।।প্রতিদিন বিভাগ।।
।। জুন সংখ্যা।।
।। বিষয় - মুক্ত (গুচ্ছ কবিতা) -১৩।।
গোবিন্দ মোদক-এর কবিতা
তোমাকে ভালবেসেছি বলে
সূর্য আমাকে সঙ্গ দেয়
বাতাস কুশল-বার্তা জিজ্ঞাসা করে
আলো এসে চোখে কাজল পরায়।
তোমাকে ভালবেসেছি বলে
আমার শ্রীহীন বাগানেও ফুল ফোটে
ভাঙা প্রাচীরের ফাটল থেকে
অজানা ফুল উঁকি দিয়ে বলে —
ভালো আছো তো ?
তোমাকে ভালবেসেছি বলে
আমার চিলেকোঠার ঘরের চালে
বৃষ্টি এসে সুর-মূর্চ্ছনা শোনায়
খঞ্জনা পাখি আম গাছের ডালে এসে
দেখিয়ে যায় তার অচঞ্চল নাচ
তোমাকে ভালোবেসেছি বলে …
তোমাকে ভালোবেসেছি বলে
গাছের পাতা এখন আরও সবুজ
আর জীববিদ্যার মাস্টারমশায়ের মতো
সে আঙুল তুলে আমাকে শেখায়
ভালবাসার এককের নাম ‘প্রেম’
সে শুধু তোমাকেই ভালোবাসি বলে।
আজন্মকাল যারা পিছনের বেঞ্চে বসে
যাদের জন্য শুধু কটু-কথা আর প্রহার
তিরস্কার আর অবহেলার মালা
বছরের পর বছর যাদের আসন
কুক্ষিগত থাকে একই কক্ষে
শিক্ষাদানকারীরা তাদেরকে করুণা করেন।
আর এক দল
যারা সামনের সারি আলোকিত করে
যারা সবুজ, যারা চৌকস
যাদের জন্য শিক্ষালয় গর্বিত হয় মার্কশিটে
কাগজে স্বর্ণাক্ষরে নাম ছাপা
কিংবা কিঞ্চিৎ মিষ্টিমুখ
শিক্ষালয়ের তারা সুসন্তান।
অথচ পালাবদলের পালা শেষ হতে দেখি
সুসন্তান চলে গেছে বিদেশের টানে
আর করুণার পাত্ররা দেশ চালাচ্ছে!
আমি নির্বোধের মতো
তাদের দু‘দলকেই আসন পেতে দিই
আমার মনের শিক্ষালয়ে।
৩.
জিত
‘জিত’ মানেই ঠিক ‘জিতে যাওয়া’ নয়
কিছুটা রকমফের তাই থেকেই যায়।
যেমন তুমি যদি ইচ্ছা করেই
সিঁড়িগুলো ভেঙে দাও
আমি ঠিক জুড়ে জুড়ে তোমাকে হারাবো।
তোমার জিত ‘চিরকালীন’ কিছু নয়।
আবার তুমি যদি হৃদয় ভেঙে দিয়ে
নিজের জিতকে চিরস্থায়ী ভাবো
তবুও হয়তো তা ঠিক হবে না।
কেননা পাথরের ফাটলেও হয়তো
আবার গজিয়ে উঠবে নতুন দূর্বাঘাস,
ছোট্ট ফুল ফোটানোর অপেক্ষায় থাকবে
ছোট্ট ফুল গাছ —
তখন খেলা ভাঙার খেলা!
তবে যে বলো ‘জিত’ বড়ো বালাই!
৪.
আধভাঙ্গা স্বপ্ন
আমাদের একটা
কাঁঠালকাঠের চৌকি ছিল
ছেলেবেলায়
সেই চৌকিতে কোণাকুণি শুয়ে
আকাশ দেখতাম আর ভাবতাম —
কবে আমি বাবার মতো বড়ো হবো!
চৌকিটাও আমার সেই ভাবনাকে
সমর্থন করে পালতোলা জাহাজ হতো।
আজ সে চৌকিও নেই
বয়সটাও নেই!
পৃথিবীর অনিবার্য নিয়মে
বাবার মতো বড়ো হয়েছি;
অথচ কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না
সেদিনের সেই আধভাঙ্গা স্বপ্নটাকে
৫.
সাঁকোটা
কবে যেন একজন পাগলে বলেছিল –
“ওরে, সাকোটা নাড়িয়ে দে!”
সাঁকোটা সেদিন কেউ নাড়িয়ে দিয়েছিল
অথবা আদৌ কেউ তা দেয়নি
তা জানি না।
যেমন জানি না আদৌ সেই সাঁকোটা
বাস্তবে ছিলো কিনা!
তবে আজ দিনের শেষে
শরীরটা বিধ্বস্ত হলে
মনটা যেন বলে ওঠে –
“ওরে, কে আছিস! সাকোটা নাড়িয়ে দে!”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন