রবিবার, ১ জুন, ২০২৫

।। প্রতিদিন বিভাগ।। ।। জুন সংখ্যা।। বিষয় - গল্প ( ৪০০ শব্দের মধ্যে) —২ কালীপুজোর পাঁঠা — শীতল গঙ্গোপাধ্যায়।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 



          

          ।।  প্রতিদিন বিভাগ।। 

             ।।  জুন সংখ্যা।। 

      বিষয় - গল্প ( ৪০০ শব্দের মধ্যে) —২




কালীপুজোর পাঁঠা 

শীতল গঙ্গোপাধ্যায় 


সকাল থেকে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। বাইরে হাওয়া নেই। বাইরে বেরোনোরও উপায় নেই।তার উপর আজ কালীপুজো। এই আবহাওয়ায় বাজি পটকা,হৈ হুল্লোড় কিছুই করা যাবেনা। আমরা চার বন্ধু ফোনাফুনি করছি। কী করা যায় তার নানারকম শলা পরামর্শ চলছে। আমি বললাম, সবাই আমাদের বাড়িতে চলে আয়। পুজোটা আমাদের পাড়াতেই হয়। বৃষ্টি থামলে মন্দিরে যাওয়া যাবে। ওরা রাজি হয়ে গেল।অপু কালু আর বাবু চলে এল আমাদের বাড়ি।

    ছাতা মাথায় গেলাম মন্দিরে। সন্ধ্যে সাতটা বাজে। কৈলাস মিস্ত্রি তখন আগুন জ্বেলে প্রতিমা শুকাচ্ছে। সকাল থেকে বৃষ্টি। প্রতিমার মাটি শুকোয়নি। বললাম,কী ব্যাপার।রং করবে কখন? 

    বললো, এই হয়ে এল। এবার রং করবো 

পুজো তো মাঝরাতে, তার আগে সব হয়ে যাবে। তোমরা খেয়েদেয়ে এক ঘুম ঘুমিয়ে এস, পুজো দেখতে পাবে।

     তাই করলাম আমরা।রাত বারোটার সময় গিয়ে দেখি পুজো চলছে পুরোদমে। বৃষ্টি অনেকটাই কমে গেছে। ইলশেগুঁড়ির মতো যদিও পড়ছে তবে তাতে তেমন অসুবিধে হচ্ছে না।

    আমাদের এই পুজোয় পাঁঠাবলি হয়। দূর দূর থেকে অনেকে আসে মানতের পাঁঠা নিয়ে। এবার বৃষ্টির কারণেই অনেকে আসতে পারেনি। কাছাকাছি গ্রাম থেকে যারা এসেছিল তারা বলির পর পাঁঠা নিয়ে চলে গেছে। শুধু গোঁসাইডি থেকে যে এসেছিল সে যেতে পারেনি।একেই তো চার কিলোমিটার হাঁটা পথ।মাঠ জঙ্গল জলা শ্মশান পেরিয়ে যাওয়া।আর কিছু না হোক, ভূতের ভয় তো আছেই। কাঁচা মাছ মাংস ভূতেরা পছন্দ করে সেটা সবাই জানে। অতএব সে পাঁঠাটা বস্তার মধ্যে ভরে মন্দিরের কাছেই একটা ফাঁকা ঘরে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

    বাবুই প্রথম পাড়লো কথাটা। চুরি করে পাঁঠার মাংস খাবি? 

    কালু বললো, কোথায় পাঁঠা? কার পাঁঠা? 

    ওই গোসাঁইডির ভদ্রলোকের। দেড়টা বাজছে।সে নিশ্চয় এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।

    চুরি নাহয় করা গেল কিন্তু রাঁধতে হলে তো তেল মশলা লাগবে। সেগুলো কোথায় পাবি, এই মাঝরাতে? 

    বাবু বললো, জোগাড় হয়ে যাবে।পানু কাকাকে ঘুম থেকে তুলে ম্যানেজ করে নেব।

    তাহলে চল, দেখি লোকটা ঘুমুচ্ছে কিনা।


    আমি বাড়ি থেকে দা নিয়ে এলাম। কেটে কুটে সব রেডি করলাম।পানুকাকা একটু বেগড়বাঁই করছিল।এত রাতে কী রান্না করবি তোরা।

    মাংস রান্নার কথা বলা যাবে না।বলির মাংসে পেঁয়াজ রসুন দেওয়া যাবে না।কালু বললো, খিচুড়ি রান্না করবো আমরা।আদা কাঁচালঙ্কা আর তেল নুন মশলাপাতি লাগবে।


    সময় একটু লেগেছিল ঠিকই তবে খাওয়াটা হয়েছিল জম্পেশ। পরদিন সকাল থেকে আবার শুরু হলো ঝমঝম বৃষ্টি। আমরা চারজন আমাদের বাড়িতেই। আরামে ঘুমিয়ে ছিলাম। পাঁঠার মালিকের লম্ফঝম্ফ দেখার দুর্ভাগ্য হয়নি।

    জানি, কাজটা মোটেই ভালো হয়নি। তবে এই রকম বাদলা আবহাওয়ায় একটু মজা তো করা যেতেই পারে।কী বলেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন