ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস পর্ব-৫
...এবং ইরাবতির প্রেম
গৌতম আচার্য
সকাল বেলা সত্যেন এর ঘুম ভাঙলো দেরিতে।। গত কাল অনেক রাত্রে মানে প্রায় ভোরবেলায় ঘুম এসে ছিলো তার।। ঘুম ভাঙতেই সত্যেন তড়িঘড়ি ঘড়ি তে সময় দেখে আঁতকে উঠলো।। ইচ্ছে ছিলো ঘুম থেকে উঠে একবার মেসেঞ্জার চেক্ করবে।। কিন্তু এখন যে অবস্থা তাতে এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করবার সময় তার নেই।। ঠিক সাড়ে নটায় গাড়ি বলা আছে।। মুরলি (ড্রাইভার) জানে, স্যার এর সাড়ে ন'টা মানে নয়টা একত্রিশ নয়।।
গাড়ি বুক করলে সারভিস সেন্টার থেকে সাধারণতঃ মুরলিকেই পাঠানো হয়।। বার দুই মুরলি দেরি করে পৌঁছানো তে সত্যেন মুরলির বিরুদ্ধে রিপোর্ট পর্যন্ত করেছিলো।। তাই আজ যদি তার দেরি হয় তাহলে সেটা দৃষ্টিকটু হয়ে যায়।। তাড়াতাড়ি প্রায় এক লিটার জল খেয়ে বাথরুমে ছুটলো সত্যেন।।
ঠিক নয়টা আঠাশে মুরলির ফোন এসে গেলো "গুড মর্নিং স্যার।। মুরলি বোল রাহা হ্যায়।। ম্যায় নিচে আ গায়া"।। টাই তে নট বাঁধতে বাঁধতে সিড়িতে পা রাখলো সত্যেন।। আজ না হলো তার স্নান, না চা খাওয়া বা ব্রেকফাস্ট।। ঠিক সাড়ে নটায় গাড়িতে উঠে সত্যেন মুরলিকে বললো, " আজ নিদ্ সে উঠনে মে দের হো গ্যায়া, যানে কা রাস্তা মে একসাথ ব্রেকফাস্ট কর্ লেগা"।। "জি সাব্"-- উত্তর দিলো মুরলি।।
এটি সত্যেন এর স্বভাব যে, সে প্রত্যেকবার মুরলিকে ব্রেকফাস্ট করবার টাকা দেয়।। প্রথম যেবার মুরলি তাকে নিয়ে রাজগামপুর গিয়েছিলো, সেবার-ই তার কাছ থেকে জেনে ছিলো, মুরলির বৌ অসুস্থ হওয়ায় তার পক্ষে কখনও মুরলির জন্য সকাল বেলা খাবার করে দেওয়া সম্ভব হয় না।। যেদিন সুযোগ পায় সেই দিন দুপুরে বাড়ি ফিরে বাড়ির খাবার খেতে পারে।। না হলে সারাদিন শেষে রাতে সে বাড়ির খাবার খায়।।
সেই থেকেই সত্যেন সকালে মুরলির জন্য টাকা দিয়ে আসছে সকালে ব্রেকফাস্ট আর দুপুরে লাঞ্চ খাওয়ার জন্য।। প্রথম এক দুইবার মুরলি লজ্জা পেয়ে নিতে চায়নি টাকা।। কিন্তু প্রত্যেক মাসের এই যোগাযোগ ক্রমশই তাকে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায় এখন মুরলির আর টাকা নিতে লজ্জা তো করেই না, উল্টে এটি যে তার প্রাপ্য এমন একটি মানসিকতা তার তৈরি হয়ে গেছে।। কালুঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট এর আগেই নির্দিষ্ট ধাবা তে মুরলি গাড়ি দাঁড় করায়।। তারপর " আইয়ে স্যার বহুত গাজব্ খানা হ্যায় ইধারকা।। আপ্ খুশ হো যায়েঙ্গে" বলে গাড়ির দরজাটি খুলে ধরে।।
সত্যেন ধাবা তে ঢুকেই বোঝে এখানে সব নন্- ভেজ্ আইটেম বিক্রি হয়।। যদিও এটি নভেম্বর মাস।। খুব না হলেও একটু একটু ঠান্ডা ভাব রয়েছে আবহাওয়া তে, তবু দেরি হওয়ার জন্য আজ তার স্নান করাই হয় নি।। শুধু প্রাতকৃত্য সেরে দাঁত মেজে মুখটি সাবান দিয়ে ধুয়ে নিয়েছে।। গীজার চালু করে জল গরম করবার মতো সময় তার ছিলোনা।। তাই আজ ভেজ্ এর উপরেই থাকবে বলে প্ল্যান করেছিলো।। একটি মাঝ বয়সী লোক এসে দাঁড়িয়েছে অর্ডার নেবে বলে।।
মুরলির দিকে তাকিয়ে সত্যেন মুরলিকে নির্দেশ দিলো, মুরলি হামলোক ক্যা খায়গা উনে বাতা দ্যো-- নির্দেশ দিলো সত্যেন।। মুরলি সেই ওয়েটার কে বললো, "এক ডবল্ আন্ডে পাঞ্জাবী অমলেট্, চার গ্রিলড্ চিকেন টোস্ট ঔর এক সিঙ্গল আন্ডে পাঞ্জাবী অমলেট্ ঔর দো পিস্ টোস্ট, দো কাপ ডবল্ হাফ্ দুধ চাই"।। তারপর সত্যেনকে জিজ্ঞেস করলো, "স্যার চা-ই তো, না আপকে লিয়ে কফি বলু"? বাধা দিয়ে সত্যেন বললো, "দো ডবল আন্ডে অমলেট, চার পিস্ করকে টোস্ট ঔর যো চা-ই বোলা ভাইয়া নে, ওহি দিজিয়ে"।। মুরলির চোখমুখ কৃতজ্ঞতাবোধে ভরে উঠলো।।
হঠাৎ মনে পড়তেই ব্লেজারের পকেট থেকে মোবাইল বার করলো সত্যেন।। সোজা মেসেঞ্জারে ঢুকেই সে দেখলো রাত চারটে তেত্রিশে ইরাবতি লিখেছে, "কি বন্ধু মেসেজ করে আবার ডিলিট কেন? আমার তো পড়া হলো না কি লিখেছিলেন? এটা কি ঠিক হলো"? একরাশ রাগ মাথায় এসে জড়ো হলো সত্যেন এর।। সে তড়িঘড়ি লিখলো, "মেসেজ করার পর রাত চারটে কুড়ি পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম।। অনলাইনে থেকেও যদি তা দেখবার প্রয়োজন না থাকে তাহলে সেই মেসেজ এর কি আর কোন মূল্য থাকে? তাই ডিলিট করে দিয়েছি"।।
ব্রেকফাস্ট এসে গেছে।। এবার মোবাইল আবার পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে সত্যেন মনো সংযোগ করলো ব্রেকফাস্ট খাওয়ায়।। মিনিট কুড়ি পর, গাড়িতে উঠে সত্যেন নির্দেশ দিলো, "মুরলি ভাই, মেরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক সাড়ে দশ বাজে হ্যায়।। থোরা জলদি চালাইয়ে জি"।। মুরলি উত্তর করলো, "জি সাহাব"।। গাড়ির গতি বৃদ্ধি পেলো।।
চলবে...
সকাল বেলা সত্যেন এর ঘুম ভাঙলো দেরিতে।। গত কাল অনেক রাত্রে মানে প্রায় ভোরবেলায় ঘুম এসে ছিলো তার।। ঘুম ভাঙতেই সত্যেন তড়িঘড়ি ঘড়ি তে সময় দেখে আঁতকে উঠলো।। ইচ্ছে ছিলো ঘুম থেকে উঠে একবার মেসেঞ্জার চেক্ করবে।। কিন্তু এখন যে অবস্থা তাতে এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করবার সময় তার নেই।। ঠিক সাড়ে নটায় গাড়ি বলা আছে।। মুরলি (ড্রাইভার) জানে, স্যার এর সাড়ে ন'টা মানে নয়টা একত্রিশ নয়।।
গাড়ি বুক করলে সারভিস সেন্টার থেকে সাধারণতঃ মুরলিকেই পাঠানো হয়।। বার দুই মুরলি দেরি করে পৌঁছানো তে সত্যেন মুরলির বিরুদ্ধে রিপোর্ট পর্যন্ত করেছিলো।। তাই আজ যদি তার দেরি হয় তাহলে সেটা দৃষ্টিকটু হয়ে যায়।। তাড়াতাড়ি প্রায় এক লিটার জল খেয়ে বাথরুমে ছুটলো সত্যেন।।
ঠিক নয়টা আঠাশে মুরলির ফোন এসে গেলো "গুড মর্নিং স্যার।। মুরলি বোল রাহা হ্যায়।। ম্যায় নিচে আ গায়া"।। টাই তে নট বাঁধতে বাঁধতে সিড়িতে পা রাখলো সত্যেন।। আজ না হলো তার স্নান, না চা খাওয়া বা ব্রেকফাস্ট।। ঠিক সাড়ে নটায় গাড়িতে উঠে সত্যেন মুরলিকে বললো, " আজ নিদ্ সে উঠনে মে দের হো গ্যায়া, যানে কা রাস্তা মে একসাথ ব্রেকফাস্ট কর্ লেগা"।। "জি সাব্"-- উত্তর দিলো মুরলি।।
এটি সত্যেন এর স্বভাব যে, সে প্রত্যেকবার মুরলিকে ব্রেকফাস্ট করবার টাকা দেয়।। প্রথম যেবার মুরলি তাকে নিয়ে রাজগামপুর গিয়েছিলো, সেবার-ই তার কাছ থেকে জেনে ছিলো, মুরলির বৌ অসুস্থ হওয়ায় তার পক্ষে কখনও মুরলির জন্য সকাল বেলা খাবার করে দেওয়া সম্ভব হয় না।। যেদিন সুযোগ পায় সেই দিন দুপুরে বাড়ি ফিরে বাড়ির খাবার খেতে পারে।। না হলে সারাদিন শেষে রাতে সে বাড়ির খাবার খায়।।
সেই থেকেই সত্যেন সকালে মুরলির জন্য টাকা দিয়ে আসছে সকালে ব্রেকফাস্ট আর দুপুরে লাঞ্চ খাওয়ার জন্য।। প্রথম এক দুইবার মুরলি লজ্জা পেয়ে নিতে চায়নি টাকা।। কিন্তু প্রত্যেক মাসের এই যোগাযোগ ক্রমশই তাকে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায় এখন মুরলির আর টাকা নিতে লজ্জা তো করেই না, উল্টে এটি যে তার প্রাপ্য এমন একটি মানসিকতা তার তৈরি হয়ে গেছে।। কালুঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট এর আগেই নির্দিষ্ট ধাবা তে মুরলি গাড়ি দাঁড় করায়।। তারপর " আইয়ে স্যার বহুত গাজব্ খানা হ্যায় ইধারকা।। আপ্ খুশ হো যায়েঙ্গে" বলে গাড়ির দরজাটি খুলে ধরে।।
সত্যেন ধাবা তে ঢুকেই বোঝে এখানে সব নন্- ভেজ্ আইটেম বিক্রি হয়।। যদিও এটি নভেম্বর মাস।। খুব না হলেও একটু একটু ঠান্ডা ভাব রয়েছে আবহাওয়া তে, তবু দেরি হওয়ার জন্য আজ তার স্নান করাই হয় নি।। শুধু প্রাতকৃত্য সেরে দাঁত মেজে মুখটি সাবান দিয়ে ধুয়ে নিয়েছে।। গীজার চালু করে জল গরম করবার মতো সময় তার ছিলোনা।। তাই আজ ভেজ্ এর উপরেই থাকবে বলে প্ল্যান করেছিলো।। একটি মাঝ বয়সী লোক এসে দাঁড়িয়েছে অর্ডার নেবে বলে।।
মুরলির দিকে তাকিয়ে সত্যেন মুরলিকে নির্দেশ দিলো, মুরলি হামলোক ক্যা খায়গা উনে বাতা দ্যো-- নির্দেশ দিলো সত্যেন।। মুরলি সেই ওয়েটার কে বললো, "এক ডবল্ আন্ডে পাঞ্জাবী অমলেট্, চার গ্রিলড্ চিকেন টোস্ট ঔর এক সিঙ্গল আন্ডে পাঞ্জাবী অমলেট্ ঔর দো পিস্ টোস্ট, দো কাপ ডবল্ হাফ্ দুধ চাই"।। তারপর সত্যেনকে জিজ্ঞেস করলো, "স্যার চা-ই তো, না আপকে লিয়ে কফি বলু"? বাধা দিয়ে সত্যেন বললো, "দো ডবল আন্ডে অমলেট, চার পিস্ করকে টোস্ট ঔর যো চা-ই বোলা ভাইয়া নে, ওহি দিজিয়ে"।। মুরলির চোখমুখ কৃতজ্ঞতাবোধে ভরে উঠলো।।
হঠাৎ মনে পড়তেই ব্লেজারের পকেট থেকে মোবাইল বার করলো সত্যেন।। সোজা মেসেঞ্জারে ঢুকেই সে দেখলো রাত চারটে তেত্রিশে ইরাবতি লিখেছে, "কি বন্ধু মেসেজ করে আবার ডিলিট কেন? আমার তো পড়া হলো না কি লিখেছিলেন? এটা কি ঠিক হলো"? একরাশ রাগ মাথায় এসে জড়ো হলো সত্যেন এর।। সে তড়িঘড়ি লিখলো, "মেসেজ করার পর রাত চারটে কুড়ি পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিলাম।। অনলাইনে থেকেও যদি তা দেখবার প্রয়োজন না থাকে তাহলে সেই মেসেজ এর কি আর কোন মূল্য থাকে? তাই ডিলিট করে দিয়েছি"।।
ব্রেকফাস্ট এসে গেছে।। এবার মোবাইল আবার পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে সত্যেন মনো সংযোগ করলো ব্রেকফাস্ট খাওয়ায়।। মিনিট কুড়ি পর, গাড়িতে উঠে সত্যেন নির্দেশ দিলো, "মুরলি ভাই, মেরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক সাড়ে দশ বাজে হ্যায়।। থোরা জলদি চালাইয়ে জি"।। মুরলি উত্তর করলো, "জি সাহাব"।। গাড়ির গতি বৃদ্ধি পেলো।।
চলবে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন