শনিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২২

রবিবাসরীয় বিভাগ—৩০।। আজকের গল্প।। গল্প হলেও সত্যি—২ — মায়া দে।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 




রবিবাসরীয় বিভাগ—৩০


আজকের গল্প


গল্প হলেও সত্যি—২

       মায়া দে



দাদুর কাছে গল্প শোনার মজাই আলাদা।  তোজো দাদুর কোলে  বসেই গল্প শোনে। ফুল, পরী ,পাখি , 

প্রজাপতি ,রাক্ষস খোক্ষস , ব্রহ্মদত্তি  সব - সব। বেশ বড় বড় চোখ করে ,  আর মস্ত বড় হাঁ করে।



তোজো এখন বেশ বড়ো।  কিছুদিন গেলেই লাফ দিয়ে সাতে পা দেবে।  এখন সে দাদুর কাছ থেকে চিড়িয়াখানার গল্প শোনে,  জেলখানার গল্প ও শোনে। দাদু জেলসুপার ছিলেন।  দাদুর কাছ থেকে জেলখানার নানান গল্প তার শোনা।  তার কচি মনে জেলখানা আর চিড়িয়াখানার বিষয় যেন এক। খাঁচায় বন্দী সব। বাইরে বেরোতে পারে না । কেমন অদ্ভুত ব্যাপার! বাঘ কি খায়? কেমন ঘুমায়? হাতি কেমন স্নান করে? সিংহ কেমন হাই তোলে? এসব প্রশ্ন সে প্রায়ই করে।

তেমনি জেলখানার খাঁচার ভেতর লোকেরা কি খায়? কোথায় ঘুমায় ? কোথায় স্নান করে?  তারা বাড়ি ফিরবে কি করে? হাজার প্রশ্ন তার ।  দাদু তাকে সব বুঝিয়ে বলে। সেই কচি মনোকাশে কতো যে নক্সী আঁকা চলে---



মামার বাড়ি পাশেই একটা মেলা বসেছে। সে কারনে সে মায়ের সঙ্গে মামাবাড়ি এলো।  মেলার একটা কোনে বসেছে গানের আসর।  ঠিক হলো তোজো সেখানে গান গাইবে।সে এখন হারমোনিয়াম ধরে শুধু সা রে গা মা পা করে না। হারমোনিয়াম বাজিয়ে কতগুলো গান ও তুলেছে।  বিকেলে গানের আসর।  বেশ কয়েকবার ঘরে অনুশীলন করে দাদুর  সঙ্গে বেরিয়ে পড়লো। শিশুমন ভয়শূণ‍্য। বেশ ভালো গাইলো। দাদু ও বে-শ খুশি।



ছোট্ট নাতি আসরে গান গেয়েছে বলে কথা!--- রাত্রে নাতিকে ভালো ভুরিভোজ করাতে হবে । ভাবা মাত্রই - দাদু নাতি চলল মাংসের দোকানে।  মাংসের দোকানে খাঁচার ভেতরে  কতগুলো মু্রগি রাখা । তোজো একটা কালো মুরগির দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল দাদু ওই মুরগির মাংস... ।  নাতির কথা মত মুরগির  দর দাম হল । হঠাৎ  মু্রগিটা  কিভাবে যেন দোকানির হাত থেকে উড়ে এসে দাদুর দু পায়ের মাঝে থপ্ করে বসে পড়ল। দাদু আচমকা এই দৃশ্য দেখল। দুই হাত দিয়ে তুলে ধরল  মুরগিটাকে। মনের মধ্যে কেমন" আহারে " এই বোধ । দাদু দোকানীকে বলল ---"এ ভাই । মাংস আজ আমি নেব না। মুরগির মূল্য তুমি নাও  ভাই।"


মুরগিটা যেন প্রাণভিক্ষা চেয়ে ছিল । দাদু তাকে মুক্তি দিল।

দোকানদারের চোখ খুশিতে জ্বল জ্বল করে উঠল। তোজো তো কিছুই বুঝল ন।

দাদু তাকে একটা মিষ্টির দোকানে নিয়ে গেল ।বেশ বড় বড় মিষ্টি । দাদু বলল--" যত খুশি খাও"।  মিষ্টি! খুব খুশি। গপা গপ্ রসগোল্লা চলে যাচ্ছে যথাস্থানে। দেখে দাদুর চোখেমুখে তৃপ্তি । কি প্রশান্তি।


বিকেল গড়িয়ে সন্ধে। বাড়ি ফেরার পালা। দাদুর হাত ধরে লাফাতে লাফাতে চলছে  তোজো। হঠাৎ  দাদুকে প্রশ্ন :  "দাদু তুমি মুরগিটা নিলে না কেন?ঐ খাঁচাটা কি মুরগির জেলখানা? ওর কি দোষ?"

 

দাদু নিরুত্তর। 

চারিধার ততোক্ষনে অন্ধকার।










1 টি মন্তব্য: