ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস (পর্ব-১৫)
.... এবং ইরাবতির প্রেম
গৌতম আচার্য
নাগরাকাটা রিসর্টে বিট্টু গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়েছে।। গাড়ি পার্কিং করবার জন্য রিসর্টের ঠিক মাঝখানে প্রশস্ত খোলা জায়গায় বেশ কয়েকটি গাড়ি দাঁড় করানো।। একটু দূরে বাঁদিকে অনেক গুলি সারিবদ্ধ ঘর।। ডানদিকে ছোট বড় টব আর নানা মৌসুমী ফুলের বাগানের পাশে কয়েকটি সাজানো কটেজ জাতীয় থাকার ব্যবস্থা।। একদম সোজা রিসেপশন্ এবং তার পাশে বেশ বড়সড় খাওয়ার জায়গা।। সত্যেন রিসেপশনে এসে দাঁড়ায়।। রিসর্ট বুক করা ছিলো।। ইরাবতি- ও রিসেপশনে দাঁড়ায়।। সত্যেন রেজিস্টার হাতে নিতেই ইরাবতি চলে যায় ঘরে।।
রিসেপশনে রেজিস্টারে লেখালেখি সেরে ম্যানেজার বাবুর সঙ্গে দুই চার কথা বলে মিনিট আষ্টেকের মধ্যে হরিহর চলে যায় নিজের ঘরে।। ইরাবতি ইতিমধ্যেই নিজেকে ফ্রেস্ করে ফেলেছে।। কাপড় জামা বদলে, হাত মুখ পরিষ্কার করে অপেক্ষা করছে সত্যেন এর জন্য।। সত্যেন ঘরে ঢুকে সোজা ইরাবতিকে বুকের মধ্যে টেনে নেয়।। তাঁর বহুদিনের স্বপ্ন আজ সার্থক হতে চলেছে।। ইরাবতি নিজেকে সমর্পন করে সত্যেন এর বুকে।। সত্যেন ইরাবতির দিকে মুখ এগোতেই ইরাবতি বাধা দেয় তাকে।। "আগে ফ্রেস হও, হাত মুখ পরিষ্কার করো, চা খাও" নির্দেশ দেয় ইরাবতি।।
ওয়েটার চা এবং স্ন্যাক্স দিয়ে যায়।। চা পান করতে করতে ইরাবতি সত্যেনকে লক্ষ্য করে বলে, "শয়তান, একটি আস্ত শয়তান"।। সত্যেন মৃদু হেসে বলে, আমি যদি শয়তান হই, তুমি তাহলে কি? ইরাবতি হাসতে হাসতে বলে, "তুমি শয়তান আর আমি ভালো"।। হাত বাড়িয়ে সত্যেন ইরাবতির কাঁধ ধরে।। কাছে টেনে নিয়ে ইরাবতির কপালে চুম্বন দিয়ে বলে, "শয়তাননী আমার"।।
ইরাবতি লাঞ্চ করতে বসে মাঝে মাঝেই সত্যেন এর থালায় এটা ওটা তুলে দিতে থাকে।। আবার সত্যেন এর অর্ধেক খাওয়া খাবার তুলে খেয়ে নেয়।। দুজনে প্ল্যান করে খাওয়ার পর একটু বিশ্রাম নিয়ে তারা বেড়িয়ে পড়বে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে।। সত্যেন রিসর্ট ম্যানেজারকে বলে দেয়, "বিট্টুকে চাই।। একটু আশেপাশে ঘুরতে যাবো আমরা"।।
ঘন্টা তিনেক চাপড়ামারি ঘোরাঘুরি করে সত্যেন এবং ইরাবতি ফিরে আসে রিসর্টে।। ফ্রেস্ হয়ে ডিনার শেষ করে একটু হাঁটাচলা করে রিসর্টের বাগানে।। তারপর ফিরে যায় নিজেদের ঘরে।। যাওয়ার আগে রিসর্টের ম্যানেজার বাবুকে জানিয়ে যায়, কাল সকাল ঠিক দশটায় তারা বিট্টুর সঙ্গে যাবে চালসা পাহাড় আর রকি আইল্যান্ড।।
সময় ফুরিয়ে আসছে।। আজ-ই তো তারা এলো এই রিসর্টে।। এখন রাত।। কাল চালসা ও রকি আইল্যান্ড ঘুরে আবার যখন তারা ফিরবে তখন সন্ধ্যা তো হয়ে যাবেই।। ঠিক পরের দিনই ফিরে যেতে হবে তাদের নিজের নিজের বাড়িতে।। এখন-ই যেন বিষাদের সুর বেজে উঠছে।। সত্যেন ঘরে ফিরেই বুকে আঁকড়িয়ে ধরে ইরাবতিকে।। আকুল হয়ে প্রশ্ন করে, আমরা কি এই দূরত্ব দূর করে একসাথে থাকতে পারি না? কোন উত্তর না পেয়ে আবার বলে, ইরাবতি তুমি প্লিজ্ কিছু বলো।। ইরাবতি বলে ভীষণ ঠান্ডা লাগছে, তুমি শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরো।। ঘরের আলো নিভিয়ে ইরাবতি কে কম্বলের ভিতরে ঢুকিয়ে সত্যেন শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে।। ইরাবতি সত্যেন এর বুকের মধ্যে হারিয়ে যায়।।
তখনও সূর্য ওঠেনি।। রাতের অন্ধকার একটু একটু ফর্সা হতে শুরু করেছে।। ইরাবতি তার দুই হাত দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা সত্যেন এর লোম ভর্তি বুকে হাত বুলায়, তার আরও কাছে চলে আসে।। একটি হাত সত্যেন এর পিঠে রেখে নিজেকে আরও ঘনিষ্ঠ করে নেয়।। তারপর সত্যেন এর ঠোঁটের সঙ্গে নিজের ঠোঁট এক করে দেয়।। ঘুম ভেঙে যায় সত্যেন এর।। সে ইরাবতি কে আরও নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে।।
সকাল ঠিক দশটায় রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে ইরাবতি আর সত্যেন।। রুম সার্ভিসে তারা ব্রেকফাস্ট সেরে নিয়েছে।। বিট্টুও এসে গেছে ঠিক সময়ে।। একতলার লনে পা রাখতেই ম্যানেজার বাবু বলে ওঠেন, গুড্ মর্নিং ম্যাম্, গুড্ মর্নিং স্যার।। প্রত্তুত্তরে সত্যেন- ইরাবতি দুজনেই গুড্ মর্নিং জানায়।। ম্যানেজার বাবু আবার বলেন, "উইস ইউ হ্যাপি জার্নি"।। ধন্যবাদ জানায় সত্যেন।। খাবার খেতে খেতেই দৌড়ে আসতে থাকে বিট্টু।। গুড্ মর্নিং ম্যাম্, গুড্ মর্নিং স্যার।। সত্যেন গুড্ মর্নিং জানিয়ে বিট্টুকে বলে আমরা অপেক্ষা করছি, তুমি আগে খেয়ে নাও।। ম্যানেজার বাবুকে নির্দেশ দেয়, বিট্টুর খাওয়ার বিলটি যেন তার বিলে যুক্ত করে দেওয়া হয়।।
গাড়ি ছুটে চলেছে সামসিং- মূর্তি নদীর দিকে রকি আইল্যান্ড যাবে বলে।। একটু এগোতেই শুরু হলো ডুয়ার্সের বিখ্যাত গাছের বন।। মাঝখানে রাস্তা।। দুই দিকে শুধু শাল পিয়াল আর বেগুনী- হলুদ আর লাল টকটকে ফুলের সাজি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নানা গাছ- গাছালি।। একটু দূরে দূরে একটি দুটি গ্রাম।। চওড়া পিচ ঢালা রাস্তা ছেড়ে গাড়ি ঢুকে পড়লো অসমতল পাহাড়ি রাস্তায়।। এক জায়গায় ছোট্ট একটি চায়ের দোকান দেখে সত্যেন গাড়ি দাঁড় করিয়ে চায়ের অর্ডার দিয়ে দোকানির সঙ্গে শুরু করলো হাতির গল্প আর পাখিদের নিয়ে নানান প্রশ্ন।। কথায় কথায় সেই দোকানী জানালেন, "হাতির এমন গোঁ, যদি একবার ভেবে নিলো এখন সে থাকবে এখানে, তো কিছুতেই তাকে হটানোর উপায় নেই"।।
সত্যেন জিজ্ঞেস করলো, কোনো বিশেষ সময় আছে হাতি আসবার?
-- নাগো বাবু।। এটি তার মন- মর্জি।। এখন তো সব ঠিকঠাক, হতে পারে এখনি তারা এসে গেলো।।
-- তারা এসে গেলে আপনারা কি করেন?
-- আমরা পালায়ে যাই।। তারপর বন দপ্তর তাদের সরালে তবে আবার ফেরা।।
-- তারা আপনাদের ক্ষতি করে দেয়?
-- জংলি জানোয়ার।। কোনকিছু ঠিক আছে? কখনো কখনো করে।। বললাম না, তাদের মন- মর্জি।।
চা পর্ব শেষ করে গাড়ি আবার ছুটলো সামসিং এর পথে রকি আইল্যান্ড।।
চলবে....
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন