছ ,
তারা কষ্টে, প্রাণ সঙ্কটে আজ !
বন্দ লড়াইয়ে কে করে মানা ?
বাকি ক্ষুদ্র তুচ্ছ, নিরুপায় জানা !

জগতে এ ঘটনা, ঘটিছে নিত্য -
এর সমাধান নেই, জানা- সত্য ;
হা-হুতাশে ভাবনা ভরা মাথে ,
মরা-বাঁচায় এমনি ধারা সাথে !


যেকোনো বিভাগে অপ্রকাশিত লেখা পাঠান
মতামত জানান
   bimalmondalpoet@gmail. com        


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন