মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ


ষ্টেশনহীন আন্তঃনগর জীবন


মাতাল রোদের দুপুরে প্রদীপ্ত সূর্যের দিকে তাকিয়ে
স্মৃতির ঝাপসা দুয়ারে কলিং বেল বাজায়
নিতান্তই অবয়বের বিরূপাক্ষ 
অমলিন এক বৃক্ষ। 
কি যেন তার নাম?! কেমন দেখতে সে?! 
যার প্রলম্বিত ছায়া প্রথম প্রেম হয়ে
জেগে থাকে আমার নির্ঘুম রাতে- 
অনায়াসে... 

কিছু শুকনো পাতা ওড়ে দীর্ঘশ্বাস সখ্যে
আমার হৃদপিন্ডে শব্দের ভেতর একটিই কবিতা
ধলেশ্বরী আমার বর্ষা- প্রিয় প্রবহমান 
জলে তার সুরেলা আলোর বারতা  
নদী মানেই বেঁচে থাকা, নদী জলেই শেষ অনুপ্রাণ। 

অন্ধকারে নূপুর নিক্কণ ছন্দ তোলে 
মগ্ন প্রাতে নিশি কাব্য 
আজকের বিশ্বায়নের দুর্দান্ত সময়ে 
হয়তো শহরটির সারল্য মুখে চর্চিত রঙ প্রলেপ
খানিক অচেনা, খানিক অভব্য।

ছোট্ট শহরটিকে থেমে থেমেই মনে পড়ে
ঐ তল্লাটের নিঃসঙ্গ নীম-
সবুজ পাতা ঝেড়ে ফেলতে ব্যস্ত
হলুদে শিশিরের সুবাসিত স্পর্শ
ত্রিবেণীর ওপারের হুগলি’- আজও অবিন্যস্ত...  

রূপবতী গোলাপের দুর্দান্ত প্রতাপে 
রুপনারায়ণ ভাগীরথী আর হুগলির সঙ্গমে 
গেঁয়োখালি গ্রাম
একটু কান পেতে শোন, 
সকাসে অবাক কীর্তন অষ্টপ্রহর, সকাসেই অবিরাম...     

প্রথম প্রেমের বৃক্ষটি কর্পোরেট বাসিন্দা
ধলেশ্বরীর বুক জুড়ে বাতাসে অবিরত বাজে
বেহালার ছড় ছুঁইয়ে নিবির গান; 
আমার মন আর চোখ দুটোতে আজ দারুণ বৈরিতা
ভেবে নেই স্ববিরোধী স্বনিন্দা
ভেবে নেই প্রতিনিয়ত সংসার সন্ন্যাসের পলাতক ঋষি  
তবুও 
দ্রুম, জনপদ আর জল জাগিয়ে, বাঁচিয়ে রাখে দিবানিশি
ফেলে আসা প্রহরেই ভাবনা, ছেড়ে আসা প্রহরেই প্রণাম...






বিকেলটা শুধু উষ্ণতা খোঁজে 
    

টুপ করে সন্ধ্যার শরীরে ডুবে যাওয়া বিকেল
নিবির উত্তাপে হাত বাড়ায় শ্রেফ উষ্ণতার জন্য
গল্পের ঝাঁপিরা অজানা অচেনা অন্য
মরচে ধরা ফেডেড জীবন বয়ে চলে 
ফ্ল্যাপহীন নীল কষ্টের বাইসাইকেল।   

তুষের অ -দেখা অনল জানান দেয়
শুভ্র শীতলতায় আকন্ঠ নিমজ্জিত পৌষের রাত
ভিজছে কাঠগোলাপ ভিজছে কৃষ্ণচূড়া 
ভিজছে নিয়নবাতির ধুলিময় শহর 
শিশিরের মোহমায়ায়। 

দুয়েকটি ব্যতিক্রম অনাঘ্রাত অভিজাত  
পরিযায়ী খেঁচর জীবন উন্মুখ উম প্রার্থনায়  
উষ্ণতার দরজায় কলিংবেলের অবিরত ঘাঁত 
একান্ত প্রয়োজন এবং উষ্ণতার সে এক প্রবল আকাঙ্ক্ষায়। 

থেমে থেমে বেজে ওঠে শুদ্ধ বিলাবল
সে সুরও ঢেকে গিয়ে ক্রমাগত প্রখর শীতল দীর্ঘশ্বাস
বেঁচে থাকার সমার্থক নামকরণ হয়তো শ্বাসপ্রশ্বাস
বিলাবল, দীর্ঘশ্বাস, শ্বাসপ্রশ্বাস
রঙিন পাল উজানে উড়িয়ে যুগল।   

ঘাসের সবটুকু উত্তাপ নিয়ে সুদীর্ঘ রাতের হীম  
উৎসবে নাম নিয়ে ভায়োলিন
উত্তরের খোলা জানালা নিশ্চুপ চোখ বোজে   
বিকেলটা শুধুই উষ্ণতা খোঁজে...









প্রতিশোধের প্রগার আইসোলেশন
                            

সবুজ বার্তা পেয়ে সমুদ্রের হয়েছে  
ডলফিন, কাঁকড়া বা কচ্ছপেরা 
গোলাপী, লাল আর কালো আবরণে 
যে যার আবীর বেছে নিয়েছে।
 
দল বেঁধে আসা যাওয়ার সৈকতে 
বংশধর বিছিয়ে দেয় নিপুন দক্ষতায় 
নির্বিঘ্ন ভূমিতে আনন্দ উল্লাসে 
ভয়হীন চোখ নতুন পৃথিবীর চিত্রাঙ্কন 
চিরায়ত নৈঋতে।
 
ঝাউয়ের শাখায় শাখায় ধ্রুপদী নৃত্য 
প্রাচীন বৃক্ষেরাও আজ সঙ্গ সঙ্গীতে মত্ত 
নবীনেরাও মাথা তোলে ঐক্যতানে 
দুষনের নদীগুলো ভুলে গেছে
নগর, নাগরিক ধর্তব্য। 
 
পুরোনো ব্যথা আর অপমানের প্রগাঢ় কান্নায় 
আকাশে আজ নেই অবরুদ্ধ কালো নেকাব 
অভিমান ভুলে প্রিয় নীল চোখ দেখে 
আজ অনুপস্থিত শুনশান দঙ্গল-
অনুপস্থিত জাগতিক অন্যায়।
 
পূর্ণ তেজে সূর্য মোহনীয় পূর্ণিমা 
সমুদ্র তার সবটুকু সম্ভার নিয়ে আমাদের ছিল 
নদী আর বৃক্ষেরা দেবী অন্নপূর্ণা 
মেঘ আর রোদের সাথে সূর্য চন্দ্রের মিতালি 
আকাশ ছিল আমাদের প্রেম, আকাশের গায়ে নীল জামা।
 
রোদ যৌবন আর বৃষ্টিই ভরসা 
তবে সপ্তর্ষি মন্ডলের যুদ্ধাস্ত্র তাক কেন? 
অণুজীব ফিরে যাও 
পরম প্রিয় গ্রহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শ্লোগান-
এই নয় শেষ, বেঁচে থাকার হাপিত্যেশ…







 ঋণ


প্রায় শেষ বর্ষার কৃষ্ণ গহ্বর অন্ধকারে হায়না উদ্ধত বুট পায়ে 
এজিদ উত্তরসূরীরা ঘন ছায়ায় মৃত্যু সেজে এসেছিল বত্রিশ নম্বরের সিঁড়িতে;
সেদিনের সেই গভীর রাতটা কেমন ছিল? 
অনেক খুন তাই সিমেন্টের ফ্লোর উষ্ণ; 
সে ম্যালা প্রশ্ন... 

যেখানে আমার নীলাভ আকাশ দৃঢ় হিমালয়, অথই সমুদ্র প্রদীপ্ত সূর্য, 
অবারিত ফসলের সবুজ মাঠ, অগণন  দোয়েল সুর, আম-জনতার বিশ্বাস, ভালবাসা আর পিতার রক্ত স্রোত একাকার; 
এসব জেনে আর কি দরকার?! 

পনেরোই আগষ্ট ভোরের বড্ড একা হয়ে যাওয়া, শ্রাবণ ভেজা বেহালায় বেহাগ অনেকটাই বেসুরো 
প্রভাত সূর্য আরো রক্তিম পিতার শুদ্ধ রক্তে নেওয়া বাতাসে অনন্ত বিরহ বিষন্ন গীতি 
রেডিও তে রুটিনের তারবার্তা, অভ্যুত্থানের এই এক রীতি...  
 
দুঃখী মানুষের শোষিত পক্ষের খাঁটি মানুষটি আর নেই
সমাধি সে অবধি ঠিকানা, এই গ্রহ পিতৃহারা, 
আত্মভোলা বাঙালী- স্তম্ভিত মাটি, বায়ু, বঙ্গপোসাগর; 
ওনাকে কই পাই?

মেঘে ঢাকা দৃষ্টি সীমানা আকুল অশ্রুতে ঝাপসা হয়ে পাথর
সময়, কে তোমার পক্ষ?
সেনা ছাউনির ডিভোর্সি নাম পাওয়া যায় 
বড়জোর মায়ের দ্বিতীয় স্বামী 
বাবা নেই, ডাক নেই, কেউ নেই- সমকক্ষ... 

স্মৃতির মিনার আজও ভালবাসার অবিরাম নুন 
অবনত তোমার কাছে 
জনক তুমিই স্বাধীনতা
আমার হাজার বছরের ডি.এন.এ রিপোর্টে তোমার খুন... 

তবু রয়ে যায় অপরিশোধ বকেয়া জন্ম ঋণ  
সেই কালো রাতটিই অবয়ব, বেঁচে থাকার সংশ্রব
স্পন্দিত বুকে এখানেই থামতে চাই 
টুঙ্গিপাড়া বাস ষ্টেশন, আমাকে নামিয়ে দিন...




অপ্রকাশিত লেখা পাঠান
মতামত জানান
bimalmondalpoet@gmail. com      


২টি মন্তব্য: