বৃহস্পতিবার, ৩ মার্চ, ২০২২

(পর্ব- ৮) ।। ... এবং ইরাবতির প্রেম।। গৌতম আচার্য।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 




ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস (পর্ব- ৮)



... এবং ইরাবতির প্রেম
গৌতম আচার্য



সবেমাত্র খাবারের প্যাকেটটি খুলতে শুরু করেছে সত্যেন, মোবাইলে মেসেজ টোন বেজে উঠলো।। সত্যেন এর মন চলে গেলো মোবাইলে।। একেবারেই নিশ্চিত এটি ইরাবতি ছাড়া আর কেউ নয়।। কিন্তু হাত পরিস্কার করে ধুয়ে স্যানিটাইজ করা হয়ে গেছে।। এখন আবার মোবাইলে হাত দেওয়া উচিৎ হবে না।। তাই চুপচাপ খাওয়াতে মন দিলো সত্যেন।। মনে মনে নিশ্চিত যুক্তি সাজালো, "যখন তোমার ইচ্ছে হবে তখন তুমি মেসেজ করবে আর আমাকে সব ছেড়ে তোমার পিছনে ছুটতে হবে, ওটি হবে না।। আগে খেয়ে নিই, তারপর দেখবো"।। মন ছটফট করছে তার।। কতোক্ষনে সে মোবাইল খুলবে।।

তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করলো সত্যেন।। মোবাইল খুলতেই মেসেজ নোটিফিকেশানে ইরাবতির নাম।। সেই লোকটি এবার বলে উঠলো, দাদা, খানা তো হয়ে গেছে, এবার তো শো যাইয়ে।। মেজাজ সত্যিই এবার বিগড়ে গেলো সত্যেনের।। ইরাবতির করা মেসেজটি খুলে দেখবার অসীম আগ্রহে কৌতুহল নিবারণ করবে বলে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলো।। একরাশ বিরক্তি নিয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে সে বলে উঠলো, আরে আপনি কি জীবনে শুধু খাওয়া আর শোয়া ছাড়া অন্য কিছু জানেন না? সেই তখন থেকে স্বার্থপরের মতো 'লাইট বন্ধ করে দেবো, লাইট বন্ধ করে দেবো' করে যাচ্ছেন আপনি।। আমাদের জীবনে খাওয়া আর শোয়া ছাড়াও কিছু কাজ থাকে।।

এবার সত্যি লেগে গেলো ধুন্ধুমার কান্ড।। 'বহুৎ বোল দিয়ে আপনে।। ক্যা সোচা, আপনে টিকিট খরিদে ঔর হামে ক্যা বিনা টিকেট মে সফর কর রাহে হ্যায়'? সত্যেন-ও নিজেকে সামলাতে না পেরে প্রায় চিৎকার করে উঠলো 'বোকার   মতো চিৎকার করবেন না।। কোনমতে খেয়েই কেউ শুয়ে পড়েনা।। তার উপর রাত দশটা পর্যন্ত আমি জাগতেই পারি।। দশটার পর অবশ্যই লাইট জ্বালিয়ে রাখার কথা নয়।। কেউ আপত্তি করলে লাইট নেভাতেই হবে'।। "নেহি বহুত্ হো গায়া, আভি লাইট অফ্ হাম্ কর দেগা"।। ক্ষিপ্ত বাঘের মতো হুঙ্কার দিলো সত্যেন, "যদি হিম্মৎ থাকে তো লাইট নিভিয়ে দ্যাখান্।। রাত দশটা পর্যন্ত লাইট জ্বলবে"।।

লোকটি চুপ মেরে গিয়ে উঠে বসলো।। পায়ে জুতো গলিয়ে হাঁটা দিলো পিছনের গেটের দিকে।। কয়েক মূহুর্ত পরেই কালো কোর্টের টিটি সমেত ফেরৎ এলো নিজের আসনের দিকে।। টিটি এসেই বললেন, আরে খাওয়া হয়ে গেছে তো লাইট নেভাচ্ছেন না কেন আপনারা? সত্যেন ব্যাপারটি আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলো।। টিটিকে সে বললো, আরে দাদা আমার ওষুধ খেতে হবে।। আর উনি তখন থেকেই
"হামারা খানা হো যায়গা তো হাম্ লাইট বন্ধ্ কর দেগা" ইত্যাদি বলছেন।। যেন এটি ওনার জমিদারী।। -- "কিন্তু এখন তো দেখছি, এমন ভাব করছেন, যেন এটি আপনার জমিদারী"-- বলে উঠলেন টিটি।।
-- কেন আমার কি দেখলেন যা আপনার জমিদারী মনে হলো?
-- আপনি ওষুধ খাবেন বলে এখন সবাই কে জেগে বসে থাকতে হবে? আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ুন, যখন ওষুধ খাবেন, একবার আলো জ্বেলে নেবেন।।
-- সবাই বলতে আপনি কাকে বলতে চাইছেন, ঐ লোকটি একাই কি সবাই?
-- ফালতু কথা বলবেন না।। যা বললাম তাই করুন।।

এবার মুখ খুললেন সেই ভদ্রলোক যিনি সেই আগের বারেও প্রতিবাদ করে ছিলেন।। তিনি বলে উঠলেন,
"ও টিটি দাদা, আপনি তো ওর কথা শুনে কথা বলে চলে যাচ্ছেন।। কিন্তু আসল ঘটনাটি কি জানেন"?
-- আপনি আবার কি জানাবেন? বলেন টিটি।।
-- এই লোকটি রৌরকেলা থেকে ট্রেণে চেপে বসবার আগেই আমাদের বাঙ্কে উঠিয়ে ছেড়েছে।। সাতটা পঞ্চাশের মধ্যে খেয়ে দেয়ে আমাদের সবাইকে আলো নেভানোর কথা বলে সিট্ উঠিয়ে দিলো।। আমরা রীতিমতো কুঁজো হয়ে বসে ডিনার করলাম।।
-- ক্যা দাদা ইয়ে সব ক্যা বাত্ হ্যায়? টিটির প্রশ্ন।।
-- নেহি স্যার এইসা কৈ বাত নেহি।। উত্তর দিলো লোকটি।।

তিন তলা থেকে আর এক ভদ্রমহিলা বললেন, বসে ছিলাম, ঐ লোকটি জোর করে উঠিয়ে নিজের শোওয়ার বন্দোবস্ত করেছে।। আমাদের উপরে উঠে আসতে বাধ্য করেছে।। আমরা এ্যতো তাড়াতাড়ি শুতে চাইনি।। এবার সত্যেন এর দিকে বসা আর এক ভদ্রমহিলা বলে উঠলেন, তখন থেকে এই লোক টি-ই 'আমার খাওয়া হলেই আলো নিভিয়ে দেবো', 'আলো জ্বললে আমার ঘুম আসেনা' ইত্যাদি বলে তো জমিদারী দেখাচ্ছে।। ওর ইচ্ছে অনুযায়ী আমরা চলবো? উনি টিকিট করেছেন আর আমরা কি বিনা টিকিটের যাত্রী?

টিটি বুঝলেন হাওয়া খারাপ।। তিনি কড়া চোখে তাকালেন লোকটির দিকে।। বললেন, আপ ক্যা বোলে হামকো? কৈ শোনে কে লিয়ে রাজি নেহি হায়তো? এবার ডাব্বার বাইরের দিকের জোড়া সিট্ থেকে একজন বলে উঠলেন, ওনাকে বলুন, ফার্স্ট ক্লাসে গোটা কূপ বুক করে, যা খুশি করতে।। দাদা (সত্যেন) তো ঠিকই বলেছেন, এখানের আট জনের মধ্যে পাঁচ জন বললেই যতো অসুবিধা হোক আলো নিভিয়ে দেবেন।। না আমরা এখনই আলো নিভিয়ে দিতে বলছি না।।

টিটি এবার নিচু গলায় বললেন, সবাই মিলেমিশে চলুন, কয় ঘন্টার তো ব্যাপার।। সত্যেন বলে উঠলো, সেটি ওনাকে বোঝান।। একটু মিলে মিশে চলতে।। টিটি চুপচাপ চলে গেলেন।। লোকটি বলে উঠলো, "সব তো বাঙ্গালী আছে, ইসি লিয়ে এককাট্টা হো কর হামাকে ডিস্টার্ব কর রাহে"।। সত্যেন তাকালো তার দিকে।। চোখ দুটি কড়া করে বললো, ফালতু কথা একেবারে বলবেন না।। বাঙালি- অবাঙালির কথা বলবেন না একদম।। একটু ভদ্রতা শিখুন।। একসঙ্গে জার্নি করলে সবার সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে হয়।। লোকটি কিছু না বলে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়লো।।

ঝগড়া জেতার আনন্দে সত্যেন মনোযোগ সহকারে খুললো ইরাবতি-র মেসেঞ্জার।।


চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন