শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১

রবিবাসরীয় বিভাগ-২৬ ।। আজকের গল্প।। গল্প হলে ও সত্যি — মায়া দে।। Ankurisha।। E.Magazine।। Bengali poem in literature।।

 


রবিবাসরীয় বিভাগ-২৬


আজকের গল্প

গল্প  হলে ও সত্যি

মায়া দে

                  


শীতের সকাল। সকাল থেকেই ব্যস্ততা । বরের অফিস । সাত সক্কাল থেকে নন্দিনী যেন দশোভূজা। সবে বারান্দায় এক চিলতে রোদ্দুর। এর মধ্যে বরের চা, ছেলেদের টিফিন ,পড়তে বসানো। তার উপর হাজার ঝক্কি। স্নান সেরে যথাসময়ে খেতে বসেন পরিমল। সবকিছু গুছিয়ে স্বামীকে গেট অবধি এগিয়ে দিল  নন্দিনী। এবার ছেলেদের দেখার পালা।  কিছু বাদেই পরিমলের ফোন। নন্দিনীকে বলেন -- "এখনি রেডি হয়ে নাও।  আজ ই.এন.টি এসছেন ।তোমার নাম লিখে দিয়েছি।১৬ নম্বরে "। নন্দিনী ছেলেদেরকে খাইয়ে, নিজে নাকেমুখে কিছু গুঁজে নিল। হাউসকোট ছেড়ে শারি পড়ে রেডি হল। ছোট ছেলে বয়স ৬+।  সে মা ছাড়া থাকেই না। সুতরাং সে মায়ের সঙ্গ নিল। বড়ো ছেলে বাড়িতেই। রাস্তায় একটা টোটো ধরে ঠিক সময়ে ডাক্তারের চেম্বারে পৌঁছে গেল নন্দিনী। 


বাইরে  বেশ চড়া  মিষ্টি শীতের রোদ্দুর। রঙিন রঙিন শীত পোশাকে রাস্তায় লোকজনের ভিড়। চেম্বারে ঢুকে কোনক্রমে এক কোনায় একটু বসার জায়গা পেল নন্দিনী। সঙ্গে ছোটোটা বেশ জ্বালাচ্ছে ।পাশে এক ভদ্রমহিলা বসে। তার কাছে ফুটফুটে একটি পাঁচবছরের  ছোট্টো মেয়ে। তাকে দেখেই তোজো নিজেকে বেশ বয়োজ্যেষ্ঠ  -বলবান -বীর - মনে করে । এই ফাঁকে মেয়েটাকে তোজো বড়ো বড়ো চোখ করে ভয় দেখানো শুরু করে। মেয়ে তো ভয়েই কাচুমাচু। চেনা জানা নেই এ কোন ছেলে বড়ো বড়ো চোখ দেখায়! ছোট্ট মেয়েটা অস্বস্তি ঢাকবার জন্য মায়ের কোলে বারেবারে মুখ লুকোয়।  মুখ তুললেই ফের  বড়ো বড়ো চোখ।  মেয়েটা তার মাকে কিছু না বললেও হুঁ হুঁ  শব্দ  করে সামান্য কাঁদো-কাঁদো ভাবে মাকে বোঝালো  যে তার মোটেই ভালো ঠেকছে না।  কিছু বাদে মেয়েটির মা ব্যাপারটা টের পেল । নন্দিনী তখন মোবাইল হোয়াটসঅ্যাপ-এ ব্যস্ত । কিছুই জানেনা । পাশের ভদ্রমহিলা বললেন  ---"দিদি প্লিজ ! আপনার ছেলেটাকে একটু সামলে নিন না। ও যেন কেমন ভয় দেখাচ্ছে আমার মেয়েটাকে , তাতেই আমার মেয়ে ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে।"

 নন্দিনী একটু হেসে বললো --"ওমা তাই!!! " ছেলেকে সামান্য ধমক দিয়ে এমন করতে বারণ করল।


 কিন্তু কে শোনে কার কথা! ছেলে তো বেশ মজা পেয়ে গেছে। মনে মনে ভাবছে আমি কত বীর। টিভির পর্দার সেই বালভীর । এদিকে নন্দিনীর ডাক পড়লো। নন্দিনী সরখেল---১৬নং। নন্দিনী উঠে দাঁড়ালো । পেছন পেছন ছেলেও। মায়ের পেছনে যেতে যেতে তোজো মেয়েটাকে ফের বড়ো বড়ো  চোখ করে দেখালো। শুধু তাই নয়। ইচ্ছে করে গম্ভীর করে "ও-ই" শব্দটা বীরের মতো  করে ছোট্ট দুটো ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে গর্জন করল । এবার মেয়ে যায় কোথা !!! হঠাৎ এমন সজোরে আঁতকে উঠল যে মেয়ের মা মেয়েকে বাধ্য হল কোলে তুলে নিতে। পেছন ফিরে নন্দিনী বুঝতে পারল ছেলের দুঃসাহসী কীর্তিখানা।ধমক দিয়ে ছেলেকে কাছে টেনে নিল।


          ডাক্তার দেখানো হলো। একগাদা ওষুধের ফর্দ। নন্দিনীর মুখে বিরক্তি প্রকাশ। এতো ওষুধ খেলে সারাদিন আর কিছু খেতে লাগবে না। বাড়িতে বড় ছেলে একা।   ওষুধ গুলো কিনেই ছোট ছেলের হাত ধরে সজোরে হাঁটা দিল। কিছুটা গেলেই টোটো পাওয়া যায়। যেতে যেতে রাস্তায় মনে পড়ে তোজোর কান্ড। 

তখন নন্দিনী তাকে জিজ্ঞেস করল  --- "হ্যাঁরে তুই এমন করলি কেন মেয়েটার সঙ্গে? বারবার মেয়েটা কাঁদছে । তার মা ও খুব রেগে গেছে । যদি তোকে ধরে নিয়ে যেত । যদি  ধরে পেটাতো।  কি হতো তবে? ভেবে দ্যাখ!  "

তোজো বলল  -- "আমাকে ধরে নিয়ে যাবে কেন ? কেন আমায় মারবে ? আমি তাকে ভালোবাসি। ও তো আমার ফ্রেন্ড । "

নন্দিনী বলল -"ভালোবাসিস?  ফ্রেন্ড তো ওর সঙ্গে এমন করলি কেন? "

তোজো বললো --"এমনি করেছি।  মা আমি ওকে পুষবো ।আনো মা  ওকে।"

 শুনে নন্দিনীর শরীর শুদ্ধ মনটাকে কে যেন

হ্যাঁচকা দিয়ে থামিয়ে দিল।থমকে গেল হাঁটা।মনের কোনায় হাসি ঝিলিক দিয়ে উঠলো। ছেলের দিকে তাকিয়ে নন্দিনী ফিক্ করে হেসে উঠে। পরিমলকে কথাটা বলতে খুব ইচ্ছে হলো।


 তারপর থেকে সারাদিন নন্দিনীর মাথায় একটা কথাই গুনগুনাচ্ছে—"আমি ওকে পুষবো।আনো মা ওকে''...











কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন