বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস (পর্ব- ৬)।। ....এবং ইরাবতির প্রেম — গৌতম আচার্য।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 




ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস (পর্ব- ৬)

....এবং ইরাবতির প্রেম
গৌতম আচার্য



ফেরার পথে সত্যেন আবার মোবাইল খুললো।। চলে গেলো মেসেঞ্জারে।। হ্যাঁ মেসেজ এসেছে।। তাড়াহুড়া করে অন্ করলো ইরাবতির মেসেঞ্জার বক্স।। "প্লিজ্ রাগ করবেননা বন্ধু।। বুঝতে পারিনি।। কথা হচ্ছিলো এক ছোটবেলার বন্ধুর সঙ্গে"।। তারপর-ই একটি ছোট্ট ইমোজি- একজন মাথার টুপি খুলে টুপি সমেত তার ডান হাত একবার মাথায় একবার শূন্যে নাবাচ্ছে।। সত্যেন তেমন কোন অর্থ বুঝলো না সেই ইমোজির।। তবে মনটি খুব দুর্বল হয়ে উঠলো ইরাবতি সম্পর্কে।। উপরে তাকিয়ে দেখলো last seen at 6:45 pm. অর্থাৎ এখন থেকে ঠিক কুড়ি মিনিট আগেই ইরাবতি অন্ ছিলো।। হয়তো মেসেজ টি সত্যেন খুলেছে কিনা সেই আগ্রহ তেই।।

সত্যেন বিনয় মিশিয়ে লিখলো, "না না হতেই পারে, ভুল আমার-ই।। আসলে খুব উতলা হয়ে পড়েছিলাম।। এখন বুঝতে পারছি, মেসেজটি ডিলিট না করলেই ভালো হতো।। আই এ্যাম্ স্যরি"।। সেন্ড করে দিলো।। আবার সেই একই ঘটনা।। কোন উত্তর নেই।। অবশ্য এখন ইরাবতি অফ্ লাইন।। ফোন বন্ধ করে সত্যেন বাংলা হিন্দি মিলিয়ে মুরলিকে বললো, হাম্ ভুল গায়ে থে।। রাস্তায় কি আর ভালো চাই দুকান মিলেগি? মুরলী সত্যেন এর হিন্দি শুনে মুচকি হেসে বললো, জী সাব্ ও সেক্টর মে মিলেগি।। হাম রুক্ দেগা।।

সেক্টরে চায়ের দোকান পৌছানোর আগেই অপেক্ষার অবসান ঘটলো।। মেসেঞ্জারে মেসেজ বক্সে মেসেজ আসবার শব্দ হলো।। উদগ্রীব সত্যেন একবুক আশা নিয়ে মেসেজ অন্ করতেই ইরাবতির মেসেজ জ্বলজ্বল করে উঠলো।। তাড়াতাড়ি মেসেজ খুলেই পড়তে শুরু করলো সত্যেন।। "আহ্ স্যরির কি আছে বলুন তো? আমি কতো জনকে ব্লক করে দিয়েছি এই একই কারণে।। দোষটি আসলে আপনার নয়, আমার-ই।। কেউ কোন মেসেজ পাঠালে সেটি দ্যাখা তো সত্যি জরুরী৷। যাক্ এবার সাহেবের রাগ কমেছে তো"? সব শেষে ইরাবতি আরও লিখেছে, "উদগ্রীব রইলাম উত্তরের আশায়"।।

সত্যেন এক কথায় মুগ্ধ।। এমন একজনই সত্যি বন্ধু হওয়ার যোগ্য।। এরকমটি তো সে খুঁজে গিয়েছে গোটা জীবন।। মনে মনে মা কালীকে প্রণাম আর কৃতজ্ঞতা জানায় সত্যেন।। তারপর মেসেজের উত্তর লিখতে শুরু করে, 'মেমসাহেব নিশ্চিত থাকতে পারেন, আমি কোন রাগ করিনি।। হ্যাঁ অভিমান কিছুটা হয়ে ছিলো।। কিন্তু এই মূহুর্তে আমি একদম ফ্রেস্........।। আসলে......" মুরলী গাড়ি দাঁড় করিয়ে ফেলেছে সেক্টরে।। চায়ের দোকান এসে গেছে।। কিছু করবার নেই।। সে- ই আগ্ বাড়িয়ে মুরলীকে এই চায়ের দোকানের কথা বলেছিলো।। তাড়াতাড়ি 'আসলে' শব্দটি ডিলিট করে আগের অংশটি পোস্ট করে দিলো সত্যেন।।

"স্যার চা-ই বলু, কফি তো নেহী"? তুম যো চাহে ওহি বোল দো--- মনে মনে চূড়ান্ত বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে সত্যেন।। কিছু করবার নেই।। একেবারে হোটেল পৌঁছে আবার মেসেঞ্জার অন্ করবে সে।। সেক্টর এসে গেছে মানে রৌরকেলায় ঢুকে গেছে তারা।। আর কুড়ি- পঁচিশ মিনিটের মধ্যেই হোটেল।। তারপর অঢেল সময়।। তড়িঘড়ি চা খেয়ে নিয়ে চায়ের বিল মিটিয়ে দিলো সত্যেন।। কখন হোটেলে পৌছায় তার জন্য প্রায় ছটফট করছে তার মন।। আবার মোবাইল ফোনে মেসেজ ঢোকার শব্দ।। মেসেঞ্জারে না গিয়ে স্ক্রীনে নোটিফিকেশান চেক্ করে সত্যেন।। হ্যাঁ তার ধারনাই ঠিক।। মেসেজ করেছে ইরাবতি।। খুব ইচ্ছা করছে দেখতে, নতুন কি লিখেছে ইরাবতি।। নিজেই নিজের মনকে স্বান্ত্বনা দেয়, "ধৈর্য ধরো সত্যেন বাবু, কোনকিছু তাড়াহুড়া করতে নেই আর একবার শুরু করে কোন কিছুতেই বারবার ব্রেক নিতে নেই"।।

খুব বিরক্ত লাগছে সত্যেন এর।। গাড়ি যেন চলছেই না।। গাড়িতে যতো স্পীড আছে, সেই স্পীডেই তো মুরলী চালাতে পারে।। তাতে তো একটু আগেই গিয়ে পৌছানো যায়।। মাথা থেকে ফন্দি বার করে সত্যেন বলে, "মুরলী ভাই থোরা জলদি চলিয়ে, হামে টয়লেট যানা হ্যায়"।। মুরলী তার চিরাচরিত স্বভাবে বলে ওঠে, 'জী সাব্'।।

গাড়ি উর্ধ্ব গতিতে ছুটতে আরম্ভ করে।।


চলবে...








কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন