রবিবার, ১৭ মে, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ





                              আশিস গিরি 






                 গাছ ও মাটি


বিকল্প ইচ্ছেরা ভেঙে দিচ্ছিল ঘরদোর, জনালা-দরজা,
অন্য বোধের তুমি তখন রাঙ্গাবেলিয়ার অরণ্য বাতাসে
মৃগনাভি গন্ধ ছড়ালে। আমি সফেন তরঙ্গ হয়ে
বৃষ্টির ছাঁট মাখতে মাখতে তোমার মধ্যে ঢুকে পড়লাম,
তখন কোথায় দুরত্ব! কোথায় বৃষ্টি আর ফেনার ফারাক!

এখানে বাইপাসের ধার ছুঁয়ে এবেলাতেই
সময়ের শরীর ঘেঁসে নেমে এসেছে তীব্র যৌনতা
ইচ্ছেরা উলঙ্গ হয়, যৌনাঙ্গে চাপ পড়ে,
ওদিকে গন্ধমাখা অরণ্যের হাওয়ায় গাছে গাছে
গর্ভ সঞ্চার হলে ম্যানগ্রোভের নোনা জল ভেসে যায়
সুন্দরির উরু বেয়ে। চোরা স্রোত
কাদামাটি, বুনোঘাসে আঁচড় কেটে
সঙ্গমের শিল্প আঁকে গাছ ও মাটির।

বাকল ভাবনা
কাঠখড় পুড়িয়ে অনেকটা ভেবেছি সকালে
কোন জন্ম লুকিয়ে আছে কোথায় কোন গভীর বাকলে?
এই জন্মে সমস্ত খুঁজি পরজন্ম, ধ্যাত্তেরি পালা
অসংখ্য শরীরী ভাষা ধাঁধা হয়ে যুক্ত বর্ণমালা,
রাষ্ট্রে চতুর খেলা ল্যাজ নাড়ে প্রধানের লোভ
পড়শির সদরে ঝোলে পরিপার্শ্ব আকণ্ঠ সম্ভোগ।
ছাপা বর্ণে দেহলি হয় পর্ণমোচী অশান্ত যৌনতা
বিপ্লব মারাবেন না বলে পাখি ধরে কবির মৌনতা।
মদে মাংসে এতকাল রাত ভেঙে সাধনের সঙ্গি খোঁজা হোল
এবেলায় বিচিত্র মার্গে আষাঢ়ের মেঘ চমকাল!
বৃক্ষজন্ম, শুদ্ধ পাঠ, পাতাঘর, ঘর জুড়ে অজস্র কথন
আমাদের জটিল ভূমী লোভে -কামে শুধুমাত্র বীজের বপন,
কোনকিছু ভাবব না, তাকাবো তাকাবো তা যদি কিছু পাই
সুবিধের অবস্থানে তিরের ফলা, সিগনালে কোন দিকে যাই
ভাবছেন ,পাথরের গন্ধ শুঁকে পরিচয় প্রকাশিত হলে
এমন বিস্বাদ ভাবনা ধুয়ে দেব সাদামাঠা নুন আর জলে।



          কুশদেহের ইতিহাস  


বিদ্যাসাগর মশাই আপনি যমুনাকে চিনতেন
তখন হয়তো স্রোত ছিল , বজরায় মুখ ঢেকে
ভেসে যেত নারী ও সম্পদ . কুশদহে লেগে থাকতো
তার ছাঁট , আপনি তখন ভূমিজ রসায়নের
ক্রিয়া প্রতিক্রিয়াকে উপেক্ষা করে হিন্দু বাল্যবিধবাকে
বিয়ে দিয়ে ছিলেন শ্রীশচন্দ্রের সঙ্গে ,
কাশফুলের জঙ্গলে , পাট ক্ষেতের ধার ঘেঁষে
সেদিন আপনি যে পরিবর্তনের বীজ পুঁতে
দিয়ে ছিলেন বাংলার নাবাল ভূমিতে তা আজ
ইতিহাসের মহীরুহ হলেও যমুনা বড় অসহায়
সভ্যতার পলিস্তর বুকে নিয়ে বয়ে চলা নদী এখন
স্থবীর . আপনি অচলায়তন ভেঙে সমাজকে
বেগবান এবং অগ্রগামী করে ছিলেন , আমরা যশোরের
ছায়াপথ ভেঙে ইতিহাসকে ধূলিস্যাৎ করছি .
আর যমুনার শ্বাসনালী টিপে ধরে বলছি ,
আবাগি তু্ই মর ,
কোন সওদাগরি ডিঙা ডুবে আছে
কুশদহের জলে জানা যায়নি
তবে একটা উত্থানের কলরব শোনা যাচ্ছে
যশোরের ন্যাড়া পথে . আপনি আর একবার
বর্ণ চেনান সমাজকে , বর্ণ ভাষা হয়ে
বেরোবেই বেরোবে .

   



                দুই প্রান্ত

আগুন ছুঁয়ে কষ্ট পেলাম যত
সেই আগুনে পুড়িয়ে দিলাম ক্ষত
শরীর ভাঙা অনেক জ্বালা ভিড়ে
অলস বিলাস আগুন দিলো ছিঁড়ে .
নষ্ট রাতে আমায়  যখন পোড়ায়
ছায়ার আমি সিং দরজা মাড়ায়
ও প্রান্তে ওই নষ্ট বেলার মায়া
এ প্রান্তেরই আগুন খেলার  কায়া।

   


     
                জুবুথুবু ঘর

সকালের রোদ মেখে ছুটে যাচ্ছে গাড়ি
বহুকাল ডাকোনি তবু যাচ্ছি তোমার বাড়ি।
ঝাকঁ ঝাঁক স্টেশন ছেড়ে  জুবুথুবু ঘর
না খেয়ে ঘুমিয়ে আছে স্বজন কাতর।
সবখানে তোমাকে দেখি চোখের গভীরে
সময় গড়িয়ে যায় অনন্ত শরীরে।
এবেলাতেই এলো ঘুম বিষন্ন সাক্ষর
প্লাটফর্মেই পড়ে  থাকে বিবর্ণ অক্ষর।
তোমার বাড়িতে বিশ্ব তবু তুমি একা
 তাওতো ঝুপড়ি ছিঁড়ে সূর্য দিল দেখা।
ভাগ করো কোনদিকে  আলো  নয় কালো
এ বিভাগ আমরাই জানি বেশ ভালো !

   


          অনন্ত আশ্বাস

একটি বাউল গ্রামের পাশে টিলা
চর্যাপদে শিকড় গেঁথে শুয়ে আছে শিলা
পঞ্জিকায় বর্ষণ তিথি বপন রোপন
ওপারে পথের শেষে গেরুয়া যাপন .
এই গ্রামের পুব দিকে নদী
ভাঙা পথে ছেড়ে গেছে চরের পালোধি
কিছু দূরে দণ্ডভুক্তি শিবের দেউল
নদীচরে জীবজ্ঞানে মরমী আউল .
এপথের ধরেই গেলে সহজের  বাড়ি
সাধনে মজেছে পুরুষ আর  এক নারী
ভাবে ভান্ড মোহিনী বর্ষে পানিতে আগুন
সন্ধানে ব্যস্ত মায়া, জাদুতে নির্গুণ .
এখানেই বর্তমান ব্রহ্মান্ডের ছবি
খন্ডে খন্ডে জুড়ে যায় জীবনের সবই
হৃদপিণ্ডের ছয়টি দিকে ছ' জনার  বাস
তাইতো জীবন জুড়ে অনন্ত আশ্বাস।


                              লেখা পাঠান 
            bimalmondalpoet@gmai. com 







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন