শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১

স্বাগত ২০২২।। আজ প্রকাশিত হল অঙ্কুরীশা-র পাতায় বিদায়ী ২০২১-এ ৫০ জনের কবিতা সংখ্যা।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।



বিদায়ী ২০২১, কবিতা সংখ্যা 


    সূচিপাতা

আরণ্যক বসু 

দুর্গাদাস মিদ্যা 

তৈমুর খান

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

সৌমিত বসু 

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়

বিকাশ চন্দ 

গৌতম হাজরা

সৌহার্দ   সিরাজ

বিকাশ বর

 দুরন্ত বিজলী

বিকাশ ভট্টাচার্য 

সাতকর্ণী ঘোষ

সমাজ বসু

অরুণ ভট্টাচার্য

দীপক বেরা

অমিত কাশ‍্যপ

আশিস গিরি

শিবাজী  সান্যাল

অসীম বিশ্বাস

বিকাশরঞ্জন  হালদার 

অলোক চট্টোপাধ্যায়

তামস চক্রবর্তী

তপনজ্যোতি মাজি

গৌতম রায়

নিমাই জানা

সুবীর ঘোষ

গোবিন্দ ব্যানার্জী

দেবপ্রসাদ জানা 

ভবানীপ্রসাদ গুইন

গোবিন্দ মোদক 

লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল 

দীপা কর্মকার 

পৌষালী চক্রবর্তী

তন্দ্রা  ভট্টাচার্য্য 

প্রদীপ দে

নীলোৎপল জানা

স্মৃতি শেখর মিত্র 

মালা ঘোষ মিত্র

রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ 

অশোক রায়

চন্দন-ভট্টাচার্য্য

সেন্টু রঞ্জন চক্রবর্তী

দুলাল সুর 

সুজন দাশ

প্রশান্ত মন্ডল

সুমনা রায়

দীপঙ্কর সরকার

কুমকুম বৈদ্য

সমর সুর

অশোককুমার লাটুয়া 

বিমল মণ্ডল 















বিদায়ী ২০২১, কবিতা সংখ্যা 


ইমনে ইমনে বাজো

আরণ‍্যক বসু


যা চেয়েছি সে তো হয়নি হয়নি আজও

তবু শালবন ঝরাপাতা হয়ে সাজো

দিনের শেষে যে রাত

হাতের অতলে হাত

‌শূন‍্যতা, তুমি ইমনে ইমনে বাজো


মহাকাশ, মোছো রিক্ত শাখার লজ্জা

মহাকাশ, মোছো...


যেটুকু চেয়েছি , না হয় নাইবা পেলাম

বনজোছনায় তবু তো ডুবতে এলাম!

মাটিতে জীবনানন্দে

অন্তর্লীন ছন্দে

এই একা আমি কোটিতে ছড়িয়ে গেলাম!


ভালোবাসা, মোছো রক্তপাতের লজ্জা

ভালোবাসা, মোছো...


যা পেয়েছি শুধু তাকেই ডাকবো মুকুলে

তোমার চিবুকে,ভরা জীবনের দুকূলে

একটা কাগজ-কলমে

বুঝুক সবাই যা বোঝে

চুমু দিও শুধু শ্মশান চিতায় শুলে


নীলাকাশ, মোছো সব দীনতার লজ্জা

নীলাকাশ, মোছো ভীরু ম্লানতার লজ্জা


যা চেয়েছি, সে তো থেকে গেলো অধরায়!

তবু বনদেবী ফাল্গুন হতে চায়...



এসো এসো হে নতুন বর্ষ 

দুর্গাদাস মিদ্যা


অপসৃত আলোক লেখায়

দিন চলে যায়। 

সেই শূন্যতায় উঠে আসে নতুন অধ্যায়। 

জানিয়ে যায় পুরাতন জীর্ণতা যত ঝরে যায় সময়ের স্রোতধারায়।

 এভাবেই নতুন বরণের সাথে বয়সে ভারাক্রান্ত হয় পৃথিবী। 

তারপর সব কিছু ঝেড়ে ফেলে

বর্ষ শেষে নিয়ে আসে নতুন আলোকবার্তা

সহজ সরল সুন্দর জীবনের পথ  চলার আকুলতা। 

নব বর্ষের বরণ ডালা সাজিয়ে বসে আছি 

এসো এসো হে নতুন বছর

তোমার আশীসে ভরে উঠুক  আনন্দে ব্যাথাতুর মানুষের অন্তর নতুন আলোকে। 

লোকে লোকান্তরে উঠুক আনন্দ হর্ষ, 

এসো এসো হে নতুন বর্ষ।


ভাষাজন্ম 

তৈমুর খান


দারুণ পাখিরা সব ডাকছে চারিদিকে

পাখিদের ডাক শুনছি আমিও জেগে জেগে

ক্ষুধা-তৃষ্ণারাও পাখিদের ডাক শুনে শুনে

জৈবধর্ম ভুলে গেছে


জানালা খুলে মাঝেমাঝে চাঁদও চলে আসে

বহু পুরাতন চাঁদ

কাব্য-কবিতার পাড়া ভেদ করে সরস উপন্যাসে

দেহ বিক্রি করেছে সে

জ্যোৎস্নাও দিয়েছ যাকে তাকে


ইন্দ্রিয়ের তাপ ক্রমশ ঠাণ্ডা হলে

পাখিদের ডাকেও ভাষার জন্ম হয়

যে ভাষা বোঝে না কেউ

শুধু জ্বর হলে কেউ কেউ আচার খায়

মুখ ভালো হবে বলে


আজ ইন্দ্রিয় পতন হোক

বসন্তে বসন্ত মেলাব—

পাখিতে  পাখিতে সংসার ভরে গেলে

আমাদের ভাষাজন্ম তীব্রতর হবে


ভাষায় ভাষায় বয়ে যাবে কালস্রোত...  



জানলায় তুমি মুখ

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


দরজার হাত ধরে যাওয়া আসা চলে

কত কত পা ঘরে আসে

চলে যায় কথা শেষ হলে

আলো হয় সব

সংসারে যা লাগে দিনরাত


জানলার কথা শুধু তুমি জানো

আমি জানি কতখানি আলো আসে তাতে

কতটুকু আলো আর

কতখানি তুমি মিশে থাকো


ঘরে আলো

আলো হলে সব মুখে হাসি


আমি শুধু জানলায় থাকি

সেখানে তুমি মুখ আঁকা হলে

মেঘ কেটে সারাদিন রোদ 


এ আলো শুধু আমাকেই আলো করে দেয়।


শেষ বিকেলের আলো

সৌমিত বসু 


প্রতি বছরের শেষদিনে ভাবি

এবছর যা পেলাম না সামনের বছরে যেন দুহাত ভ'রে পাই

এবছর যা কিছু হারালাম তা যেন নতুন করে ফিরে আসে।

মায়াবৌ, কোন গাছের তলায় আমি কুড়োবো তোমাকে?


বিদায়ী ২০২১

উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়


ছোটো মানুষের ছায়া

বড়ো হলে, লম্বা হয়ে যায়;

দেয়ালের ক্যালেন্ডারে এ মাসের পাতাটি ফুরোলে

ছেঁড়া পাতা উড়ে যায়

ইতিহাস নিয়ে;সময় উদাসীন বড়ো ব্যক্তিগত সম্পর্ক 

বিচারে;ছোটখাটো দুঃখের গভীরে যেমন লুকিয়ে থাকে

আলোর সাগর।

পেছনে ফেরার কথা নয়

ফেরাবার থাকে না কিছুই;

কেবল আগামী থাকে বিগতের ছায়ার প্রহরী।


চিরন্তন 

বিকাশ চন্দ 


শরীর বিহীন একটা আশ্চর্য গোলক গড়াচ্ছে 
দৃষ্টি হীন একটা সোনালী সাপ
হঠাৎই রঙ বদল করে
পিড়ি বেঁধে ঢেলে দিচ্ছে অনর্গল বিষ
লোহিত কণিকায় সনির্বদ্ধ আর্তি 
বছর ভর ফসিলের ভেতর 
জন্ম নেয় কোটি কোটি আত্মার আকুতি 

ক্ষমাহীন সময়ে বেজে ওঠে 
মন্দিরের শাঁখ ঘণ্টা কাঁসর 
অনিন্দ্য সুন্দর ভেজে ক্রুশ কাঁটায় রক্ত
আজান কালের স্বরে 
চেনা পাখিদের ডানায় আলোর ভাসান

বিকৃত ইতিহাসের গল্প বানায় রাষ্ট্র নেতা
কক্ষ বিহীন পথে গড়াচ্ছে গোলক
দেশকাল মানুষের আথান বাথান 
পরম্পরা ছুঁয়ে আছে আট কাল বারো মাস 
পাঁজরের ভেতরে অটুট অযুত নক্ষত্র কাল
আশ্চর্য আলোর দানায় বাঁচে প্রাণ বিন্দু 
আবাদ কালে শিকড়ে শিরায় প্রাত্যহিকী 
প্রাণজ আখরে চিরন্তন আত্মার গান


বিদায় ২০২১

গৌতম হাজরা

অনেক ঘটনা আর দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে
পেরিয়ে এলাম একটা বছর। 
কি পেলাম আর কি পেলাম না তা নিয়ে
আর কোনো তর্ক বিতর্ক নয়
বরং ভারা যাক আমরা কতটা এগুতে পারলাম। 
যদি পেরে থাকি সমস্ত পরিস্থিতিকে সামাল দিয়ে
তাহলে কোনো কথাই নেই
আর যদি না পেরে থাকি কুছ পরোয়া
চলো , হেঁইয়ো বলে এগিয়ে যাই সময়ের দিকে
চলো, ছিলায় দিই টান অসম্ভবকে সম্ভবের দিকে এগিয়ে দিতে

নতুন বছরকে নতুনভাবে স্বাগত জানাতে! 



কুয়াশার কান্না শুনে

সৌহার্দ   সিরাজ

পথে কখনও হারিয়ে যায়নি

আমার পথের সুখ

পথ তার পথ হারিয়েছে নিজের গণিতে

আমি হারিয়েছি বছর আমার 


মানের সংখ্যা বেড়ে গেলে কে যায়

কে আসে হিসাব মেলে না

ভর্তুকি পেয়ে পেয়ে বিকালের জোয়ার

সকাল কিনে নেয়


নেমে এলো পথে হেমন্তের গান

কুয়াশার কান্না শুনে সে হঠাৎ দাঁড়ায়

হাত নেড়ে সাধুতার  নির্বেদ জংঘা

মোহভঙ্গের অভিশাপে পাথর হয়ে যায় 


আরও একবার এনওসি নাও,দেখি—

কত বাঁধন খুলে ঠাণ্ডা জলে 

ডাঙার আঁচলে বিশ্বাসের তাল কেটে যায়

হুজুকও নৌকা চড়ে বসে

মানুষের মনের গিঁট খোলা সহজ কাব্য নয়!




একটুকু চাওয়া 

 বিকাশ বর


একটা পথ শেষ হলে 
আর একটা পথের শুরু
চলমান জীবনের এটাই নাকি নিয়ম
ফেলে আসা পথে ঝিমধরা সন্ধ্যায়
উদাসী কার মুখ রুদ্ধ জানালায়!
যে পথ মাড়িয়ে এলাম পিছনে রেখে
যে মুখ অতিক্রম করে সামনে চলা
স্মৃতির ডায়েরিতে পাতা গ্যাছে খোয়া
পাথরের গায়ে গায়ে জমে আছে মেঘ
পথের দু'ধারে স্বপ্নভাঙা সিঁড়ি
রক্ত জমাট বাঁধা চলমান পায়ে
উদাসী মুখ মৃত জ্যোৎস্নার লাশ
ডায়েরির পাতা বড় বিবর্ণ ধূসর
উদাসী মুখ এখন বিগত জন্মের স্মৃতি।
বিস্মৃতির ছায়াঘেরা পথ ফেলে
পা বাড়িয়েছি যে নতুন পথের বাঁকে
শেষ আর শুরুর মাঝে বিষণ্ণ সে মুখ
হয়তো বদলে যাবে অভিমুখ এ পথের
স্মৃতির ডায়েরিতে  একটা নতুন পাতা
নুন-হলুদ জীবনের শুধু একটাই চাওয়া
বিষণ্ণ মুখে যেন ফোটে একটু হাসি।



বিদায়বেলার আকাশ

দুরন্ত বিজলী


একটা আকাশ ভীষণ বোকার মতো
হাত বাড়িয়ে চাইছে বিশাল আকাশটাকে
একটি আকাশ ক্ষুদ্র কিন্তু রঙিন
প্রজাপতির ডানায় আকাশ খুঁজছে

একটা আকাশ ভর দুপুরের রোদ
ছলাৎ ছলাৎ নদীর জলে ভাসছে
একটি আকাশ গোধূলি ছায়াময়
জ্যোৎস্নাকুসুম বুকের ভেতর আগুন

একটা আকাশ রাত নিঝুম কালো
চর্যাপদের রমণীর মতো কাঁপছে
একটি আকাশ ভোরের শুকতারা
শিশির ভেজা ঘাসে রাতুল পা

আকাশ অনেক অনেক রকম ধরণ
যন্ত্রণাময় পুরাতনের মরণ
যেমন করে যায় চলে যায় দিন মাস কিংবা বছর
নতুন পাতায় লেখা আছে ফসলভূমির খবর




 ঘরে ফেরার গান 
বিকাশ ভট্টাচার্য 

মেঘনয়না এবার চলে যাবে 
বাতাসে তাই তীব্র মিশ্রছন্দ 
মাঠঘাট সব ভিজিয়ে চলে যাবে 
এবাড়ি ওবাড়ি চিরকেলে দ্বিধাদ্বন্দ্বয়

এই তো সেদিন ভাসানের তিথি গেল 
এই তো গেল রোজার উপবাস 
এই নবান্নে ধনধান্যের শেষে 
শূন্যতা জুড়ে পর্ণমোচী মাস

বর্ষশেষে কোথায় দাঁড়াব
কল্পতরু তোমার কাছে যাব।




শূন্য করে যেতেই পারি
সাতকর্ণী ঘোষ

ভাবতে ভাবতে পথ ভুলেছি---
নতুন পথে অন্ধকার --- টুক দিচ্ছে আলোর ঝিলিক 
হাঁটছে কারা মিছিল মিছিল উঠছে ছবি ক্লিক ক্লিক

হাতের মুঠোয় কিচ্ছুটি নেই ---
প্রতিবাদ তবু শূন্য চায় --- হাজার হাজার আস্ফালন
মুঠোয় ভরা বাতাস নাচে  পেটের মধ্যে খুব জ্বলন

হাতের দোষ আর কী দেব বিক্রি এখন হাতের হাট
যে দিকিতে ভিড় বেড়েছে সে দিকেতেই ফসল মাঠ

                 
ছল-চাতুরির বাজার গরম

শূন্য করে যেতেই পারি ---
আকাশ আমার রাজত্ব---নতুন সাজে সাজতে জানি
বাতাস ধেয়ে আসতে পারে পাল না তুলে দাঁড় টানি

চোখ রাঙিয়ে সূর্য হাসে---
আগুন জ্বলে বস্তিতে--- কান্না ভাঙে সব হারিয়ে 
ধোঁয়ার সাথে ওড়ে কুণ্ডুলি দুঃখ-সুখ পাকিয়ে

এসব আর বুঝবে কবে শিক্ষে ভেঙে খানখান
তোমার খাবার কেড়ে খেয়ে তোমার নামেই বদনাম।



কথা
সমাজ বসু

ক্যালেন্ডারের লাল কালো তারিখ জানে---
কি অসম্ভব কথা উল্টো সোজা বুনে রেখেছি বছরভর
হাত গলা বুক পিঠের সঠিক মাপ,
বছর শেষে সত্যি সত্যি তুলে দেব সেই পরিধান।

অথচ কি এক আড়ষ্টতায় খুলে যায় ঘরগুলো---
একটানা মুখস্থ বলতে গিয়েও সব কথা জড়িয়ে যায়,
কেমন বোবা পুতুলের মত চেয়ে থাকে তোমার দিকে
সারাবছর উল্টো সোজা ঘর তুলে বোনা কথাগুলো
নিমেষেই নেমে যায় হিমাঙ্কের নিচে---
পারদ উর্ধমুখী হলে, আবার কথা বুনি।

ক্যালেন্ডারের লাল কালো তারিখ জানে...



একটি  বছরের নাম একুশ
অরুণ ভট্টাচার্য

তোমার আসার পথে 
কার্পেট বিছিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম
সযত্নে পেতেছি আসন,
এইটুকু প্রত্যাশা নিয়ে -
তোমার ভালোবাসায় 
বিষমুক্ত হবে পৃথিবী..
জীবাণু বিষ 
বায়ু বিষ
কথা বিষ..।

কথা রাখোনি
কথা রাখনি তুমি  
দু হাজার বিশের পর 
তোমাকেই চেয়েছিলাম একুশ। 

ফিরে যাও 
ফিরে যাও আজ।



বিদায় - ২০২১
দীপক বেরা

হে - ২০২১,
তোমার ছায়ায় খেলেছি হেঁটেছি 
কত মুহূর্ত, দিন-দিন প্রতিদিন, একটি বছর 
বড় গাঢ় নির্জনতা, সঙ্কটময় একাকীত্ব পেরিয়ে 
দেখেছি কত ক্ষয়-ভাঙন, নিরালম্ব শূন্যতার মাঝে 
দেখেছি কত শারীরিক ছায়ার ছায়াছবি! 
শোকাতুর মানুষের অশ্রুবিন্দুগুলি চুরি হয়ে যায় 
শোকের কান্নার পরিসরটুকুও ভাইরাসে ছেয়ে যায় 
পূর্ণিমা নেই, অমাবস্যা নেই.. 
কেবলই জীবনের ঘূর্ণিস্রোতে পাক খেয়ে চলেছি
সময়ের ভালোমন্দ, মানুষের দুঃখশোক বুকে ধরে 
তবু গেয়েছি জীবনের জাগরণী গান 
মানুষই রাখে হাত মানুষেরই হাতে 
চিরকাল মানুষই মেলেছে হাত মরণের থেকে দীর্ঘতর।

আজ বিদায়ের নৌকা বেয়ে ভেসে যাও তুমি, ২০২১ 
নতুন কে দিয়ে যাও ডাক ---
সবার হৃদয়ে রেখে যাও সৃষ্টির অমেয় বীজ
নতুন ভোরে আবার বৃষ্টি পড়ে মনের উঠোনে 
ভিজে যায় ফুলগাছ, ভিজে যায় শরীর.. 
গোপন শিহরণে নতুন ছন্দে, নতুন শব্দ-গানে! 


বর্ষশেষ
অমিত কাশ‍্যপ

'হাট বসেছে শুক্রবারে, বক্সীগঞ্জের পদ্মাপারে'
বক্সীগঞ্জও নেই, পদ্মাপারও নেই, তবে হাট আছে, শুক্রবারও আছে 
আজ হাট বসেছে, আজ কেমন উৎসবের চেহারা হাটে  
বর্ষশেষ, গায়ে তার শীতবস্ত্র
সোনালি সকালে উড়ে যাচ্ছে বনভোজনের মানুষ 
চারিপাশের কথারা ছুটে আসছে 

কেষ্টদার চায়ের দোকানে ভোরেই বিষাদ আর আনন্দ 
সারা বছরের স্মৃতি খণ্ড খণ্ড হয়ে ভাসছে 
জগন্নাথ গণেশ পল্টুদা কাজল রোজের চাপ্রেমী
গল্পের গন্ধ চলে যাচ্ছে ফেলে আসা বছরের ওপর 
বন্ধুরা হাতে হাত মিলিয়ে হঠাৎ  বলে উঠল
এই বেশ ভালো আছি ভাই।


আমাদের দেখা হোক
আশিস গিরি

আমাদের দেখা হোক মহামারী শেষে,
আমাদের দেখা হোক জিতে ফিরে এসে।
আমাদের দেখা হোক জীবাণু ঘুমালে,
আমাদের দেখা হোক সবুজ সকালে।
আমাদের দেখা হোক কান্নার ওপারে, 
আমাদের দেখা হোক সুখের শহরে।
আমাদের দেখা হোক হাতের তালুতে,
আমাদের দেখা হোক ভোরের আলোতে।
আমাদের দেখা হোক বিজ্ঞান জিতলে,
আমাদের দেখা হোক মৃত্যু হেরে গেলে।
আমাদের দেখা হোক আগের মত করে।
আমাদের দেখা হোক সুস্থ শহরে...




এ যেন রঙধনু
শিবাজী  সান্যাল(মুম্বাই) 

                    
একটি সমুদ্র চাই
 দিগন্তে ছোঁবে আকাশনীল
জলরাশির অনন্ত যৌবনে মুগ্ধ শান্ত প্রবাহে দিনশেষে রাঙিয়ে  প্রান্তর গর্ভে  নেবে রক্তিম সূর্য 
 বালুকা বেলা থেকে  সেই দৃশ্য দেখব আমি প্রতিদিন। 
     
 চাই একটি সবুজ বীথি 
 সারি সারি বৃক্ষের উৎসব , পল্লবিত হিল্লোল
এক ঝাঁক পাখির  কূজনে মাতোয়ারা সমীরণ 
ক্লান্ত পথিক এসে বসবে ছায়ায় শীতল মৃত্তিকায়
 চাঁদও জেগে রবে সারারাত , শুনবে অবাক
 শিশির সিক্ত সবুজ পাতাদের নানা কথা। 

  চাই এক শ্রাবণের ঘনঘটা 
 বারিধারায় ভরে দেবে তৃষ্ণার্ত শস্যক্ষেত্র 
 বন্দরে এসে ভিড় হবে জেলেদের নৌকো   
 ঝমঝম বর্ষণ , বাতাসে কাঁপবে জানালা থরথর
 বৃষ্টির মৃদঙ্গ, চমকিত বিদ্যুৎ, জাগাবে শিহরণ 
  কাছে টেনে নেব তোমাকে।



খোয়াই'এর ভাঙ্গা হাট
 অসীম বিশ্বাস, মুম্বাই

শুভ্র চাঁদের আলো খেলেছিল সোনাঝুরির বনে
মাদলের দ্রিমদ্রিম আওয়াজে পা মিলিয়েছিলে তুমি
মহুয়ার মাদকতায় আমি তখন চনমনে সবুজ প্রত্যয়
মনে পড়ে, খোয়াইয়ের জলে চাঁদ নেমে গেলো
তুমি এলে কাছে শরীরে মাটির গন্ধ নিয়ে
তোমার আদুরে আলিঙ্গনে তখন প্রেমের জোয়ার
দুঃসাহসের ডানা মেলে তোমার শরীরের ভাঁজে
লিখলাম প্রেমের কবিতা রাত ভোর।

আজ খোয়াই'এর ভাঙ্গা হাটে আমার একলা ছায়া
শিশির ভেজা চেনা মাটির গন্ধে তোমার যোনির ঘ্রাণ।



নতুন কোনো স্বপ্নে 
বিকাশরঞ্জন  হালদার 

বিদায়। মুলুকে মেঘ। গাছের স্বরলিপি-আগামী'র ডাক।
 জ্বালা-যন্ত্রণার মায়া কিংবা গার্হস্থ চাঁদ ফেলে, কালচে-বাদামি সময় পেরিয়ে, নতুন কোনো স্বপ্নে ঘোর হয়ে নামে মন! 

এ'তো শাশ্বত! প্রবহ!

নাগাল ছোঁয়া নতুন পথের নমুনা, মুছে দেয় - ঘিরেধরা দীর্ঘ অরুচি!

যখন তবুও  প্রাণ, নিরঙ্কুশ-অঙ্কুরে সাঁতার কাটে, বিমল-কলরব! হাওয়া হাসে, হৃদয় ভেসে যায় ...


অনিশ্চয় 
অলোক চট্টোপাধ্যায়

এ কেমন তঞ্চকতা, পদ্মপত্রে স্থাপিত প্রণয়।
বড় যত্নে ধরে রাখা, তথাপি তা নিরর্থ জটিল।
হাড় মাংস মজ্জা তার নিয়তি নির্দিষ্ট হবে ক্ষয়
সংগ্রহে সঞ্চয়ে কিছু থাকে না। শ্বাশ্বত বলে কিছু
জাগতিক প্রেক্ষাপটে হয়তো সম্ভব নয়, তাও
উথাল পাথাল করে আদিগন্ত অখিল নিখিল
অন্ধ স্রোতে চলে যাই অলীক মায়ার পিছুপিছু।
পরতে পরতে ঢাকা অনুভব নৈরাজ্যে উধাও।

দ্বিধান্বিত আত্মরতি ঢেকে দেয় কলুষে কল্মষে।
সর্বগ্রাসী ঘুণপোকা কুরে খায় প্রিয় আসবাব।
নিশ্চিন্ত আশ্রয় ভেঙে ঘিরে ধরে প্রখর অভাব।
কঠিন মুঠোর থেকে বিশ্বস্ত কার্মূক পড়ে খসে।

টলমল পদ্মপত্রে অস্থির বিশ্বাস বিন্দু কাঁপে -
বিপন্ন অস্তিত্ব দোলে অনির্দিষ্ট পূণ্য আর পাপে।



আলপথ 
তামস চক্রবর্তী

প্রতিদিন নির্লজ্জ অক্ষরে
ফিরে আসে অন্তর্দহন। 

অজগর শরীর ঢাকে বিক্রিত উল্লাস। 
নশ্বর দেহ শবরী সুবাস মাখে
দীন অভিসার। 

এখানেই সুর কাটে এস্রাজ। 
ঋতুহীন অনন্ত নিখিল 
লিখে রাখে রাতের হিসেব। 

অক্ষম নাড়ীর টান 
পান করে কলুষ বসুধা।
বর্ণলুপ্ত বর্নপরিচয়ে সততঃ প্রকাশ।
নিমগ্ন মেঘের গর্ভে  
সৃষ্টি ছুঁয়ে বসে থাকে ঈশ্বর বিশ্বাস।



ফিরে দেখা
তপনজ্যোতি মাজি

বিদায় বলেও ফিরে দেখতে  চাই। আংশিক নয় অপলক 
অবলোকনে শিহরিত হতে চাই। চলে যাচ্ছে বর্ষ শেষের দিন।
দেওয়ালে ঝুলে থাকা ক্যালেন্ডার তাকিয়ে আছে নিস্পলক।
বিষণ্ন কি মনের আবহ? গির্জার কৌণিক শীর্ষে চিররূপসী 
চাঁদ। চাঁদের ওষ্ঠে অস্ফুট দীর্ঘশ্বাস। রূপসীরা বিষণ্ন হলে 
ওলটপালট হয় পার্থিব বিন্যাস। কেঁপে ওঠে ভূমি ও আকাশ।

আবেগ মথিত শিল্পী দাঁড়ায় শূন্য ক্যানভাসের সামনে। কবি 
বসে আছেন প্রেরণার মুখোমুখি। কফি কাপ ঘিরে ঘূর্ণি বাতাস।
নগরীর পানশালায় বর্ষবরণের প্রস্তুতি। ভিক্টরিয়ার পরী এক
মুহূর্ত হাত নেড়ে জানায় বিদায় দু হাজার একুশ খ্রীস্টাব্দ।

মাঠে মাঠে সবুজ শস্যের সমান্তরাল সমারোহ। কৃষকের বিজয়
দেখেছে সংগ্রামের দিন। স্কুল খুলেছে দীর্ঘ বন্ধের পর। মাস্কহীন
ওষ্ঠে কে ছোঁয়াল উষ্ণ ওষ্ঠ? সব অস্থিরতা স্থিতি পাবে একদিন।
চলে যাওয়া দিন আগামী দিনের কাছে উন্মোচন করবে স্মৃতির
মোড়ক। বর্ষশেষের দিন বর্ষশুরুর দিনকে জানাল উষ্ণ শুভেচ্ছা।



দলমাদল 
গৌতম রায়

একদিন বারুদ ঝরাতো 
হন্তারকের হাত ধরে।
আজ অভিমুখে খুঁজে পাই সজনীর দুল।

গোলায় ছিন্ন ভিন্ন দেহ নয়
ঝরে ভালোবাসা-আগুন ,
রসিক সে আগুনে পুড়ে প্রেমিক হয়।



সূর্যের বানপ্রস্থ কথা ও কনজাংটিভাইটিস
নিমাই জানা



আমার এক বাৎসরিক ড্রেসিং টেবিলের নিচে জমা থাকা প্রদাহ জনিত মরচে রঙের প্রচ্ছন্ন হাড়ের জীবাশ্ম আছে

নাভি দৈর্ঘ্যের প্রয়োজন ছেড়ে যশোদার হাত ধরে নেমে আসি অলৌকিক নাভি ক্ষেত্রে, ছিঁড়ে ফেলেছি মন্বন্তরের দীর্ঘতর পোশাক আমাদের ভার্গব প্রজন্মের গড় আয়ু ক্রমশ ফুরিয়ে যায়
আধ্যাত্মবাদ ঘোড়া  ....
একটি মেটিফিলিক যুগের মতো পোশাকটি ক্ষীণকায় তরল দৈর্ঘ্যের, গোলাপি রং মেখে আমিও স্থির চক্রাকারে আবর্তিত হই প্লাজমার শরীর নিয়ে এক পক্ষকাল

আহ্নিক গতি আমার ক্ষয়জাত সঙ্গম ছেড়ে মৃত্যু বিহীন বৃষ্টির অপেক্ষা করে, আপাত পাললিক শিলার চরে শম্বুক ব্যাসদেব দাঁড়িয়ে কাল্পনিক মহাভারত লিখে চলেন
আমাদের কোন স্বরবর্ণের অক্ষর ছিল না, একটি পরজীবী হঠাৎ ৩৬৫ দিনের মৃতপ্রায় কবিতা লিখতে লিখতে আধ্যাত্মিক বর্ষা নিয়ে আসে আমাদের কনজাংটিভাইটিস চোখে
এইবার বর্ষা ঋতুতে আমাদের আবারো ৮৪ লক্ষেরও বেশি গর্ভপাত ঘটে যাবে
বন্ধ্যাত্ব কাটিয়ে পাটিগণিত সূর্যটি লাইসোজোম ভেঙ্গে একটি ছায়াবৃত্ত তৈরি করবে মায়ামৃগ প্লাবন চিহ্নে

বাবা একটি দারুচিনির সুগন্ধ আগুনের আঙ্গুল তুলে ২২ সালের ট্যানজেন্ট সূর্য দেখাবে  




সূর্যান্ত
সুবীর ঘোষ


বছরের শেষ সূর্য
চলে যাচ্ছে কালের গভীরে।
ভিড়ের ভেতর থেকে
কাল আবার খুঁজে নেব
তোমার নিঃশ্বাস।

তুমিও কী প্রতি রাতে নবান্নের মাঠে
খুঁজে যাও হরিণের ছেড়ে যাওয়া
ছোপের খোলস?
তোমায় কী নির্ভয়ে বলা যায়
গুঁড়ো চাঁদ ঘষে মাখো
উলঙ্গিত শরীরের খাঁজে?

আবার নতুন রোদ
আবার অচেনা কোনো জোৎস্নার ওম
নিশ্চয় খুঁজে দেবে নতুন বছর ।
বিদায়ী বছর তুমি মনে রেখো আমাদের
ভুলগুলি ক্ষমা করে দিও ।



বড় আকুল আর্তি! 
গোবিন্দ ব্যানার্জী

চিরকালের অন্তর্গত পেতে চাওয়া।
আঙুলের ফাঁকে ঝুলছে শুকনো সময়ের মেরুদন্ড
জলের ভিতরে নরম তুলো সাঁতার কাটছে এখন
অবিরাম ধোঁয়া উড়ছে 
আর ধূলোর উত্তাপে শুকিয়ে নিচ্ছি 
গরম মস্তিষ্কহীন পান্ডুলিপি।
চারিদিকে ছত্রখান মাংসপিন্ড 
এঁকেছিলাম সাপেদের ছবি যত্ন করে 
সেই সব সাদা পাতায় রঙের আনাড়িপনা
নিঃশ্বাস প্রশ্বাসহীন কুকুরের চীৎকার শুনে 
রাত পাহারা দিচ্ছে ঘুম ভালোবাসা নদী।
এবার ঋতুহীন আকাশের নীচে বোসো একবার 
এসো পোশাকের গল্প করি
বিগত শতাব্দীর ওপাশে ফেলে রাখা
সীমান্তরেখা এসো খুঁড়ে খুঁড়ে জাগিয়ে তুলি
তারপর আমার রক্তে স্নান করে নাও
ফুল ফুটছেনা বলে যে মেয়েটা চীৎকার করছে
চলো তাকে লুঠ করি সবাই 
মর্গে এখনো জায়গা খালি আছে
এসো ঘুমিয়ে নিই এই শতাব্দীটা।


বিদায় বর্ষ 
দেবপ্রসাদ জানা 

এই বর্ষ চলে যাক,কয়দিন পরে,  
কত আশা ভালোবাসা,দুঃখ কষ্ট নেশা,    
সব যেন যায় চলে,চিরদিন তরে।  
পাপপুণ্যে জমা খাতা,ধুয়ে দেবে আশা।

বিষের বাতাসে যেন,ভরে নাকো মন,   
এই বর্ষে শুভ হোক,নতুন আলোয়। 
নতুন প্রভাতে সূর্য, ছড়াক কিরণ।  
আশার প্রদীপ জ্বালি, মনের কালোয়।   

সাগর স্রোতের মত,উচ্ছাসে উল্লাসে। 
জীবনের সব আশা,পূর্ণ করো সব। 
শুভ বিনিময় হোক, শুধু ভালোবেসে।
বিদায়ের বেলা থাক,গানে কলরব। 

বিদায় বেলায় যেন,অশ্রু নাহি ঝরে।
প্রফুল্ল হৃদয় হাসে, খিল খিল করে।



আমার ভেতরে জাগ্ৰত আছেন
ভবানীপ্রসাদ গুইন

ক'দিন খুঁজছিলাম ক'দিন পরে পুরানো বইটি পেলাম
তাক হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে
তারপর ভেতর হতে টেনে বের করলাম
ততদিনে বইয়ের উপর এক কালো আস্তরণ জমে গেছে
হাত দিতে দিতে তেলচিটে অনুভব করলাম
               
আস্তে আস্তে তার পাতা উল্টাতে থাকলাম
স্রোতের মতো কিছু লাইনে ভেসে চোখ রাখলাম
আর বারেবারে পড়তে থাকলাম
আগেও বইটি ক' বার পড়েছি
আবার বইটি বহুদিন পরে নতুন করে পড়লাম
আগে চেনার সঙ্গে আজ যেন অচেনা ভিন্ন স্বাদ পেলাম
আর মনের ভাঁজে যেন নতুন করে আলো-স্নান করাচ্ছে

                 
কেমন যেন বইটির প্রতি এক ভিন্ন মায়া-টান বসে গেছে অন্তরে
যতদিন না খুঁজে পাচ্ছিলাম 
ততদিন যেন ভেতরে এক চাপা অস্থিরতা জেগেছিল
আজ মুক্ত হলাম সেই আবেশ বৃত্ত হতে
একদিন এক পরিচিত কবির হাত হতে বইটি নিয়েছিলাম
তাঁর হস্তাক্ষরের লাইনগুলো  প্রথম কবি বলে আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল
সেদিন খুবই আনন্দ নিয়ে আমি গৃহে এসেছিলাম

আজ বইটি দেখতে দেখতে খুবই মনে পড়ছে
সেই দিনটির কথা
আর যত ভাবছি
তত যেন এক গভীর ভিন্ন সুন্দর আবেগ, অনুভূতি জেগে উঠছে
আর যেন আমার আয়নার শরীরে
তাঁর ছবি ভোরের মতো চোখ খুলে আছে
আর আমার মাথার উপর হাত রেখে ক্রমাগত সুন্দর বুলিয়ে যাচ্ছেন।




এভাবেই চলে যেতে হয় 
গোবিন্দ মোদক 

এভাবেই চলে যেতে হয় 
এসে গেলে সময়ের ডাক, 
উড়ে যাক ঝরাপাতা দল 
কিশলয় তার জায়গা পাক।

এভাবেই চলে যেতে হয় 
এসে গেলে বিদায়ের ক্ষণ, 
পুরনো যায় নতুন আসে 
হয়ে ওঠে আপনার জন। 

এভাবেই চলে যেতে হয় 
পড়ে থাকে হিসেব আর স্মৃতি,
পুরোনোকে বিদায় নিতে হয় 
এটাই তো প্রকৃতির রীতি।।



নদীর নার্ভাস সিস্টেমে বাজে বেহালা  
লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল 

তখন শব্দরা সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের দিকে চলেছে — ল্যাম্পপোস্টের আলোয় মিশেছে কুয়াশা ঢাকা ম্লান রিপু – চোখের কালির নিচে অবিরাম পার হয়ে যাচ্ছে শ্রীধরপুর আর ধ্রুপদ প্রদীপ , তুমি না চাইলেও নদীর নার্ভাস সিস্টেমে বাজে বেহালা  


দূরত্বের শূন্য দ্রাঘিমায় মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি পথ ধরছে নদীর নিম্নগতিতে , নদীর সাথে যেতে যেতে বলিরেখায় তপ্তনীল  রিলেসানসিপ : পোস্টমর্টেম রিপোর্টে শুধুই বটগাছ আর পাখিদের খলবল ওড়াউড়ি


প্রিয় অতিথিশালা , কালো স্ক্রিনের উপর আমি আর অদিতিকে দেখতে পাই না। 



একুশের হাহাকার
দীপা কর্মকার 

দম্ভ ছিল একুশ আমি
রক্ত আমার গরম
ধমনী শিরায় সাহস শক্তি
হৃদয় বেশরম।

আমি, তরতাজা এক যুবক জোয়ান
দুচোখে স্বপ্ন ভরা
শপথ ছিল মনের মাঝে
সোনার ভারত গড়া।

সবকিছু আজ ধুলিস্যাৎ
করলো মহামারী
যাবজ্জীবন বন্দি আমি
হলো সমন জারি।

স্বপ্ন সকল যা ছিল মনে
সবই ছারখার
সঁপে দিলাম বাইশ তোমায়
সকল কার্যভার।





বহতা
পৌষালী চক্রবর্তী

এই মেঘনামা মাঠে এলে আমার মনে পড়ে
 গতজন্মের কন্যাটির কথা 
তার  পায়ের কচি পাতা লক্ষ্মীমুদ্রা এঁকেছিল 
শীতলক্ষ্যা চরে...
গড়ে উঠেছিল আমাদের সামান্য ঘর
চারপাশে অনন্ত আঙিনায়
তার কুন্দনীভ আঙুল
গেঁথেছিল মাধবীমালা 
ঘুরে ঘুরে…

এখন মজা নদীটির পাশে পদ্মকোরক নিয়ে আসি
খুঁজে চলি তার শিশুমুখ
এ জন্মের ফুলদল মাঝে।

কার ঘরে মৃত্যু নেই, বিরহ নেই, বলো?

সেসব পেরিয়ে শোনো...

সহজানন্দ ঘোরে বুকে বাজে পদাবলি

 সে আমার রামপ্রসাদী শ্যামা




একশের এর বিদায় বেলায়
প্রদীপ দে

ঝড়ের সঙ্গে আলাপ করতে করতে
নদনদী বন পাহাড় ভেঙ্গে
রোদবৃষ্টিকে অনেক অনেক
আদর করেছি আমি
ঠিক যেমন করে
একুশ' তোমায় আমি …
চেয়েছিলাম নিজের করে
তোমার চলে যাওয়ার সময়
তোমাকে ভালোবেসে - ভালোবেসে
এসে দাঁড়িয়েছি 
ইপ্সিত কামনায় 
প্রেমালাপের
লোভে …
তোমার
বেলার
শেষে... 


তানপুরাতে ধুলো জমেছে 
তন্দ্রা  ভট্টাচার্য্য 

 ও গায়ক তুমি উদাস কেন? আর গাইবেনা গান?যে গেছে সে হাওয়ায় ভেসে গেছে।

রেখে গেছে বিদায়ের অভিমান।

তানপুরার ধুলো ঝেড়ে পুরনো গান নতুন করে।

প্রাচীন  সূত্র ধরে নবীন  অঙ্কের সমাধান।

বেলুনের শেষ শ্বাসটুকু পযর্ন্ত অপেক্ষা জমাই।

আরশোলা উল্টে গেলে পিঁপড়ে এসে খায়।

একবার  খিদে মিটে গেলে আবারও  তো খেতে হয়!

কবেকার পুরনো চাঁদ পূর্ণিমা এলে

খুঁজি আদিম  ছন্দে ঢালায় নতুনের আস্বাদ।

যেখানে  যত ভালোবাসা সেখানে 

 বিবাদে তত বারুদ ঠাসা।

ভাঙাচোরা  সম্পর্ক ঘুরেফিরে আঠালো হয় অতীতের চিঠি

 আবার পড়লে নতুন সুবাস ছড়ায়।




বিদায়ী বল না
নীলোৎপল জানা

চলে যেতে হবে জেনেও থেকে যাই আরো কিছুক্ষণ --
তাকিয়ে থাকি সারাটি সময় আনমনে তোমার দিকে
বোধ হয় বুঝেও না বোঝার মতো করে আড়চোখে দেখেছ আমায়।
কোনো দিধা নেই আমার চলে যেতে হবে জেনেও চেয়ে থাকি...

সেদিন এমনই প্রচন্ড ঝড়ের রাতে দেখা হয়েছিল 
হওয়ার কথা ছিলন না ঠিকই তবু অজানতে এসেছিলাম কাছে
অপরিচয়ের আলাপচারিতায় কখন যে ভালোবেসেছিলাম জানিনা কিছুই
সম্পর্ক টিকবে না জেনেও তাকিয়ে ছিলাম আনমনে; কারণ বিদায় দিতে চাইনি এত সহজে।

তবু ছেড়ে দিতে হয় সব কিছু ভুলে।।



বিদায়ী 

স্মৃতি শেখর মিত্র 

শোক সন্তাপ দিয়ে ঘিরেছিলে তুমি 
সারাটা বছর।মেঘভাঙ্গা বৃষ্টি আর
মাধুকরী করে আনা শস্যদানা দিয়ে
চলেছে সংসার। আমরা একে অপরের সঙ্গে
দূরত্বে কাটিয়েছি, কলহে মেতেছিলাম।
মদের গ্লাসের মধ্যে আজন্ম ভালবাসাকে
বেচে দিয়ে শুধু আনন্দে থাকার ভান করেছি।
আমাদের জীবন থেকে কখন যেন রামধনু
 দূরে সরে গেছে; তাই ধূসর বিবর্ণ জীবন নিয়ে
 শুধু বেঁচে থেকেছি। করোনা,অমিক্রন, আরও
 কত কী ভাইরাস নিয়ে আমাদের জীবন ধীর
 পায়ে এগিয়ে চলেছে। ভাবনা হয় প্রকৃতির
রোষে মানব সভ্যতা একদিন পঙ্গু হয়ে যাবে।



তরঙ্গ  
মালা ঘোষ মিত্র

হাওয়া রু রু করে জানালা
টপকে চলে আসে ঘরের মধ্যে।
একটা কেমন যেন ঝিমানো রোদের
আনমনা ঘ্রাণ,
ছাতিম গাছের নিচে ইঁদুরের গর্ত,
কচুবনে অযত্নেও ফুল ফোটে।
ডুমুরের পাতারা
আরো গাঢ় হয়,
জীর্ণ জীবনে গাঁদাফুলের বীজ
নতুন জীবন বয়ে আনে।
উড়ে আসা ফড়িং গাছের পাতায়
বসে, জায়ফলের গন্ধ অস্থির করে,
বৃষ্টি নামে, তরঙ্গের স্রোতে
দূরকে কাছে আনি।



সংক্রমণের পুস্তিকা 
রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ 

বাহ্যিক প্রচ্ছদে জাদুবাস্তবতায় 
টুপটাপ গদ্যে 
লেপ্টে আছে সূর্য ঘাম... 

জ্যামিতিক ক্যানভাসে অর্ধসমাপ্ত রচনা
অলৌকিক কৌশলে গোধূলি বেলায় 
জলে অতৃপ্ত ছায়া
 
দৃশ্যের বাতায়নে ঢেউ এসে তুলে নেয় 
সংক্রমণের পুস্তিকা...
                       




২০২১— যাচ্ছ?
অশোক রায়

কখনো মেঘ কখনো রোদ্দুর
বেলা পড়ে আসে চল  ঘরে
হিসেব-নিকেশ বাকি এখনও
বাকি ফিরে দেখা
চাওয়া পাওয়ার সংঘাতে
কোভিড ইয়াস-দস্যুদের আনাগোনা
কত মৃত্যু মিছিল বেদনা অবরুদ্ধ
কত অযাচিত প্রেম সাফল্যের উন্মেষ
রিক্ততার মাঝে বাঁচার মুকুল
ছন্নছাড়া জীবনের পাতে
মাঝে-সাঝে একটু ক্ষীর -দই
মন্দার বাজারে অফুরান স্বপ্নের ডাক
দাঁড়াও একুশ -
সম্বৎসরের পাঁচালিটা শুনে যাও....



প্রকৃত প্রেম ও পরা শান্তি
চন্দন-ভট্টাচার্য্য

 আজকে আমার খুবই প্রেম করতে মন চাইছে
শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু, প্রতিটি কোষ, প্রতিটি অনুকনা যেন দরবিগলিত অশ্রুস্রোতে ভাসতে ভাসতে ভাসতে ভাসতে প্রেমের জন্য পাগলপারা।
হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছে, মন করছে উচাটন
এ এক অদ্ভুত বিরহযন্ত্রনায় কাতর আমি।
আমার মনের মানুষকে পাবার জন্য আমি হাজার বার নর্দমার জল পান করতে পারি
ধুলোকাদায় গড়াগড়ি খেতে পারি অনায়াসে
বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করেই হাসিমুখে করতে পারি ভয়ঙ্কর বিষ পান
হাজার অযুত লক্ষ নিযুত বছর ধরে মৌন তপস্বী হয়ে থেকে যেতেও পারি
শুধু একটা নিষ্পাপ নিখাদ প্রেমের জন্য
শুধু পরা ভক্তিযুক্ত একটা নিষ্কাম প্রেমের জন্য
আমি আমার এই প্রিয়তম প্রাণটাকেও বলিদান দিয়ে দিতে পারি...কিন্তু ক'জনই বা দিতে পারে!!!
সেই বাল্যকাল থেকেই দেখে দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে গেছি অনুরাগ প্রেম
সেই প্রেম পদ্ম পাতায় একবিন্দু জলের মতো...
খুবই টলমলে, 
টলমল করতে করতে কখন যে কোথায় হারিয়ে যায়, কেই বা বলতে পারে!!
মধ্যাহ্নে দেখলাম স্বকীয়া প্রেম, দেদার চাওয়া পাওয়া, খুনসুটি ঝগড়াবিবাদ  বৈধ যৌনক্রীড়া সন্তান উৎপাদন  সন্তান প্রতিপালন.......
তিতিবিরক্ত জীবন,  কিছু একটা না পাওয়ার অনুভূতি,বিকৃত যৌনকামনা ও নিপাতনে সিদ্ধ অবাধ পরকীয়া।
আমার মনের সাগরে ঢেউ উঠতে থাকে ক্রমাগত, ভয়াল ভয়ঙ্কর  ঢেউগুলো সুনামিতে পরিনত হয়
হাতের মুঠোয় মুঠোফোন নিসপিস করে, বিছিয়ে দেয় সশাগরা দিগন্ত বিশারী নেটওয়ার্ক তার
হাজার হাজার প্রলোভন..!
আমি কিন্তু বুঝে গেছি সেই বিকৃত যৌন- মদালশ - ক্ষনিকের শরীর তৃপ্তির- অপরা শান্তির অপরিমেয় ভাষা, বিকৃতকাম ইঙ্গিত।
আমি জেনে গেছি-- আমি বুঝে গেছি-- আমি পেয়ে গেছি প্রকৃত সুখ -- প্রকৃত শান্তির প্রকৃত পথ, প্রকৃত রূপরেখা
তাই প্রকৃতির দেওয়া -- সমাজের দেওয়া সব শাস্তি আমি মাথা পেতে নিয়েছি
কারন পরা প্রেম ও প্রকৃত শান্তি--- শাস্তি না পেলে যে কখনোই পাওয়া না
...পাওয়া যেতেও পারে না ।



সময় থাকে না থেমে
সেন্টু রঞ্জন চক্রবর্তী


সময়ের উদ্ভট ঘোড়া
লাগামহীন ধূসর মাঠে ওই ছুটে যায়
দিগন্তের শেষ আলোরশ্মি নিয়েছে বিদায়,
সোয়ারি
হাসি কান্না সবই তোমারই
সমুদ্রে জেগেছে ফেনিল দীর্ঘ পথ চলায়।

আমি জানি
অনেক ব্যর্থতার গ্লানি
মুছে ফেলে আরেকবার তবুও নতুনেরে করবে আহ্বান,
তিক্ত সময়ের শিশিরে ভোরের স্নান
প্রত্যাশিত আগামীর বন্দনা গানে
কোমল হাত ছুঁয়ে যাবে ক্ষতস্থানে 
ফেলে আশা অতীত হবে কিছুটা মৃয়মান।

এই কঠিন সত্য সাথে করে
তুমি আমি সবে
চাওয়া পাওয়ার কলরবে থাকি মেতে,
গত সময়ের হাসি কান্নার স্মৃতি
কষ্ট বেদনা শত্রু ভাতৃত্ব প্রীতি 
আজি রাত পোহাবার আগেই মন্দ যত ভাসাব খরস্রোতে।

তারপর
আবার চেনাপথে শুরু হবে পথচলা
অনেকটাই সঙ্গীহীন একেলা
কুঁড়িয়ে নেবো সব কিছুই সময়ের সঞ্চয়,
সময় থাকে না থেমে
নিভৃতে নীরবে একই নিয়মে
এ জীবন বয়ে চলে  ক্রমে হয় ক্ষয়।




অভিলাষ   
 দুলাল সুর 

বিষণ্ণ বাতাবরণ 
অতীত জীবনের 
ব্যখ্যাতীত অনুচিন্তন।
গোপনীয়তার তৃষাতুর মর্মস্থলে
অর্থহীন বাগাড়ম্বর।
পার্থিব জীবনের সমাপিত পরম্পরায়
অনধিকার আকুলতার পিছুটান।
অনুক্ষণ চেনাবৃত্তের প্রাঙ্গণে
আপন অভিলাষা নাড়ির স্পন্দনে
প্রগাঢ় মোহচ্ছন্নতার বন্ধনে ধাবমান। 


বিদায় একুশ 
সুজন দাশ

বিদায় একুশ-কোভিডে বেহুশ!
করেছ টালমাটাল,
বানিয়েছ লাশ!সুখে বারোমাস
ভেঙ্গেছ মনের ঢাল।

দরিদ্র লোকে-ক্ষুধা আর শোকে
ভুগিয়েছ দেশে দেশে!
বদলে কোভিড-শেষে কাড়ে নিদ
অমিক্রনের বেশে।

তবু গেছি লড়ে-ভয়ে নাহি ডরে
সচলে অর্থনীতি,
সংসারে মতি কাজে রেখে গতি
কমিয়ে এনেছি ভীতি।

নিই ভ্যাকসিন-বদলাতে দিন
ঔষধ ও গেছি পেয়ে,
বিদায় তোমায় নিয়ে যাও দায়
কি হবে ওসব গেয়ে!



বছর শেষে
প্রশান্ত মন্ডল

পথের উপর পথ চড়িয়ে পেড়িয়ে এলাম বৎসর
ব‍্যথার ভাঁজে ব‍্যথা চেপে কেটে গেল এক একটা  প্রহর 
আর কৌতূহল জড়ানো একাকিত্ব যেটুকু অবসর।

আমার এই ধূসর ক্ষুদ্র জীবনে 
রঙিন মুহূর্তের খোঁজে এভাবে ত্রিশ টা বৎসর হল পার
কখনো মুঠোয় ভরে স্বচ্ছ মুক্ত আকাশের গান 
কখনো পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ পাখির কারাগার
দুচোখে পর্যবেক্ষিত হাজারো মুখের বিবরণ 
ফেলে গেছে, চলে গেছে, রয়ে গেছে অকারণ।

হৃদয় কোটরে পুষি তবু একঝাঁক আকাঙ্ক্ষা 
দিন ক্ষয়ে দিন আসুক কিংবা আলোয় ভরা বৎসর 
নতুনভাবে ফুটে উঠুক সূর্য প্রত‍্যেকের আঙিনায় 
অশুভক্ষণের বিনাশ করে জীবন হোক অবিনশ্বর।


২০২২ তোমাকে
সুমনা রায়

আমাকে মনে রেখো না
আমি ফেলে যাচ্ছি স্থাবর অস্থাবর সময়।
আমি বাতাসে মিশিয়েছি অভিসন্ধির মন্ত্রণা।
আমার চলে  রাস্তায় এখনও রক্ত লেগে আছে।

তুমি মানুষের কান্নাগুলোকে গান করে দিও।
বস্তির ঘরে  পাঠিও পিতল রঙের রোদ।
 করোনা হাসপাতালে কয়েকটা জোনাকি রেখে এসো।
বন্ধ কারখানগুলোকে সোনার চাবি দিয়ে খুলে দিও।

চাল ডাল আগুন সব রেখে গেলাম।
সবার জন্য রোজ গরম ভাত বেড়ে দিও কিন্তু
আমি যা পারিনি কোনোদিন।



সাক্ষাৎপর্ব   
দীপঙ্কর সরকার

নৈঃশব্দ্যের সঙ্গে দেখা হবে একদিন সম্পূর্ণ হারিয়ে
যাওয়ার আগে , নক্ষত্রলোকে মিশে যাব তখন 
                          
হাওয়ায় উড়বে আমার ছাইভস্ম। রঙিন পাতা কিছু ঝরে যাবে
একান্ত উদাসীন, জলস্রোত থমকে দাঁড়াবে ক্ষণিক 
                                                                     
 লতা-গুল্ম নীরবতা পালনে ব্যস্ত থাকবে সমধিক।

মহাশূন্য জুড়ে হাহুতাশ বাজবে পরিকল্পনা হীন 
                                                            
 নৈঃশব্দ্যের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে নিজেকে পরিস্রুত করব ঠিক--
                                                                      
সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে যাওয়ার আগে পুষ্প বৃষ্টি হবে  নিষ্কলুষ।
                                                                 
অলক্ষ্যে ঝরে পড়বে রামধনু রং দিগন্ত বিলীন,
                                                               
নৈঃশব্দ্যের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে এইসব হবে নিশ্চিত।



নতুন বছরের কবিতা
কুমকুম বৈদ্য

এই শহরের যেসব গাছের বয়স ছিল একশ বছর
এখন তারা  একশ একের তকমা পাবে
টার্মিনাসে যে সব  ট্রাম দাঁড়িয়ে আছে
আনমনা আজ, টাইম টেবিল নতুন পাবে

বাদবাকি সব ক্লান্ত শীতের ঝরা পাতা
কিম্বা ঠিক আগের ক্লাসের অঙ্ক খাতা
পুড়িয়ে দিলে আগুন পাবে মোমবাতিরা

আর কি বলি? অসুখ সে ও সঙ্গে যাবে?
বাতিল ক্যালেন্ডারের কিছু তারিখও কি চুরি হবে?
সুখের খবর শুধুমাত্র অতীত পাবে?

তার চেয়ে এই নতুন বছর সত্যি সত্যি নতুনই হোক
নতুন মানুষ জলের মতন
সবুজ মনের সব্বাই হোক




স্বাগত ২০২০
সমর সুর


আজ ভীষন শীত পড়েছে
কুয়াশা ডিঙিয়ে বিজনবাবু ছেলেমেয়ে নিয়ে
চলে গেলেন দক্ষিনেশ্বরে।
কালিংপঙ থেকে মোমো খাবার ছবি পাঠিয়েছে 
বন্ধুর বউ
সে জানে বহুদিন আমি ভালমন্দ কিছুই খাইনি
কোথাও যাইনি বেড়াতে।
সেইসব রাস্তায় স্বপ্নের ভিতর যে রাস্তাগুলো বারবার 
উঁকিঝুঁকি মেরে আবার ঢুকে যায় স্বপ্নের ভিতর।
ভাবছি একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে বেরিয়ে পড়ব 
বিজনবাবু ফিরে আসেন তার একমাত্র মেয়েকে কোথায় রেখে এলেন শীতের শহরে।
কালিংপঙ থেকে বন্ধুর বউ মাঙ্কিটুপি পড়ে ছবি পাঠিয়েছে হ্যাপি নিউ ইয়ার।






আকাঙ্ক্ষার আশ্চর্য উপত্যকা  
 অশোককুমার লাটুয়া 


বিহঙ্গের স্রোতে দেখেছি আকাশ মুগ্ধ বারোমাস।

সময় এসেছে চলে সময়ের আঙুল ছুঁয়ে '২১'-এর পর। 
সময় এসেছে চলে '২২'-এর ঘর।

ঘাট থেকে একজন ফিরে যাবে ঘরে। ঘাটে এসে পৌঁছবে  কেউ নতুন সংবাদে।
তখন শেষবার; তখনই প্রথমবার দেখা তোমাদের দুজনের মুখ।

ফিরে ফিরে দেখা বারবার...
একদিকে তোমার স্মৃতি 
অন্যদিকে স্বাগত নতুন পৃথিবী।

বড় আশাময় মানুষের চোখের ব্যাঞ্জনা -- 
যদিও মরণশীল মানুষ জানে।

বিদায় তোমাকে!
স্বাগত তোমাকে!
আকাঙ্ক্ষার আশ্চর্য উপত্যকা -- 
হীরের শাখা-প্রশাখায় সোনার ফুল ফুটুক অথবা না ফুটুক
আসুক একটা জীবন্ত '২২' 
ডাকুক একটা কোকিল ডাকুক।

বিহঙ্গের স্রোতে মুগ্ধ মানুষ দেখেছে আকাশ বারোমাস।

এলোপাথাড়ি মানুষের হোক সংযতি
আসুক '২২' আসুক বিশ্বাস সুপরামর্শের পৃথিবী।



নতুন প্রজন্মের কাছে... 
বিমল মণ্ডল 

যে বছর চলে গেলে সবার চোখে জল আসে
সেই বছরে আমার কষ্টের কথা
কবিতায় লিখে ফেলি।

নতুন বছর এলে তা পড়তে শুরু করবে সবাই
নতুন প্রজন্মের কাছে সংগ্রহ থাকলেও 
কিন্তু  ওরা সে কথা বলতে পারবে না। তাহলে কি হবে?
কি আর হবে!

আমি আর তোমরা নতুন বছরের কাছে কান উঁচু করে শুনে যাই
নতুন প্রজন্মেরা মনে মনে পুরাতনকে নিয়ে কবিতা বলছে...
আমরা অভিভূত হই আর বেদনার বছরের প্রাপ্তি নিয়ে 
শুধুই কবিতা লিখে যাই...













1 টি মন্তব্য: