বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২১

ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস (পর্ব-৩) ।। ট্রেকিংয়ের পথে রহস্য — অনন্যা দাশ।। Ankurisha ।।E.Magazine ।।Bengali poem in literature ।।

 




ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস (পর্ব-৩)

ট্রেকিংয়ের পথে রহস্য

অনন্যা দাশ


"আজকের দিনটা হাইকিংয়ের জন্যে একদমই ভালো নয় কিন্তু কী আর করা যাবে। সবার সুবিধার একটা দিন পাওয়া গেছে,” সবাই জড়ো হতে রক বলল।

আসলে বেশ কিছুদিন ধরে ইমেল-টিমেল করে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে হাইকিংয়ের জন্যে এই দলটাকে জোগাড় করা গেছে অথছ শনিবার দিন সকাল থেকেই ঝিরিঝিরে বৃষ্টি। কিছুক্ষণের জন্যে থামছে কিন্তু আবার শুরু। অঙ্কন তো যেতেই চাইছিল না। ভজা বলল, “নাহ, নাম যখন লিখিয়েছি তখন যেতেই হবে। তারপর রক যা বলে।” 

রক ওদেরই ক্লাসের একটা ছেলে। সে খুব হাইকিং, ট্রেকিং ইত্যাদি করতে ভালোবাসে। ওর উৎসাহ দেখে অঙ্কন, ভজা আর ওদের ক্লাসের আরও কয়েকজন ছেলে রাজি হয়েছিল ওর সঙ্গে হাইকিং করতে যেতে। কিন্তু বাদ সাধল বৃষ্টি। একটা পাহাড়ের গা বেয়ে হাইক করে ওপরে ওঠার কথা ছিল ওদের। ওপর থেকে দৃশ্য নাকি অসাধারণ, সেই লোভেই যাওয়া। 

অঙ্কন ভেবেছিল হাইকের পরিকল্পনাটা বোধহয় বাতিল হয়ে যাবে, কিন্তু না, রক বলল, “এই ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে আমাদের কারো কোন ক্ষতি হবে না, আমরা কেউ গলে যাব না। শুধু পথটা একটু পিচ্ছিল হতে পারে তাই সাবধানে পা ফেলতে হবে সবাইকে। আমি সামনে থাকছি। সবাই আমার পিছন পিছন এসো।”

“সত্যি বাপু! তোদের নিয়ে আর পারা যায় না! দিলি তো শনিবার সকালের আরামের ঘুমটা নষ্ট করে!” অঙ্কন বিড়বিড় করে বলতে বলতে চলল।  

বৃষ্টিটা একটু ধরেছে তবে পাহাড়ে ওঠার সরু পথ বেশ পিচ্ছিল। ওদের সঙ্গে ওদের ক্লাসের আরো কয়েকজন আর কয়েকটা পরিবারও চলেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হাইকিং করতে অভ্যস্ত কারো আবার প্রথম বার। যাই হোক সবাই বেশ উৎসাহ নিয়ে চলেছে। কয়েকজন মহিলা আবার খাবার টাবারও এনেছেন। বেশ একটা পিকনিক পিকনিক ভাব। 

অঙ্কন আবার ফিসফিস করে ভজাকে বলল, “তোর ভাগ্য ভালো কিছু খাবার এসেছে নাহলে তোর আজকে হয়েছিল! আমাকে ব্রেকফাস্ট করারও সময় দিসনি তুই!” 

কিছুদূর উঠে হঠাৎ গাছের ফাঁক দিয়ে দেখা গেল দূরে একটা ব্রিজের ওপর দিয়ে ট্রেন যাচ্ছে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের বুকে এক মায়াবী দৃশ্য। সবাই তো পটাপট ছবি তুলতে শুরু করে দিল। ভজা শুধু অঙ্কনকে বলল, “এ ছবি মোটেই ভালো উঠবে না। এই দৃশ্য শুধু মনে রাখতে হবে। যখন মন খারাপ হুবে তখন মনে করবি, দেখবি মনটা ভালো হয়ে যাবে!”  

মোটামুটি সব ঠিকঠাকই চলছিল রকের দলের। তারপর হঠাৎ মাঝপথে এসে প্রোফেসার কাপুরের স্ত্রী মিসেস সিমরান কাপুর, মানে সিমি পিছনে একটা বড়ো পাথরকে রেখে ছবি তুলতে গিয়ে পা পিছলে সরসর করে একটা খাদে নেমে চলে গেলেন। ব্যাস সেইখান থেকে সব কিছু গন্ডগোল হয়ে গেল। সিমি কাপুর কোনরকমে একটা গাছের গুঁড়ি ধরে হড়কে যাওয়া সামলে মাঝপথে ঝুলে রইলেন। ওনার স্বামী তো ভয়েই একসা। এদিকে রক আর কাউকে নীচে নামতে দিতে চায় না, যদি আবার কোন বিপদ হয় সেই ভয়ে, তাই কোমড়ে দড়ি বেঁধে সে নিজেই নামল। অভিজ্ঞ রকের তরতর করে নীচে নেমে গিয়ে সিমি কাপুরকে টেনে তুলতে বেশি সময় লাগল না, বা কষ্টও হল না তেমন। কিন্তু ওপরে উঠে এসে সে গুম।    

অঙ্কন আর ভজাকে ফিসফিস করে বলল, “তোমাদের ফোনে সিগনাল আছে? আমারটা তো কাজ করছে না। পুলিশ ডাকতে হবে!” 

অন্যরা সবাই সিমি কাপুরের শুশ্রূষায় লেগে রয়েছে। অঙ্কন তাই দেখে বলল, “ওনার জন্যে বলছিস? উনি তো ঠিক আছেন মনে হচ্ছে। নীচে নেমে না হয় হাসপাতালে একবার চেক আপ...”  

রক ওকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে অসহিষনু হয়ে বলল, “না, না, ওনার জন্যে বলছি না! নীচে একজন কেউ পড়ে রয়েছে। গভীর খাদে। অত নীচে আমি নামতে চাই না! জ্যাকেটটা দেখে মনে হচ্ছে গ্রান্ট!” 

“অ্যাঁ! গ্রান্ট কে?” 

“গ্রান্ট মরিসন। ওকে চেনো না? আমার মতন প্রচুর হাইকিং, ট্রেকিং এই সব করে।” 

ভজা বলল, “হ্যাঁ, গ্রান্টকে আমি চিনি!”  

পুলিশকে ডাকা হল। একটু পরেই তারা এসে হাজির হল। সঙ্গে যন্ত্রপাতি নিয়ে রেস্কিউ টিমের লোকজন। পুলিশ আর প্যারামেডিক্সরাই সিমি কাপুরকেও স্ট্রেচারে করে নীচে পৌঁছে দিল। অন্যরাও ওদের সঙ্গে নেমে গেল। রক, অঙ্কন আর ভজা রয়ে গেল। 

একটু পরেই পুলিশ আর রেস্কিউ দলের লোকজন একটা কালো ব্যাগে করে একটা দেহ নিয়ে ওপরে উঠে এল। বন্ধুর মৃতদেহ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল রক। ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে বাড়ি ফিরল ওরা। যে পথ দিয়ে ওপরে উঠেছিল সেই পথ দিয়েই। আশ্চর্যের ব্যাপার মেঘ কেটে গিয়ে তখন সোনালি রোদ্দুর উঠেছে!  


চলবে...




প্রতি শুক্রবার অঙ্কুরীশা -র পাতায় প্রকাশিত হবে ট্রেকিংয়ের পথে রহস্য। আপনারা পড়ুন ও মতামত জানান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন