বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২২

ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস (পর্ব-৪)।। ...এবং ইরাবতির প্রেম। গৌতম আচার্য।।Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।

 



ধারাবাহিক প্রেমের উপন্যাস (পর্ব-৪)

...এবং ইরাবতির প্রেম

গৌতম আচার্য


এক প্রস্থ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে সত্যেন ইরাবতিকে লিখলো, "আমার বন্ধুত্বের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাকে ধন্য করলেন আপনি।। এর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই বন্ধু।। আশা করি আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধন জীবনের গন্ডী ছোঁবে"।। একদৃষ্টে সত্যেন চেয়ে আছে ইরাবতির মেসেঞ্জারের দিকে।। ইরাবতি মেসেঞ্জারে অন্ আছে।। স্পষ্ট মেসেঞ্জারের মাথার ওপর জ্বলজ্বল করছে "online".

অনেকক্ষন হয়ে গেলো।। ইরাবতি এখনও "online". কিন্তু তাকে কোন প্রত্তুত্যর করছে না।। এমনকি তার মেসেজ দেখছে না পর্যন্ত।। খুব রাগ হচ্ছে সত্যেন এর।। অস্হির লাগছে তার।। মনে মনে ভাবছে, "এ কি রে বাবা? উজ্জ্বল লেখা "online" তবু একবার দেখা পর্যন্ত নেই"? বুঝতে পারে, হয়তো "লেট লতিফ"।। তার friend request দেখতে সময় নিয়েছে প্রায় বারোটি দিন।। এবার হয়তো মেসেজ দেখার জন্য তার সময় লাগবে চব্বিশ দিন।।

তবে যাই হোক, friend request তো accept করে নিয়েছে।। এবার তার মেসেজ দেখবার জন্য অপেক্ষা।। হ্যাঁ, সে করবে অপেক্ষা।। তবে একবার সেই পর্ব চুকলেই সত্যেন ঠিক নিজেকে মেলে ধরতে পারবে ইরাবতির সামনে।। আর সে নিশ্চিত, ইরাবতি তাকে এড়িয়ে যেতে পারবে না।।

বারো দিনের প্রতিক্ষীত সময়ে কতো না মানসিক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেছে সে।। accept করবে তো? যদি decline করে দেয়? কিম্বা যদি না দেখতে পেয়ে অনন্তকালের জন্য friend request  waiting এ চলে যায়? তার নিজের profile এই তো প্রায় আড়াই শো টা waiting list জমে আছে।। মাঝে মাঝে যখন নতুন কোন friends request আসে, তার profile দেখতে গিয়ে সে তো কতোবার দেখেছে তা।।

এ আর এক যন্ত্রণা শুরু।। বেশ ভুলতে বসেছিলো ইরাবতিকে।। নতুন করে আবার শুরু হলো উদ্বেগ।। আবার ঢুকে পড়লো ইরাবতির ম্যাসেঞ্জারে।। এখনও online? তবু তার মেসেজ দেখবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে না? বিরক্ত হয়ে উঠছে সত্যেন।। এক একবার ভাবছে মেসেজটিকে ডিলিট করে দেবে? একটু কি বেশি বেশি লেখা হয়ে গেছে? ধন্য শব্দটি কি একটু আদিখ্যেতা হয়ে গেছে?

সত্যেনের বুকের ভেতরটা আশা- আকাঙক্ষার দোলা তে দুলে উঠছে।। আশা এটাই, তার friend request ইরাবতি accept করেছে।। আর আশঙ্কা এটি, কখন সে মেসেজ করেছে অথচ ইরাবতি তার কোনও প্রত্যুত্তর করছে না।। অথচ মেসেঞ্জারে online দেখা যাচ্ছে।। তার মানে সে আছে মেসেঞ্জারে।। হঠাৎ তার মনে হয়, আচ্ছা, ফেসবুকে অন থাকলেও তো তার মেসেঞ্জার অন্- ই দেখাবে।। শান্ত হয় সত্যেনের মন।। ভাবে নিশ্চয়ই ইরাবতি ফেসবুক করছে।। হয়তোবা একের পর এক কমেন্ট করছে বন্ধুদের পোস্ট-এ।।

সত্যেন মনে মনে ভেবে নিয়েছে ইরাবতি নিশ্চিত তার ফেসবুকে আছে এখন।। ঘড়িতে তাকিয়ে সত্যেন তো রীতিমতো অবাক।। রাত ২:১০. আবার মেসেঞ্জারে ঢুকলো সত্যেন।। হ্যাঁ এখনও ইরাবতি online. ভীষণ রাগ হচ্ছে সত্যেন এর।। এ্যতো রাত পর্যন্ত না ঘুমিয়ে ফেসবুকে online? "পাগলী কাঁহিকা" বলে ফোন অফ্ করে শুয়ে পড়লো সত্যেন।। ঘুম আসেনা চোখে।। এ এক নতুন যন্ত্রনা।।

বিছানায় একবার এপাশ, একবার ওপাশ।। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলে।। সত্যেন আবার মোবাইল এর অন্ সুইচে আঙুল ঠেকালো।। আলো জ্বলে উঠেছে মোবাইলে।। সোজা মেসেঞ্জারে।। আরে এখনও অন্ আছে ইরাবতি।। রাত তিনটে চব্বিশ।। মনে হচ্ছে ইরাবতি নির্ঘাত কারো সঙ্গে প্রেম করে।। চোখটি উপরে তুললো সত্যেন।। না কারো ডিপি তে সবুজ আলো জ্বলছে না।। তার লিস্টের বাঘা বাঘা ফেসবুকাররা এখন অফ্ লাইন।।

সত্যেন হতাশ।। তাহলে কি তার আশার গোড়ায় জল? ইরাবতি কি ইতিমধ্যেই engaged কারো সঙ্গে? আবার নিজেই ভেবে নেয়, তা তো হতেই পারে।। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক।। কার সঙ্গে সে engaged হবে, একান্তভাবেই তার নিজের ইচ্ছে।।

এবার সত্যেন সত্যি হতাশ।। না অতো কিছু ভেবে লাভ নেই।। নিজের করা মেসেঞ্জারের শব্দ গুলো অকারণ খরচ করবার কোন মানে হয় না।। দরকার নেই কিছু লেখবার।। "ডিলিট করবো" আর "ডিলিট করবো না" করতে করতেই কখন চারটে বেজে গিয়েছে তা বুঝতে পারেনি সত্যেন।। তবে সজাগ থেকেছে যদি মেসেজ ঢোকার কোন শব্দ হয়।। এবার সে ফাইনাল করে নিলো, অতো আদিখ্যেতার মেসেজ সে ডিলিট করেই দেবে।।

আবার ফোন তুলে নিলো সত্যেন।। সে ঠিক করলো মেসেজটি ডিলিট-ই করবে।। স্ক্রিন সেভার ছবিটির উপর থেকে চলে এলো সোজা মেসেঞ্জারে এবং ইরাবতি সার্চ করা মাত্র দেখলো ইরাবতি এখনও online. তার মানে তার ধারণা ভুল নয়।। স্হির নিশ্চিত হলো সে।। এ্যতো রাতে কেউ বাবা, মা, ভাই, বোন কিম্বা বন্ধুর সঙ্গে চ্যাটিং করবে না।। নিজের মেসেজে আঙুল চেপে ধরে তাকে সিলেক্ট করে-ই ডিলিট বটম্ চেপে ধরলো।। "ডিলিট ফর মি" আর "আন সেন্ড" -- দুটি অপশন এলো।। বিরক্ত আর হতাশ সত্যেন চেপে দিলো "আন সেন্ড" অপশনটি।।



চলবে...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন