সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫

।। প্রতিদিন বিভাগ।। ।। জুন সংখ্যা।। বিষয় - গল্প ( ৪০০ শব্দের মধ্যে) —১০ বিবর্ণ — মানস মুখোপাধ্যায়।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

     



          

          ।।  প্রতিদিন বিভাগ।। 

             ।।  জুন সংখ্যা।। 

  বিষয় - গল্প ( ৪০০ শব্দের মধ্যে) —১০





বিবর্ণ

মানস মুখোপাধ্যায় 


 

হঠাৎ-ই অয়নের ঘুমটা ভেঙে গেলো।ভাঙবেই বা না কেন! গতকাল রাতে শোবার আগে থেকেই মাথায় ঘুরছিল তার আর শ্রাবণীর বিয়ের দশ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। ইচ্ছে ছিল কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব নিমন্ত্রণ করে একটু লুচি আর কষা মাংস খাওয়াবে। কিন্তু সাহসে কুলোয় নি শ্রাবণীকে এ কথা বলতে।পাছে গল্প গুজব করতে করতে কেউ যদি তার সামনে আবার সেই কথাগুলো পেরে ফেলে। শ্রাবণীর আত্মসম্মানে আঘাত দিয়ে ফেলে সেই ভয়েই। এমনিতেই তার বন্ধ্যাত্ব নিয়ে আত্মীয় স্বজনেরা কানাঘুষো করে।

অয়ন অবশ্য কোনদিনই হাত পা গুটিয়ে বসে থাকে নি। অনেক ডাক্তার কবিরাজ করেছিল কিছুতেই কিছু হয় নি। শেষমেষ কোলকাতার এক নামি গাইনো স্পেশালিস্টও দেখিয়েছিল।নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তিনি জানিয়েছিলেন শ্রাবণী কোনদিনই নিজে গর্ভধারণ করতে পারবেনা।এরপর থেকেই শ্রাবণীর মুখ থেকে উচ্ছ্বল হাসিটা কোথায় যেন হারিয়ে গেল। পরিবর্তে এলো খিটখিটে আর ছুঁচিবাই স্বভাব।

ডাক্তার অবশ্য একটা বিকল্প ব্যবস্থার কথা বলেছিল। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে সারোগেট মাদার মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার কথা। কিন্তু তাতে শ্রাবণীর মত ছিল না।নিজেই যখন গর্ভধারণ করতে পারবেনা তখন কারুর নির্ভরতায় সন্তান নিতে রাজি নয়। বুকে একটা চাপা কষ্ট যন্ত্রণা বয়ে নিয়ে অয়ন আর কোনদিন ইশ্রাবণীর সামনে এবিষয় উত্থাপন করে নি।

       পুবের খোলা জানালার দিকে তাকিয়ে অয়ন

দেখলো দিনটা ক্রমশঃ ফুটে উঠছে একটু একটু করে। সবেমাত্র শীত গেছে। বসন্ত এলেও ঠান্ডাটা পুরোপুরি চলে যায় নি। মোবাইলটা বেজে উঠল।বিস্ময়ভরা চোখ নিয়ে মোবাইলটার দিকে হাত বাড়ালো। এতো ভোরে কার ফোন!দেখলো বন্ধু মৃন্ময়ের ফোন। হ্যালো -বলতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো -অয়ন মেয়ে হয়েছে। অয়নের বুঝতে বাকি রইল না --ওদেরও দীর্ঘদিন বিয়ে হয়েছে প্রায় সাত আট বছর।এতো ভোরে কার ফোন!দেখলো বন্ধু মৃন্ময়ের ফোন। হ্যালো -বলতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো -অয়ন মেয়ে হয়েছে। অয়নের বুঝতে বাকি রইল না --ওদেরও দীর্ঘদিন বিয়ে হয়েছে প্রায় সাত আট বছর কোনো বাচ্চা কাচ্চা হয় নি। মৃন্ময় একটা সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করে। শুনেছিল মৃন্ময় আর দীপালি সারোগেট মাদার মাধ্যমে বাচ্চা নিতে চলেছে।খুশির খবর।কিন্তু কাকে জানাবে!শ্রাবণীকে? সাহসে কুলালো না। শ্রাবণীকে জাগিয়ে খবরটা দেওয়া ঠিক হবে না।শ্রাবণীকে জানানো মানে তার দুঃখবোধ আরো বাড়িয়ে তোলা। খুব খুশি হয়েছি জানাতেই অয়ন বুঝলো ওপাশ থেকে মৃন্ময় লাইনটা কেটে দিয়েছে। একটা গভীর শ্বাস ফেলে মোবাইলটা রেখে দিলো। আবার খোলা জানালার দিকে অয়ন তাকিয়ে দেখল আকাশ কেমন যেন রঙিন হয়ে উঠেছে।এসময় চারিদিক কেমন যেন সুন্দর হয়ে উঠছে। অয়নের কেন যেন মনে হচ্ছে এ সুন্দর তার জীবনের জন্য নয়।এ রঙিন আভা কোনদিনই তার মনে রাঙিয়ে দিতে পারবে না।পেটের ভিতর থেকে একটা যন্ত্রণা উঠে এসে অয়নের গলা যেন চেপে ধরছে। অয়নের চোখছলছল করে উঠলো। হাল্কা বেড কভারটা গায়ে চাপিয়ে অয়ন আবার শুয়ে পড়লো।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন