জায়মান জীবন -২৯
বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী
জীবন বড়োই আহ্লাদের
১.
বন্ধন যত, সম্মোহন তত।
গেরো যত, ফের-ও তত।
লব্জ যত, কর্জও তত।
এই জীবন---বড়ো আহ্লাদের, বড়োই আদরের।
একে কে ছেড়ে যেতে চায়---কেউই নয়!
সকলেই ভাবে আরও ক'টা দিন বাঁচি;
মনে মনে ভাবে : ক'টা দিনই বা বাঁচলাম!
মনে মনে আরও ভাবে জীবনের চারিপাশে
ছড়ানো মায়াবী এই পৃথিবীকে কতটা বা চিনলাম!
কতটুকু জানা, বোঝা, ভাবা সম্ভবপর হল!
এই তো শেষপর্যন্ত চলে যেতে হবে।
যাওয়ার আগে যত রস চেটেপুটে খেয়ে নিই।
খেতে গিয়ে অবশ্য কেউ কেউ বিপাকেও পড়ে,
কেননা, রসও তো বিবিধপ্রকার!
সব রসই যে মিষ্ট হবে, সে নিশ্চয়তা নেই।
তিক্ত, কটু, কষায়, ঝাল, টক, লোনা---
রসের রকমফের আছে।
মিষ্ট ভেবে খেতে গিয়ে অন্যবিধ রসের আস্বাদ
কেউ কেউ তো পেয়েছে---আর, তখনই জীবনটি,
তার কাছে আর, মিষ্ট থাকেনি।
এহ বাহ্য, এতসব বিপত্তির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও
বন্ধন-গাঢ়-গূঢ় এই জীবনটিকে আমরা সকলেই
ভালোবাসি---এই রসালো জীবনে ওতপ্রোত জড়িয়ে
এতে অবগাহন করতেই চাই, বক্রী জীবন...
২.
দিবস এসেছে, জীবন গড়ালো
নিশীথ নেমেছে, জীবন ঘুমালো
সূর্য উঠেছে, জীবন জেগেছে
সূর্য ডুবেছে, জীবন সুষুপ্ত...
সোমকলা ওঠে, কল্পনা ভাসে
চাঁদ ডুবে যায়, কল্পনার ছুটি
রৌদ্রফলা জাগে, রংটিও ফোটে
নামছে ঐ ছায়া, রংটি তো নেই...
আন্ধার জাগে, রহস্য ঘনায়
আন্ধার ঘোচে, রহস্যটি কই ?
বর্ষাঋতু আসে, প্রাণটি যে বাঁচে
বর্ষা ফুরায়, প্রাণে ঘুম নামে...
জলধারা ছোটে, নদী স্রোতস্বিনী
জলধারা থামে, নদীও শুকায়
আলো ফুটে ওঠে, চোখজোড়া জ্বলে
অন্ধকার আসে, চোখেরা ঘুমায়...
হাওয়া বহে যায়, গাছটিও দোলে
হাওয়া থেমে যায়, গাছটিও থির
মাটি যে নরম, অঙ্কুর জাগে
মাটি যে কঠিন, অঙ্কুর কাঁদে...
অগ্নিদেব জ্বলে, কাঠগুলো পোড়ে
অগ্নিলা নেবে, ছাইফাই ওড়ে
ঝড়ো হাওয়া ওঠে, ঢেউগুলো ফোঁসে
ঝড় থেমে যায়, ঢেউ নম্র হয়...
নক্ষত্রেরা জাগে, আকাশের সাজে
নক্ষত্রেরা মোছে, আকাশ নীলিমা
মেঘগণ আসে, বীজের প্রত্যাশা
মেঘশূন্যতায় বীজের প্রতীক্ষা...
শব্দেরা জাগে, ধ্বনিগুলি শুনি
শব্দেরা থামে, ধ্বনিও নিশ্চুপ
বিজলি ঝলক, প্রাণটিও ত্রাসে
বিজলি পালায়, ত্রাস মুছে যায়...
বন্ধুগণ আসে, কথাসুখ পাই
বন্ধুহীন হই, কথারা হারায়
বিপদার্ত হলে মাতৃনাম জপি
নিরাপদে আছি, হায়, মা-কে ভুলে যাই...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন