বুধবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

অমর একুশে... নিবন্ধ-১।। তপন তরফদার।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 



নিবন্ধ

অমর একুশে -১

স্বপনের শহিদ স্তম্ভ

 

তপন তরফদার

 

        ইতিহাসের বিশেষ ঘটনাকে চিরস্থায়ী করতে প্রাচীনকাল থেকেই  পিরামিডমিনারস্তম্ভসৌধ্য নির্মাণ করেছেন আন্তর্জাতিক কয়েকটি স্মৃতিস্তম্ভর আলোচনা করতে গেলে বাংলাদেশের ঢাকায় গড়ে তোলা আনর্তজাতিক মাতৃভাষা স্মারকের প্রসঙ্গ আসবেই কারন প্রত্যকের মাতৃভাষাকে সুরক্ষিত করার অঙ্গীকার এই স্মারক আমরা জানি অনেক স্মৃতি স্তম্ভমন্দির-মসজিদ ইত্যাদি বিভিন্ন বাধা বিঘ্নের ফলে সঠিকভাবে নির্মাণ হয়নি আমাদের ভাষাশহীদের স্মারক  অন্যতম নিদর্শন এই বিষয়ে বিশেষ  আলোকপাতের খামতি রয়েগেছে

 মাতৃভাষার জন্য লাগাতার আন্দোলনের ফলস্বরূপ  ১৯৫৬ সালে ক্ষমতাসীন কৃষক -শ্রমিক পার্টি , ২১ শে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারের  ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন অনুরোধ করেছিলেন, শিল্পী  হামিদুর রহমানকে শহীদ মিনারের নকশা করার জন্য।

হামিদুর রহমানের স্বপ্ন সম্পূর্ণ রূপ পায়নি। কেন পায়নি  সে  অন্য ইতিহাস। হামিদুরের ইচ্ছা ছিল একটা গম্বুজের খন্ডিত ও বিমূর্ত  ভাব থাকবে মিনারে যা সূর্যের আলোয় ছায়র সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ অবয়ব নেবে।  পাঁচটি স্তম্ভে থাকবে স্টেনড  গ্লাস। গ্লাসের গায়ে  থাকবে লেমন ইয়োলো  আর প্রুশিয়ান ব্লু রঙের অসংখ্য নয়ন। সূর্যের আলোয় জেগে উঠবে অসংখ্য নয়ন।মেঝেতে কালো মার্বেলের উপর অগণিত লাল পায়ের ছাপ। ক্রুশবিদ্ধ যীশুকে   ভক্তরা যেমন তুলে  ধরেছিল, সেইরকমই চারটি ছেলেকে তুলে ধরছে,এমন একটি ভাস্কর্য থাকবে বড় স্তম্ভটির সামনে। সিঁড়ির উপর দিকে থাকবে দুটো  প্রহরী মূর্তি। মূর্তি দুটি সর্বকালের জাগ্রত পাহারাদার। যে কোনো অশুভ শক্তিকে প্রতিরোধ  করতে সদা প্রস্তুত। সিঁড়ির মাঝখানে থাকবে লোকজ  শিল্পরীতির মাছ। মাছ সাধারণত উর্বরতার  আর মাতৃত্বের প্রতীক  বলে মনে করা হয়।আর থাকবে একটা ঝর্ণা, অসংখ্য চোখের ভিতর দিয়েই ঝরনার জল প্রবাহিত হবে। অগণিত মানুষের অবিরাম কান্না ঝরছে ঝর্ণার স্রোতে। থাকবে আমাদের শহরের সব থেকে  বড়  টাওয়ার ক্লক। এ দেশের   সবাই বাংলা ভাষার ঘড়ি দেখে সময় মিলিয়ে চলবে। থাকবে একটা রঙিন সূর্য ঘড়ি, প্রহর অনুযায়ী  বিভিন্ন রং-এ সূর্য ছায়া ফেলবে। আর বসার জন্য বেঞ্চগুলো হবে ঠিক মায়ের কোলের মতন আকারে। শহীদ মিনারের সিঁড়িই প্রতীক হবে সারা বাংলা দেশের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির উত্থানের গর্ব। জন্ম নেবে নতুন শিল্প-সাহিত্য।

১৯৫৭-র  নভেম্বরে কাজ শুরু  করে ৫৮ র ২০ শে ফেব্রুয়ারির ভিতর শহিদ মিনারের ভিত মঞ্চ  আর তিনটি   স্তম্ভ  সম্পূর্ণ  করা হয়। শহীদ মিনারের বেসমেন্টের দুপাশে  প্রায় হাজার বর্গফুটের একটি 'ম্যুরাল' আঁকেন ভাষা আন্দোলনের উপর। শহিদ স্তম্ভ টির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন লক্ষ টাকা। নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধানের  জন্য সঙ্গে হামিদুরের সঙ্গে গ্রিক স্থপতি ডঙ্গিয়াডেস ও সঙ্গী হন।

         ১৯৫৮ সালের মার্চ মাসে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। শহিদ মিনারের নির্মাণ  কাজের বাধার সৃষ্টি করা হয়। অক্টোবর মাসে সামরিক শাসন জারি হয়। হামিদুর রহমানকে দেশ ত্যাগ করে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে হয়।


পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি' পাঠ্যের বিরুদ্ধে ছাত্ররা 'শিক্ষাদিবস' আন্দোলনের মাধ্যমে আবার রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শুরু করে।ছাত্রদের এই অসন্তোষের পারদ কমাবার জন্য জেনারেল আজম খান ১৯৬২ সালে একটি কমিটি গঠন করেন মিনারের নির্মাণ  কার্য সম্পন্ন করার জন্য। মে মাসের প্রথম সপ্তাহের ভিতরে সমস্ত সুপারিশ জমা দিতে বলেন। ১৯৬৩  সালের  একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহিদ আবুল  বরকতের ৭২ বছরের বয়স্কা মা হাসিনা বেগম প্রথম  পুষ্পার্ঘ প্রদান করেন। এরপর থেকে প্রতিবছরই নতুন নতুন সংগ্রামের পীঠস্থান হয় এই শহীদ মিনার।

১৯৭১সালের  ২৫শে মার্চ পূর্ব বাংলায় গণহত্যা যুদ্ধ শুরু হয়।২৬  শে মার্চ পাক সেনাবাহিনী গোলাবর্ষণ করে  মিনারের স্তম্ভ গুলো গুঁড়িয়ে দেয়। ১৯৭২  সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবু সইদ চৌধুরী,শহিদ মিনারের পুনর্গঠনের  উদ্যোগ নেন। বিভিন্ন আলোচনা বৈঠক হয় কিন্তু হামিদুর রহমানের পূর্ণাঙ্গ স্তম্ভ গঠন করা হয় না। ১৯৭১ সালের ধ্বংস হওয়া স্তম্ভের উপরই শহিদ স্তম্ভ পুননির্মাণ করা হয়। স্তম্ভগুলি ছোট করে করা হয়।

ভাষা শহিদের স্মারকের তাৎপর্য  ও ব্যাখ্যায়, অধ্যাপক  রফিকুল ইসলামের বক্তব্য দিয়ে শেষ করব। সৌধ্যে স্তম্ভগুলি মাতৃভূমি, মাতৃভাষা, তথা মা ও তাঁর  শহিদ সন্তানদের নিয়ে অতন্দ্র  স্নেহে অর্ধবৃত্তাকারে দন্ডায়মান। বিশ্ব সংসারে সমগ্র সন্তানদের মঙ্গল কামনায় দোয়া পড়ছেন।

          হামিদুরের স্বপনের শহীদ  স্মারক অসম্পূর্ণ। বাংলা ভাষা বা মাতৃভাষার সুরক্ষা  আজও অসম্পূর্ণ। অনেক মাতৃভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলা ভাষা সীমিত হচ্ছে। মাতৃভাষার প্রচার, প্রসার, পরিব্যাপ্তির জন্য আমাদের  সবাইকেই  অগ্রণীর ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন